Monday, 31 August 2015
Monday, 24 August 2015
ঈশ্বর লাভের পথ (২)
ঈশ্বর লাভের পথ (২) -- তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ( পূর্ব প্রকাশিতের পর)
এবার দেখা যাক কেন ভক্তিযোগ সর্বোত্তম।
জ্ঞানীরা সিদ্ধ হলে ঈশ্বরকে তত্বত জানেন এবং তাঁর ভিতরে প্রবিষ্ট হয়ে তাঁর মাঝে লীন হয়ে যান। কিন্তু তাঁদের ভগবান দর্শনের আকাঙ্খাও থাকেনা এবং তাঁরা সেই দর্শনও পান না।
যোগীরা সিদ্ধ হলে ঈশ্বরত্ব প্রাপ্ত হন এবং তাঁর সৃষ্টি স্থিতি লয়ের কর্মযজ্ঞে সামিল হন। এঁরাও সাধনের মাধ্যমে ঈশ্বরকোটি স্তর প্রাপ্ত হন। তখন ঈশ্বরদর্শনও তাঁরা যেমন লাভ করেন তেমনি তাঁর নির্দেশে জগতকল্যানের যজ্ঞেও এঁরা ব্রতী হন। ক্রিয়ায়োগের পথিকৃত শ্যামাচরণ লাহিড়ি মহাশয় যেমন যোগসিদ্ধ হয়ে কৃষ্ণের দর্শন পেয়েছিলেন আবার তাঁর মাঝেই পেয়েছিলেন ১০ মহাবিদ্যার দর্শন। তবে তাঁরা ইষ্টের দর্শন আর তাঁর ঐশ্বর্য লাভ করলেও ভক্তি ছাড়া একটি বস্তুর আস্বাদ পান না - তা হল লীলারস আস্বাদ।
আর ভক্তিমার্গের সাধকরা সিদ্ধ হলে ইশ্বরকে তত্বত যেমন জানতে পারেন তেমনি ভগবত দর্শন লাভ করেন আর তার চেয়েও বড় কথা তাঁরা লীলারস আস্বাদ করতে পারেন।
এই লীলারস আস্বাদ হয় ভগবতপ্রেমে। তাতে দুইরকম অবস্থার উল্লেখ মেলে। ভক্ত যখন ইষ্টের প্রেমে আপনার মাঝে ভাবের আবেশে ডুবে যান তখন ভক্তের অন্তরে প্রেমিক ভক্ত আর প্রেমাস্পদ ভগবান মিলেমিশে এক হয়ে যান। আবার যখন ভক্ত আপনার জাগতিক অবস্থায় ফিরে আসেন তখন প্রেমিক ও প্রেমাস্পদ এক হয়েও লীলার প্রয়োজনে ধারণ করেন ভিন্ন রূপ।
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের মধ্যলীলায় ' মহাপ্রভু - রায় রামানন্দ সংবাদ'-এ এই সাধ্য সাধন তত্বের ব্যাখ্যা আমরা পাই। সেখানে সাধ্য তত্ব নিয়ে আলোচনার শেষে রায় রামানন্দ বলছেন -
'ইহার মধ্যে রাধার প্রেম সাধ্য শিরোমনি।
যাঁহার মহিমা সর্বশাস্ত্রেতে ব্যাখ্যানি।। '
এই প্রসঙ্গে যখন রায় রামানন্দ অদ্বৈত তত্বের উপর একটি গীত গাইতে গেলেন তখন মহাপ্রভু তাঁর মুখ চেপে ধরেন। কারণ সেই যে আসল মহাভাব। দিব্য অমৃত। সেই মহাভাবের বিবরণ আমরা পাচ্ছি কবির ভাষায় -
'পহিলহি রাগ নয়নভঙ্গ ভেল।
অনুদিন বাড়ল অবধি না গেল।।
ন সো রমণ, ন হম রমণী।
দুঁহু মন মনোভব পেসল জানি।। '
অর্থাত শ্রীরাধা বলছেন - দর্শনের পূর্বেই শ্রীকৃষ্ণে তাঁর প্রীতি জন্মেছিল। দৃষ্টি বিনিময়ের পর থেকে সেই প্রীতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর ধীরে ধীরে এই অঙ্কুরিত পূর্বরাগ বেড়ে চলে সীমা থেকে অসীমের পথে। দেখতে দেখতে শ্রীকৃষ্ণের রমণ- স্বরূপ আর শ্রীরাধার রমণীস্বরূপের ভেদ মিলেমিশে এক হয়ে যায় । আর সেই প্রেম দুজনের মনকে পেষণ করে অভিন্নে পরিনত করে। এই হল ভক্তির শ্রেষ্ঠ স্তর। পরবর্তীকালে এই মহাভাব আমরা দেখি স্বয়ং মহাপ্রভুর মাঝে।
(ক্রমশঃ)
Friday, 21 August 2015
ঈশ্বর লাভের পথ
ঈশ্বর লাভের পথ
-- তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
এর মধ্যে কর্ময়োগের পথ বলছে - ফলের আশা ও কর্তৃত্বের অভিমান ত্যাগ করে সব কাজ ঠাকুরের কাজ মনে করে করতে থাক,এতেই সংসারে থেকেও সংসারচ্যুত হয়ে শান্তিতে ও আনন্দে থাকা যায়।
জ্ঞানযোগের পথ বলছে - আপন অন্তরাত্মার স্বরূপে স্থিত হলেই আসবে অখন্ড আনন্দ আর তাতেই লাভ হবে নির্বাণ।
ভক্তিযোগ বলছে - ভগবানের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করলেই শুধু মহাভাব তথা অনন্ত আনন্দ লাভ হয়।
অর্থাত যে পথেই আমরা তাঁকে লাভ করতে চাইব,তাতেই শান্তি,তাতেই আনন্দ। তিনি যে আনন্দস্বরূপ,শান্তিস্বরুপ তথা আমাদেরও মূল স্বরূপ। তাই তিনটি পথই তাঁকে লাভ করার উত্তম সোপান। কিন্তু ভক্তিযোগ হল সর্বোত্তম। ( চলবে)
Sunday, 16 August 2015
ঠাকুরকে পাওয়ার পথ নিষ্কাম ভালবাসা
ঠাকুরকে পাওয়ার পথ নিষ্কাম ভালবাসা
আজকাল মানুষ ঠাকুরকে খোঁজে কেন যেন?যাতে তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ পূরণ হয়। আর এই স্বার্থের লক্ষ্যে ছুটতে গিয়ে সে উপলব্ধি করতে পারে না সেই পারমার্থিক ভালবাসা যা দিয়ে ইশ্বর ঘিরে রেখেছেন আমাদের সবাইকে। ঠিক যেমন সূর্যকে দেখা যায় তার নিজের আলোয় তেমনি ঈশ্বরের ভালোবাসাও পাওয়া যায় শুধু তাঁর ভালোবাসাকে উপলব্ধির মাধ্যমে আর সেই উপলব্ধি জাগে শুধু তাঁর প্রতি নিস্বার্থ ভালবাসার মাধ্যমে। সাধনা যতক্ষণ ব্যক্তিগত স্বার্থপূরণের জন্যে হয় ততক্ষণ সাধক হয়ত জাগতিক ঐসর্য পান কিন্তু তাঁকে পান না। একমাত্র যখন ঐশ্বর্যের মহ ভুলে নিষ্কাম ভালবাসায় সাধকের মন পূর্ণ হয় তখনি তিনি ঈশ্বরকে অনুভব করতে পারেন সেই ভালবাসারই মাধ্যমে।Wednesday, 12 August 2015
মনকে বাসনামুক্ত করা প্রয়োজন
মনকে বাসনামুক্ত করা প্রয়োজন
বাসনা যতক্ষণ আমাদের ভোগাবে ততক্ষণ আত্মজ্ঞান আসবে না। কিন্তু বাসনাকে নির্মূল করা সহজ নয়। তাই প্রথমে সব অশুদ্ধ বাসনাকে মন থেকে দূর করতে হবে এবং শুদ্ধ বাসনায় মনকে পূর্ণ করতে হবে যা উত্তরণের সহায়ক। তারপর ক্রমে ক্রমে সেই শুদ্ধ বাসনাকেও কাটিয়ে উঠতে হবে। অর্থাত প্রথমে অশুদ্ধ বাসনাকে নির্মূল করতে হবে শুদ্ধ বাসনা দিয়ে এবং তারপর সেই শুদ্ধ বাসনাকেও কাটিয়ে উঠে মনকে করতে হবে বাসনামুক্ত। একমাত্র তখনি মনে আসবে শান্তি। আর সেই শান্তি নিজের ভিতরে জেগে উঠলে মন আপনা থেকেই খুঁজে পাবে আত্মজ্ঞানের পথ।Thursday, 6 August 2015
ভালবাসা করে কয় - ২
ভালবাসা করে কয় - ২
মানুষ সাধারনতঃ শুধু নিজেকেই ভালবাসে। আর যাদের মধ্যে তার নিজের প্রতি ভালবাসার প্রতিফলন দেখে তাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। অর্থাত সে নিজেকে যেভাবে দেখতে চায় যারা তাকে সেভাবে দেখছে তাদেরই সে ভালবাসে। অর্থাত কিনা,নিজের প্রতি ভালবাসার প্রতিফলন অন্যের চোখে দেখাই তার কাছে ভালবাসা। কিন্তু এখানেই প্রয়োজন একটু গভীরে যাওয়া। মানুষ যে নিজে বলতে শুধু এই নামরূপ দেহটাকে বোঝে। সে যদি নিজে বলতে আত্মাকে বুঝত তাহলে এই আত্ম ভালবাসা তাকে দেখিয়ে দিত সিদ্ধির পথ। স্বয়ং পরমাত্মার অংশ যে বিরাজ করছে আমাদের সব রূপের মাঝে আর তাই তাঁর সকল রূপকে ভালোবাসলেই তাঁকেও ভালবাসা হয় আর নিজেকেও ভালবাসা হয়। কারণ নামরূপ দেহ অসংখ্য হলেও আত্মা তো সেই তাঁর সাথেই যুক্ত। সকল রথের রশি যে শুধু একই রথির হাতে।Tuesday, 4 August 2015
ঠাকুর কেন সাড়া দেন না
ঠাকুর কেন সাড়া দেন না
আমরা প্রায়ই অনুযোগ করি - এত প্রার্থনা করলাম,তাও নিষ্ঠুর ঠাকুর সাড়া দিলেন না। কিন্তু আমরা বুঝতে চাইনা যে এই সাড়া না দেয়াটা আমাদেরই দোষের ফল। আসল কথা হল - প্রতিটি মানুষই হল লোহার মত আর ঈশ্বর চুম্বকের মত। যার মধ্যেই অধ্যাত্মজ্ঞান জেগেছে তাকেই ঈশ্বর টেনে নেন কাছে।তোমরা বলতে পারো - চুম্বক তো সব লোহাকেই টানে। আমি বলব - ঠিক কথা। চুম্বক সব লোহাকেই টানে কিন্তু তারও একটা শর্ত আছে। লোহায় যদি জং পরে যায় তাহলে চুম্বক টানতে পারে না। এই জং পরে ধুলো আর ময়লা জমে। একইভাবে আমাদের মনে যদি অসত ভাবনার ময়লা আর ধুলো জমে তাহলে ঈশ্বর আমাদের টানতে পারেন না। তিনি তখন অপেক্ষা করেন কবে আমাদের মন থেকে ময়লা এবং ধুলো পরিষ্কার করে আমরা নিজেদের আধারকে যোগ্য করে তুলব তাঁর কাছে আসার জন্যে। যতদিন না আমরা নির্মল হতে পারছি দেহে মনে ততদিন পর্যন্ত তাঁর যে শক্তি আমাদের মধ্যে অন্তর্নিহিত আছে তার সন্ধান আমরা কিছুতেই পাব না।
Monday, 3 August 2015
ভালবাসা কারে কয়?
ভালবাসা কারে কয়?
আমাদের প্রতিটি মানুষের মূল স্বরূপ হল ভালবাসা। এই পৃথিবীতে প্রতিটি নাম ও রূপের মাঝেই আছে ভালবাসা। কারণ ঈশ্বর স্বয়ং আমাদের মাঝে বিরাজ করেন ভালবাসা রূপে। এই ভালবাসা হল চিরন্তন,সর্বব্যাপী এবং অদ্বৈত।
কিন্তু আমরা সেই ভালবাসার পরশ পাই না। তার কারণ - ভালবাসা বিলোবার ব্যাপারে আমরা স্বার্থপর। আমরা দেখি - বিশেষ কিছু মানুষের কাছে কি পাওয়া যাবে এবং সেই অনুসারে তাকে ভালবাসি। অর্থাত আমরা খন্ড রূপকে ভালবাসি স্বার্থের লোভে। যতক্ষণ আমাদের ভালবাসা হবে এরম খন্ড রুপভিত্তিক এবং স্বার্থকেন্দ্রিক ততক্ষণ আমরা পাব না সত্যিকারের ভালবাসার পরশ।
তাহলে কিভাবে আমরা পেতে পারি সত্যিকারের ভালবাসার পরশ? কোন বিশেষ নশ্বর দেহকে ভালবাসার পাত্র কোর না। দেহকে নয় আত্মাকে ভালোবাসো। যে পরমাত্মার অংশ তোমার মাঝে আছে তারই অংশ আছে অন্যদের মাঝেও। তাইত ঈশ্বরের সুত্রে আমরা সবাই এক। যখনই সেই ঐক্যকে আমরা হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে পারব তখনি ভালবাসতে পারব সবাইকে একভাবে আর একমাত্র তখনি পাব স্বর্গীয় ভালবাসার পরশ - ইশ্বর যে ভালবাসায় আমাদের ভরাতে চান সেই ভালবাসা - যা ভালোর বাসা সেই অপার্থিব ধন আমরা পাব।
ভেবে দেখো - ঈশ্বরকে বলা হয় ভালবাসার মূর্ত রূপ। কেন?কারণ তিনি কোনো স্বার্থ দেখে কাউকে ভালবাসেন না , সবাইকে সমান ভালবাসেন - যার যেমন কর্ম তাকে তেমন ফল দেন। আমাদের উচিত ভালবাসার ব্যাপারে তাঁকে অনুসরণ করা। তার মতই সবাইকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসা। একমাত্র তাহলেই যে আমাদের মিলবে স্বর্গীয় ভালবাসার পরশ।
Saturday, 1 August 2015
অনন্তের জিজ্ঞাসা ( অষ্টানগিক যোগ ও ক্রিয়া যোগ পর্ব) -১
অনন্তের জিজ্ঞাসা ( অষ্টানগিক যোগ ও ক্রিয়া যোগ পর্ব) -১
( বিগত ২০১০ সালের জুলাই মাসের অধিবেসন থেকে সংগৃহিত)শাশ্বতী দাস - যোগ কাকে বলে?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় -পতঞ্জলি বলেছেন - চিত্তবৃত্তি নিরোধের নামই যোগ। এ প্রসঙ্গে আমার বক্তব্যটাও বলি। আমরা জানি যে জীবাত্মার লক্ষ্য হল - নিজ আত্মায় আত্মস্থ হয়ে আত্মস্বরূপ তথা ব্রহ্মস্বরুপ লাভ। আমাদের দেহের সহস্রার চক্রে বিরাজ করছেন সদাশিব এবং আমাদের দেহের মূলাধার চক্রে বিরাজ করছেন কুলকুন্ডলিনি। কিন্তু জন্মলাভের পর আমরা মায়ায় মোহিত হয়ে যাই। ফলে মায়ার প্রভাবে ষড়রিপু আমাদের আস্তে আস্তে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে আর সেজন্যেই আমাদের ভিতরকার আসল এই শক্তি সুপ্তভাবে থেকে যায় ভিতরে। তাই আমাদের মনের উপর যেসব রিপু প্রভাব বিস্তার করে সেগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে মনকে অন্তর্মুখী করতে হয় আর এই অন্তর্মুখী মনই হয় সাধনার অনুকুল। এই বহির্মুখী মনকে নিয়ন্ত্রণ করে অন্তর্মুখী করে আপন কুলকুন্ডলিনি শক্তিকে জাগিয়ে তাকে মূলাধার থেকে সহস্রারে নিয়ে গিয়ে সদাশিবের সাথে মিলিয়ে দেয়ার সাধনা হল যোগ। এই যোগের মাধ্যমেই আমরা জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার সংযোগ ঘটাতে পারি আপন দেহভান্ডে।
(ক্রমশঃ )
Subscribe to:
Posts (Atom)