Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Friday, 15 August 2025

ভোজ যখন অভিশাপ - তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়



গ্রামের নাম সূর্যপুর। নদীর ধারে সবুজে ঘেরা ছোট্ট সেই গ্রামে সবাই শান্তিতে থাকত। তবে সেই শান্তি বেশীরভাগ লোক অনুভব করত যখন তাদের প্রতিবেশীর কিছু ক্ষতি হত। আসলে মানুষে-মানুষে ঈর্ষা যে এক চিরন্তন ব্যাপার।

 অর্ক ছিল সেই গ্রামের সবচেয়ে জনপ্রিয় যুবক। পরিশ্রমী, সহৃদয়, আর সবার কাছে প্রিয়।
কিন্তু সবার কাছে সে প্রিয় হয়ে ওঠায় কিছু মানুষের মনে হিংসার মেঘ জমে উঠেছিল তার প্রতি। বিশেষত, গ্রামের সবচেয়ে ধনী ব্যবসায়ী রতন মন্ডলের। রতন চাইত না যে কেউ তার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় হোক। তাই বাইরে থেকে সে হাসিমুখে অর্ককে ভাই বললেও, ভেতরে ভেতরে চাইত তার সর্বনাশ।

এক বছর শরৎ উৎসবে রতনের বাড়িতে মহাভোজের আয়োজন হলো। গ্রামে ঢাকঢোল বাজল—রতনের বাড়ি থেকে গ্রামের সবাইকে জানানো হল আমন্ত্রণ। অর্কও ডাক পেল। 

কিন্তু অর্কের ঠাকুরদা ছিলেন সেখানকার একজন বিশিষ্ট সাধক। তিনি জানতেন অর্কের প্রতি রতনের মনোভাব। তাই অর্ক নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে বেরোনোর আগে তিনি সাবধান করলেন, “অর্ক, মনে রেখ, যাদের মনে তোমার প্রতি বিষ আছে, তাদের দেওয়া খাবার খেও না। খাবার কেবল শরীরেই যায় না, মনেও ছাপ ফেলে। আর অন্ন যদি আসে ঈর্ষাকাতর হৃদয় থেকে, তবে সে অন্ন অভিশাপ হয়ে ওঠে। অশুভ মন দিয়ে পরিবেশিত খাবার জীবনে বিষ ঢালতে পারে।”

অর্কর প্রথমে মনে হল, “ এ আবার কিরকম কথা ! খাবার তো স্থূল বস্তু। মন তো সুক্ষ্ম। তাই খাবারে আবার মনোভাবের ছোঁয়া লাগবে কিভাবে!” কিন্তু সে জানত যে তার ঠাকুরদা বিশিষ্ট সাধক। তাই সে তার ঠাকুরদার কথা মাথায় রাখল।

ভোজের দিন রতন খুব যত্ন করে অর্ককে সামনে বসাল। সে নিজে হাতে এক থালা খাবার এনে দিল অর্কের জন্যে। চারপাশে মশলার গন্ধ, ধূপের ধোঁয়া আর উৎসবের কোলাহল। অর্ক দেখল তার থালায় নানা রকম লোভনীয় পদ রয়েছে। কিন্তু অর্ক  বিনীতভাবে থালা না নিয়ে হাত জোড় করে বলল, “রতনদা, আজ আমি উপবাসে আছি। শুধু আপনার কথার সম্মান রাখার জন্যেই আজকে এসেছি।”

রতনের মুখে অস্বস্তির হাসি ফুটল। সে মূলতঃ লোক খাওয়াত কারণ সে জানত যে নিজের প্রারব্ধ কাটানোর সবচেয়ে বড় উপায় হল লোক খাওয়ানো। আর অর্ক তো খুবই ভালো সাত্বিক স্বভাবের যুবক। তাকে খাওয়াতে পারলে জীবনে ভালো ফল আসবেই। 

কিন্তু অর্ক সেই খাবার স্পর্শই করল না। তবে অর্ক খাবারের থালা ফিরিয়ে দিতেই পাসেবোস থাকা তার বন্ধু অতীন সেই থালা নিয়ে নিল। অতীনও বেশ জনপ্রিয় ছিল সেই গ্রামে। আর তাই রতন তার প্রতিও ঈর্ষা পোষণ করত মনে।

কিন্তু এই ভোজের কয়েকদিন পর খবর এল— সেদিন অতীন যে অর্কের ফিরিয়ে দেয়া প্লেট থেকে ভোজের খাবার খেয়েছিল, সে খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। জ্বর ও পেটের যন্ত্রণায় বেশ কাহিল হয়ে পড়েছে।

এরপর অর্ক ঠাকুরদার কাছে গিয়ে খুলে বলল সব কথা। সব শুনে ঠাকুরদা বললেন,
“এমনটা হবে আমি জানতাম।খাবার যখন কেউ খাওয়ায় তা শুধু নিছক খাদ্যদ্রব্য থাকে না। খাবারের সঙ্গে যে খাওয়াচ্ছে তার মনোভাবও মিশে যায়। যাদের মনে হিংসা আছে বা যাদের মন অন্যের ক্ষতি চায়, তাদের দেওয়া খাবারে মানসিক বিষের ছোঁয়া থাকে। অন্ন যে দাতার হৃদয়ের ছায়া বহন করে। আর তাই ঈর্ষাকাতর হৃদয় থেকে আসা অন্ন অভিশাপের ফল আনে জীবনে।”


#গল্পথেকেশিক্ষা
#আধ্যাত্মিকগল্প
#বাংলাগল্প
#মনেরশুদ্ধতা
#প্রেরণাদায়ীগল্প
#SpiritualStory
#BanglaStory
#EnergyInFood
#ToxicVibes
#PositiveVibesOnly
#MindAndFood
#DoNotEatNegativity
#StoryWithMessage
#ViralBangla

4 comments:

  1. খুব সুন্দর ও শিক্ষণীয় গল্প 🙏🙏, পড়ে উপকৃত হলাম 🙏

    ReplyDelete
  2. রাধে রাধে মনে রাখছি।

    ReplyDelete
  3. এই গল্পটি পরে ভালো লাগলো, কিছু কিছু জিনিষ জানতে পারলাম আর শিখতে পারলাম যা ভবিষ্যতে সাবধান থাকতে সাহায্য করবে ।

    ReplyDelete
  4. Anek kichu janar ache ja apnar lekhai pai.

    ReplyDelete