Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Monday, 23 September 2013

সাত্ত্বিক ব্যক্তি ও তার বৈশিষ্ট্য

        সাত্ত্বিক ব্যক্তি ও তার বৈশিষ্ট্য 

    ইতিপূর্বে বলেছি রাজসিক ও তামসিক ব্যক্তির বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে। এবার লিখছি  সাত্ত্বিক মানুষের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।
   সাত্ত্বিক মানুষদের মধ্যে কোনো কাজের প্রতি আসক্তি বা কর্ম করার জন্যে অহংকার থাকে না। তাঁরা বিশ্বাস করেন যে  তাঁদের সব কাজ ঈশ্বরের মাধ্যমেই সংগঠিত হয় আর তাই সে কাজের কর্তৃত্ব নেয়াও অন্যায়। এমনকি তাঁরা ত্যাগ করতে অভ্যস্ত হলেও,অহংকার এড়িয়ে চললেও এবং কামনারহিত হলেও কখনো ভাবেন না যে তারা ত্যাগী,নিরহংকারী বা নিষ্কাম ব্যক্তি।
    সাত্ত্বিক মানুষ কখনো মনে করেন না যে তিনি শ্রেষ্ঠ বা তাঁর মত কাজ কেউ করতে পারেন না। তিনি যা বলেন অন্তর থেকে ,যা করেন বিবেকের প্রেরণায়। তাঁর মধ্যে কোন মন আর মুখের প্রভেদ থাকেনা। তাঁর মধ্যে থাকে অসীম ধৈর্য। মানুষের জীবনে নানারকম বাধা বিঘ্ন আসে -সাত্ত্বিক মানুষ কিন্তু সকল বাধাবিঘ্ন সত্বেও শান্তভাবে ধৈর্য অবলম্বন করে থাকতে পারেন। সাফল্যে ভেসে যান না আবার দুঃখেও ভেঙ্গে পরেন না। জীবনের সবকিছুতে সমদৃষ্টি থাকায় আধ্যাত্মিক মানুষের বৈশিষ্ট্য।
   সাত্ত্বিক মানুষরা সবসময়ে সত্য কথা বলেন,মানুষের ভালোর জন্যে ভাবেন এবং নিজেদের সঁপে দেন সবার ভালোর জন্যে।
   আধ্যাত্মিক পথে এগোতে হলে এই সাত্ত্বিক গুন অবলম্বন একান্ত প্রয়োজন। 

Sunday, 22 September 2013

তামসিক মানুষ ও তার বৈশিষ্ট্য

                 তামসিক মানুষ ও তার বৈশিষ্ট্য

গতকাল লিখেছিলাম রাজসিক মানুষের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে। আজকে লিখছি তমগুণসম্পন্ন মানুষদের সম্বন্ধে। 
তামসিক মানুষের থাকে আটটি বৈশিষ্ট্য। 
১)এদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হল নির্বুধ্ধিতা। এরা বুঝতে পারে না কি কাজ করা উচিত এবং কি কাজ করলে নিজেদের ক্ষতি হতে পারে। ফলে এরা কর্তব্য বা অকর্তব্যের মধ্যে ফারাক বুঝতে পারে না। 
২) এদের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল অভদ্রতা। তারা শাস্ত্রপথ ও সত্সঙ্গ না করে তাদের ব্যবহার শিক্ষারহিত হয়ে থাকে। কাদের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হবে এরা বোঝেনা। 
৩) এদের মধ্যে থাকে অনম্রতা। এদের শরীর,মন ও বাক্য হয় উদ্ধত। 
৪) এরা জেদী হয়। অন্যের সুচিন্তিত মতামত কখনো গ্রহণ করে না। আর নিজের সিদ্ধান্তকেই  সঠিক বলে মনে করে। শত প্রমাণ দিয়েও তাদের কিছু বোঝানো যায় না। 
৫) এরা অন্যের থেকে উপকার পেলেও কখনো তার উপকার করতে চায়না। বরং অপরের ক্ষতির জন্যে নিবেদিত প্রাণ থাকে। 
৬) এরা অলস হয়। নিজের কর্ম করার পরিবর্তে শুয়ে শুয়ে অনর্থক চিন্তা করতেই ভালবাসে। 
৭) তাদের মধ্যে একটা বিষাদবোধ কাজ করে। যেহেতু তারা কোন ভালো কাজের সাথে যুক্ত থাকেনা তাই তাদের মধ্যে একটা অবসন্নতা বোধ ও বিষাদবোধ কাজ করে। আর সেই বিষাদবোধ হয় অহেতুক। নেই কাজ তো খই ভাজ ধাচের। 
৮) এদের মধ্যে একটা দীর্ঘসুত্রিতা কাজ করে। যে কাজ স্বল্পসময়ে শেষ করা যায় তারা সেটিকে ঝুলিয়ে রেখে দায়। কোন কাজ সুচারুভাবে শেষ করতে চায় না। এমনকি সহজ কাজও সহজে শেষ করতে চায় না। 
  যারা সত্বগুন্সম্পন্ন হতে চান তাদের এই তামসিক বৈশিষ্ট্যগুলো এড়িয়ে চলা খুব প্রয়োজন। 


Saturday, 21 September 2013

রাজসিক মানুষ ও তার বৈশিষ্ট্য

                     রাজসিক মানুষ ও তার বৈশিষ্ট্য

আজকে আমার একজন ভক্ত আমাকে লিখতে বলছিলেন রাজসিক ব্যক্তিদের বৈশিষ্ট্য সম্বন্ধে লেখার জন্যে। তাই আজকে তার অনুরোধেই লেখা ধরছি রজগুণের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে । যার মধ্যে রজগুণ প্রবল থাকে তার মধ্যে ৬টি বৈশিষ্ট্য  দেখা যায়- 
১) তার মধ্যে থাকে খুব বিষয়ের প্রতি আসক্তি। আসক্তি রজগুণের লক্ষণ। 
২) তার আসক্তি থাকে কর্মফলে। সে যে কাজই করুক তার ফল কামনা করে। কর্ম থেকে ইহলোকে যশ খ্যাতি এবং দেহান্তে স্বর্গে সুখভোগ কামনা করে। 
৩) তার থাকে বেশী লোভ। সে যতটুকু পায় তাতে কখনো সন্তুষ্ট হয় না। সে চায় আরও বেশী।
৪) তার মধ্যে থাকে হিংসা। এই হিংসা তামসিক মানুষের মধ্যেও থাকে কিন্তু রাজসিকদের হিংসার প্রকৃতি অন্যরকম। তামসিক মানুষরা হিংসা করে নিজেদের অজ্ঞানের জন্যে কিন্তু রাজসিক ব্যক্তিরা হিংসা করে তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে। নিজের লাভের জন্যে সে অপরের ক্ষতির পরোয়া করে না। এদের স্বভাবটাই হয় হিংসাত্বক। 
৫) তার মধ্যে থাকে অশুচিতা। অর্থাত সে বস্তু সংগ্রহ করে ভোগের জন্যে। আর তাই তার সকল বস্তুই ভরে থাকে অশুচিতে। এদের দেহ -অস্থি -মজ্জা সব অশুচি হয়ে থাকে। যে স্থানে এই রাজসিক ব্যক্তিরা থাকে তাদের এই অশুচিতে কলুষিত হয়ে থাকে সেখানকার বায়ুমন্ডল। ফলে এইসব লোকেরা যখন মারা যায় অতিরিক্ত আসক্তির জন্যে পৃথিবীর অশুচি স্থানেই এদের বাস করতে হয় সুক্ষ্মদেহে। 
৬) রাজসিক ব্যক্তির আরেকটি বৈশিষ্ট্য  হল - তার জীবনের সফলতা ও বিফলতার সাথে আবেগ পরিবর্তন। তারা সুখে বেশী আনন্দিত হয় আর দুঃখে বেশী কাতর হয়। 
  যারা সত্বগুণে সমৃধ্ধ হতে চান তাদের এই ৬টি রাজসিক বৈশিষ্ট্য ত্যাগ অত্যন্ত জরুরি।

Friday, 20 September 2013

অশান্তি থেকে উদ্ধারের পথ

                                                            অশান্তি থেকে উদ্ধারের পথ 
      মানুষের জীবনে অশান্তির কারণ সংসার .. সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলেই মন অশান্ত হয়ে পড়ে .. মনকে শান্ত করার জন্যে ঠাকুর শ্রীকৃষ্ণ তিনটি পথ বলেছেন - কর্মযোগ , জ্ঞানযোগ ও  ভক্তিযোগ.. 
        প্রথমে আসি কর্মযোগের কথায় .. কর্মযোগ হল ফলের আশা না করা ও কর্তৃত্বের অভিমান ত্যাগ করে নির্লিপ্তভাবে কর্ম করা..এতে সংসার থেকে আসক্তি চলে যায়..ফলে মনে শান্তি ও আনন্দ আসে..যাদের যোগবুদ্ধি আছে তারা কর্মফল পরিত্যাগ করে জন্মবন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করেন..
       দ্বিতীয়তঃ আসছে জ্ঞানযোগ..জ্ঞানযোগ দিয়ে আত্মস্বরুপে স্থিত হওয়া যায়..এবং তাতে লাভ হয় অনন্ত আনন্দ .. যে মানুষ অন্তরাত্মাতেই সুখযুক্ত  এবং আত্মাতেই জ্ঞানযুক্ত সেই জ্ঞানযোগী নির্বাণ ব্রহ্ম লাভ করেন ..
       তৃতীয়তঃ  আসছে ভক্তিযোগ .. এতে ভগবানের সঙ্গে অভিন্ন সম্পর্ক স্থাপন হয় .. তাতে লাভ হয় প্রেম বা অনন্ত আনন্দ..
      জ্ঞানমার্গের পথিকরা ভগবানের দর্শন চান না .. তাঁরা  আত্মস্বরুপ জেনে এবং তাতে প্রবিষ্ট হয়ে খুশী থাকেন .. তাই তাঁদের আর ভগবান দর্শন হয় না .. কিন্তু ভক্তিমার্গের পথিকদের আত্মস্বরূপ জ্ঞান হয় এবং তাঁরা  আত্মস্বরুপে অধিষ্ঠিতও হতে পারেন আর সেইসাথে তাঁদের ইষ্টদর্শন হয় .. লাভ হয় অনন্ত প্রেম .. তখন ভক্ত আর ভগবান প্রেমিক আর প্রেমাস্পদের মত এক হয়ে যান .. এ প্রসঙ্গে শ্রী রাধার কথা বলা যায় .. তিনি বলেছিলেন - শ্রীকৃষ্ণ  দর্শনের আগেই তাঁর শ্রী কৃষ্ণে প্রীতি হয়েছিল এবং দৃষ্টি বিনিময় হওয়ার পর সেই অঙ্কুরিত অনুরাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে দিনের পর দিন ধরে .. দেখতে দেখতে সেই প্রেম যেন দুজনের মনকে পেষণ করে অভিন্ন করে তুলেছে .. ফলে শ্রীরাধা তখন আর রমনী স্বরূপে আবদ্ধ ছিলেন না .. শ্রী কৃষ্ণও আবদ্ধ ছিলেন না রমণ স্বরূপে .. দুজনে একে অপরের সাথে মিশে এক হয়ে গেছিলেন ভক্ত ও ভগবান রূপে .. এই তো প্রেমের শ্রেষ্ঠ উপহার .. ভক্তিয়োগের পরম নিদর্শন ..
        তাইতো  বলি - প্রথমে কর্ময়োগের মাধ্যমে নিজেকে সংসারের প্রতি নির্লিপ্ত কর আর তারপরে ঝাঁপ দাও ভক্তির সাগরে .. জ্ঞানের সাগরেও ঝাঁপ দিতে পারো ..তবে ভক্তিতে পাবে তাঁর লীলার আস্বাদ যা জ্ঞানে নেই .. জ্ঞানী তো ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা জেনে আত্মস্বরুপে স্থির হয়ে থাকেন পরম আনন্দে ..ভক্ত সেইসাথে তাঁর পরম প্রেমিকের লীলার রসও আস্বাদ করেন .. 
        তাইতো  ভক্তি যোগের চেয়ে বড় পথ হয় না ..
   

Wednesday, 18 September 2013

ক্রোধ

                        ক্রোধ 

অনেকেই আমাকে জিজ্ঞাসা করেন - ক্রোধ বলতে ঠিক কি বোঝানো হয়? শাস্ত্রে বলে - ক্রোধ হল চন্ডাল। এক মুহুর্তের ক্রোধ শেষ করে দিতে পারে এক ফল। তা এহেন ক্রোধ বস্তুটি কি?
      এর উত্তরে বলি - মানুষের যখন কোন ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণে বাধা আসে,অর্থাত কামনাপুরণে বাধা আসে তখন মনের ভিতরে যে জ্বালার অনুভুতি হয় তাকে বলে ক্রোধ। এই সময়ে অপরের অনিষ্টের চিন্তায় মনের ভিতরে যে জ্বালার সৃষ্টি হয় তাকেই ক্রোধ বলে ।
      অনেক ছেলেমেয়েরা আমাকে বলে ," জানো, আমার বাবা বা মা খুব রাগী।আমাদের উপরে খুব রাগ করে।" এই রাগকে কিন্তু ক্রোধ বলে না,এটা হলো ক্ষোভ। কারণ বাবা বা মা মুখে যতই কটু বাক্য ব্যবহার করুন তার উদ্যেশ্য তো সন্তানের মঙ্গল।তাই তাকে ক্রোধ বলে না। কিন্তু যখন উত্তেজিত হয়ে অপরের ক্ষতি করা হয় এবং তাদের দুঃখ দিয়ে যখন মনে আনন্দ অনুভব করা হয় তাকে বলে ক্রোধ। তবে এই ক্রোধী ব্যক্তিরা কিন্তু এক অর্থে মানুষের মঙ্গল করে। এরা অন্যের মনে আঘাত দিয়ে নিজের অপকার করে পাপ সঞ্চয়ের মাধ্যমে কিন্তু সে যার অপকার করে তার পাপক্ষয় হয়ে যায়।
      অর্থাত যারা আধ্যাত্মিক পথে এগোতে চান তাদের কিন্তু ক্রোধ সম্পর্কে খুব সতর্ক থাকতে হয়। গীতায়  ভগবান বলেছেন - এই ক্রোধ হল মানুষের প্রথম শত্রু যা দেহে অবস্থান করে দেহেরই বিনাশ সাধন করে। যেমন কাষ্ঠস্থিত অগ্নি কাঠকে জ্বালিয়ে দেয় তেমনই দেহে অবস্থিত ক্রোধরূপী অগ্নি দেহকেই ভস্মীভূত করে। তাই ক্রোধ সম্পর্কে সাবধান।