Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Tuesday, 31 December 2013

বিদায় ২০১৩

                   বিদায় ২০১৩

       ২০১৩ আজকের দিনে নিচ্ছে বিদায়। এই বছরে আমরা হারালাম কত কিছু , পেলামও অনেক। 
      ব্যক্তিগত দিক থেকে বলতে গেলে এই বছরে আমার দুটি বই প্রকাশিত হলো - "মহাপ্রভুর নীলাচলে আজ চলে লীলা" এবং "অনন্তের জিজ্ঞাসা।" লেখা হলো "কেদারনাথে আজ ঘটে অঘটন" এবং আমার অল্পবয়সে বিভিন্ন পত্রিকায় লেখা গল্পের সংকলন "যেথা রামধনু ওঠে হেসে" বইটির কাজ সারলাম। তাই লেখার দিক দিয়ে বছরটা আমার ভালই গেছে। এই বছর ২৮ ডিসেম্বর থেকে সুরু হলো আমার আধ্যাত্মিক অধিবেশন যা আমার পাঠক পাঠিকাদের নিয়ে আলোর লক্ষ্যে এগিয়ে যাবার পথের একটি বিশেষ ধাপ। সেইসাথে অন্যান্য বছরের মত পেয়েছি পাঠক পাঠিকাদের অকুন্ঠ  ভালবাসা। 
    আধ্যাত্মিক দিক থেকে এই বছরে পেয়েছি একজন বিরাট গুপ্তযোগীর সান্নিধ্য যিনি আমাকে যোগের কিছু বিশেষ ক্রিয়া দিয়ে গেছেন কৃপা করে  - কালীঘাটে  লাভ করেছি তাঁর এই বিরাট কৃপা যা আমাকে আরও অনেক পরিণত করে দিয়েছে। সেইসাথে আলাপ হয়েছে প্রভার সাথে যার মাধ্যমে পেয়েছি কেদারনাথের বুকে ঘটে যাওয়া  প্রলয়ের সময়ে গোপালের এক অপার্থিব লীলার খবর। সেইসাথে পেয়েছি অনেক নতুন মানুষের দেখা যারা বন্ধু হয়ে,বোন্ হয়ে এবং ভাই হয়ে এসেছে আমার জীবনে। সবার মাধ্যমে পেয়েছি না জানি কত জন্মের কত আত্মার আত্মীয়র দেখা। আবার হারিয়েও গেছে কেউ কেউ যারা একসময়ে ছিল খুব কাছের। জীবন যে হারানো আর পাওয়ার মিলনমেলা। 
    তবে এই বছর আমাকে অনেক দিলেও কেড়েও নিয়েছে অনেক কিছু। কেদারনাথে মানুষের অত্যাচারে প্রকৃতির বুকে নেমেছে বিরাট ধংস - হারিয়ে গেছে কত হাজার প্রাণ। হিমালয়ের পথের প্রতিটি যাত্রীই আমার খুব কাছের যেহেতু হিমালয়ের সাথে রয়েছে আমার আত্মিক যোগ। তাই এই বিরাট লোকক্ষয় আমাদের কাছে এক চেতাবনী হয়েই রইলো। এই বছরে আমরা হারিয়েছি অভিনেতা প্রাণকে ও ফারুক শেখকে যাঁরা বহুকাল ধরে মানুষকে যুগিয়েছেন অশেষ আনন্দ। এছাড়া হারাধন বন্দোপাধ্যায়ের কথাও বলতে হয়। আমার এক বই উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আনন্দলোকে উনি উপস্থিত ছিলেন এবং আমার বই-এর  ব্যাপারে ভাষণ দিয়েছিলেন। এছাড়া আমার প্রিয় শিল্পী মান্না দে আর সামসাদ বেগমের কথাও বলতে হয়।বিশেষত মান্না দের গান যে আমার সর্বকালের সবসময়ের অন্যতম নিকট সঙ্গী।
    ব্যক্তিগত হারানোর দিক থেকে বলতে গেলে, এবছর আমাদের আশ্রমের বিশেষ ভক্ত লীলাপিশীও মারা গেছেন যিনি ছোটবেলা থেকেই আমার প্রতিটি প্রকাশনার অশেষ গুনগ্রাহী ছিলেন।
    এভাবেই কেটে গেল ২০১৩ -কিছু পেলাম,কিছু হারালাম। সব মিলিয়ে জীবন থেকে ঝরে গেল একটি বছর। শুধু সঞ্চয় হয়ে রইলো স্মৃতি আর মন্ত্র জপের অনুরণন যা মৃত্যুর পরেও আমার সঙ্গী থাকবে চিরকাল। এভাবেই কেটে যাবে আরও কিছু বছর আরও কিছু হারানো আর প্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে। তারপর দেখতে দেখতে একদিন এই শরীরটাও যাবে হারিয়ে - অনন্তের ঘরে ফিরে যাব আমরা পরম আনন্দভরে -শুধু খেয়াল রাখতে হবে সেখানে যাওয়ার সময় এই ভবের হাত থেকে কি নিয়ে যেতে পারলাম।  

Tuesday, 10 December 2013

 দুর্ঘটনা থেকে উদ্ধার 

আজকে কালিমন্দির থেকে অটোতে ফিরছিলাম। সামনের সিটে বসে। রাসবিহারী অতিক্রমের পরই সহসা একটি গাড়ির পছন্দ হলো আমি যে অটোতে বসে ছিলাম সেটিকে।আমার পা যথারীতি একটি বাইরে ছিল এবং অন্যটি ভিতরে। আকস্মিকভাবেই গাড়িতে দ্রুত অটোর  দিকে ছুটে এল আর  একদম অটোতে ধাক্কা দিয়ে বেরিয়ে গেল। আর ঠিক সেই মুহুর্তে আমার যেই পা বাইরে ছিল সেটি কে যেন টেনে ভিতরে ঢুকিয়ে নিল - স্পষ্ট অনুভব করলাম।ফলে গাড়িটার স্পর্শ আমার পা ছুঁয়ে গেলেও হাঁটুর উপর আঘাত লাগলো না। একটা নিশ্চিত বিপদ থেকে বেঁচে গেলাম। মন্দির থেকে ফিরছিলাম। আর বেরোনোর সময়ে " দোহাই মা চন্ডী,শ্রী দূর্গা জয়্তারা" বলে বেরিয়েছিলাম। তাই এত সহজেই দুর্ঘটনা এড়ানো গেল। জয় মা কালী। জয় গোপাল। 

Friday, 22 November 2013

প্রকাশিত হল আমার "শ্যামের মোহন বাঁশি" বইটির তৃতীয় সংস্করণ

  প্রকাশিত হল আমার "শ্যামের মোহন বাঁশি" বইটির তৃতীয় সংস্করণ

আজকে প্রকাশিত হল আমার "শ্যামের মোহন বাঁশি" বইটির তৃতীয় সংস্করণ। এই বইটি আমাদের আশ্রমের গোপালসোনার কীর্তিকলাপের উপর লেখা। গোপালের লীলাসমূহ নিয়ে লেখা বইটি আমার,বাবার,মায়ের,দিদিমার ও আরো অনেক ভক্তের অভিজ্ঞতার সংকলন। গপাল্সনার দুষ্টুমির মধ্যে দিয়েই যে জাগে বাঁশীর সুর - তার কাছে যাবার আহ্বান বেজে ওঠে বাঁশীর তানেই। ছোটবেলা  থেকে গোপাল আমার ভাই,বন্ধু,সখা সব। তার সাথেই যে বেঁধেছি  প্রাণের ডোর। তাইত এই বইটি আমার কাছে বিশেষ একটি প্রিয় লেখা। আমার প্রিয় লেখা যে আমার পাঠক পাঠিকাদের ভালো লাগছে এই বইটির তৃতীয় সংস্করণ তার প্রমান। ২০১০ সালে এটির প্রথম সংস্করন প্রকাশিত হয়। ২০১৩এর মধ্যে তিনটি সংস্করণ স্পষ্টই বুঝিয়ে দিছে গোপালের কীর্তিকলাপে পাঠক পাঠিকারা কত মুগ্ধ। তাই আজ এই গ্রন্থের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশনার পর গোপালকে জানাই আমার অন্তরের কৃতজ্ঞতা। আর সেইসাথে আমার পাঠক পাঠিকাদেরও জানায় আমার কৃতজ্ঞতা -আপনাদের/তোমাদের সবার ভালবাসা ও শুভেচ্ছা সবসময়েই আমার চলার পথের পাথেয়। আশা করব - আপনাদের/তোমাদের  এই ভালবাসার শুভেচ্ছা চিরকাল থাকবে আমার বইগুলির সাথে। 

Sunday, 10 November 2013

বারবার এসেছি ফিরে তোমাদেরই টানে

            বারবার এসেছি ফিরে তোমাদেরই টানে  

     কত হাসিকান্না,সুখ দুঃখের পথ পেরিয়ে এলাম বিগত লক্ষ কোটি বছরে। বিগত জন্মগুলিতে কত যোনীতে কতজনকে ভালোবাসলাম - কত আঘাত পেলাম,পেলাম কত সুখ। কতজন ভাঙলো এই হৃদয় , কতজনের হৃদয় ভাঙলো আমার জন্যে - তারপর আবার আমরা হারিয়ে গেলাম একে অপরের থেকে। কিন্তু হারিয়েও কি হারালাম? ফিরে এলাম সবাই নতুন রূপে - পুরনো হিসেবটাকে মিটিয়ে দিতে। কারণ সেই ঋণানুবন্ধ - কারো সাথে যে হিসেব মাঝপথে রেখে পালিয়ে যাবার জো  নেই। ফলে যতবারই আসি ফিরে ততবারই পূর্ব জীবনের সেই ঋণের অনুবন্ধও মেটাতে হয়। 
    আজো নিত্য কত মানুষের সংস্পর্শে আসি। কত পাঠিকাদের স্নেহ ভালবাসায় নিত্য অভিষিক্ত হই। কত সতীর্থ লেখক তথা অবিশ্বাসী নাস্তিক মানুষের বিরক্তির কারণও হই। তাদের কাউকে দেখে যেন মনে হয় - এতো অচেনা নয় - যেন চিনি কতদিন ধরে। গোপালের সামনে প্রশ্ন নিয়ে যাই। তার মিটিমিটি হাসিতে পেয়েও যাই উত্তর। 
    বাবার কাছে শুনেছি - যাদের শেষ জন্ম হয় তাদের সাথে শেষ দেখার জন্যে বিগত জন্মগুলির অনেক প্রিয়জনই ফিরে ফিরে আসেন। ভালবাসার সম্পর্ক তো কম জনের সাথে হয়নি বিগত কোটি কোটি জন্মে। তাদের মধ্যে যাদের মুক্তি এখন হয়নি তাদের অনেকের সাথেই দেখা হচ্ছে এই জন্মে। কেউ ছিলেন আমার মা,কেউ বাবা,কেউ ভাই,কেউ বোন্ ,কেউ প্রেমিকা,কেউ স্ত্রী,কেউ দাদা,কেউ দিদি,কেউ বা সন্তান,কেউ বা নাতি। তাদের সবার সাথেই এভাবেই বইয়ের মাধ্যমে হচ্ছে ফিরে দেখা। আধ্যাত্মিক পথে আমার কাজ তো একজনকে নিয়ে নয়,অনেকজনকে নিয়ে - তাই হয়ত তাদের সবার সাথেই হচ্ছে এই ফিরে দেখা - নানা রূপে নানা দেহে আসছেন তারা - তাদের সাথে কথা হলে বা মেসেজ আদানপ্রদান হলেও হয়ত তাই মনটা ভরে যায় আনন্দে। Farewell জন্মে তাই বোধহয় সবাইকেই পাচ্ছি নানা রূপে। 
    বাবার কাছে এও শুনেছি - শেষ জন্মে পূর্বজন্মের শত্রুরাও আসে ফিরে। তাদের যেটুকু আঘাত দেয়ার বাকি ছিল সেটুকু দিয়ে ঋণমুক্ত করে যায়। তাই এই জন্মে তাদের দেখাও কম মেলে না। তাই আঘাত পেলেও আজ আর কাঁদিনা। কারণ জানি - এই আঘাতে কাটছে আমার প্রারব্ধ -মিটে যাচ্ছে ঋণ। 
    দেহ তো বারবার শেষ হয়ে যায় একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর। কিন্তু আত্মার তো বিনাশ নেই। তাইত তাকে ফিরে ফিরে আসতে হয় পৃথিবীর বুকে - কে জানে এই ভালবাসার মানুষগুলোর টানই বোধহয় বারবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আমিও কতবার এসেছি এভাবে। তোমরা যারা আমার লেখা পড়ছ এখন তারাও হয়ত পূর্ব পূর্ব জীবনেও আমার সঙ্গে ছিলে ওতপ্রোতভাবে। হয়ত তাই বই-এর সুত্রে জন্মান্তরের সম্পর্ক আবার দেখা দিচ্ছে নতুনভাবে। মনে পড়ে যাচ্ছে সুমনবাবুর সেই গানটি -
  অমরত্বের প্রত্যাশা নেই,নেই কোনো দাবি দাওয়া,
  এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকে চাওয়া। 
    তোমাদের সবার ভালবাসার নানা রূপ তো ঈশ্বরের দান। তাই তোমাদের কাছে তাঁর অমৃতের বার্তা পৌঁছে দেয়ার মাঝেই সার্থক আমার আসা। জানিনা কে সেটা অমৃত ভেবে নিল আর কে তা নকল ভেবে সরিয়ে দিল,তবে আমার কাজ ছড়িয়ে দেয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ। বাকিটা তো তাঁর কাজ। তিনিই দেখবেন ও দেখছেন। 

Thursday, 7 November 2013

সিরিয়াল killer

                      সিরিয়াল killer 

    পৃথিবীতে সত্যিকারের killer বোধহয় tv সিরিয়াল।tv সিরিয়ালের কিল যে খেয়েছে সেই উপলব্ধি করবে এই কিল-মহিমা।  সম্প্রতি আমার এক অল্পবয়েসী facebook ভক্ত আমায় মেসেজ দিয়ে প্রার্থনা করতে বলেছিল সতীর জন্যে যাতে তার গণেশকে রং করে যে ভাগীরথী অন্যায় করেছে সে যেন ধরা পড়ে, সম্মান থাকবেনা। শুনে তো আমি অবাক। কে এই সতী? আর ভাগীরথীই বা কে ? অবশেষে খোঁজ নিয়ে জানলাম যে এরা tv সিরিয়াল সতীর একেকটি চরিত্র। অর্থাত - এই সিরিয়াল মানুষের মনে কি প্রভাব ফেলছে যে সতীর দুঃখে কাতর হয়ে একটি অল্পবয়েস্ক মেয়ে আমায় মেসেজ দিচ্ছে তার হয়ে প্রার্থনার জন্যে।
   আসলে এই সিরিয়াল হল মানুষের যথার্থ  হত্যাকারী। সিরিয়াল killer এক কথায়। এরা মানুষের স্বাধীন ভাবনা চিন্তার শক্তি নষ্ট করে দেয় এবং নিজেদের কাহিনীর ঘোরপ্যাচে মানুষকে জড়িয়ে নেয়। ফলে মানুষ তাই ভাবে যা সিরিয়াল  তাকে ভাবায়। সেইসাথে সময় যে কি পরিমাণ নষ্ট করায় তা বলাই বাহুল্য। ঘরে ঘরে মানুষরা এই সিরিয়ালের tension নিয়ে কাটায়  সারাদিন  আর দিনান্তে সব কাজ সেরে tv র সামনে হত্যা দিয়ে পরে থাকে তাদের পছন্দের সিরিয়ালের পরের পর্বটির জন্যে। (এর মধ্যে আধ্যাত্মিক সিরিয়াল যা আছে যেমন রামায়ন ,মহাভারত,দেব কি দেব মহাদেব এগুলো অবশ্যই লোকশিক্ষার কাজ করে। তাই আমার অভিযোগ এগুলির বিরুদ্ধে নয়। আমি সেইসব সিরিয়ালের কথা বলছি যা দৈনন্দিন সমস্যা এবং অনৈতিক কুশিক্ষার বীজ মানুষের মধ্যে ছড়ায়।) অর্থাত এক কথায় সিরিয়াল হল সময়ের বিরাট অপচয়।
   আমাদের বোঝা দরকার যে সময় আমাদের হাতে খুব কম। যেটুকু আছে তার মধ্যেই জীবনকে নিয়ে যেতে হবে মহাজীবনের পথে। তাই সময় বাঁচাতে হবে। আমার কথা বলতে পারি। আমার নিজের ঘরে টেলিভশন থাকলেও কেবল সংযোগ রাখিনি আমার ঘরে। কোনো সিরিয়াল আমি দেখিনা। হ্যা , ভালো ফিল্ম অবশ্য দেখি তবে তাও খুব কম -লেখার ফাঁকে বিনোদনের জন্যে। আর মূলত দেখি পুরনো দিনের ক্লাসিক বা ভক্তিমূলক ফিল্ম যার মধ্যে রুচিগত সৌন্দর্য খুঁজে পাই। ভক্তিমূলক সিরিয়ালের ডিভিডি কিনে রাখি অবসর মত  দেখার জন্যে যেমন রামায়ন ,মহাভারত,সাইবাবা,জয় শ্রী কৃষ্ণ ,দেব কি দেব মহাদেব ইত্যাদি।ভালো হাসির বই -ও রাখি যা রসবোধকে ক্ষুরধার করে।  কিন্তু নিয়ম করে tv -র সামনে যেতে রাজি নই। আগে ক্রিকেট দেখতাম,এখন তাও দেখিনা কারণ ক্রিকেট আর ক্রিকেট নেই,বেসবল হয়ে গেছে। এক কথায়, নিজেকে কিছুর মধ্যে আটকাতে রাজি নই আমি। আমি কেন অন্যকিছুর প্রলোভনে নিজেকে আটকাব? কোনো কিছু কেন আমাকে তার term dictate করবে? আমি থাকব আমার সময়ের মালিক। আর সময়কে ব্যবহার করব আসল প্রয়োজনে। কারণ আমাদের জীবনে সময় যে কম। বেলা যে বয়ে যায়। তাই সময়ের সদ্ব্যবহার খুব জরুরী। 

Friday, 1 November 2013

আজো গোপাল ঘটায় কত লীলা

             আজো গোপাল ঘটায় কত লীলা  

আজকে বিশিষ্ট গায়িকা পাপিযাদি আমায় ফোন করে শোনালেন  অভিজ্ঞতা। বৃন্দাবনে এক মহাত্মার আশ্রমে তাঁর দেখা হয় এক ভদ্রমহিলার সাথে। তাঁর পাঁচটি গোপাল। সাথে ছিল তাঁর মেয়ে ও তার গোপাল। তাঁকে দেখে পাপিয়াদি  বৃন্দাবনে আজ ঘটে অঘটনের কথা। শুনে তো উনি খুবই আনন্দিত। বলেন তারাশিসের বই পরে যে আমার মেয়ের জীবনে কি অঘটন ঘটেছে কি বলব। পাপিয়াদি জিজ্ঞেস করেন - কি হয়েছে?
 তিনি বলেন, "আমার মেয়ের নাম মুন্নি।দিল্লিতে থাকে। তারাশিশের বই পড়ে ওকে আমি দিয়েছিলাম একটি গোপাল। আর তারপর ওকে বইটা পড়তে বলি।  বইটি ও কিছুতেই পরার সময় পাচ্ছিল না। আমিও তাগাদা দিতাম। অবশেষে একদিন ও বইটা পড়ল। সন্ধ্যা ৬টায়  ধরেছিল,ভোর হওয়া অবধি বারবার পড়েছে। তারপর ৫ দিন আর অফিস যায়নি। শুধু ঘরে বসে কেঁদেছে আর বলেছে - "গোপাল যদি সুতপার সাথে এরম করে তবে কেন আমার সাথে করবে না?" আর তারপর শুরু করলো গোপালের মনপ্রাণ দিয়ে সেবা। আর সেইসাথে শুরু হলো গোপালের লীলা।তার একটি বলছি। একবার আমর জামাই trafficএ আটকে জাবাতে flight miss করে। ও যখন বিমানবন্দরে পৌছেছে বিমান তখন ছেড়ে দিয়েছে। ও তখন ফোন করে মুন্নিকে বলল,'তোমার গোপাল কোনো কাজের না। ফ্লাইট মিস করালো' ,আশ্চর্যের ব্যাপার। সেই বিমান চলন্ত অবস্থায় থেমে গেল। তখন বিমানবন্দরে অর নাম ঘোষনা হচ্ছে। ওকে চলে যেতে বলা হলো runawayte  এবং runawayতে সিড়ি  লাগিয়ে ওকে তুলে নিয়ে তারপর ছাড়ল বিমান। এমন কত কান্ড অর সাথে নিয়মিত হচ্ছে। তুমি তারাশিসকে অবশ্যই বোল আমার মেয়ে ও তার গোপালের কথা। "
  পাপিযাদি আজকে সন্ধ্যায় আমায় ফোন করে জানালেন এই লীলার কথা। আমি শুনে মুগ্ধ ও শিহরিত। গোপালের অঘটন এভাবে দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ুক এই কামনাই করি। জয় গোপাল।  

Thursday, 31 October 2013

"ক্ষণিক খোঁজে চিরন্তন" গ্রন্থের 'নাসিক -শিরডি-দ্বারকা-প্রভাস' পর্বের দ্বিতীয় সংস্করণ

আজকে প্রকাশিত হল আমার "ক্ষণিক খোঁজে চিরন্তন" গ্রন্থের 'নাসিক -শিরডি-দ্বারকা-প্রভাস' পর্বের দ্বিতীয় সংস্করণ। শিব্রাম চক্রবতী বলতেন - লেখকের কাছে গ্রন্থ হল পুত্রসম আর গ্রন্থের সংস্করণ যেন নাতি। যখন আমার প্রথম গ্রন্থ প্রকাশিত হয় তখন ভাবিওনি একদিন এরকম আসবে যখন প্রায় প্রতি মাসেই একটা বা দুটো বই-এর সস্করণ প্রকাশিত হবে। আজকে সেই দিন এসেছে যখন একটি বই-এর সংস্করণ হওয়ার সাথে সাথে পরের বইটিকে পাঠিয়ে দিতে হয় প্রেসে। এসবি গোপালের কৃপা,তারামায়ের কৃপা। তাঁরাই আমায় দিয়ে লিখিয়েছেন,তাঁরাই ছড়িয়ে দিচ্ছেন সব ভক্তদের মাঝে। ভক্তদের তথা পাঠক পাঠিকাদের ভালবাসা তো তাঁদেরই কৃপা। আমি তো অতি অকীন্চন। তাই ঠাকুরকে দেয়ার মত আমার কিছুই নেই। আমার সবই যে তাঁর। এমনকি আমিও তাঁর। তাই আজকের দিনে তারামা ও গোপালকে জানাই আমার অন্তরের কৃতজ্ঞতা ,সেইসাথে সকল পাঠক পাঠিকাদের জানাই ধন্যবাদ। ১৯৯৬ থেকে বর্তমান ২০১৩ পর্যন্ত আমার লেখার প্রতি আপনাদের যে অফুরন্ত ভালবাসা ও স্নেহ পেয়েছি সবই ইশ্বরের করুণা।
ভালো থাকবেন ..
শুভেচ্ছাসহ
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

Tuesday, 29 October 2013

আক্কেল তবে রাস্কেল নয়

           আক্কেল তবে রাস্কেল নয় 

 মানুষের আজকাল আক্কেল নিয়ে ভারী সমস্যা। আক্কেল থাকলে লোকে বলে বুর্জোয়া। আর না থাকলে বোকা। আমাকে এতদিন দ্বিতীয় দলেই ফেলা হত। জাগতিক আক্কেল কোনকালেই নেই আমার। ইহকালে তো নেইই ,পরকালেও আশা নেই। কিন্তু এহেন আমারি উঠলো আক্কেল দাঁত। ৩-৪ বছর সেটাকে ধরে রাখার চেষ্টা করে অবশেষে তুললাম গতকাল। ডাক্তার আমাকে দাঁত তুলে দেখালেন - এটাই ছিল সেই আক্কেল দাঁত - লাগলো অনেকটা জাহাজের মত,উপরে তিনটে মাস্তুল আর শিকড় ছিল কত গভীর বলা মুশকিল। 
  তবে দাঁতটি দেখে কেমন বিরক্তি লাগলো। এই একটা দাঁতের জন্যে এত কষ্ট পেয়েছি এতদিন? দেখেই মনে হলো - এই দাঁত তো আমার দেহের অঙ্গ ছিল,সেটা যখন দেহ থেকে বেরিয়ে গেল কোন খারাপ তো লাগলো না। ব্যবহারের অযোগ্য ছিল বলেই ওটাকে বের করে দেয়া হলো। তাহলে মৃত্যু নিয়ে আমরা এত ভাবি কেন?যখন শরীর অকেজো হয়ে যাবে শরীরটাকেও তো এমনি ফেলে দিতে হবে। তখন শরীর থেকে বেরিয়ে ওটাকে দেখে আমরাও,অর্থাত আমাদের আত্মাও এরকমই বিরক্ত হবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। দেহ যতক্ষণ আছে কাজ করে যাও,দেহ অকেজো হলে বা তার কোনো অঙ্গ অকেজো হলে সেটা বাদ দিয়ে দাও। যতদিন এভাবে বাদ দিতে দিতে চলে চালাও,তারপর বেরিয়ে পড় আপন শরীরে অনন্তের পথে। 
  

Friday, 25 October 2013

সুখবর

একটি সুখবর জানাই সকল পাঠক পাঠিকা বন্ধুদের - গতকাল " কেদারনাথে আজ ঘটে অঘটন "লেখা শেষ হল। এবার সেটি যাবে ডিটিপি-তে। অনেক ভক্ত জিজ্ঞেস করেছিলেন কেদারনাথের প্রলয়ের কারণ। হয়ত তাদের উত্তর দেয়ার জন্যেই মে মাসে আমার আলাপ হয় প্রভার সাথে। ল্যানকাশায়ারের এই মেয়েটি আমার "দেবলোকের অমৃতসন্ধানে" পরেই নেমেছিল পথে।বদ্রীনাথে পিতামাতার পিন্ড দেয়াই  ছিল ওর উদ্যেশ্য। কিন্তু চলার পথে ও জড়িয়ে গেল এক অপার্থিব অভিজ্ঞতার সাথে। এর মাঝেও গুগল hangout থেকে ওর সাথে কথা হয়েছে হরিদ্বার ও রুদ্রপ্রয়াগে।তার অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মাঝে অনেকেই পাবেন তাঁদের উত্তর।নিয়তি যে মানুষকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করে অর অভিজ্ঞতা তার প্রমান।  
ভালো থাকবেন  ..   শুভেচ্ছাসহ তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় 

​​

Monday, 14 October 2013

শুভ বিজয়া - ​আমার Friends ৯১.৯ F.M-এর অনুষ্ঠানে তৃষা বোস মহাশয়ার আমার আধ্যাত্মিক আলোচনার download link

  শুভ বিজয়া - ​Friends ৯১.৯ F.M-এ তৃষা বোস মহাশয়ার অনুষ্ঠান "ভাবসাগরের পাড়ে বসে "-তে আমার সাক্ষাত্কার আধ্যাত্মিক আলোচনার download link 

বন্ধুগণ,আপনারা যারা আমার লেখা বই বা ব্লগ ভালবাসেন ও পড়েন তাদের সবাইকে জানাই  শুভ বিজয়া। এই পুণ্যলগ্নে আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি কিছু উপহার আমার পক্ষ থেকে। 
  এবার পূজায় ৯১.৯ friends F.M -এ  তৃষা বোস মহাশয়ার অনুষ্ঠান "ভাবসাগরের পাড়ে বসে "-তে আমার সাক্ষাত্কার নেয়া হয়েছিল এবারের দুর্গাপূজার সপ্তমী ও অষ্টমীতে। সেইসাথে ষষ্ঠীতে ও দশমীতে নেয়া হয়েছে সঙ্গীতশিল্পী  শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় ও কাবেরী বোসের সাক্ষাত্কার। 
  সেই সাক্ষাত্কারর্গুলি এখানে তুলে দিলাম আমার পাঠক পাঠিকা বন্ধুদের জন্যে। প্রথমে দেয়া হল ২০১৩ দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীতে ও মহাষ্টমীতে ​
তৃষা বোস মহাশয়ার নেয়া আমার সাক্ষাত্কারটির পুরো রেকর্ডিং। এই রেকর্ডিং করেছেন আমাদের আশ্রমের বিশিষ্ট ভক্ত শ্রী শুভজিত মুখার্জী। 

​১) মহাসপ্তমীর অনুষ্ঠানটির free download link - ​এতে রয়েছে আমার exclusive সাক্ষাত্কার দুর্গাপূজা ও নানা বিষয়ে আমার নানা মত  সম্বন্ধে - অনুষ্ঠানটি ডাউনলোড করার জন্যে নীচের ছবিটিতে click করুন - 

​২) মহাষ্টমীর অনুষ্ঠানটির free download link - এতে রয়েছে আমার exclusive সাক্ষাত্কার দুর্গাপূজা ও নানা বিষয়ে আমার নানা মত  সম্বন্ধে - 
অনুষ্ঠানটি ডাউনলোড করার জন্যে নীচের ছবিটিতে click করুন

৩) দশমীর অনুষ্ঠানটির free download link - ​এতে আছে শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় ও কাবেরী বোসের সাক্ষাত্কার পুরনো কলকাতার পূজা সম্বন্ধে  এবং সেইসাথে আমার অল্প একটু  বিশ্লেষণ theme পূজা নিয়ে। 
অনুষ্ঠানটি ডাউনলোড করার জন্যে নীচের ছবিটিতে click করুন - 

৪) ষষ্ঠীর অনুষ্ঠানটির free download link - এতে আছে শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় ও কাবেরী বোসের সাক্ষাত্কার  পুরনো কলকাতার পূজা সম্বন্ধে।  অনুষ্ঠানটি ডাউনলোড করার জন্যে নীচের ছবিটিতে click করুন - 

পরিশেষে সবাইকে জানাই আমার শুভ বিজয়ার আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা । আসলে আমার যেসব প্রিয় পাঠক পাঠিকারা অনুষ্ঠানটি শুনতে পাননি মূলত তাদের অনুরোধেই এই ডাউনলোড গুলো এখানে দিয়ে দেয়া হলো যাতে সবাই শুনে এর আস্বাদ করতে পারেন। 


​                                   ​
ভালো থাকবেন  .. 
​       
  
​                                  ​
শুভেচ্ছাসহ 

​                                 ​
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় 

Tuesday, 8 October 2013

একটি ঘোষণা ​

                 একটি ঘোষণা ​

বন্ধুগণ, বাংলা রেডিও-র ৯১.৫ এফ.এম.চ্যানেলে  আগামী ১১ অক্টোবর সপ্তমীতে,১২ অক্টোবর অষ্টমীতে এবং ১৪ অক্টোবর দশমীতে ভোরবেলায় ৫টা থেকে ৬টা পর্যন্ত বিশিষ্ট ভক্ত সঙ্গীতশিল্পী ​তৃষা বোস গুপ্ত মহাশয়ার  বিখ্যাত অনুষ্ঠান "ভাবসাগরের তীরে"-তে পূজার আলাপচারিতায় বিখ্যাত শিল্পী শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায় ও কাবেরী গুহর সাথে থাকছি আমি -আপনাদের প্রিয় তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। আলোচনা হবে পূজার বিষয়ে -আমার আধ্যাত্মিক পথে আসা,তন্ত্র,কুলকুন্দলিনী,দুর্গাপূজার থেমে প্রভৃতি অনেক বিষয়ে। কথা হবে সবার 
 সাথে পূজার বিভিন্ন দিক নিয়ে।সাথে থাকছে অনবদ্য ভক্তিসঙ্গীতের 
 ডালি। দূর্গাপূজা উপলক্ষ্যে সবাইকে জানায় আমার শারদীয়া শুভেচ্ছা।

Friday, 4 October 2013

মহাভারত রূপকের আলোয়

                                 মহাভারত রূপকের আলোয় 


   মহাভারত মহাগ্রন্থ আমাদের কাছে দ্বাপর যুগের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু মহাভারত লেখা হয়েছে একইসাথে সাধকদের জন্যে এবং সমাজের জন্যে।আমরা মহাভারতকে যদি বিশ্লেষণ করি তবে জানতে পারব - এর ভিতর দিয়ে কিভাবে সাধনার সংকেত দেয়া রয়েছে। এখানে দ্রৌপদী বা কৃষ্ণা হলেন দেহের রূপক।পঞ্চপান্ডব হলেন পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের প্রতীক।দেহের সাথে পাঁচ ইন্দ্রিয়র বিবাহ দিয়ে শুরু জীবনের যাত্রাপথ।যখনই জীবাত্মা জীবশরীর ধারণ করে তখনই পঞ্চ ইন্দ্রিয় জেগে ওঠে তার মধ্যে।দ্রৌপদীর সাথে পাঁচ পান্ডবের বিয়ে সেই তত্বটি তুলে ধরেছে।এবার আসা যাক পান্ডবদের জন্ম প্রসঙ্গে। কোন পান্ডব কিন্তু সাধারনভাবে জন্মায়নি। তারা কুন্তি বা পৃথার পুত্র। এই পৃথা হলো পৃথিবীর প্রতীক। এবং প্রত্যেকেরই জন্মদাতা কোন না কোনো দেবতা।তার মানেটা কি দাঁড়ায় ? পাঁচ ইন্দ্রিয় তথা পঞ্চপ্রাণ জন্ম নেয় পৃথিবী ও দেবতার মিলনের ফলে। অর্থাত মাটি থেকে পাওয়া দেহ এবং তার ভিতরে পরমাত্মা থেকে জন্ম নেয়া জীবাত্মা যখন একত্র হয় তখনই পঞ্চপ্রাণ তথা পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের জন্ম।   
    এরপর আসি কৌরবদের কথায়। পান্ডবদের সাথে কৌরবদের সবসময়ে বিরোধ।এই কৌরবদের সংখ্যা ১০০ ।  ১০০ কৌরব হচ্ছে মনের প্রবণতা যা শতধা বিভক্ত।মহাভারতে আছে - যুধিষ্ঠির ছিলেন পাশা খেলায় দক্ষ। তিনি ভাবতেন - তিনি পাশা খেলে কৌরবদের পরাস্ত করতে পারবেন। ঠিক যেমনভাবে আমাদের ইন্দ্রিয়গুলি  মনের নানারকম প্রবণতার সাথে জুয়া খেলে জিততে চায়। কিন্তু সেই জুয়া তাকে পতনের দিকেই নিয়ে যায়। ঠিক যেমন পান্ডবরা এই জুয়ার ফলেই জীবনের সবকিছু সুখ হারিয়ে বাধ্য হয়েছে বনবাসে যেতে। 
   
    এবার আসা যাক ধৃতরাষ্ট্রের প্রসঙ্গে।ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ তার সন্তানদের স্নেহে। ধৃতরাষ্ট্র হল আমাদের মনের প্রতীক। মনের সন্তান হল সকল প্রবণতা। অর্থাত আমাদের মন সবসময়ে নিজ প্রবণতার প্রতি অপত্যস্নেহে ডুবে থাকে। গান্ধারী হল অন্ধভাবে মনকে অনুসরণ করার প্রতীক। আমরা অনেকসময়েই জানি - কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা তবু আমরা চোখ বন্ধ করে রাখি এবং অন্যায়কে মেনে নেই। আমাদের সেই ভাবের প্রতীক হল গান্ধারী। আর মন যখন নিজের প্রবনতার প্রতি অন্ধ থাকে এবং নিজের বোধ বুদ্ধি থাকলেও নিজের দৃষ্টিকে আবৃত রাখে তখনই মনের এই আপোষমূলক মনোভাবের প্রতীকের ভাই  সর্বনাশের আবির্ভাব হয়। ঠিক যেমন মহাভারতে এভাবেই গান্ধারীর ভাই শকুনীর প্রবেশ ঘটেছিল।এই শকুনী হল মনের ভিতরের সেই কুটিল ভাবের প্রতীক যা আমাদের মনে আসে যখন মন বিবেচনা শক্তি হারিয়ে সবকিছুর সাথে আপোষ করতে চায়। আর এই কুটিল ভাব মানুষের মনের সকল শান্তি নষ্ট করে তাকে নিয়ে যায় সর্বনাশের পথে।

 কৌরব আর পান্ডবদের মাঝে রয়েছেন কর্ণ। মহাভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এই কর্ণ হলেন ইগো বা অহমিকার প্রতীক। তার রয়েছে কবচ কুণ্ডল যার ফলে তিনি অবধ্য।আমাদের এই ইগোও অবোধ্য। তাকে বধ করতে না পারলে জীবনের যুদ্ধে জয় অসম্ভব। তাকে বধ করতে হলে এই কবচ কুণ্ডল কেড়ে নিতে হয়। একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই পারেন সেই কবচ কুণ্ডল কেড়ে নিতে।অর্থাত আত্মা যখন বিবেককে গুরু করে এই অহমিকার কবচ কুণ্ডল কেড়ে নেয় তখনি ইগোকে বোধ করা সম্ভব। যেমন মহাভারতে পান্ডবদের জয়ের শেষ বড় কাঁটা ছিলেন কর্ণ তেমনি জীবের মুক্তির সবচেয়ে বড় কাঁটা এই ইগো। এর বধ একান্ত প্রয়োজন। 
   
   পান্ডবদের বনবাসের শেষে এল কুরুক্ষেত্র। কুরুক্ষেত্র কি? যে জগতে আমরা রয়েছি সেই হল কুরুক্ষেত্র।এই কুরুক্ষেত্র হল সেই জগত যেখানে নিয়ত চলছে ইন্দ্রিয় এবং মনের শতধা বিভক্ত প্রবণতার মধ্যে যুদ্ধ।  এখানে সমানে ভালো এবং মন্দের লড়াই চলে। এখানে পান্ডবপক্ষের পরামর্শদাতা শ্রীকৃষ্ণ পরামর্শ দিচ্ছেন অর্জুনকে বিপক্ষের ভালো মন্দ সবাইকে বধ করতে। কৌরবপক্ষে ভালো মন্দ দুই ছিল। কিন্তু তাও কৃষ্ণ তাদের সবাইকেই বধ করতে বলেছেন। কারণ - সকল প্রকার প্রবণতাই বধ করতে হয় মনকে নির্বিকল্প সমাধীর স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্যে।তাই যেসব অসত প্রবণতা বা শুভ প্রবণতা মনে জাগে সবেরই বধ আশু প্রয়োজন। যথার্থ জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হতে গেলে ভালো মন্দ দুইকেই পেরিয়ে যেতে হবে। গীতায় শ্রী কৃষ্ণ বলছেন - এখানে শত্রু মিত্র কারোরই কোন অস্তিত্ব নেই। তুমি এদের কি বধ করবে?আগে থেকেই এরা বধ হয়ে আছে। তুমি নিমিত্ত হও।খানে প্রবণতাগুলির কোন অস্তিত্ব নেই। আমরা এদের যেভাবে জন্ম দিই এরা সেভাবেই বড় হয়। এরা মূলত মৃত। সব প্রবণতা অস্তিত্বহীন।এদের আমরা বাঁচিয়ে রাখি আমাদের কর্মের দ্বারা। মুক্তি পেতে গেলে এই সব প্রবণতা বধ করতে হবে। 

  লেখাটি ক্রমশ বড় হয়ে যাচ্ছে। তাই শ্রীকৃষ্ণের প্রসঙ্গ টেনেই আজকের মত ব্লগ শেষ করছি। শ্রী কৃষ্ণ হলেন জীবাত্মার প্রতীক যিনি পরমাত্মার অংশ । তাঁর গায়ের রং ঘন নীল যা অনন্তের প্রতীক যেমন নীল আকাশ বা নীল সমুদ্র। তাঁর জ্ঞান হল অনন্ত।তাঁর লীলাও অসীম। তিনি পীতাম্বর।হলুদ বস্ত্র পরেন। এই হলুদ হল পৃথিবীর প্রতীক। অর্থাত অসীম অনন্ত পরমাত্মার প্রতীক পার্থিব দেহ ধারণ করে এসেছেন। অর্থাত বাইরে পার্থিব দেহ,ভিতরে অনন্ত আত্মা। শ্রীকৃষ্ণ মহাভারতের যুদ্ধে ছিলেন দ্রষ্টা। জীবাত্মাও দ্রষ্টা। কিন্তু বিবেকের রূপে তিনি তার বাণী শুনিয়ে দেন পঞ্চপ্রাণ তথা পঞ্চইন্দ্রিয়কে। সেই কথা শুনে তারা যদি তাঁর কথা মেনে নেয় তবেই জয়যুক্ত হয় জীবনের কুরুক্ষেত্রে। পান্ডবদের জয় সেই রূপক বহন করছে।  

Monday, 23 September 2013

সাত্ত্বিক ব্যক্তি ও তার বৈশিষ্ট্য

        সাত্ত্বিক ব্যক্তি ও তার বৈশিষ্ট্য 

    ইতিপূর্বে বলেছি রাজসিক ও তামসিক ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে। এবার লিখছি  সাত্ত্বিক মানুষের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
   সাত্ত্বিক মানুষদের মধ্যে কোনো কাজের প্রতি আসক্তি বা কর্ম করার জন্যে অহংকার থাকে না। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে  তাঁদের সব কাজ ঈশ্বরের মাধ্যমেই সংগঠিত হয় আর তাই সে কাজের কর্তৃত্ব নেয়াও অন্যায়। এমনকি তাঁরা ত্যাগ করতে অভ্যস্ত হলেও,অহংকার এড়িয়ে চললেও এবং কামনারহিত হলেও কখনো ভাবেন না যে তারা ত্যাগী,নিরহংকারী বা নিষ্কাম ব্যক্তি।
    সাত্ত্বিক মানুষ কখনো মনে করেন না যে তিনি শ্রেষ্ঠ বা তাঁর মত কাজ কেউ করতে পারেন না। তিনি যা বলেন অন্তর থেকে ,যা করেন বিবেকের প্রেরণায়। তাঁর মধ্যে কোন মন আর মুখের প্রভেদ থাকেনা। তাঁর মধ্যে থাকে অসীম ধৈর্য। মানুষের জীবনে নানারকম বাধা বিঘ্ন আসে -সাত্ত্বিক মানুষ কিন্তু সকল বাধাবিঘ্ন সত্বেও শান্তভাবে ধৈর্য অবলম্বন করে থাকতে পারেন। সাফল্যে ভেসে যান না আবার দুঃখেও ভেঙ্গে পরেন না। জীবনের সবকিছুতে সমদৃষ্টি থাকায় আধ্যাত্মিক মানুষের বৈশিষ্ট্য।
   সাত্ত্বিক মানুষরা সবসময়ে সত্য কথা বলেন,মানুষের ভালোর জন্যে ভাবেন এবং নিজেদের সঁপে দেন সবার ভালোর জন্যে।
   আধ্যাত্মিক পথে এগোতে হলে এই সাত্ত্বিক গুন অবলম্বন একান্ত প্রয়োজন। 

Sunday, 22 September 2013

তামসিক মানুষ ও তার বৈশিষ্ট্য

                 তামসিক মানুষ ও তার বৈশিষ্ট্য

গতকাল লিখেছিলাম রাজসিক মানুষের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে। আজকে লিখছি তমগুণসম্পন্ন মানুষদের সম্বন্ধে। 
তামসিক মানুষের থাকে আটটি বৈশিষ্ট্য। 
১)এদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হল নির্বুধ্ধিতা। এরা বুঝতে পারে না কি কাজ করা উচিত এবং কি কাজ করলে নিজেদের ক্ষতি হতে পারে। ফলে এরা কর্তব্য বা অকর্তব্যের মধ্যে ফারাক বুঝতে পারে না। 
২) এদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল অভদ্রতা। তারা শাস্ত্রপথ ও সত্সঙ্গ না করে তাদের ব্যবহার শিক্ষারহিত হয়ে থাকে। কাদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে এরা বোঝেনা। 
৩) এদের মধ্যে থাকে অনম্রতা। এদের শরীর,মন ও বাক্য হয় উদ্ধত। 
৪) এরা জেদী হয়। অন্যের সুচিন্তিত মতামত কখনো গ্রহণ করে না। আর নিজের সিদ্ধান্তকেই  সঠিক বলে মনে করে। শত প্রমাণ দিয়েও তাদের কিছু বোঝানো যায় না। 
৫) এরা অন্যের থেকে উপকার পেলেও কখনো তার উপকার করতে চায়না। বরং অপরের ক্ষতির জন্যে নিবেদিত প্রাণ থাকে। 
৬) এরা অলস হয়। নিজের কর্ম করার পরিবর্তে শুয়ে শুয়ে অনর্থক চিন্তা করতেই ভালবাসে। 
৭) তাদের মধ্যে একটা বিষাদবোধ কাজ করে। যেহেতু তারা কোন ভালো কাজের সাথে যুক্ত থাকেনা তাই তাদের মধ্যে একটা অবসন্নতা বোধ ও বিষাদবোধ কাজ করে। আর সেই বিষাদবোধ হয় অহেতুক। নেই কাজ তো খই ভাজ ধাচের। 
৮) এদের মধ্যে একটা দীর্ঘসুত্রিতা কাজ করে। যে কাজ স্বল্পসময়ে শেষ করা যায় তারা সেটিকে ঝুলিয়ে রেখে দায়। কোন কাজ সুচারুভাবে শেষ করতে চায় না। এমনকি সহজ কাজও সহজে শেষ করতে চায় না। 
  যারা সত্বগুন্সম্পন্ন হতে চান তাদের এই তামসিক বৈশিষ্ট্যগুলো এড়িয়ে চলা খুব প্রয়োজন। 


Saturday, 21 September 2013

রাজসিক মানুষ ও তার বৈশিষ্ট্য

                     রাজসিক মানুষ ও তার বৈশিষ্ট্য

আজকে আমার একজন ভক্ত আমাকে লিখতে বলছিলেন রাজসিক ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে লেখার জন্যে। তাই আজকে তার অনুরোধেই লেখা ধরছি রজগুণের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে । যার মধ্যে রজগুণ প্রবল থাকে তার মধ্যে ৬টি বৈশিষ্ট্য  দেখা যায়- 
১) তার মধ্যে থাকে খুব বিষয়ের প্রতি আসক্তি। আসক্তি রজগুণের লক্ষণ। 
২) তার আসক্তি থাকে কর্মফলে। সে যে কাজই করুক তার ফল কামনা করে। কর্ম থেকে ইহলোকে যশ খ্যাতি এবং দেহান্তে স্বর্গে সুখভোগ কামনা করে। 
৩) তার থাকে বেশী লোভ। সে যতটুকু পায় তাতে কখনো সন্তুষ্ট হয় না। সে চায় আরও বেশী।
৪) তার মধ্যে থাকে হিংসা। এই হিংসা তামসিক মানুষের মধ্যেও থাকে কিন্তু রাজসিকদের হিংসার প্রকৃতি অন্যরকম। তামসিক মানুষরা হিংসা করে নিজেদের অজ্ঞানের জন্যে কিন্তু রাজসিক ব্যক্তিরা হিংসা করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে। নিজের লাভের জন্যে সে অপরের ক্ষতির পরোয়া করে না। এদের স্বভাবটাই হয় হিংসাত্বক। 
৫) তার মধ্যে থাকে অশুচিতা। অর্থাত সে বস্তু সংগ্রহ করে ভোগের জন্যে। আর তাই তার সকল বস্তুই ভরে থাকে অশুচিতে। এদের দেহ -অস্থি -মজ্জা সব অশুচি হয়ে থাকে। যে স্থানে এই রাজসিক ব্যক্তিরা থাকে তাদের এই অশুচিতে কলুষিত হয়ে থাকে সেখানকার বায়ুমন্ডল। ফলে এইসব লোকেরা যখন মারা যায় অতিরিক্ত আসক্তির জন্যে পৃথিবীর অশুচি স্থানেই এদের বাস করতে হয় সুক্ষ্মদেহে। 
৬) রাজসিক ব্যক্তির আরেকটি বৈশিষ্ট্য  হল - তার জীবনের সফলতা ও বিফলতার সাথে আবেগ পরিবর্তন। তারা সুখে বেশী আনন্দিত হয় আর দুঃখে বেশী কাতর হয়। 
  যারা সত্বগুণে সমৃধ্ধ হতে চান তাদের এই ৬টি রাজসিক বৈশিষ্ট্য ত্যাগ অত্যন্ত জরুরি।

Friday, 20 September 2013

অশান্তি থেকে উদ্ধারের পথ

                                                            অশান্তি থেকে উদ্ধারের পথ 
      মানুষের জীবনে অশান্তির কারণ সংসার .. সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলেই মন অশান্ত হয়ে পড়ে .. মনকে শান্ত করার জন্যে ঠাকুর শ্রীকৃষ্ণ তিনটি পথ বলেছেন - কর্মযোগ , জ্ঞানযোগ ও  ভক্তিযোগ.. 
        প্রথমে আসি কর্মযোগের কথায় .. কর্মযোগ হল ফলের আশা না করা ও কর্তৃত্বের অভিমান ত্যাগ করে নির্লিপ্তভাবে কর্ম করা..এতে সংসার থেকে আসক্তি চলে যায়..ফলে মনে শান্তি ও আনন্দ আসে..যাদের যোগবুদ্ধি আছে তারা কর্মফল পরিত্যাগ করে জন্মবন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করেন..
       দ্বিতীয়তঃ আসছে জ্ঞানযোগ..জ্ঞানযোগ দিয়ে আত্মস্বরুপে স্থিত হওয়া যায়..এবং তাতে লাভ হয় অনন্ত আনন্দ .. যে মানুষ অন্তরাত্মাতেই সুখযুক্ত  এবং আত্মাতেই জ্ঞানযুক্ত সেই জ্ঞানযোগী নির্বাণ ব্রহ্ম লাভ করেন ..
       তৃতীয়তঃ  আসছে ভক্তিযোগ .. এতে ভগবানের সঙ্গে অভিন্ন সম্পর্ক স্থাপন হয় .. তাতে লাভ হয় প্রেম বা অনন্ত আনন্দ..
      জ্ঞানমার্গের পথিকরা ভগবানের দর্শন চান না .. তাঁরা  আত্মস্বরুপ জেনে এবং তাতে প্রবিষ্ট হয়ে খুশী থাকেন .. তাই তাঁদের আর ভগবান দর্শন হয় না .. কিন্তু ভক্তিমার্গের পথিকদের আত্মস্বরূপ জ্ঞান হয় এবং তাঁরা  আত্মস্বরুপে অধিষ্ঠিতও হতে পারেন আর সেইসাথে তাঁদের ইষ্টদর্শন হয় .. লাভ হয় অনন্ত প্রেম .. তখন ভক্ত আর ভগবান প্রেমিক আর প্রেমাস্পদের মত এক হয়ে যান .. এ প্রসঙ্গে শ্রী রাধার কথা বলা যায় .. তিনি বলেছিলেন - শ্রীকৃষ্ণ  দর্শনের আগেই তাঁর শ্রী কৃষ্ণে প্রীতি হয়েছিল এবং দৃষ্টি বিনিময় হওয়ার পর সেই অঙ্কুরিত অনুরাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে দিনের পর দিন ধরে .. দেখতে দেখতে সেই প্রেম যেন দুজনের মনকে পেষণ করে অভিন্ন করে তুলেছে .. ফলে শ্রীরাধা তখন আর রমনী স্বরূপে আবদ্ধ ছিলেন না .. শ্রী কৃষ্ণও আবদ্ধ ছিলেন না রমণ স্বরূপে .. দুজনে একে অপরের সাথে মিশে এক হয়ে গেছিলেন ভক্ত ও ভগবান রূপে .. এই তো প্রেমের শ্রেষ্ঠ উপহার .. ভক্তিয়োগের পরম নিদর্শন ..
        তাইতো  বলি - প্রথমে কর্ময়োগের মাধ্যমে নিজেকে সংসারের প্রতি নির্লিপ্ত কর আর তারপরে ঝাঁপ দাও ভক্তির সাগরে .. জ্ঞানের সাগরেও ঝাঁপ দিতে পারো ..তবে ভক্তিতে পাবে তাঁর লীলার আস্বাদ যা জ্ঞানে নেই .. জ্ঞানী তো ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা জেনে আত্মস্বরুপে স্থির হয়ে থাকেন পরম আনন্দে ..ভক্ত সেইসাথে তাঁর পরম প্রেমিকের লীলার রসও আস্বাদ করেন .. 
        তাইতো  ভক্তি যোগের চেয়ে বড় পথ হয় না ..
   

Wednesday, 18 September 2013

ক্রোধ

                        ক্রোধ 

অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন - ক্রোধ বলতে ঠিক কি বোঝানো হয়? শাস্ত্রে বলে - ক্রোধ হল চন্ডাল। এক মুহুর্তের ক্রোধ শেষ করে দিতে পারে এক ফল। তা এহেন ক্রোধ বস্তুটি কি?
      এর উত্তরে বলি - মানুষের যখন কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণে বাধা আসে,অর্থাত কামনাপুরণে বাধা আসে তখন মনের ভিতরে যে জ্বালার অনুভুতি হয় তাকে বলে ক্রোধ। এই সময়ে অপরের অনিষ্টের চিন্তায় মনের ভিতরে যে জ্বালার সৃষ্টি হয় তাকেই ক্রোধ বলে ।
      অনেক ছেলেমেয়েরা আমাকে বলে ," জানো, আমার বাবা বা মা খুব রাগী।আমাদের উপরে খুব রাগ করে।" এই রাগকে কিন্তু ক্রোধ বলে না,এটা হলো ক্ষোভ। কারণ বাবা বা মা মুখে যতই কটু বাক্য ব্যবহার করুন তার উদ্যেশ্য তো সন্তানের মঙ্গল।তাই তাকে ক্রোধ বলে না। কিন্তু যখন উত্তেজিত হয়ে অপরের ক্ষতি করা হয় এবং তাদের দুঃখ দিয়ে যখন মনে আনন্দ অনুভব করা হয় তাকে বলে ক্রোধ। তবে এই ক্রোধী ব্যক্তিরা কিন্তু এক অর্থে মানুষের মঙ্গল করে। এরা অন্যের মনে আঘাত দিয়ে নিজের অপকার করে পাপ সঞ্চয়ের মাধ্যমে কিন্তু সে যার অপকার করে তার পাপক্ষয় হয়ে যায়।
      অর্থাত যারা আধ্যাত্মিক পথে এগোতে চান তাদের কিন্তু ক্রোধ সম্পর্কে খুব সতর্ক থাকতে হয়। গীতায়  ভগবান বলেছেন - এই ক্রোধ হল মানুষের প্রথম শত্রু যা দেহে অবস্থান করে দেহেরই বিনাশ সাধন করে। যেমন কাষ্ঠস্থিত অগ্নি কাঠকে জ্বালিয়ে দেয় তেমনই দেহে অবস্থিত ক্রোধরূপী অগ্নি দেহকেই ভস্মীভূত করে। তাই ক্রোধ সম্পর্কে সাবধান।

Wednesday, 21 August 2013

প্রারব্ধের থেকে আত্মরক্ষা

                     প্রারব্ধের থেকে আত্মরক্ষা 

আমরা যখনই কারোর কাছ থেকে কোনো উপকার লাভ করি তখনই সেইসাথে তার কিছু প্রারব্ধও চলে আসে আমাদের মধ্যে। এটি প্রতিটি সম্পর্কের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাবা,মা বন্ধুবান্ধব সবার উপকারের সাথেই তার কিছুটা প্রারব্ধ এসে যায় আমাদের মধ্যে। এই পৃথিবীতে কোনকিছুই বিনামূল্যে মেলেনা। আমরা যখন অপরের দান গ্রহণ করি তার সাথে এই প্রারব্ধও  টেনে নেই। এইজন্যে কখনো কারোর থেকে কোনো উপকার পেলে চেষ্টা করবে তার আরও বেশি উপকার করতে। সাধকরা বলেন -দিয়েই আনন্দ,নিয়ে নয়। তার কারণ এটিই। তাই আমাদের উচিত সবসময়ে খেয়াল রাখা যাতে ভুলেও কারো কাছে হাত পাততে না হয়। আর পাতলেও তা যথাসম্ভব দ্রুত সুদ-আসলে শোধ করে দিতে। এইজন্যেই যুধিষ্ঠির বলেছিলেন - সেই সবচেয়ে সুখী যার কোনো ঋণ নেই। তাই সবসময়ে চেষ্টা করবে মানুষকে দিতে ,আর্তের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে,সাধু সন্যাসীর সেবা করতে - এর মধ্যে দিয়ে তোমার প্রারব্ধ অনেকাংশে কেটে যাবে। আর চেষ্টা করবে কারো কাছ থেকে কিছু না নিতে,অপরের থেকে পাওয়া উপকার এড়িয়ে যেতে।তাহলে অনেক অযাচিত প্রারব্ধের থেকে মুক্তি পাবে।

Saturday, 17 August 2013

নিন্দা হল বন্ধুর কাজ

             নিন্দা হল বন্ধুর কাজ 
    আমার স্নেহের বোন মালা আমায় এক অধিবেশনে প্রশ্ন করেছিল : দাদা,কলকাতার একজন spiritual বইয়ের লেখক(তপোভুমি নর্মদার মহাত্মা বরফানী দাদাজীর উপর তাঁর বইও আছে) কারণে অকারণে তোমার নিন্দা করেন। আমি নিজের কানে তাঁর সেই অবান্তর নিন্দা শুনেছি।আমরা এর প্রতিবাদ করতে চাই। এ বিষয়ে তুমি কলম ধর দাদা।

  উত্তরে আমি বলেছিলাম : এমনিতে দিলীপ কুমার রায় বলেছিলেন যে যারা দেখে - অপরের পিঠ চাপড়াতে না পারলে নিজের কপাল চাপড়াতে হবে তারাই অন্যের নিন্দা করে। তবে আমি কিন্তু অন্যভাবে ভাবি । আমি সানন্দে সেই লেখকের দীর্ঘায়ু ও কুশল কামনা করি। কারণ হিসেবে একটি কাহিনী বলছি। কাশীর এক সাধু সন্ত কবীরের খুব নিন্দা করতেন। কিন্তু কবীর সবসময়ে তাঁর কুশল চাইতেন।একদিন সেই সাধু মারা যান। ভক্তরা সেই সংবাদ কবীরকে দিলে তিনি ধুলায় লুটিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকেন আর বলতে থাকেন, "হামারা ধোবি  চলা গয়া। " পরে কবীর শান্ত হলে ভক্তরা যখন জিজ্ঞেস করেন তাঁর এই ব্যবহারের কারণ তখন তিনি বলেন,"তোমরা আমাকে এত ভালোবাসো ও সম্মান কর তাতে আমার তো অহংকার আসতে পারে যেটা পাপের সামিল,কিন্তু ওই সাধু আমার নিন্দা করে আমার সেই পাপতাপ নিজের মধ্যে টেনে নিতেন।তাই তিনি ছিলেন আমর প্রকৃত বন্ধু তথা ধোবি যিনি আমার ময়লা নিত্য পরিষ্কার করে দিতেন।আজ সেই ধোবিকে আমি হারালাম।" তাই তোমরাও সেই লেখকের উপর রাগ কোর না আমার নিন্দা করার জন্যে। তিনি যে এভাবেই আমর উপকার করে যাচ্ছেন। যাঁরা অকারণে নিন্দা করেন তাঁরা যে সত্যই ধোপার মত বড় বন্ধুর ভুমিকা পালন করেন। তাই সবসময়ে তাঁদের ভালো চাইতে হয়। 

Thursday, 18 July 2013

অহং থেকে মুক্তির পথ

            

             অহং থেকে মুক্তির পথ 

আমরা অনেক সময়েই ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি - আমাদের অহংকে দুরে সরিয়ে দাও। কিন্তু সাধারণ মানুষকে অহং থেকে মুক্তি একমাত্র দিতে পারে মৃত্যু।মৃত্যুর পরই যে কেটে যায় মায়ার বন্ধন।কিন্তু জীবিত অবস্থায় যদি অহং থেকে মুক্তি চাই তবে আমাদের নিজেদের চেষ্টা করতে হবে। কারণ এই অহংকার ঈশ্বরের সৃষ্টি নয়।এর স্রষ্টা স্বয়ং আমরা। এই মান ও হুঁশ যুক্ত মানুষ। যখন আমাদের মধ্যে ধর্মপরায়ণতা,দয়া,মায়া,ভালবাসা,স্নেহ,প্রেম,জ্ঞান ইত্যাদির থেকে মন সরে যায় এবং আমরা অন্তরের সৌন্দর্যের পরিবর্তে  বহিরঙ্গের সৌন্দর্যকে নিয়ে মেতে থাকি তখনই আমাদের পথ ভুল হয়। যতক্ষণ আমরা এই বহিরঙ্গের নশ্বর বস্তুর মধ্যে নিজেদের সুখ খুঁজতে থাকব ততক্ষণ আমাদের কাছে ধরা দেবে শুধুই অসুখ। ফলে ভিতরে পুষ্ট হতে থাকবে আমাদের অসন্তোষ। আর সেই অসন্তোষ থেকে যতই বেরিয়ে আসার চেষ্টা করব আমরা বাইরের পথে ততই ক্রোধ,অবিবেক প্রভৃতি অসুর উত্পন্ন হতে থাকবে আমাদের ভিতরে অহংকারের সঙ্গী হিসেবে। কারণ বাইরের  জগতে যা আছে সবই নশ্বর।  তাই এর থেকে মুক্তি পেতে হলে ডুব দিতে হবে নিজের মনের ভিতরে।নিতে হবে যোগের পথ।তা ছাড়া আমাদের তৈরী এই দানবের হাত থেকে পরিত্রাণের কোন পথ নেই।

Tuesday, 16 July 2013

আশা

                                                      আশা 
মানুষের জীবনে যাবতীয় অশান্তির মূল কারণ আশা। আশা আছে বলেই জাগে পাওয়ার ইচ্ছা।আর পাওয়ার ইচ্ছা থেকেই আসে হারানোর ভয়।মানুষ যখন কোনো কাজ করে সে আবার ফিরে পেতে চায় অন্যের থেকে তার প্রতিদান।সবসময়ে সে যে তা পায় এমন নয়।এর ফলে তখন তার মনে আসে অশান্তি।অর্থাত কিনা - ছায়ার মধ্যেই আছে গলদ। আমরা  যদি এই চাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে পারি তবেই আমাদের মধ্যে থেকে যাবে হারানোর ভয়।আছে যত টেনশন সব নিতে যাবে পেনশন।ভেবে দেখতে গেলে - আমরা চাই কেন? যা আমাদের ভাগ্যে আছে তা তো এমনিতেই পাব।আর যা ভাগ্যে নেই তা কখনই পাবনা। তবে কেন এত চাওয়া?কেন এত ফিরে পাওয়ার আশা? এখানে আমরা কর্ম করতে এসেছি,সেটি করে যাব।যা ফল পাওয়ার চাইলেও পাব,না চাইলেও পাব।তাই চাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করুন।পাওয়ার পালা আপনা থেকেই শুরু হয়ে যাবে।আর মন ভরে থাকবে শান্তিতে।

Monday, 15 July 2013

আসক্তি

                                       আসক্তি 

    আসক্তি হল যন্ত্রণার মূল কারণ। আবেগের যন্ত্রণা,রাগ,ভয়,হতাশা,অসুখ সব আসে আসক্তি থেকে। যে বস্তু পরিবর্তনশীল তার উপর আসক্তি এলেই আসে যন্ত্রণা।এটাই স্বাভাবিক। এই পৃথিবীতে সবই পরিবর্তনশীল।প্রকৃতি পরিবর্তনশীল।মানুষ পরিবর্তনশীল।যদি কখনো তোমরা নিজের ফেলে আসা দিনগুলির ছবি নিয়ে বস,দেখবে তোমরাও এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়েই চলেছ। বিগত দিনে তোমাদের কত আপনজন ছিল যারা আজকে সময়ের সাথে সাথে অনেক দূর হয়ে গেছে।আবার আজকে যারা তোমার কাছে আছে একদিন হয়ত এই সুত্র ধরেই তারাও চলে যাবে দুরে। ঋণানুবন্ধ শেষ হলেই সব শেষ। তাই আসক্তিতে নিজেকে বাঁধলেই যন্ত্রণা। 

এর থেকে বাঁচার উপায় কি জানো ?অতীতকে দেখো ইতিহাস হিসেবে।যাকে তুমি পাল্টাতে পারবেনা কিন্তু তার থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এগোতে পারবে।আর ভবিষ্যতকে দেখো এক রহস্যময় কাহিনী হিসেবে যেখানে ইশ্বরের আশির্বাদ ছাড়া একটুও এগোনো যাবে না।এতে তুমি পরিকল্পনা অবশ্যই করতে পারো কিন্তু সেটা বাস্তবায়িত হবে কিনা তা ঠিক করবেন ঠাকুর। তাই অতীত ভবিষ্যত নিয়ে না ভেবে বর্তমানকে মেনে নাও ঠাকুরের উপহার হিসেবে। নিজেকে অতীতের স্মৃতি আর ভবিষ্যতের জল্পনা থেকে যথা সম্ভব সরিয়ে নাও। বর্তমানটুকুই ঠাকুর তোমার হাতে দিয়েছেন।তাই শুধু তাকে নিয়ে থাকলেই চারপাশের চাপ ও যন্ত্রণা কাটিয়ে উঠবে।আবেগের যন্ত্রনাও সইতে হবে কম।

নিজেকে বর্তমানে রাখার একটি সরল উপায় বলছি।সুখাসনে বসে নিজের বুড়ো আঙ্গুল আর তর্জনী একসাথে কর।তারপর চোখ বন্ধ করে গভীর স্বাস নাও।তারপর খুব ধীরে ধীরে সেই স্বাস ছেড়ে দাও - এই ছাড়ার সময়ে চেষ্টা কর ১০ থেকে ২০ গুনতে।প্রায় মিনিট পাঁচেক ধরে এমনটি করলে দেখবে মন অনেক শান্ত হয়ে এসেছে।তখন স্থির হয়ে বসলে শুনতে পাবে তোমার নিজের শ্বাসের শব্দ। নিজের নিশ্বাসের এই শব্দই হলো তোমার আত্মার স্বর।সেই স্বর যখনি জাগবে তোমার মধ্যে তখনি শুরু হবে আসক্তিকে কাটিয়ে ওঠার পালা।

Tuesday, 9 July 2013

রথযাত্রা

                               রথযাত্রা

আজ রথযাত্রা। জগতের নাথ জগন্নাথদেবের রথযাত্রা। এই উপলক্ষ্যে জগন্নাথ মহাপ্রভু আজ আসবেন সকলের মাঝে। সকল সম্প্রদায়ের সকল ভক্তের সাথে আজ তাঁর রথে বিহার। এই রথে ভক্তদের সাথে শুধু যে স্বয়ং মহাপ্রভু জগন্নাথ থাকেন তাই নয়্সাথে থাকেন মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব জ্যোতির্ময় শরীরে,থাকেন তাঁর সকল পার্ষদ।তাই রথযাত্রা আধ্যাত্মিক পথের এক শ্রেষ্ঠ উত্সব।আমাদের উচিত - এই শরীর রূপ রথের সকল ভার মহাপ্রভুর কাছে সমর্পণ করে দিয়ে শরণাগত হয়ে এগিয়ে চলা এবং সকল কর্ম তাঁর কর্ম মনে করে নিস্পৃহ ভাবে থাকা ফলের আশা না করে।তবেই তো সার্থক হবে জীবনের রথযাত্রা। আজ রথ উপলক্ষে সবাইকে জানাই আমার শুভেচ্ছা ,আর সেইসাথে কনিষ্ঠদের জন্যে স্নেহ ও ভালবাসা।সবাই ভালো থেক এবং জীবনের রথকে এগিয়ে নিয়ে যেও।জয় জগন্নাথ।

Monday, 8 July 2013

জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রহসন

                         জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রহসন
মহাকালের স্রোত চলেছে বয়ে। তারই ফলে গড়ে উঠছে নদীর এক পাড় ,ভাঙছে আরেক পাড়। ভাঙছে পুরনো ইমারত,গড়ে উঠছে নতুন।সবই ক্ষণস্থায়ী,আজ আছে,কাল নেই।কাল যারা ছিল সাথে,আজ তারা অনেকেই নেই,আজ যারা সাথে আছে কাল তারা অনেকেই থাকবেনা।এটাই জীবন।তবু আমরা এই ক্ষণস্থায়ী খড়কুটো আঁকড়ে থাকতে চাই।জানি কিছুই থাকবেনা,আমরাও থাকবনা।তবু সবই আঁকড়ে থাকি।জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রহসন।

Thursday, 4 July 2013

পরিবর্তন

                                      পরিবর্তন 
   আমাদের জীবনে কত কিছু ঘটে যায় অহরহ। সময়ের সাথে সাথে পাল্টে যায় পরিবেশ।পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয় প্রতিটি মানুষকেই।তা সে ভালোমনেই মানুক বা বিরক্ত হয়েই।এই পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়ার নামই বহিরঙ্গের জীবন।
   আমাদের দেহেরই কত পরিবর্তন হয়।একদিন আমি ছিলাম শিশু।ধীরে ধীরে হয়েছি বালক,তরুণ,কিশোর।বর্তমানে আমি যুবক।এরপর হব প্রৌড়। আসবে বার্ধক্য।অবশেষে ঝরে যাব একদিন শীতের পাতাঝরা গাছের মত। এটাই জীবন।এর প্রতিটি অবস্থাকেই মেনে নিতে হয়।
    যেমন আসে আমাদের দেহের পরিবর্তন তেমনি আসে আমাদের সম্পর্কের পরিবর্তন সময়ের সাথে সাথে। নিত্য পরিবর্তনের সাথে সবাইকেই খাপ খাইয়ে নিতে হচ্ছে।সেটা মেনে নিয়েই এগোতে হবে।আজ কেউ তোমাকে ভালবাসছে বলে কালকেও যে একইভাবে ভালবাসবে তা নাও হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে তাকেও তো পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে হচ্ছে।সেই পরিবেশ তাকে কতটা তোমার জন্যে সমর্থন করছে সেটাও বুঝতে হবে বৈকি। আর তাকে মেনেও নিতে হবে। যত মানতে পারবে ততই শান্তি আসবে জীবনে। কখনো ভাববে না কি হতে পারত আর কি হলনা।ভাববে যা পেয়েছি সেটাই ভালো আমার জন্যে।
    এভাবেই প্রতিটি সম্পর্কের ওঠাপড়ার সাথে মানিয়ে নিতে হয়।যে অবস্থাই আসুক তাকে মেনে নেবে ইশ্বরের বরদান হিসেবে।ইশ্বরের থেকে শুধু ভালোটাই নেবে আর মন্দটা নেবে না তা কি হয়?দুইই নিতে হয় ইশ্বরের উপহার হিসেবে।তবেই তো শান্ত হতে পারবে আর শান্ত হলেই তো জীবনে শান্তি পাবে।আর তুমি নিজে শান্তি পেলেই তো আশেপাশের মানুষকেও দিতে পারবে শান্তির পরশ।    

Friday, 28 June 2013

ক্রিয়া

                                                          ক্রিয়া 
ক্রিয়াযোগ বড়  গুরুত্বপূর্ণ যোগ।  একটি কয়েন রেল লাইনে ফেলে রাখলে তা যেমন চুম্বক হয়ে যায় তেমনি ক্রিয়া করলে মানবদেহ অধ্যাত্মজ্ঞানে আলোকিত হয়ে  যায়। এতে চতুর্বর্গ লাভ হয় । এককথায় ক্রিয়ায়োগে সাধন শরীর হয়ে ওঠে ভাগবত শরীর। প্রথম ক্রিয়া মানুষের শরীরের বিভিন্ন gland-কে শক্তপোক্ত করে যা সমাধীলাভে সাহায্য করে । দ্বিতীয় ক্রিয়ায় মনের উপর দখল আসে এবং সাধকের ভিতরে জ্ঞানের আলো  জ্বলে ওঠে ।তৃতীয় ক্রিয়া দূর করে দেয় মনের চাঞ্চল্য । চতুর্থ ক্রিয়া liver ও pancreas-কে সুস্থ করে এবং দেহের যৌন শক্তিকে পরিণত করে ভগবত শক্তিকে। অনেকে ভাবে কামকে বা যৌনতাকে নির্মূল করতে হয় । কিন্তু যৌনতাকে নির্মূল করলে সাধনায় অগ্রসর হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় । কারণ যৌন শক্তির মধ্যেই সুপ্তভাবে থাকে আমাদের দেহের আসল শক্তি কুলকুন্ডলিনী শক্তি । যৌনশক্তিকে ক্রিয়ার মাধ্যমে দমন করে তাকে কুলকুন্ডলিনী শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হয় । এরপরও ছয়টি আরো উচ্চ ক্রিয়া আছে। এই যোগের জন্যে চাই নির্দিষ্ট আধার এবং সুস্থ সবল শরীর।আর সেইসাথে গুরুর প্রতি ভক্তি,নিবেদন ও অধ্যবসায়। তাহলেই ক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।     
  অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন - এই ক্রিয়া মূলত কি?  এ প্রসঙ্গে দেখা যাক সৃষ্টিপ্রকরণ কি বলছে। ব্রহ্ম চিরনিশ্চল। তার এক শতাংশ  চঞ্চল হয়ে ক্রমশঃ  বৃদ্ধি পেতে পেতে সৃষ্টি করেছিল এই জগত।ওই এক শতাংশ চাঞ্চল্য পঞ্চতত্বের মধ্য দিয়ে একটি লম্ব তরঙ্গ বিশিষ্ট হয়ে সমস্ত সৃষ্টি রচনা করলো। এভাবেই হলো জীবনের সৃষ্টি। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে -তবে মৃত্যু কি? মৃত্যু হলো - এই চাঞ্চল্যের ক্রমাগত স্থির অবস্থার দিকে ফিরে যাওয়া। প্রাণের তরঙ্গ প্রকৃতির নিয়মে হ্রাস পেতে পেতে যখন এক লক্ষ থেকে ১০ শতাংশ  তরঙ্গায়িত হয় তখন জীবের মৃত্যু হয় । সেই সময়ে এই দশ শতাংশ  তরঙ্গের সঙ্গে জীবাত্মার ফেলে আসা জন্মের সমস্ত সংস্কার বীজের আকারে থেকে যায় । এই সংস্কার আত্মাকে  আবার নতুন জন্মের দিকে আকর্ষণ করে এবং সেই ১০ শতাংশ প্রাণের তরঙ্গ যখন বাড়তে বাড়তে এক লাখে পৌছয় তখন জীবের আবার জন্ম হয় । এই হলো জন্ম মৃত্যুর আসল অবস্থা ।
  এই জন্ম মৃত্যুর থেকে মুক্তির জন্যেই ক্রিয়ার দরকার। জীব যদি কোনো প্রকারে সাধনার মধ্য দিয়ে এক লক্ষ থেকে দশ শতাংশ  প্রাণের চাঞ্চল্যকে  অতিক্রম করে শুন্য শতাংশে পৌছে যায় তাহলেই ঘটে তার ব্রাহ্মীস্থিতি লাভ । সে তখন তার উত্স ব্রহ্মের সাথে মিলে যায় পরমানন্দভরে। তখন আর তাকে ফিরে আসতে হয়না পৃথিবীতে। এই মিলিয়ে দেয়াটা হলো যোগ আর প্রানের চাঞ্চল্যকে কমিয়ে প্রাণকে থামানোর উপায়  হলো ক্রিয়া। অর্থাত ক্রিয়া আর যোগের এই পন্থা হলো ক্রিয়াযোগ। এই ক্রিয়াযোগের মাধ্যমেই প্রাণের অনন্ত গতিকে থামিয়ে স্থির ব্রহ্মের সাথে যুক্ত করে দেয়া যায় । সেই লক্ষেই চলে ক্রিয়াযোগীদের সাধনা।
     

Thursday, 13 June 2013

দুই - অজপা জপ

                               অজপা জপ 

    অজপা জপ হল  বহু প্রাচীন শাস্ত্রীয় জপের প্রণালী।বাল্মিকি  নারদের কাছ থেকে যে উল্টো নাম পেয়েছিলেন সেও তো ছিল অজপা। আজ সাধনজগতে অজাপার মূল্য অপরিসীম।

     অজপার সবচেয়ে বড় উপহার হলো সমাধির অভিজ্ঞতা লাভ। সাধারণত যোগে সমাধিলাভ হয় কুম্ভকের মাধ্যমে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে। দেহে যখন আপনা থেকেই নিরন্তর কুম্ভক হয়ে  যায় তখনি আসে  সমাধি। কিন্তু অজপাতে কুম্ভাকে না গিয়েই সমাধি লাভ করা যায়।অজপা হলো শ্বাসে প্রশ্বাসে জপ।যে মন্ত্র তুমি নিলে তা শ্বাস নেয়ার সময় জপ করবে আর ছাড়ার সময়ে জপ করবে।সেটাই হলো অজপা।এতে মন্ত্রের হিসাব রাখার দরকার নেই।শুধু মনেপ্রাণে মন্ত্রের সাথে একাত্ম্য হয়ে জপ করে যাওয়া। কথিত আছে - আমাদের জীবাত্মা অনাহত চক্রে উপবিষ্ট হয়ে নিরন্তর নাম করে চলেছে  অজপায়।সে নাম আমাদের ভিতরে চলছে নিরন্তর।সাধনার মাধ্যমে বহিরঙ্গের নামকে সেই নামের সাথে একাত্ম্য করে তলার জন্যে অজাপার সৃষ্টি।একে একইসাথে হংস জপ ও  সোহং  জপ বলা হয়। শ্বাস নেয়ার সময়ের জপ হলো হংস   জপ আর শ্বাসত্যাগের সময়ের জপ হল সোহং। নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে সেই জপকেই  বলা হয়  বা অজপা।
     এই অজপার একটি সহজ প্রণালী আছে - যারা জপ করতে চাও তারা প্রথমে কিছুক্ষণ কোনো বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাক একদৃষ্টে - সেটি ইষ্টদেবের মুর্তী হলে সবচেয়ে ভালো। যখন খালি চোখে সেই বস্তুর উপর মনোসংযোগ হয়ে যাবে তখন চোখ বন্ধ করে তাকে ধ্যান কর আর অজপা জপ শুরু কর।এতে ফল পাবে দ্রুত।
     এই প্রসঙ্গে যোগের আরেকটি কথা বলি - আমাদের দিনে ইড়া নাড়ি আর বয়ে পিঙ্গলা নাড়ি। পিঙ্গলা নাড়ি নির্দেশ করে আমাদের দেহের শারীরিক শক্তি ও ইড়া নারী নির্দেশ করে মানসিক শক্তি।এই দুই নাড়িতে আলাদাভাবে যতক্ষণ শ্বাস প্রবাহিত হয় ততক্ষণ সমাধি হয়না। যখন প্রানায়ামের মাধ্যমে দুই নাকের শ্বাস হয়ে  যাবে সমান তখনি জাগ্রত হবে সুষুম্না নাড়ি আর তখনি ধ্যান হয় যথার্থ। অজপা জপ সেই সুষুম্না নাড়ির জাগরণকে তরান্বিত করে। অজপা জপে প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়।একটি গভীর শ্বাস,একটু relax ,তারপর আবার শ্বাস ছাড়া আর সেইসাথে মন্ত্রজপ। এভাবে মিনিটে আমরা ১৫ বার শ্বাস নেই,দিনে ২১,৬০০ বার।অজপা ঠিকমত করা গেলে বিনা চেষ্টায় দিনে ২১,৬০০ বার জপ হয় যায়। সোহং  জপ করলে মন্ত্রের অর্থ আর কল্পনা করতে হয়না।তবে অনেকে নিজের বীজমন্ত্র এই জায়গায় জপ করতে পারো ।মনকে ভ্রুমধ্যে নিয়ে বা হৃদয়ের অনাহত চক্রতে নিয়ে জপ করতে

Thursday, 6 June 2013

বই সম্পর্কে - এক .. "মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা"

         বই সম্পর্কে ...."মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা"

                                         ।। এক।। 

     অবশেষে আগামীকাল প্রকাশলাভ  করছে  আমার ১৭তম বই - "মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা"। আগামীকাল বিকেল নাগাদ বইটি binder এর থেকে নিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই পৌছে দেয়া হবে মহেশ লাইব্রেরীতে। তারপর সেখান থেকে অন্যান্য দোকানে যাবে বই।
      "মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা" আমার কাছে একটি স্বপ্নের মত।সহসাই আমি আমার বন্ধু সুজয়ের থেকে পাই পুরী পরিক্রমার আমন্ত্রণ ২০১২ সালে আর তারপর বেরিয়ে পড়ি পথে। পুরী যাওয়ার আগেভুবনেশ্বর,কোনারক,উদয়গিরি,খন্ডগিরি,ধবলগিরি যেমন দর্শন করেছি তেমনি পরিক্রমা শেষে দর্শন করেছি নীলমাধব যেখান থেকে জগন্নাথের লীলার উত্পত্তি। সেইসাথে পায়ে হেঁটে তিনদিন ধরে পরিক্রমা করেছি সম্পূর্ণ পুরিধাম ও সেখানকার সকল মুখ্য মন্দির। সব মন্দিরে দাঁড়িয়ে সেখানকার মাহাত্ম্য কীর্তনের সৌভাগ্য হয়েছে আমার।এই সফরে আমার আরেকটি খোঁজ ছিল শ্রী চৈতন্যদেবের অন্তর্ধান সম্পর্কে।তার সম্বন্ধেও পেয়েছি যথাযথ ব্যাখ্যা। এই সফরে আমি সাথে পেয়েছিলাম মিশ্রজীর মত এক প্রবীন ভক্তকে। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার আলোয় জানিয়েছেন যে জগন্নাথদেব  আজো  যেমন পুরিধামে নিত্যলীলা করেন,তেমনি মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেবও নিত্য লীলা ও কীর্তন করেন আজ সুক্ষ্ম দেহে তাঁর পার্ষদদের নিয়ে। সেই লীলা কোনো কোনো ভাগ্যবান শুধু দেখতে পান। মিশ্রজী তাঁদেরই অন্যতম।
এহেন লীলার খোঁজ পেয়ে আমি তো মন্ত্রমুগ্ধ।শুধু তাই নয়,জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিটি মন্দিরের মাহাত্ম্য,লীলাকথা সব তুলে ধরেছি এই বইটিতে যাতে পাঠক পাঠিকারা বইটি হাতে নিয়ে সম্পূর্ণ পুরীকে জানতে পারেন - ইতিহাস,ভূগোল,পুরাণ এবং দৈবী মহিমার দিক দিয়ে। আজ পর্যন্ত প্রায় সবাই তো পুরীতে গেছি কিন্তু পুরীর যতটুকু 
আমরা জানি তার চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশী আমাদের অজানাই রয়ে গেছে।সেই অজানাকে আমার সব পাঠক পাঠিকাদের কাছে তুলে ধরার জন্যেই আমার এই প্রয়াস। সেইসাথে রয়েছে শ্রী চৈতন্যদেবের অন্তর্ধান সম্পর্কে সকল গবেষকদের মোট সাজিয়ে বিশ্লেষণ যদিও মিশ্রজীর মুখে যে অন্তর্ধান সম্বন্ধে শুনেছি সেটিই আমার মতে মনে হয়েছে সর্বশেষ হিসেবে।
      বহুদিন ধরেই পুরী নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল আমার।আমার বিশেষ বন্ধুরা অনেকেই সে বিষয়ে আগেই বলেছিলেন।কিন্তু সময় সুযোগ হচ্ছিলনা বলে বিলম্ব হলো।তবে ঠাকুর যা লেখানোর লিখিয়ে নিয়েছেন। আমার করণীয় শেষ। এবার পাঠক পাঠিকাদের ভালো লাগলেই সার্থক হবে আমার প্রয়াস। আগামীকাল আসছে সেই বহু প্রতিক্ষিত দিন।

Wednesday, 5 June 2013

তিন - হাসি তবু হাসি নয় - জন্মদিন

                     জন্মদিন 
       আজকে আমার ৪১ পূর্ণ হলো।পা রাখলাম ৪২এ। সকাল থেকেই ফোনে ,ই - মেলে,ফেসবুকে অনেক বন্ধুরা,ভক্তরা,শিষ্য শিষ্যারা আমাকে জানাচ্ছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ছোটবেলায় জন্মদিন এলেই মনটা খুশীতে ভরে যেত। মূলতঃ সেইসময়ে বন্ধুদের আগমন আর বড়দের উপহারের জন্যেই ভালো লাগত জন্মদিন। ধীরে ধীরে বন্ধুবান্ধবরা জীবনের দিকে দিকে ছড়িয়ে যেতে লাগলো আর আমিও বন্ধ  করে দিলাম জন্মদিনের উত্সব। এই দিনটা আমি মূলতঃ বিগত কয়েক  বছর ধরে একলাই কাটাই। তবে যারা আমাকে ভালবাসেন ঠিক শুভেচ্ছা জানান ফোনে বা এসে। কিন্তু ফেসবুক হওয়ার পর থেকে আবার বন্ধুদের ফিরে পাওয়া গেল।সেইসাথে আত্মার আত্মীয় ভক্ত মানুষরাও আসতে শুরু করলেন।তাই আমি জন্মদিন না করলেও শুরু হয়ে গেল জন্মদিন।এদিন সবার শুভেচ্ছা পেয়ে আমিও অভিভূত।সবার এই ভালোবাসাই যে আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।
     তবে ইদানিং জন্মদিনটা আমার কাছে পেয়েছে অন্য মাত্রা।এদিনটা এলেই আমার   মাথায় আসে একটি equation  - অনেকটা ক্রিকেটের মত -
    OVERS OF LIFE GONE -41
    OVERS OF LIFE REMAINING - UNKNOWN
    REQUIRED RUN - TO REALISE THE SELF AND TO BE ONE WITH    PARMATMA.
  প্রতি জন্মদিন এলেই মনে হয়ে - বেলা তো বয়ে যাচ্ছে। এ জীবনে পেলাম অনেক,দিলামও অনেক। কিন্তু পথের তো শেষ নেই - সিদ্ধি,মহাসিধ্ধি,অতিসিদ্ধি। তাই চলতে হবে আরো অনেক,পেতে হবে আরো অনেক,বিলোতেও হবে আরো অনেক। এভাবেই যে চলতে হয় জীবন থেকে মহাজীবনের পথে। এ পথে যেটুকু পাওয়ার জন্যে চেষ্টা করব তা যেন হয় ভগবত প্রাপ্তির প্রচেষ্টা। পার্থিব কিছু পাওয়ার জন্যে যেন চেয়ে সময় নষ্ট না করি।যা আজ আছে, কাল থাকবেনা। তাই চেয়ে কেন সময় নষ্ট করব? হাতে সময় তো বেশী নেই।যা আছে তা ব্যবহার করতে হবে ভগবৎ প্রাপ্তির জন্যেই। প্রতিটি জন্মদিন যেন আমাকে সেই বার্তাই দিয়ে যায় - পথিক,এগিয়ে চল।বেলা যে গেল। শেষ খেয়ায় ওঠার সময় এগিয়ে আসছে।তাই এবার সেরে নাও কাজের পালা।

    
  

Tuesday, 4 June 2013

।। হাসি তবু হাসি নয় ।। দুই - বন্ধু-র পথ বড় বন্ধুর

                              হাসি তবু হাসি নয়। 

                    দুই - বন্ধু-র পথ বড় বন্ধুর 

  জীবন হলো একটি কর্মক্ষেত্র। এটিকে তুমি যেমন বানাবে এটি তেমনিভাবেই ধরা দেবে তোমার কাছে। জীবনকে ভালোভাবে গড়তে  পারলে  তার কৃতিত্ব তোমার। সেটির বারোটা বাজালে তার দায়ও তোমার। আর এই কাজে তোমার পাশে বড় ভুমিকা নেবে তোমার বন্ধুরা। 
      জীবন তোমায় অনেক বন্ধু দেবে।অনেক বন্ধু ছিনিয়েও নেবে। আসবে অনেকে,থাকবে কিন্তু সামান্য কয়জন। এই বন্ধুরা আত্মীয়দের মধ্যে থেকে আসতে পারে,আসতে পারে স্কুল,কলেজের সুত্র ধরে কিংবা কর্মক্ষেত্রের সহকর্মী হয়ে। কিন্তু তারা সত্যিকারের বন্ধু কিনা তা বোঝার অবসর ঠাকুরই দেবেন তোমায়।যখন দুঃখ আসবে তখনি চিনবে কে সঠিক বন্ধু। সুখের সময়ে বন্ধু সবাই।সেইসময়ে বোঝা যাবে তুমি কেমন বন্ধুবত্সল। আর দুঃখের সময় এলে বোঝা যাবে তোমার বন্ধুরা কতটা বন্ধুবত্সল। যারা হারাবার তারা তখনি হারাবে।আর যারা সেইসময়েও থাকবে তোমার পাশে বুঝবে তারাই যথার্থ বন্ধু। সেইসময়ের বন্ধুদের খুব ভালোভাবে ধরে রাখতে হয়।কারণ সেই হলো যথার্থ জন্ম- জন্মান্তরের সম্পর্ক। তারা একবার হারিয়ে যাওয়া মানে বিরাট ক্ষতি।তাই দুঃখের সময়ের বন্ধুদের আঁকড়ে থাকবে আর যারা শুধু সুখের পায়রা তাদের সাথে দুরত্ব বজায় রেখে থাকাই  ভালো। 
      ব্যক্তিগতভাবে আমি বলতে পারি - আমার বন্ধুর সংখ্যা খুব কম। কারণ সমভাবাপন্ন ছাড়া আমি মিশতে পারিনা। আর যাদের সাথে একবার মিশে যাই তাদের ছাড়তে পারিনা। স্কুলে আমি খুবই একঘরে জাতীয় ছিলাম সবার সাথে মিশতে পারতাম না বলে। আস্তে আস্তে অবশ্য মিশুকে হয়ে উঠি তবে তেলে  জলে ধাচের ছিলাম। মিশতাম উপর উপর। এইসময়ে বন্ধুও পেয়েছি কিছু ,আবার হারিয়েওছি। তবে আধ্যাত্মিক জীবনে আসার পরই পেলাম কিছু এমন বন্ধু যাদের সাথে নিজের আমিকে ভাগ করে নেয়া যায়। এই সাধনপথে যাদের সাহচর্য আমাকে খুব সাহায্য করে। এদের মধ্যে আমার আধ্যাত্মিক অধিবেসন গ্রুপের বন্ধুদের কথা বলতেই হয় যাদের প্রেরণা আমাকে বিরাট সাহায্য করে এগিয়ে যেতে। আসলে আমি বরাবরই মন দেখে বন্ধু বেছেছি।তাই বন্ধুসুত্রে কখনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি আমায়।

Sunday, 2 June 2013

হাসি তবু হাসি নয় - এক

                    হাসি তবু হাসি নয় 

                     ।।এক।।
 একটি মেয়ের আমার সাথে সম্বন্ধ এসেছিল ২০০৩-২০০৪ নাগাদ। নামটি ইচ্ছে করেই বলছিনা।কারণ মেয়েটি খুব ভালো। তার সাথে ছকে যে আমার মেলেনি এমন নয়। কিন্তু সেই মেয়েটির বাবার সাথে যার সুত্রে আমাদের আলাপ হয় সেই প্রতুলদার জন্যেই আমি রাজি হতে পারিনি। আমার " জীবন থেকে মহাজীবনের পথে" যাঁরা পড়ছেন তাঁরা অচিরেই জানতে পারবেন যে আশালতা সাধুখা নামের একজনের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন এবং আমাদের প্রতি অজস্র তান্ত্রিকক্রিয়া তিনি করেছিলেন। এমনকি ২০০৪ সালে প্রতুলদা নতুন করে আসতে শুরু করার পর একদিন আমাদের বুকশেলফে একটি দাঁত পোয়া যায়। সেটি দেখেই বাবা বলেন এটা তান্ত্রিক ক্রিয়ার ব্যাপার।তারপর আমি ওটা আগুনে ফেলে দিয়ে একটু পুড়িয়ে বাইরে ফেলে দি।সেদিনই প্রতুলদার ছেলের মোবাইল চুরি যায় এবং কিসব আরো ঝামেলা ঘটে।যেহেতু প্রতুলদার source  থেকে মেয়েটি এসেছিল তাই আমি মেয়েটি ভালো জেনেও বিয়ে করতে রাজি হইনি কারণ হয়ত পরে ওর  অজান্তেই ওকে দিয়ে তেমন কিছু তিনি করাতে পারতেন। 
     মনে আছে - যখন আমার সম্বন্ধ আসে তখন  একদিন মেয়েটির আরেক পরিচিত মল্লিকদা বলছিলেন সে নাকি আমার দেবলোকের অমৃতসন্ধানে পড়ে আমার উপর খুব সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়েছিল।মল্লিকদার কাছে বলেছিল অনেক ভেবে - ওর সাথে বিয়ে হওয়ার পর ঝিলিক আর মৈত্রেয়ী আমাকে যদি না ছাড়ে তবে ওর কি হবে? ওর  বাড়ি থেকেও খুব ইচ্ছে ছিল আমার সাথে বিয়ে দেয়ার। কিন্তু প্রতুলদার জন্যে যেহেতু তাতে আমি রাজি হইনি তাই মেয়েটি এরপর আমার উপর খুব রেগে যায়। ওর রাগটাও স্বাভাবিক। কারণ প্রতুলদার কারণ ওকে বলা যায়নি। তবে যেটা অস্বাভাবিক সেটা হলো - ওই না করাটা সে এখনো ভুলতে পারেনি।তারপর থেকে যখনই ওর  ভালো কিছু হয়েছে তখনি ওর বরকে নিয়ে,ওর  ছেলেদের নিয়ে কোনো অনুষ্ঠানে একবার করে এসেছে  আমাদের আশ্রমে এবং বারবার আমাকে দেখিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যে ও বেশ ভালো আছে। ওর মনস্তত্ব বুঝি আমি। তাই কখনো কোনো কিছু বলিনা। 
      কালকের অধিবেশনেও পরে বাবার কাছে শুনলাম ও এসেছিল।এমনিতে আমি কাল  বক্তৃতা দেয়ার সময়ে অবশ্য খেয়াল করিনি কিন্তু যে বিষয়ে বক্তৃতা দিছিলাম তাতে যম,নিয়ম প্রসঙ্গে বলছিলাম। সেখানেই কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলাম - আমরা যে যা পেয়েছি তা নিয়েই খুশি থাকা ভালো।কে কি পেল,কে কি পেলনা এ নিয়ে মনকে ভাবানো  ভুল। কারণ এসেছি সামান্য কিছুদিনের জন্যে,চলেও যাব কিছুদিন পরে।তাই রাগ বা ঈর্ষা বা প্রতিহিংসা মনে রেখে কেন নিজেদের মনকে কষ্ট দেব। এটা কিন্তু কথাপ্রসঙ্গেই বলেছিলাম।
      রাতে ঘরে আসার পর বাবা যখন বলছিলেন যে ও এসেছিল তখন মা বললেন যে ও নাকি মাকে বলেছে যে আজকের অনুষ্ঠানে সবার বক্তৃতা আর গান নাকি খুব ভালো হয়েছে। শুনে ওর মন নাকি ভরে গেছে। যদিও আমি ওকে দেখিনি তবু আমার বক্তব্য  বুঝে ও যাতে শান্তি পায় সেটাই কামনা করি। কারণ আমরা কেউ যখনি কারোর উপর রেগে থাকি তখন অন্য প্রকারে আমরা নিজেদেরই আঘাত দিয়ে থাকি। আর ও সত্যি খুব ভালো মেয়ে।তাই ৯ বছর পর অন্তত ওর এই trauma থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত। সেই কামনাই করি।
    (অনেকদিন ব্লগ লেখা হচ্ছিল না বলে আজকে আমার ছোট বোন  তানিয়া একটু আগেই অনুরোধ করলো নতুন ব্লগের জন্যে। বোনের অনুরোধ তো ফেলা যায়না।অতএব লিখে ফেললাম একটি অশ্রু রাঙানো মজার অভিজ্ঞতা )

Friday, 17 May 2013

আটত্রিশ - কিভাবে থাকা ভালো এই জগতে

          কিভাবে থাকা ভালো এই জগতে

    এই পৃথিবীতে সবই দুদিনের খেলা।যা নিয়ে আমরা ভাবছি,যা আঁকড়ে ধরে আমরা বাঁচতে চাইছি,যা ছাড়া আমাদের চলতে চায়না - সবই দুদিনের অলস মায়া।
এই পৃথিবী মায়ার খেলাঘর।এখানে সবাই খেলাঘর গড়ছে,সাজাচ্ছে,সেটিকে কেন্দ্র করে বাঁচছে আর তারপর সেটিকে ফেলে রেখে নিজেই হারিয়ে যাচ্ছে কোনো অজানার জগতে।
     আসলে এই জগতে টেঁকে না কিছুই সুধু মানবকল্যাণের কর্ম ছাড়া ।আমি জানি - আমার সৃষ্টি বেঁচে থাকবে শতাব্দীর পর শতাব্দী কিন্তু যে স্রষ্টা সেই আমার এই স্থুলদেহ,অর্থাৎ স্থুল আমি টিঁকব না। টিঁকবে না কেউই। আজকে অনেকের আমাকে ছাড়া চলেনা কিন্তু আমি জানি এটা অভ্যেস - যেদিন আমি সব ছেড়ে চলে যাব সেদিন তো কারো সামনে থাকবেনা বিকল্প। তাই তখন আমাকে বাদ দিয়েই সবাইকে ভাবতে হবে। আর বিধাতার এই জগতে কেউ অপরিহার্য নয়। সবারই জায়গায় কেউ না কেউ ঠিক এসে যায়।তাই নিজেকে বাদ দিয়েই আমাদের জগতকে দেখা ভালো নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে।তাহলে আর মায়া আমাদের বন্ধনে বাঁধতে পারবেনা।
   ব্যক্তিগতভাবে আমি তো তাই করি - নিজের জগতকে দেখি নিজেকে বাদ দিয়ে - কর্তব্য করি কিন্তু বন্ধনে ধরা না দিয়ে। তাতে দেখি আমাকে বাদ দিয়েই সবকিছু সুন্দরভাবে হয়ে যাচ্ছে। অতএব এখানে আমি থাকাও যা,না থাকাও তাই। সবার জন্যেই আছি আমি আবার কারোর হয়েই নেই।কর্ম আমাকে করতে হবে তাই করছি। সত্যিকারের ভক্তদের আলোর পথে নিয়ে যেতে আমি দায়বদ্ধ।তাই তাদের জন্যে তাদের পাশে আমি নিশ্চয়ই আছি। কিন্তু আমি থেকেও নেই।আবার না থেকেও আছি। এটাই হলো -এই জগতে থেকেও জগতের না হয়ে কিন্তু জগতের জন্যেই কাজ করে যাওয়ার ব্রতে আমার মূল মন্ত্র। 

Thursday, 16 May 2013

যোগ ১ - মুলাধার চক্র


             যোগ ১ - মুলাধার চক্র 

     (পাঠক পাঠিকারা অনেকেই আমাকে যোগ নিয়ে লিখতে বলছেন।অতএব তাঁদের জন্যে এই যোগের কলামটা শুরু করলাম।যোগের মূল হলো মূলাধার।তাই মূলাধার দিয়েই শুরু হলো আমার লেখা।)

        মুলাধারের  অবস্থান  আমাদের  spinal এর শুরুতে। এটি হল হলুদরঙা  চতুষ্কোণ বা   square আকারের পদ্ম যার পাঁপড়ি  আছে ৪টি। পাঁপড়ির রং লাল।মুলাধারের অধিষ্ঠানকর্তা হলেন ইন্দ্র।তিনিও পীতবর্ণসম্পন্ন। হাতে বজ্র।অনেক জায়গায় অবশ্য গানেশ্জিকেও ধরা হয় এখানকার অধিষ্ঠানকর্তা হিসেবে।তাঁর বর্ণ গেরুয়া।লেবুরঙের ধুর্তি তাঁর পরণে। 
  এখানকার বীজমন্ত্র হলো "লং".এই বিজর ঠিক নীচে একটি ত্রিকোণ আছে -সেখানেই সুপ্তভাবে কুন্ডলিনি বিরাজ করেন।একটি ধুসর লিঙ্গকে সাড়ে তিন পাকে জড়িয়ে তিনি সুপ্তভাবে থাকেন নিদ্রিতরূপে। এই শক্তি যতক্ষণ নিদ্রিত থাকে ততক্ষণ মানুষও পশুর মত থাকে।তার উত্তরণের শুরু হয় এই শক্তি জাগ্রত হলে।এখান থেকেই সুষুম্না নাড়ির উদ্ভব ঘটে।এর বাঁ দিক থেকে ওঠে ইড়া নাড়ি এবং ডানদিক থেকে পিঙ্গলা নাড়ি ইড়া নাড়ি চন্দ্র্স্বরূপা, পিঙ্গলা নাড়ি সূর্যস্বরূপা এবং সুষুম্না নাড়ি চন্দ্র,সূর্য ও অগ্নি স্বরূপা। 
       এই চক্রের চারটি পাঁপড়িনির্দেশ করে ধর্ম,অর্থ,কম,মোক্ষ।এখান থেকেই সবার সাধনার শুরু।এর তত্ত্ব হলো পৃথিবী এবং এর ইন্দ্রিয় ঘ্রানেন্দ্রিয়।
   মুলাধারের শক্তি বৃদ্ধির জন্যে গরুড়াসন,সিধ্ধাসন খুব উপকারী। সেইসাথে অনুলোম-বিলোম,নাসিকাগ্র দৃষ্টি প্রাণায়াম ও মুলবন্ধ অভ্যাস করা প্রয়োজন।সেইসাথে চাই বীর্যধারণ ও ব্রহ্মচর্যের অভ্যাস। এই মূলাধার থেকেই আমাদের সাধনার শুরু।মুলাধারকে ঠিকমত নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সাধনপথে চলা শুরু হয়।  

Wednesday, 15 May 2013

সাঁইত্রিশ - শিবপূজা

                শিবপূজা

অনেকেই আমায় প্রশ্ন করেন - শিব মানে কি ?এক্ষেত্রে সন্ধি বিচ্ছেদ করলে দেখবেন -  শি যুক্ত বন ইতি শিব।
      শিবপুজা মূলত হলো আত্মপূজা। অর্থাৎ আমাদের সহস্রারে সুপ্তভাবে যে শিব গুপ্ত হয়ে আছেন তাঁকে জাগানোর জন্যেই তো আমাদের সাধনা। শিবপূজা আমাদের ভিতরের সেই পরমপুরুষকে জাগানোর পূজা। তোমরা যত শিবপুজা করবে তত তাঁর কৃপা লাভ করবে নিজের মাঝে।আর যত তাঁর কৃপা লাভ করবে অন্তরে তত আধ্যাত্মিক জগতে তোমাদের  উত্তরণের পথ সুগম হয়ে উঠবে। এই শিবপূজার সাথে যখন পড়ে সিদ্ধ বীজমন্ত্র  তখন নিয়মিত জপ ও সাধনা করে গেলে কুলকুন্ডলিনীর জাগরণ ঘটবে আর তারপর যখন সেই মহাশক্তি সহস্রারে গিয়ে শিবের সাথে যুক্ত হবে তখনই লাভ করবে সিদ্ধি  আর সেই হবে জীবন থেকে পরম প্রাপ্তী। শিবপূজার মাধ্যমে এভাবেই আমদের উত্তরণ ঘটে আলোর দিগন্তে।

Tuesday, 14 May 2013

ছত্রিশ - জগতে পূজা কয় প্রকার আর তার প্রকৃতি কি কি

 জগতে পূজা কয় প্রকার আর তার প্রকৃতি কি কি

 আজ আমার অধিবেশনে আমার বিশিষ্ট ভক্ত মলি  জানতে চেয়েছিল  - জগতে পূজা কয় প্রকার আর তার প্রকৃতি কি কি? এর উত্তরে আমি বললাম  - পূজা তিন প্রকার - সাত্ত্বিক,রাজসিক ও তামসিক। 
    সাত্ত্বিক পূজায় অন্তরের ভক্তিকে নৈবেদ্য করে পূজা দেয়া হয় নিষ্ঠার সাথে।সেক্ষেত্রে ভোগ দেয়া হয় নিরামিষ।এই পূজায় আমিষের কোন স্থান থাকেনা। এই পূজা হয় দিব্যাচারে।মূলতঃ যারা নিবৃত্তিমার্গে চলার ক্ষমতা রাখেন তারাই এই পথ বেছে নেন। 
    রাজসিক পূজায় পশুবলি প্রভৃতি হিংসাত্বক কর্ম সম্পাদন করা হয় বীরাচারে পূজার জন্যে। এতে রক্তের প্রয়োজনীয়তা থাকে।
    তামসিক পূজায় পশুবলি,মদ প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।এই পূজা হয় পশ্যাচারে।এই রাজসিক ও তামসিক পূজার প্রচলন করা হয়েছে প্রবৃত্তিমার্গের পথিকদের জন্যে- যাদের পক্ষে নিবৃত্তিমার্গের বিধিনিষেধ পালন করে চলা সম্ভবপর হয়না।কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে যে সকলের জন্যেই পূজার বিধান আছে।তাই যারা নিবৃত্তির পথ ধরে  এগোতে পারবেনা তাদের জন্যে রয়েছে প্রবৃত্তিমার্গের বিধান। এই রাজসিক ও তামসিক পথের পথিকরা আগে বৈধ ভোগ করে ভোগবাসনার সমাপ্তি ঘটাতে পারলেই তারা সাত্বিকভাবে  নিবৃত্তির পথে যাওয়ার যোগ্য হবে। মূলতঃ এই বিভেদের জন্যেই তন্ত্রশাস্ত্রে রয়েছে পাঁচ ম-কারের উল্লেখ।
   এই অবধি পড়ে সবাই  হয়ত ভাবছ - এহেন তিনরকমের পূজার কারণ কি?কারনটা হলো -   পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃতি ভিন্ন।কারো পশু স্বভাব,কারো রাজসিক স্বভাব,কারো বা সাত্ত্বিক দিব্যভাব।তাই তাদের প্রকৃতি অনুসারেই এই পূজার ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈষ্ণবরা মূলতঃ সাত্ত্বিক পূজা অনুসরণ করেন।আর তন্ত্রের পথে যারা আছেন তারা প্রথমে পশ্বাচার,তারপর বীরাচার মতে সাধনা করে অবশেষে দিব্যাচারে আসেন। তবে দুইয়ের মধ্যে তন্ত্রসাধনা যেমন কঠিন তেমনি তাতে সাফল্যের হারও খুব কম। কারণ দিব্যাচারে উত্তরণ খুব কম তান্ত্রিকের পক্ষেই সম্ভব হয়। তার চেয়ে বৈষ্ণব সাধনায় রসমাধুরী অনেক বেশী এবং সাফল্যের হারও বেশী। তবে দিনের শেষে সব নির্ভর করে সাধকের উপর। যে যত শরণাগতি অবলম্বন করে এগোতে পারবে সে তত তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাবে সাফল্যের পথে।  

Monday, 13 May 2013

পঁয়ত্রিশ - দেবলোকের স্মৃতি

                দেবলোকের স্মৃতি 

    আজকে আমার "দেবলোকের অমৃতসন্ধানে" গ্রন্থের "বাসুকিতাল-কালিন্দী খাল -পঞ্চবদ্রী পর্ব" পুনর্মুদ্রিত হয়ে আশ্রমে এলো। এই পর্বটির  তৃতীয় সংস্করণ এটি।
কোথায় যেন পড়েছিলাম শিবরাম চক্রবর্তীর লেখায় - বই মুদ্রিত হওয়া  মানে সন্তান হওয়া  আর পুনর্মুদ্রিত হওয়া মানে নাতি হওয়া। সেই অনুসারে আমার তো নাতিতেই ঘর ভর্তি এখন।
     আজ মনে পড়ছে - হিমালয়ে কাটিয়ে আসা সেই দিনগুলোর কথা যার উপর ভিত্তি করে লিখেছি আমার এই ৪ খন্ডে সমাপ্ত ভ্রমনকাহিনী। কি ভয়ঙ্কর সুন্দর ছিল সেই পথ।নির্জন,নিরিবিলি,আকাশে বাতাসে শান্তির অনুরণন। মাঝে মাঝে সাধুসন্তদের সাক্ষাত। আর তার মাঝে পথ চলা। পথে বিপদ আছে।চলায় শ্রান্তি আছে - কিন্তু একটু বিশ্রাম নিলেই হিমালয়ের কৃপায় সব কষ্ট মিলিয়ে যায়।
     মনে আছে - হিমালয়ে আমরা যখন গেছিলাম তখন আমাদের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স শুন্য। যা টাকা ছিল ব্যাঙ্কে বাবা সবই তুলে নিয়েছিলেন। ফেরার পর কি খাওয়া দাওয়া হবে তার ঠিক ছিলনা। আয়ের উপায় বলতে একমাত্র বাবার বই বিক্রি।আমার তো তখন সবেধন নীলমণি একটাই বই - মহাসিন্ধুর ওপার থেকে।( দে বুক স্টোরের ম্যানেজার স্বপনদা রসিকতা করে বলতেন -ঐতো তোমাদের বাবা ছেলের পাবলিকেশন। বাবার একটা বই "মহাপীঠ তারাপীঠ", ছেলের একটাই বই "মহাসিন্ধুর ওপার থেকে"; ওই দুটো বই সম্বল। বর্তমানে অবশ্য এত বই বেরিয়ে গেছে যে স্বপনদা এখন বদলেছেন মত -দেখা হলে বলেন"আর কি নতুন বই আসছে আপনাদের?"সময়ের সাথে সাথে তুমিটা আপনি হয়েছে।)
     তবে ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার শেষ করে হিমালয় ভ্রমণে গেলেও প্রানভরে ভ্রমণ করেছিলাম আমরা।আর সেইসময়েই ঠিক করেছিলাম - হিমালয়ের উপর একটি ভ্রমণ কাহিনী লিখব। ইতিপূর্বে তো অনেক লেখক হিমালয় নিয়ে লিখেছেন।আমিও লিখব আমার নিজস্ব স্টাইল-এ। আমার পরিকল্পনা ছিল - ভ্রমণ কাহিনীটা হবে ভিডিও ফিল্মের মত আর সেই ভিডিও ফিল্ম আমি শব্দ দিয়ে গড়ব। সেইমত ছোট একটি ডায়েরি নিয়ে পথে নামতাম।যেখানে যা দৃশ্য দেখতাম তার বিবরণ খাতায় তুলে নিতাম। সেসময়ে আমার নিজের ক্যামেরাও  ছিলনা। রথিনদা তথা মন্টুদার ক্যামেরা ধার নিয়ে ৫ রীল ফিল্ম ছবি তুলেছিলাম। তাই যেখানে মন্টুদা ছিলেন সেখানে আমার ছবি উঠেছে।যেখানে তিনি নেই সেখানে আমার ছবিও নেই।
      তারপর শুরু হলো হিমালয়ের লীলা।কত মহাত্মাদের সেবার দর্শন করেছি।নাগাজীর মত মহাত্মা তো কোটিতে গোটিক  মেলে। তাঁর স্নেহছায়ায় পথ চলার সৌভাগ্যও লাভ করেছি। হিমালয়ের বিজন অঙ্গনে কত উচ্চকোটির সাধক আমায় কৃপা করেছেন।তাঁদের জন্যেই আমার হিমালয় ভ্রমণ স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। আজ তাঁদের কৃপায় লেখা "দেবলোকের অমৃতসন্ধানে" গ্রন্থের সুনাম দিকে দিকে। তবে সেইসময়ে হিমালয়কে আমি যেভাবে দেখেছিলাম আর তার সেই রূপসুধা পান করার উপায় এখন নেই।যন্ত্রসভ্যতার বীজ এখন সেখানেও জেগে উঠেছে।তাই হিমালয়ের সেই প্রশান্তি এখন দিনেরাতে তেমনভাবে উপভোগ করা যায়না। আমার সৌভাগ্য - প্রমোদ কুমার চট্টোপাধ্যায় ,প্রবোধ সান্যাল,জলধর সেন,উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,শঙ্কু মহারাজ  হিমালয়ের যে রূপসুধা পান করতে পেরেছিলেন আমি ছিলাম সেই মহান হিমালয় প্রেমিকদের শেষ উত্তরসুরী - Last of the Mohicans যার হিমালয় ভ্রমণ পর্যন্ত হিমালয়ের সেই নিরবছিন্ন শান্তির অমৃত পান করা যেত। বর্তমানে যন্ত্রসভ্যতার আক্রমনে হিমালয় জর্জরিত। তবু আজো  হিমালয়কে ভালোবেসে তার কাছে গেলে হিমালয় কৃপা করেন। শুধুমাত্র ব্রাহ্মমুহুর্তে এখন হিমালয়কে নিজের রূপে পাওয়া যায় যা অন্যসময়ে যায়না।
    আমার "দেবলোকের অমৃতসন্ধানে" গ্রন্থের আমার সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলির স্মৃতি বড় ভিড় করে আসছে মনে। সেদিন আমি কিছুই ছিলামনা। আজ যেটুকু হতে পেরেছি সবই হিমালয়ের দয়া,গোপালের দয়া আর মা তারার দয়া। তাই ফেলে আসা দিনগুলি বরাবরই আমার প্রেরণা রূপে দেখা দেয়। শুন্য থেকে শুরু করে আজকের দিনে আসার এই পথটুকু যে ইষ্টকৃপার জন্যেই সম্ভব হয়েছে।  
   

চৌত্রিশ - অক্ষয়তৃতীয়া

                      অক্ষয়তৃতীয়া 

অক্ষয় তৃতীয়া আমাদের দেশে একটি পুণ্যতিথি রূপেই বিবেচিত। এটি বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়াতে পড়ে।
    অক্ষয়তৃতীয়ার  গুরূত্ব বিশাল। এদিন অনেকগুলি তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।
১) এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
২) এদিনই গণপতি গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।
৩) এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।
৪) এদিনই সত্যযুগের সূচনা হয়।
৫) এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
 ৬) এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নেন পৃথিবীতে।
৭)এদিনই ভক্তরাজ সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দুখ্হ মোচন করেন।
৮)এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং সখী কৃষ্ণাকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ। শরনাগতের পরিত্রাতা রূপে এদিন শ্রী কৃষ্ণা দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন।
৯) এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
১০) কেদার বদরী গঙ্গোত্রী যমুনত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।
     এহেন অক্ষয়তৃতীয়াতে যেকোন শুভকাজ শুরু করা ভালো। এদিনের তিথির বিশেষত্ব হচ্ছে - এদিন যে কাজ করা হোক না কেন তার ফল হয়ে দাঁড়ায় অক্ষয়।
 শরণাগত সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আমি তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলছি - এদিন যদি ভালো কাজ করা হয় তার জন্যে আমাদের লাভ হয় অক্ষয় পূণ্য আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে লাভ হয় অক্ষয় পাপ। তাই এদিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিত।খেয়াল রাখতে হয় ভুলেও যেন কোনো খারাপ কাজ না হয়ে যায়।কখনো যেন কটু কথা না বেরোয় মুখ থেকে।কোনো কারণে যেন কারো ক্ষতি না করে ফেলি বা কারো মনে আঘাত দিয়ে না ফেলি। তাই এদিন যথাসম্ভব মৌন থাকা জরুরী। আর এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান,অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে।এদিনটা ভালোভাবে কাটানোর অর্থ সাধনজগতের অনেকটা পথ একদিনে চলে ফেলা। এবারের অক্ষয়তৃতীয়া সবার ভালো কাটুক - এই কামনায় করি।