Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Wednesday 12 October 2016

আমাকে একজন ভক্ত জিজ্ঞেস করছিলেন - পরনিন্দা করা তো খারাপ। কিন্তু কেউ আমাকে আঘাত দিলে তার কথা কোনো বন্ধুর কাছে খুলে বললেও কি পরনিন্দা হয়? 
উত্তরে আমি বললাম - দেখ , যতক্ষণ তুমি তোমার উপরে নেমে আসা সেই অন্যায় আঘাতের উল্লেখ কোন বন্ধুর কাছে করছো নিজের ভিতরে জমে থাকা কষ্ট ভাগ করে নেয়ার জন্যে,ততক্ষন এটা নিন্দা নয়। কিন্তু খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন তুমি neutral থেকে বলতে পারো। কারণ যখনি তুমি ঘটনাটা বলতে বলতে আক্রমণকারীর উপর নিজের রাগ ব্যক্ত করবে (অর্থাত ও এতো খারাপ,এমন অমানুষ এগুলো বলবে) সেটা নিন্দার স্তরে নেমে আসবে - তখন আক্রমণকারীকে তুমিও আক্রমণ করে বসলে। সেখানে নিন্দার পাপ তোমাকে স্পর্শ করবে। কিন্তু যদি শুধু আক্রমণের সংবাদটুকু দিয়ে বোলো -এর ভার আমি ঠাকুরের উপরে ছেড়ে দিয়ে ওর সম্বন্ধে নির্লিপ্ত হয়ে গেছি,তখন নিন্দার পাপ তোমাকে স্পর্শ করতে পারবেনা। আর সত্যি বলতে কি,একজন অন্যায়কারীকে তুমি কতটাই বা শাস্তি দিতে পারবে?কিন্তু সেই শাস্তির ভার যদি স্বয়ং ঠাকুরের উপর ছেড়ে দাও সেই শাস্তিও হবে যথাযথ। আর তোমার মনের শান্তিও নষ্ট হবে না। বরং বন্ধুকে বলে সেটা যত শীঘ্র মন থেকে মুছে ফেলতে পারবে তাতে তোমারি মঙ্গল।
ভালো ​থেকো ..
শুভেচ্ছাসহ
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

Friday 5 August 2016

Sangrilar Guptoyogi

Sangrilar Guptoyogi boitir prosonge bishishto lekhika Saswati Das -er anobodyo review -
“Shangrilar Guptojogi” – boier naamtii ek romancho srishty korechilo aamar mone suru thekei. “Amritam” patrikay prakashito kahinir prothom diker kichuta porar sujog hoyechilo aamar, aar tarpor jokhon puro lekhati haate pai, tokhon je aabar suru thekei porte suru korbo, ta bolai bahulyo, karon Sri Tarashis Gangopadhyayer ek line lekhao kothao pele seti porar sujogo chharte parina aami. Onar sokol pathak pathikara e byaare aamar sathe nischoi sohomot hoben.
Debatatma Himalayer proti aami borabori ek ajana akorshon anubhob kori. Aar ei Shangrila moth er oboshthan Himalayeri koley Tibbat er ek Gupto sthaan e. Tai sob miliye, “Sangrilar Guptojogi” er proti aamar aakorshono ektu beshii suru thekei. Tibbat er kichu gupto jog er kotha agey sunechilam tobe bistarito kichu jana chilo na. Ei boite Tibbat er onek gupto sadhan kriyar kotha aamra jante pari ja lekhok advut vabei jante paren sekhankar ek lamar theke. Sudur Tibbat theke ek ochena lama hothat ekdin Kolkatay ese lekhoker sathe jogajog koren tnar gurur nirdeshe tnake kotoguli joger kriya shekhanor jonyo, jate segulo bhobishyote manusher majhe aadhar bujhe choriye deowa jay. Ei je lekhakke nirbachon kora holo eto sohosro koti manusher modhye theke ei mohot karjer jonyo, er pechone ek bishal doibo karon ache ja aami prokaash korchi na karon boiti jara porenni ekhono, tader jonyo obichar kora hobe Jodi ekhoni bole di seta. Lamar kach theke lekhok oi bisesh jogshikshar sathe sathe, Tibbat er Sangrila moth er yogider jibandhara o sadhanar kothao bistarito vabey jene niyechen ebong ta pungkhanupungkho vabe guchiye poribeshon korechen ei boite tar asadharan jadumoy lekhaneer madhyome . Boiti porte porte kokhono aami chole gechi sudur Tibbat er sei gohon khetre….pothe prakritir birupotay kokhono ba bhoye thomke gechi, kokhono ba probol utsahe egiye gechi lekhaker sathe hashimukhe. “Deboloker Amritasandhane” er por Debatatma Himalayer prakritir rup er ek asadharon barnana aabaro pelam ei boite, kokhono sei barnana uttal ebong bhoyanok, kokhono ba ta aaswadon korieche digontobistrito tusharloker govir noihshobdo, aabar kokhono ba ta monke bhoriye tuleche ek jholmole rodrojjol swapnil poribesher chnoya diye.
Tibbat er ei gupto sadhonkhetre protiniyoto je koto kando ghote choleche ta dharonao korte partam na ei boier songsporshe na ele. Ekhankar moth er sadhanpranalir sathe Bharatiyo sadhanpranalir onek mil thakleo kichu kichu byapar ekdom aalada aar besh interesting. Tibbati sadhanar bivinno stor ebong ta anusheelon korar pranali, emonki mrityur pore aatmar egonor poth jate sugom hoy, tar o sadhana kivabe korte hoy, ta aamra jante pari ei boi theke. Tibbati sadhanar je bivinno dhaap, tader majheo aabar kichu porjay ache onek khetrei. Ei sadhana besh kothin holeo lekhoker asadharon sundor lekhar style o bojhanor khomotay ta aamar moton sadharon manusher kacheo hoye utheche bodhogomyo. Boiti prochur mulyobaan tothye somridhho ebong ekta nijosyo mosrin goti ache er. Lekhoker onyanyo boi er moton etio khoob olpo somoyer modhyei sesh kore felechi aami, karon lekhoker lekhay emoni jaadu je ta fele rakhte parina; sesh na kora obdhi aamar swasti hoyna ekdom. Bolishtho bishoybastute, bhaashar madhurjye, tothyer praachurjye, shobder jothajotho proyoge aar sorbopori lekhoker jaadumoy choumbokiyo lekhar style e “Sangrilar Guptojogi” hoye utheche ek anobodyo rochona. Ekdom notun swaad er ei rochona; aar aamar mone hoyna ei bishoybastu niye er agey kew likhechen. Porte porte aami jeno sei sadhanar modhyei dhuke gechilam aar kokhon je sesh hoye gelo kheyali chilo na. Lekhoker proti lamar snehomakhano kothabarta ebong tnake nirbachon korar karon jeta tini janiyechen, seta pore aamar duchokh diye kokhon je bismoy o anonder asrudhara neme eseche aami kheyali korini. Sei mahat aatma, jnar lekhaneer rotnoraajite aami pushto hochhi protiniyoto, sei lekhoker antoraatmake janalam aamar shotokoti pronaam aar sei sathey Iswarkeo janalam aamar sohosro koti pronaam, karon Tnar ichhataei to emon mahat aatmar songo korte pari protiniyoto. Adhyatmo pipasu manusher mone Sri Tarashis Gangopadhyayer onyanyo boi er moton ei boitio biraat bhabe saara felbe bole aamar drirho biswas. Lekhoker lekhaneer chalok Gopal jeno erokom drirhobhabe sei lekhanee ke dhore theke mosrin vabe ta chalona kore chole chirokaal, ei prarthonai kori Iswar er kache. Joy Gopal!

To get this book by registered post e mail us at sharanagoto.somproday@gmail.com

Thursday 4 August 2016

প্রকাশিত হল আমার ২৬ টম গ্রন্থ সাংগ্রিলার গুপ্তযোগী।

প্রকাশিত হল আমার ২৬ টম গ্রন্থ সাংগ্রিলার গুপ্তযোগী।পাওয়া যাচ্ছে কলেজস্ট্রিটে - দে বুক স্টোরে ও গিরিজায় ,মহেশ ও সর্বোদয়তেওঁ যাবে জলদি

https://www.facebook.com/sangrilarguptoyogi/

This book is the mystic narrative of a great Tibetan Lama who visited the secret Buddhist Gompha of Sangrila, hidden away in the valleys of remote Tibetan plateau with a highly evolved soul and mahayogi Rechung Lama.He had also enlightened the author with the minute details of his experience of the Yogsadhna of Sangrila he performed there to achieve sidhhi.



Monday 18 July 2016

সূর্যের আলো

সূর্যের আলোর যা তেজ তাতে সবার পক্ষে সূর্যের পূজার সময়েও সূর্যের দিকে চাওয়া সম্ভব হয় না। তাই তারা জলে সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব দেখেই তার উপাসনা করে। একইভাবে এই তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের মনে হয় - ঈশ্বরকেও আমরা সম্যক উপলব্ধি করতে পারি না। অসীমকে কে ধারণা করবে ? তাইতো ঈশ্বর সব বস্তুর মধ্যেই আছেন জেনে মরা শুধু তার বিগ্রহের মাঝেই তাঁর প্রকাশ খুঁজি। আর যেহেতু বিগ্রহকে আমরা ভক্তি দিয়ে অর্চনা করি তাই তাঁর মধ্যে পরমাত্মার প্রকাশও আমরা উপলব্ধি করতে পারি।
ভালো থাকবেন ..
শুভেচ্ছাসহ
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

Saturday 30 April 2016

বৃন্দাবনের ডাক -১

  বৃন্দাবনের ডাক  -১

আজকাল অনেকেই দেখি বলেন - বয়েস হলে বৃন্দাবন যাব,বয়েস হলে নবদ্বীপ যাব। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো -বয়সটাই যদি না আসে সেখানে যাবার? আমরা শ্বাসের ঘরে বাস করি। স্বাস ফুরালেই জীবন শেষ। যারা ভেবে রাখেন শেষ বয়সে তীর্থ করবেন ,তারা শেষ বয়সটা যে দেখে যাবেন তার কি গ্যারান্টি আছে? স্বাস যেকোন মুহুর্তেই শেষ হয়ে যেতে পারে। আর যদি বা তারা শেষ বয়সে যেতে পারেন তাহলেও তাতে কাজের কাজ কিছুই হবেনা। আমি তো বলব -সময় থাকতেই এবং বয়স থাকতেই কাজের কাজ সাধনা ও তীর্থ দর্শন করে নেয়া উচিত। শেষ বয়সে কোমরে জোর থাকবে না তীর্থে যাবার জন্য আর সারা জীবন ভোগ করে তখন তীর্থে যদি যাওয়াও যায় তবু কাজের কাজ কিছু হবে না। তীর্থে যাবার মূল কারণ হল নিজ মনের উত্তরণ ঘটিয়ে সাধনায় মনোনিবেশ। শেষ বয়সে তীর্থে গিয়ে মনের উত্তরণ হলেও সাধনা কি আর করার অবকাশ মিলবে? তখন শুধু একটাই বোধ হবে -জীবনটা হেলায় কাটালাম আর ওই আক্ষেপ নিয়েই উপরে যেতে হবে। তাই যারা আধ্যাত্মিক জগতে যেতে চান তাদের অল্পবয়স থাকতে থাকতেই তীর্থ পরিব্রাজন সেরে সাধনায় ডুব দেয়া উচিত।
ভালো থাকবেন ..
শুভেচ্ছাসহ
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়


বৃন্দাবনের ডাক -২



                                              বৃন্দাবনের ডাক  -২

"গোঠের রাখল বলে দে রে কোথায় বৃন্দাবন" গানটা শুনতে শুনতে যেন হারিয়ে যাই হৃদি বৃন্দাবনে। কখনো কেশীঘাটে ,কখনো নিধুবনে ,কখনো বাঁকে বিহারিজীর দরবারে। জানি সর্বত্রই আছেন তিনি ,আছেন আমার হৃদয়েই - কিন্তু তাও হৃদয়ের তাঁকে অনুভব করতে হলে যে বৃন্দাবন ধামেও যেতে হয় -সেখানকার রজ মাখতে হয় গায়ে,সেখানকার রাধে রাধে নামে মন ভরাতে হয়,সেখানকার যমুনার জল মাথায় দিতে হয়,একাত্ম্য হয়ে যেতে হয় সেখানকার আকাশ বাতাসের সাথে। তবেই না অন্তর বাহিরে আসে একই সামঞ্জস্য।.পয়ার ছন্দে মিলে যায় অন্তরঙ্গ,বহিরঙ্গ। কৃষ্ণের বৃন্দাবন প্রকট হয়ে ওঠে হৃদয়ে। 
ভালো থাকবেন .. 
শুভেচ্ছাসহ 
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

Saturday 19 March 2016

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে কিছুক্ষণ -৩

প্রশ্ন :-আচ্ছা , সবই বল ভকতি বড় ..তাহলে জ্ঞান কি কোন কাজের নয় ?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় : বৈষ্ণব ধর্মের একটা অংশের ধারণা - জ্ঞান বস্তুটা আদৌ কোন কাজের কিছু নয় .. কারণ মহাপ্রভু বলে গেছেন জ্ঞান নয় ভক্তি শ্রেষ্ঠ ..কিন্তু কেন বলেছেন তিনি এ কথা?কারণ কলিযুগে সাধারণ মানুষের জ্ঞানের পথে যাওয়ার মত ব্যক্তিত্ব,সহ্যশক্তি ,ধৈর্য কিছুই নেই ..তাই এদের জ্ঞানের পথে পাঠালে কিচুই পারবে না ..বরং ভক্তির পথে গিয়ে যদি শুধু থাকুরের চরণ শরণ করে থাকে তবে ঠাকুর নিজেই এসে উতরে দেবেন..ভক্তি হল নির্ভরতার সাধনা আর জ্ঞান হল পুরুষ কারের সাধনা .. আমাদের আজকের যুগে পুরুষ কার আছে কি? যা আছে শুধুই অপরের উপর নির্ভরতা .. তাই মহাপ্রভূ দেখলেন - সামাজিক জীব যদি এই পরনির্ভরতার ভাবটা ঈশ্বরের উপরে রাখতে পারে তবে তো ঠাকুর নিজে নেমে এসে কোলে তুলে নেবেন ..তাই তিনি জ্ঞানের পরিবর্তে সাধারণের জন্যে ভক্তি র পথ দেখালেন..কিনতু তাই বলে জ্ঞান কিনতু ফেলনা নয় ..এই পথে চলার জণ্যে অনেক কষ্ট করতে হয় ..শঙ্করাচার্য বা মধ্যাচার্য বা রমন মহর্ষি বা স্বামী বিবেকানন্দ কিন্তু এমনি এমনি হওয়া যায় না। অনেক সাধনার প্রয়োজন হয়। তাই কথায় কথায় জ্ঞানকে ছোট করা মুর্খতার শামিল। 

Friday 26 February 2016

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে কিছুক্ষণ ২

 তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে কিছুক্ষণ ২ (পূর্ব প্রকাশিতের পর)

   অর্জুনবিষাদযোগ  - আমাদের সাধারণ মানুষদেরই প্রতীক 


  প্রশ্ন - আপনি এইমাত্র বললেন যে গীতা পাঠ করলেই মনকে স্থির করা যাবে। কিন্তু তা কিভাবে সম্ভব?
   তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - গীতা পাঠ মানে শুধু পড়ে যাওয়া নয়। সেইসাথে তার অর্থ উপলব্ধিও দরকার। তাহলেই দেখবে - গীতার মধ্যে দিয়ে আমাদের মুক্তির পথ দেখিয়েছেন ভগবান। প্রথমেই দেখ- প্রথম অধ্য্যায়ের নাম অর্জুনবিষাদযোগ।এটি হল অর্জুনের মোহের বর্ণনা। গীতা শুরু অর্জুনের আসক্তির মাধ্যমে এবং শেষ তার আত্ম উপলব্ধির মাধ্যমে মোহের অন্তের ভিতর দিয়ে। অর্থাত কিনা সাংসারিক জীবের কিভাবে মায়ার বন্ধন কাটিয়ে মূল লক্ষ্যে পৌছনো সম্ভব তাই এখানে কৃষ্ণ দেখিয়েছেন।
    প্রশ্ন - একটু বিশদে বুঝিয়ে দিন।
    তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - দেখ - গীতার শুরু হচ্ছে ধৃতরাষ্ট্র উবাচের মধ্যে দিয়ে -
"ধর্মক্ষেত্রে কুরুক্ষেত্রে সমবেতা যুযুত্সবঃ।" ধৃতরাষ্ট্র সঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করছেন - আমার পুত্ররা কুরুক্ষেত্রে মিলিত হয়ে কি করল?
    এই ধৃতরাষ্ট্র কে? ধৃতরাষ্ট্র হল অজ্ঞানের প্রতীক।অজ্ঞান থাকে কোথায়?মনের আড়ালে।অর্থাত ধৃতরাষ্ট্র হল অজ্ঞানরুপ মনের প্রতীক যা জন্মান্ধ। অজ্ঞান মন দেখতে পায় না যে তাঁর ভিতরেই ঈশ্বরের বাস।তাই সে ঈশ্বরকে সামনে পেয়েও তাঁর দিকে না গিয়ে নিজের থেকে উত্পন্ন মোহকে ধরে থাকে। এখানে মোহ কে? দুর্যোধন সহ কৌরবরা হল তাঁর মোহ। যদি সাধারণ জীবদের দিকে দেখ -প্রায় প্রত্যেকেই ধৃতরাষ্ট্র। সবাই নিজের ঘর সংসার সামলাতেই ব্যস্ত। অন্ধভাবে সংসারের জন্যে কাজ করে যায় - সে জন্যে শত অন্যায় তারা করে যায়।
   আর সঞ্জয় কে? সঞ্জয় হল সংযমের প্রতীক। অর্থাত এই অজ্ঞান রূপ ধৃতরাষ্ট্র সংযম রূপ সঞ্জয়কে জিজ্ঞেস করছেন - তার মোহ থেকে উত্পন্ন দুর্যোধনরা কুরুক্ষেত্রে কি করছে?
   প্রশ্ন - তাহলে কুরুক্ষেত্রও কি প্রতীক?
   তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - অবশ্যই। জানোই তো যে আমাদের শরীরকে বলে ক্ষেত্র। এখানে দৈবী প্রবৃত্তি এবং আসুরিক প্রবৃত্তির সংঘাত চলছে সবসময়ে। কুরু শব্দের অর্থ কর। অর্থাত যে ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ধর্ম ও অধর্মের সংঘাত চলছে সেই হল কুরুক্ষেত্র। সেই হিসেবে দেখতে গেলে আমাদের প্রত্যেকের দেহ কুরুক্ষেত্র যেখানে দৈবী প্রবৃত্তি এবং আসুরিক প্রবৃত্তির সংঘাত চলছে সর্বদা। ধৃতরাষ্ট্রের এই প্রশ্নের উত্তরে সঞ্জয় কুরুপক্শ এবং পান্ডবপক্ষের ব্যুহ রচনার দৃশ্য তুলে ধরছেন। এই ব্যুহ রচনাও কিন্তু আমাদের মনের একেকটি অবস্থার প্রতীক। প্রতিটি নাম এখানে তুলে ধরছে আমাদের মনের একেকটি অবস্থার কথা।

 গীতা তত্ব - ২

প্রশ্ন - বলেন কি? পান্ডব কৌরবদের নামের মধ্যেও নিহিতার্থ আছে?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - আছে বৈকি। সঞ্জয় গীতার সূচনায় দেখাচ্ছেন - দুর্যোধন দ্রোনাচার্যের কাছে গিয়ে কথা বলছেন সেনাদের ব্যুহ দিয়ে। আগেই বলেছি - দুর্যোধন হল মোহর প্রতীক। এই মোহ হল সব রোগের মূল কারণ। দুর্যোধন -অর্থাত দূর যো ধন। অর্থাত দূর বা দুষিত যে ধন তাই দুর্যোধন। আমাদের দুষিত ধন এই মোহ। এই মোহ যাকে আচার্য মানে সেই দ্রোণও কিন্তু প্রতীক। দ্বৈতভাবের প্রতীক।দ্বৈতভাব -অর্থাত আমি ও পরমাত্মা স্বতন্ত্র এই ভাব। যখনি নিজেকে আত্মারূপে না দেখে দেহরূপে দেখা হচ্ছে তখনি মোহর হাত শক্ত হচ্ছে। অদ্বৈত ভাব থেকে দ্বৈতভাবে নেমে গুরু দ্রোণ মোহকে আগলে রাখছেন। এই প্রসঙ্গে দুর্যোধন ও দ্রোণ যে পান্ডব ও কৌরবদের নাম বলছেন সেদিকে খেয়াল করলেই বুঝবে - এর প্রতীকি অর্থ।  
 প্রশ্ন -  কিরকম?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - প্রথমেই দুর্যোধন আচার্যকে দেখাচ্ছেন পান্ডবদের ব্যুহ। বলছেন - ধৃষ্টদ্যুম্ন পরিচালিত ব্যুহ দেখতে। কে ধৃষ্টদ্যুম্ন? যে দৃড় মন শাশ্বত অচল চিরন্তনের পথে শরণাগত থাকতে পারে সেই ধৃষ্টদ্যুম্ন আর শুধু সেই হতে পারে সত্যের পথের নায়ক। এ প্রসঙ্গে পান্ডব পক্ষের যে বীরদের নাম করা হয়েছে তাঁরা হলেন - ভীম (ভাবের প্রতীক। এই ভাবের এমন শক্তি যে এর মাধ্যমে অব্যক্ত পরমাত্মাও আত্মার মাঝে সগুনে প্রকট হয়ে দর্শন দেন। ), অর্জুন (অনুরাগের প্রতীক),  যুধিষ্ঠির ( মনের সব সব যুদ্ধে যে স্থির থাকতে জানে),সাত্যকি (সাত্বিকতার প্রতীক), বিরাট (হৃদয়ের প্রসারতার প্রতীক ), ধৃষ্টকেতু (দৃর যার কর্তব্যজ্ঞান), চেকিতান (মন যেখানেই থাক তাকে ইস্ট চরণে নিয়ে আসার সংকল্পের প্রতীক),কাশীরাজ (কায়ারুপ কাশিকে আপন বিবেক অনুসারে চালানোর প্রতীক),পুরুজিত (স্থুল,সুক্ষ্ম,কারণ শরীরকে ইচ্ছামত চালনার প্রতীক),শৈব্য (সত্যর শ্রেষ্ঠতার প্রতীক ), সৌভদ্র অভিমন্যু ( অর্থাত শুভ আধার পেলে যে মন ভয়মুক্ত থাকে তার প্রতীক),দ্রৌপদীর পাঁচ ছেলে 
(বাত্সল্য,লাবন্য,সহৃদয়তা, সৌম্যতা,স্থিরতা ) - এরা সবাই মহারথী। দেহ ক্ষেত্রে যে প্রতিনিয়ত মহারণ চলে এরাই সেই যুদ্ধ জেতাতে পারে।
 প্রশ্ন - তাহলে কৌরব পক্ষের বীররাও কি অসত প্রবৃত্তির প্রতীক?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - তাছাড়া আর কি? দেখ - এরপর দুর্যোধন আপন পক্ষীয় নায়কদের কথা বলছেন - "ভবান ভীষ্মশ্চ কর্ণশ্চ কৃপশ্চ সমিতিন্ জয়ঃ। 
                 অশ্বথামা বিকর্ণশ্চ সৌমদত্তিস্তথৈব চ।"  এখানে প্রথমেই আছেন ভীস্ম -তিনি হচ্ছেন ভ্রমের প্রতীক। এই ভ্রম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টিঁকে থাকে। যেমন ছিলেন ভীষ্ম। সকল সেনার নিধনের পরেও শরশয্যায় বেঁচে ছিলেন তিনি। তার মত বীর হয় না। অজেয় তিনি। একমাত্র শরনাগতি ভিন্ন তাকে মারা যায়না। তিনি ইচ্ছামৃত্যু সম্পন্ন। এই ইচ্ছাই হল ভ্রম। এই ইচ্ছাই হল মায়া। এই ইচ্ছা থেকেই জগতের সৃষ্টি। যিনি কামনারহিত তার পতন হয় না। তিনি ব্রহ্মের সাথে এক হয়ে থাকেন। সাধনার শুরুতে থাকে অনন্ত ইচ্ছা। দেখতে দেখতে এসব কেটে গিয়ে একটাই ইচ্ছা থাকে ইস্ট দর্শন। অবশেষে তাও যখন কেটে যায় তখনি নিজের মধ্যে আত্ম সাক্ষাত্কার ঘটে। কিন্তু এই ইচ্ছার বিলুপ্তি না হব পর্যন্ত ভ্রমের নাশ হয় না। আর জতখ্হন ইচ্ছা বা আসক্তি থাকে ততক্ষণ সক্রিয় থাকে অবিদ্যা। এই ভীস্মকে বধ করতে তাই স্বয়ং ভগবানকে অস্ত্র ধরতে হয়েছিল। তাই সাধকের পক্ষে সহজে একে বধ করা সম্ভব হয় না। অতএব শরনাগতি অবলম্বন করে তাঁকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে হয়। তারপর আছেন কর্ণ - অহমিকার প্রতীক। একেও সরাসরি বধ অসম্ভব। তাই এখানেও ইষ্টের শরনাগতি চাই। আছেন কৃপাচার্য - ইনি হলেন কৃপা করার প্রতীক। সাধনপথে একটা স্তরে এলে সাধকের লোকমান্য হবার ইচ্ছা হয় -তিনি তখন অপরকে কৃপা করার প্রবণতা দেখান যা তার পতনের কারণ হয়। যেমন বিশ্বামিত্র দয়া করতে গিয়ে পতন দেকে এনেছিলেন নিজের। আসলে সাধনের পথে অনেক সিধ্ধাই আসে। অনেকে সেগুলো লোকমান্য হবার জন্যে ব্যবহার করে আর তাতে লোকের কাছে নিজেকে ব্ড় দেখানোও হয় কিন্তু তাতে সাধন শক্তির নাশ হয়ে সাধক পতিত হন। অশ্বথামা হল আসক্তির অন্য নাম। দ্বৈত আচরণের ফলেই আসক্তির জন্ম আর তাই দ্রোনের পুত্র অশ্বথামা। এই আসক্তিই ঘটিয়েছিল দ্রোনের পতন ও মৃত্যু। এই অশ্বথামা অমর। কারণ আসক্তির শেষ নেই - নিবৃত্তির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এ বাধা দিয়ে যায়। আছে বিকর্ণ যা বিকল্পের প্রতীক। সাহ্নার চরম শিখরে এসেও সাধকের মনে হয় -ঈশ্বরের কাছ থেকে কি বিকল্প শক্তি যেমন সিধ্ধাই পাওয়া যেতে পারে।এই সিধ্দাই কিন্তু সাধনে বিরাট বাধা আনে। এছাড়া আছেন সৌমদত্তি ভুরিশ্রবা। এই ভূরিশ্রবা হলে ভ্রমাত্বক শ্বাসের প্রতীক। সাধনায় উন্নত স্তরে পৌছলে যখন সবাই সাধকের প্রশংসা করেন তখন সেই ভুরি ভুরি প্রশংশাতে যারা অভিভূত হয়ে যান তাদেরই বলা হচ্ছে ভুরিশ্রবা। তবেই দেখছ -কৌরব পক্ষের নায়করা সবাই সাধনপথের বহির্মুখী প্রবৃত্তির অঙ্গ যা সহকের সর্বনাশ করে আর পান্ডব পক্ষের নায়করা হলেন সব সাধনপথের নিবৃত্তি লাভের সহায়ক। 
                                        ৩
 প্রশ্ন - কিন্তু তাহলে দুর্যোধন এখানে কেন বলছেন যে ভীম দ্বারা রক্ষিত সৈন্যদলকে জয় করা সহজ কিন্তু ভীষ্ম দ্বারা রক্ষিত সৈন্যদের পরাস্ত করা অসম্ভব?  
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - বাহ্যিক দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে দুর্যোধন বলছেন যে তাদের আছে ১১ অক্সৌহিনী সৈন্য আর পান্ডবদের মাত্র ৭ অক্সৌহিনী সৈন্য। কিন্তু এখানে আসল হল দুই রক্ষকের নাম - ভীম ও ভীষ্ম। আগেই বলেছি - ভীস্ম হল ভ্রমের অন্য নাম। আর ভ্রমের ইচ্ছামৃত্যু। ইচ্ছার মাধ্যমে সংকল্প করে এই মায়ার ভ্রমকে জয় করতে না পারলে অবিদ্যার বিরূদ্ধে জয়লাভ অসম্ভব। সাধনার শুরুতে ইচ্ছা থাকে অনন্ত আর যত সাধনপথে এগোনো যায় ইচ্ছা কমতে থাকে। অবশেষে সব গিয়ে থাকে শুধু পরমাত্মা প্রাপ্তির ইচ্ছা। আর এই পরমাত্মা  প্রাপ্তি ঘটলে ইচ্ছার সমূলে বিনাশ হয় আর তখনি ভ্রম নির্মূল হয়। অর্থাত তখন ঘটে ভীস্ম বা ভ্রমের ইচ্ছামৃত্যু। তাই ভীষ্ম দ্বারা রক্ষিত অবিদ্যার সৈন্য প্রায় অজেয়। 
   অন্যদিকে দেখো , দুর্যোধন বলছেন - ভীম দ্বারা রক্ষিত পান্ডব সৈন্যদলকে হারানো কঠিন নয়। কারণ এদের সেনাপতি ভীম। ভীম ভাবের প্রতীক। ভাবের সেই ক্ষমতা আছে যার টানে স্বয়ং ভগবান দেখা দেন। এই ভাবের দ্বারাই পুণ্যময় প্রবৃত্তির বিকাশ ঘটে মানুষের মাঝে। কিন্তু ইষ্টের প্রতি ভক্তিতে যদি ভেজাল আসে,অর্থাত ভক্তিতে যদি কামনা প্রবেশ করে,তবে ভাবের ঘরে অন্ধকার নামে।তাতে কামনা পূর্ণ না হলেই ইষ্টের প্রতি শরনাগতি টলে যায়। তাই ভাবের পরিবর্তন ঘটলেই পতন  নিশ্চিত। তাই দুর্যোধনের মতে - ভীম রক্ষিত সেনাদের জয় করা সহজ।   
প্রশ্ন - গীতার এই অধ্যায়ে দেখা যাচ্ছে সবাই একেকটি অদ্ভুত নামের শঙ্খ বাজাচ্ছেন। এর কি কোন আলাদা তাত্পর্য আছে ?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - আছে বৈকি। প্রথমেই বলি কৃষ্ণের শঙ্খর কথা। কৃষ্ণ বাজাচ্ছেন পাঞ্চজন্য। এই পাঞ্চজন্য হল পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিযকে পাঁচ তন্মাত্রা বা শব্দ,স্পর্শ,রূপ,রস গন্ধর রসে সিঞ্চিত করে তাদের দমন করে রাখার প্রতীক। অর্থাত এই নামের মাধ্যমে কৃষ্ণ বোঝাচ্ছেন -সব বাহ্য বিষয় ত্যাগ করে এবং সেদিকে সামান্য মনযোগ না দিয়ে ধ্যানে ইষ্টের প্রতি মন নিবিষ্ট করতে। 
  তারপর দেখ,অর্জুন বাজালেন দেবদত্ত শঙ্খ। আগেই বলেছি,দৈবী সম্পদের প্রতি অনুরাগ হল অর্জুন। যখন ইস্টকে ভালবাসা ছাড়া অন্য কিছুর উপর সামান্য আকর্ষণ থাকেনা সেই অবস্থাই  হল অনুরাগ। আর এই অনুরাগ মনে জাগলেই দৈবী সম্পদের উপর প্রভুত্ব সাধকের করায়ত্ত হয় না চাইতেই। সত্যিকারের সাধক এই সম্পদ বহিরঙ্গের কাজে না লাগিয়ে তা ঈশ্বরের প্রতি নিবেদন করে দেন যা তার সিদ্ধি তরান্বিত করে। 
  ভীম বাজালেন পৌন্দ্র শঙ্খ।এর অর্থ প্রীতি। আগেই বলেছি -ভীম হল ভাবের প্রতীক আর এই ভাবের সঞ্চার হয় প্রীতির মাধ্যমে। হৃদয়ে প্রেম থাকলে তবেই হয় ভাবের প্রকাশ। 
   ধর্ম রূপ যুধিষ্ঠির বাজালেন অনন্ত বিজয় শঙ্খ।অর্থাত -ধর্মকে ধরে থাকলে বিজয় অনিবার্য। আর এই বিজয় হল অনন্ত ,অর্থাত পরমাত্মাকে লাভ করে তার মাঝে স্থিতিলাভ সম্ভব তাঁর মত সত্যের পথে চললে। 
     নিয়মের প্রতীক নকুল বাজালেন সুঘোষ শঙ্খ। অর্থাত সাধক যখন যথার্থ ভাবে নিয়ম পালন করবেন সদাচারের জন্যে তখন তার অশুভ প্রবৃত্তি সব বিলীন হয়ে যাবে। আর শুভ বুধ্হির উদয় হবে। 
     সত্সঙ্গ রূপ সহদেব বাজালেন মনিপুশ্পক শঙ্খ। সাধকরা শ্বাসকে বলেন মনির সমতুল্য। বহিরঙ্গে মহাত্মাদের বাণী শুনে মনকে প্রভাবিত করে যাঁরা আত্মায় ডুব দেন,অর্থাত নিজ মন স্থির করে ঈশ্বরের চিন্তায় বিভোর হয়ে থাকেন তাই হল যথার্থ সত্সঙ্গ।  চিন্তন,ধ্যান ও সমাধির মাধ্যমে ইষ্টের সাথে এই সত্সঙ্গ সম্ভব হয়। যতই ইষ্টের সান্যিধ্যে মন স্থির হবে ততই আসবে শ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ। এতে ইন্দ্রিয়ের সাথে মন আসবে নিয়ন্ত্রণে। এই আত্মার সাথে মনের সত্সঙ্গ সফল হলে প্রতিটি শ্বাসের উপর নিয়ন্ত্রণ আসবে যা সাধককে নিয়ে যাবে মোক্ষের লক্ষ্যে। 
   প্রশ্ন - এবার আসি অর্জুনবিষাদযোগের মূল প্রশ্নে। অর্জুন যখন কৃষ্ণকে রথ স্থাপন করতে বললেন দু পক্ষের সেনাদলের মধ্যে,তখন তার মধ্যে যে বিষাদ জাগলো,এটা কি ইঙ্গিত বহন করে?
   তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় -  অর্জুন যখন কৃষ্ণকে রথ স্থাপন করতে বললেন দু পক্ষের সেনাদলের মধ্যে তখন তাঁর লক্ষ্য ছিল - যাতে দু পক্ষের সৈন্যদের পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সাধনার পূর্বে ঠিক এই জায়গায় আসতে হয়। নিজের সকল প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তির মাঝখানে দাড়িয়ে নিরপেক্ষভাবে নিজেকে বিচার করতে হয়। অর্জুনও তাই করছিলেন। অনুরাগী ভক্তের জীবনে এ এক পরীক্ষা। এই পরীক্ষার লগ্নে যেটা অন্য ভক্তদের হয়,অর্জুনেরও তাই হল। যে অনুরাগ ভক্তকে ভগবানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় সেই অনুরাগেরই কাঁচা রূপ হল মোহ। মোহ অনুরাগীকে দেখায় -চারপাশে এই যে সংসার,এই যে সব আত্মীয় এদের নিয়েই তো সংসার। এদের বাদ দিয়ে জীবনের সার্থকতা কি? মোহবশে ভক্ত দেখেন - তার সাধের সংসারের থেকে এবার তাঁর বিচ্ছেদ আসন্ন। ফলে তার মনে জাগে বিষাদ। অর্জুনের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আর নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্যে তিনি  টেনে আনলেন সনাতন কুলধর্মের কথা - স্বজনদের বধ করলে কুলনাশ হবে,কুলধর্ম নাশ হবে,কুলধর্ম উচ্ছন্নে গেলে কুলস্ত্রীরা ভ্রষ্টা হবে ও তাদের পরপুরুষের প্রতি আসক্তি আসবে,তার  ফলে বর্ণসংকর জন্ম নেবে। এদিকে যথার্থ উত্তরসুরীর অভাবে পিতৃপুরুষদের পিন্ড লোপ পাবে। ফলে পিতৃপুরুষরা নরকে যাবে। শুধু কুলধর্ম নিয়ে ভাষণ -তাই নয়,অর্জুন এইসাথে বলছেন - আমরা জ্ঞানী হয়েও এই মহাপাপ করব কেন ? অর্থাত মোহকে রক্ষা করার জন্যে তার মধ্যে জেগেছে অহমিকা। তিনি শুধু  যে বলছেন তিনি জ্ঞানী,তাই নয়,সাথে "আমরা" শব্দটি ব্যবহার করে বলছেন এই মহাপাপ কৃষ্ণও  করছেন তার সাথে। আর তারপর সেই পাপ থেকে আত্মরক্ষার জন্যে তিনি ধনুর্বান ত্যাগ করে রথে বসে পড়লেন। তবেই দেখ, মানুষ যখন মোহের কবলে পরে তখন তার মধ্যে অহমিকা জাগে জ্ঞানের আর সংসার এবং আত্মীয়স্বজনদের প্রতি আসে আসক্তি -তখন সে ভগবানকেও পাপী ভাবতে পারে বুদ্ধির অন্তর্ধানে। এটি হল অনুরাগের কাঁচা স্তর -সেখানে সবকিছুই আমার বলে মনে হয় এবং কিছুই ছাড়তে চায় না মন। কিন্তু অনুরাগ যখন মোহের স্তর পেরিয়ে প্রেমের চৌকাঠে পা দেয় তখন এই কাঁচা স্তর পাকা হয়ে যায় ইস্ট কৃপায়। তখন আর সব আমার মনে হয় না - মনে হয় আমি শুধু ঈশ্বরের। আর চারপাশে যা আছে সবই তাঁর অংশ যা প্রকারান্তরে আমার অংশ। তখন বোঝা যায় -শরীরের আত্মীয়তা অজ্ঞানজনিত।আমার পিতামহ,আমার জ্যেঠা,আমার ভাই -এসবই  অজ্ঞানের সম্পর্ক। কারণ দেহটাই তো অনিত্য। তাই দেহের সম্পর্ক কিভাবে শাশ্বত হবে? 
   সাধারনতঃ সাধনার প্রারম্ভে আসে মোহ - তখনি আমার আমার ভাব জাগে সবার প্রতি। এই মোহ ঈশ্বরের থেকে মানুষকে আড়াল করে রাখে। কিন্তু যখন এই মোহ নাশ হয় তখনি ভক্ত পায় ঈশ্বরের দেখা। অর্জুন গীতার প্রারম্ভে সাধারণ জীবের মত শুধু রাজ্যসুখ ভোগই শ্রেষ্ঠ ভাবছেন - এর বাইরে যে কিছু থাকতে পারে তা তার মাথায় নেই। অতএব দেখাই যাচ্ছে - আর পাঁচজন অনুরাগী ভক্তের মতই অর্জুন প্রার্থিব সুখকেই শ্রেষ্ঠ ভাবছেন। তাই তার মনে মোহের সম্পর্কের বন্ধন হারানোর বিষাদ জেগেছে। এই জায়গা থেকে কত ভক্ত হারিয়ে যান। কিন্তু অর্জুন হারাননি। কারণ তিনি শরণাগত। নিজের জীবনরথ তুলে দিয়েছেন ভগবানের হাতে।আর স্বয়ং ভগবানকে সারথী করতে পেরেছেন বলেই এই বিষাদ কাটিয়ে ভগবান তাঁকে এগিয়ে দিয়েছেন পরম প্রাপ্তির পথে।                                       
    প্রশ্ন - কিন্তু অর্জুন যখন শরণাগত তার মনে বিষাদ আসা কি সঙ্গত?
    তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সঙ্গত নয়। কিন্তু এযে ঠাকুরের লীলা। তিনিই  ভক্তদের গীতা উপহার দেয়ার জন্যে অর্জুনের মনে এই বিষাদ আনিয়েছেন।  বিষয়ের প্রতি মোহ থেকেই যদিও বিষাদ আসে তবে বিষাদকে ছোট করাও ঠিক নয়। মানুষকে জাগতিক জগত থেকে ভক্তির পথে আনতে বিষাদের ভুমিকা বিরাট। জাগতিক জগত থেকে আধ্যাত্মিক জগতে প্রবেশ করার সীমান্ত এই বিষাদ। বিষাদ যখন মনে জাগে তখন জল আসে চোখে। ভিতর থেকে আসে কান্না। যথার্থ শরণাগত ভক্ত যখন চোখের জল ফেলে বা বিষাদে আচ্ছন্ন হয় তখন ঠাকুর কৃপা করে নেমে আসেন পাশে। ভক্তের হাত ধরে তাকে তরিয়ে দেন। গীতার মাধ্যমে সেই নিদর্শন দেখিয়েছেন পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণ।                           
 (ক্রমশঃ)

Sunday 31 January 2016

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে কিছুক্ষণ


               তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে কিছুক্ষণ



                                 ১

প্রশ্ন - প্রথমেই জানাই আমাদের সময় দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ।

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - ধন্যবাদটা বাদ দিলেই ধন্য হতাম ভাই।

প্রশ্ন - কিন্তু সবার মাঝে অধ্যাত্ম চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে আপনার প্রয়াস অবশ্যই সাধুবাদ দাবি করে।

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সাধুবাদের জন্যে ধন্যবাদ। তবে খেয়াল রাখতে হবে -এই ধন্যবাদ নিতে গিয়ে আমার ভিতরের উদাসী সাধুটা যেন আমাকে বাদ দিয়ে চলে না যায়। কারণ ভিতরের সাধু যদি আমাকে বাদ দেয় তাহলে আমাকে গ্রহণ করবে অসাধু অহংবোধ। আর স্থুল অহংকে যদি আমি বাদ দিতে না পারি তবেই আমার ভিতরে জাগবে অহমিকা। ফলে আসবে সবার সাথে বাদানুবাদের ঝোঁক আর সেই বাদানুবাদ করতে করতে জীবনটাই হবে বরবাদ।

                                      ২

প্রশ্ন - আপনি তো ঈশ্বরে বিশ্বাসী। আপনার লেখা পড়লেই বোঝা যায়। কিন্তু কেন? আপনি কি ঈশ্বরকে দেখেছেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - দেখেছি বললে আপনার অভিপ্রেত জবাব হবে না হয়ত। আর দেখিনি বললে মিথ্যা বলা হবে। সকল জীবের মধ্যে তিনিই তো আছেন। তবে সব সাধনকথা তো প্রকাশের নয়। জ্ঞানীরা বলেছেন - আপন সাধনকথা বলিবে না যথা তথা।

প্রশ্ন - যে ইশ্বরকে আমি দেখলামই না তার অস্তিত্ব বিশ্বাস করব কেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - বিশ্বাস করতে কে বলেছে আপনাকে ? আমি কখনই বলব না আমার কথা বিশ্বাস করতে। কারণ সেটা আমার সাখ্যে আপনার বিশ্বাস হবে। আর সে হবে কাঁচা বিশ্বাস। তাই অন্যের কথায় বিশ্বাস করতে নেই। আগে নিজে সাধন করুন। তাতে যে উপলব্ধি পাবেন তা বিশ্বাস করুন।

প্রশ্ন - কোন সাধু আমাকে ইশ্বর দেখাতে পারবেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - আপনি অধিকারী হলে অবশ্যই পারবেন। তবে আপনার প্রস্তাবটা কেমন হলো জানেন? M .A ক্লাসের প্রফেসরকে নার্সারির ছাত্র যদি বলে -আমাকে এখনি

M .A পাস করান তাহলে সেটি যেমন প্রশ্ন হবে এটিও তেমনি। কারো কাঁধে ভর করে ইশ্বর দর্শন হয় না। সেজন্যে গুরু নির্দেশিত পথে সাধনা করতে হয়। ইশ্বর Victoria Memorial নন যে কিছু টাকা দিয়ে টিকিট কাটলেই দেখা যাবে। কৃপা পেতে হলে কর্ম করুন,ফল পাবেন। কৃপা মানেই যে তাই - কৃ মানে কর,পা মানে পাবে।



                                    ৩


প্রশ্ন - ইশ্বর বলতে আপনি কি বোঝেন ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - ব্যাকরণের দিক দিয়ে দেখতে গেলে ঈশ্বর হলেন জাগতিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থানকারী কোন অস্তিত্ব। অর্থাত যিনি সৃষ্টিকর্তা তাঁকেই আমরা ইশ্বর জানি।এক কথায় ঈশ্বর বলতে বোঝানো হয় - পরম সত্বাকে। অর্থাত যিনি সবের নিয়ন্তা। আবার যথাক্রমে শৈবধর্মে এবং ভক্তি আন্দোলনে ঈশ্বর বলতে তাঁদের আরাধ্য ইস্টকে অর্থাত যথাক্রমে শিব ও বিষ্ণুকে যথাক্রমে বোঝানো হয়।

প্রশ্ন - অর্থাত ইশ্বর আর ভগবান একই ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - অবশ্যই এক।

প্রশ্ন - তাহলে দুটি আলাদা শব্দ কেন ইশ্বর আর ভগবান ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - পদ্ম আর কমল তো দুটি ভিন্ন নাম কিন্তু বস্তু তো এক। এখানেও তাই। যিনি ঈশ্বর তিনিই একমাত্র ভগবান হতে পারেন। ভগবান মানে কি?ভগের অধিপতি। ভগ কি? ছয়টি ঐশ্বর্য। যিনি পরম ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য গুনযুক্ত তিনিই ভগবান। এই ছয়টি ভগ একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কার থাকতে পারে?

এ প্রসঙ্গে বলি - ভগবানের একটি যৌগিক ব্যাখ্যাও আছে। এক্ষেত্রে ভগ শব্দের অর্থ পরাশক্তি বা পরা প্রকৃতি বা চঞ্চল মন। আর বান শব্দের অর্থ তীর বা শ্বাস। অর্থাত শ্বাসরুপি বান প্রানায়ামের মাধ্যমে চালনা করতে করতে যার চঞ্চল মন স্থিরতা লাভ করে তিনিই ভগবান। অর্থাত স্থির প্রাণ যা আমাদের মধ্যে আছে তাই ভগবান। সেই ভগবান পরমাত্মাকে লাভ করার জন্যে জীবাত্মার শোধনের যে ক্রিয়া তাকেই সাধনা বলে।

প্রশ্ন - কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতে অনেক সাধুও তো নিজেকে ভগবান বলে প্রচার করেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - ওনারা বিজ্ঞাপনের ভগবান। ওনাদের কথা বলে আমার সময় নাই বা নষ্ট করলেন। পরনিন্দায় আমার রুচি নেই। আর ওনাদের আলোচনা করে ওনাদের পাপ টানার ইচ্ছা নেই। যারা নিজেদের ভগবান বলে তারা স্বঘোষিত ভগবান থাকুন। যাঁদের মহাজন মহামানবরা শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিয়ে ভগবান পদে বরণ করেন,যেমন শিরদির সাইবাবা,সত্য সাইবাবা,বাবা লোকনাথ - তাঁদের কথা বলুন। আমি তাঁদের সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত জানাই ।


                                            ৫

প্রশ্ন - আপনি তো ভগবানে বিশ্বাস করেন। কিন্তু বলতে পারেন - সত্যিই যদি তিনি থেকে থাকেন - তাহলে তাঁর সৃষ্টিতে এত অবিচার কেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - কোথায় দেখলেন অবিচার?

প্রশ্ন - আজকের যুগে যারা মন্দ তারা ভালো থাকে আর যারা সত্যিই সাধু ব্যক্তি তাঁরা কষ্টে থাকেন। ভগবান সত্যি থাকলে এই অবিচার কি হত?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - খালি চোখে দেখলে অবিচার মনে হওয়া বিচিত্র না। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প বলি শুনুন। একবার কৃষ্ণা আর অর্জুন দ্বারকায় এক ধনীর বাড়িতে যান। ধনী তাঁদের বিরাট সমাদর করেন। নিজের ধনদৌলত দিয়ে তাঁদের বিরাট অভ্যর্থনা দেন। কৃষ্ণ খুশি হয়ে বলেন," তোমার ধন আরো বৃদ্ধি পাক।" তারপর তিনি যান এক গরিবের বাড়িতে। সেই ভক্তের একমাত্র সম্বল তার গাভী। সেই গাভীর দুধ দিয়ে তিনি কৃষ্ণের সেবা করেন। কিন্তু কৃষ্ণ তাঁকে আশির্বাদ করে বলেন ,"তোমার গাভীর স্বর্গ প্রাপ্তি হোক। " এতে অর্জুন অবাক হন। কৃষ্ণকে বলেন,"একই তোমার অবিচার সখা?গরিব মানুষটির একমাত্র সম্বল তার গাভী। তুমি সেই গাভীর মৃত্যু চাইলে আর ধনীর এত ধন,তাকে তুমি আরো ধনের আশির্বাদ দিলে?"কৃষ্ণ হাসলেন। বললেন,"সখা যে ধনী,সে তো ধন দিয়েই ভুলে আছে। তাই তাকে আরও ধনের অভিশাপ দিয়ে আরও দুরে সরিয়ে দিলাম আমার থেকে। আর যে গরিব সে তো ১২ আনা মন আমাকে দিয়েই রেখেছে কিন্তু গাভীর দিকে ৪ আনা মন রেখেছে বলে পুরোটা আমাকে দিতে পারছে না। তাই আমি তার গাভীটিকে নিয়ে নিলাম যাতে সে আমাকে পুরো মন দিতে পারে। আর তখনি পূর্ণ হবে তার সরনাগতি। তখন আর তাকে নিজের কথা ভাবতে হবে না। সে ভাববে আমাকে আর আমি ভাবব তার সবকিছু। তবেই দেখছ,আমি স্থুল দুঃখ দিই আমার ভক্তদের ভবদুঃখ ঘোচানোর জন্যে। আর স্থুল সুখ দিই অভক্তদের আমাকে ভুলে থাকার জন্যে।" এই হল ভগবানের বিচার। তিনি আঘাত দেন ,যন্তনায় পুড়িয়ে ছারখার করেন খাঁটি সোনা হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে। কারণ তিনি যে শুধু খাঁটি ভক্তকেই কাছে টানেন।


                                        ৬

প্রশ্ন - আপনার লেখা পড়ে তো মনে হয় আপনি কৃষ্ণের খুবই ভক্ত। তাহলে কি তিনি আপনাকেও পুড়িয়েছেন ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - রবিঠাকুরের একটি গান আছে - আমার এ ধুপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে। আমার লেখার যা সুরভির কথা আপনারা বলে থাকেন তা তো তাঁরই দান। না পোড়ালে সেই সুরভি আসত কোথা থেকে?অশ্রুর জলে সিঞ্চিত না হলে সৃষ্টির বীজ কি বৃক্ষের রূপ নিয়ে ডালপালা মেলতে পারে? তবে?এটুকু বলতে পারি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যে সাধনপথে এগোতে হলে বারবার অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে এগোতে হয়।

প্রশ্ন - অর্থাত যা আমার পছন্দের সব ঠাকুর কেড়ে নেবেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - কেড়ে নিয়েই যে কড়ি দেন তিনি। ভক্তের পছন্দের কিছু থাকলে যে তাঁকে ভক্ত নিজের সবটুকু দিতে পারবে না। তাই তো ভক্তের ভালো কিছু লাগলে তিনি সযত্নে সেটি সরিয়ে নেন। ফলে তাঁর দিকেই পুরো মনটা রাখা সম্ভব হয়। আর ১৬ আনা তাঁকে দিতে পারলে তবেই তো হয় কৃপার অরুনোদয়। তখনি তিনি হাতে তুলে দেন শেষ পারানির কড়ি।জীবনের মোক্ষম লাভ মোক্ষ তখনি তো মেলে।


                                     ৭

প্রশ্ন - এই মোক্ষ লাভের জন্যে কি করা দরকার ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সাধনা।

প্রশ্ন - সেটি কিভাবে করতে হয় ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সেটি করা খুব সহজ। সাধনা শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তার কার্যকারিতা। অর্থাত - সাধ না করা। মনের খালি বহিরঙ্গের সাধ -এটা চাই,ওটা চাই। মনকে ক্রিয়া,ধ্যান,প্রাণায়াম ,জপ প্রভৃতি দিয়ে এমনভাবে বেঁধে নিতে হয় যাতে সে আর সাধ করার সুযোগ না পায়। অর্থাত মনকে নিয়ন্ত্রণ করাই হল সাধনা। চঞ্চল প্রাণকে স্থির প্রানের স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় এই সাধনার দ্বারা।

প্রশ্ন - তাতে কি হবে?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - বৃন্দাবন দর্শন।

প্রশ্ন - মনে মনেই বৃন্দাবন দর্শন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - মনেই তো আসল বৃন্দাবন -হৃদি বৃন্দাবন। স্থুল বৃন্দাবনে সাধক তো যান শ্রীরাধাকৃষ্ণের কৃপা পেতে যাতে তাঁদের হৃদি বৃন্দাবনের দ্বার উন্মোচিত হয়। বৃন্দাবনের গোপিনীরা হলেন জীবাত্মার প্রতীক আর শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমপুরুষ। আমাদের জীবাত্মাকে সাধনার মাধ্যমে শুদ্ধ করে নিয়ে যেতে হবে গোপিনীর স্তরে আর তারপর মুলাধারে স্থিত জীবাত্মাকে নিয়ে যেতে হবে কুটস্থে। সেখানে যখন গোপিনী জীবাত্মা ও পরমপুরুষ কৃষ্ণের মিলন হবে তখন সেখানেই জাগবে হৃদি বৃন্দাবন। আর অনাহত চক্র থেকে ভেসে আসবে কৃষ্ণের মোহন বাঁশির সুর।


                                 ৮

প্রশ্ন - এই কৃষ্ণকে পেতে হলে কি করা উচিত আমাদের ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - কিছু না করাই প্রয়োজন।

প্রশ্ন - কিছু না করলে কৃষ্ণলাভ হয় নাকি?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - হয় না?

প্রশ্ন - কি করে হবে ? তপস্যা না করলে প্রারব্ধ তো কাটবে না। তাই জপ তপ ধ্যান সদন না করলে কিভাবে চলবে?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - আর এসব করার পর মনে কিরকম অবস্থা হবে?

প্রশ্ন - তা তো জানি না। কিরকম অবস্থা হবে?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - মনের চঞ্চলতা দূর হবে। আর চঞ্চলতা দূর হলে প্রাণ স্হির হবে। এই স্থির প্রাণ রূপেই যে আমাদের মধ্যে বিরাজ করছেন কৃষ্ণ। তাই জাগতিক কাজকর্মের থেকে মন তুলে নিয়ে আমাদের নিজ আত্মায় আত্মস্থ হতে হবে। অর্থাত মন যে বাহ্যিক বিষয়ে অহরহ ঘুরে বেড়ায় তার থেকে মনকে নিবৃত্ত করাই হল সাধনা। আর সেজন্যেই জপ ধ্যান সব। এগুলো হয়ে গেলে যে স্তর মনে জাগে সেটি হল - নিবৃত্তি। যতক্ষণ মন চঞ্চল ততক্ষণ তা মূলাধার,স্বাধিষ্ঠান আর মনিপুর চক্রের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে আর জাগতিক লাভক্ষতির হিসেব করে। যাদের মন এই স্তরে ঘোরে তাদের ইষ্টলাভের কামনাই জাগেনা - তারা জাগতিক সুখ নিয়ে মেতে থাকে। মন যখন যথার্থ ব্যাকুল হয় ঠাকুরের জন্যে তখন মনিপুরের হোমকুন্ডে আগে সকল বাসনা কামনা অঞ্জলি দিতে হয়। ত্তারপরই আসে চঞ্চলতা থেকে স্থিরতায় যাওয়ার সুযোগ - মন অনাহত চক্রে উঠলে সাধনজগতে পদার্পণ হয়।আর মন যত স্থির হবে তত নিজের ভিতরের জগতকে চেনা যায়,নিজেকে চেনা যায় এবং অবশেষে নিজের মধ্যেই কৃষ্ণ লাভ হয়। তখন আর কিছু করতে হয় না - সাধক হয়ে যান দ্রষ্টা এবং স্রষ্টার মত নিজের মাঝে দেখেন সৃষ্টির খেলা। তাই এই অবস্থায় পৌছনো জন্যে মনকে চঞ্চলতা থেকে নিবৃত্ত করতে হয় - মন নিস্ক্রিয় হলে,অর্থাত কিছু করতে না পেলে সাধক তখনি নিজের মধ্যে ডুব দিতে পারেন আর তখনি তিনি অরুপরতনের সন্ধান পান।


                                        ৯

প্রশ্ন - কিন্তু মনকে নিষ্ক্রিয় করার উপায় কি? তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সক্রিয় না হতে দেয়া। মনের কাজ হল জীবকে বাইরের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া। সে হল মায়ার কর্মচারী। মায়ার প্রভাব মনের মধ্যে দিয়েই কাজ করে। তাই মনের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে - মনকে একদম বন্দী করে ফেলতে হবে নিজের ভিতরে।কারণ মন হাজারটা জিনিস নিয়ে আমাদের জ্বালায়। তার কামনার শেষ নেই - যত পাবে তত আরো চাইবে আর সেই চাইতে চাইতে পেতে পেতে জীবনটা হারিয়ে যাবে। তাই জপ,প্রাণায়াম ও ধ্যানের মাধ্যমে মনকে চিন্তাশূন্য করে আত্মার মুলস্বরুপে পৌঁছতে হবে।শ্বাসক্রিয়া মনকে নিবৃত্ত করার একটা বড় উপায়। অশান্ত যখন হয় মন তখন স্বাস চলে দ্রুত।প্রানায়ামের মাধ্যমে সেই শ্বাসের গতিকে ধীর করে নিতে পারলে মনের অশান্তি দেয়ার শক্তিও দুর্বল হয়ে পরে। সেই সময়ে ডুব দিতে হবে নিজের মধ্যে। আমাদের সবার ভিতরেই আত্মস্বরুপে বিরাজ করছেন ঈশ্বর। তার মাঝেই ডোবাতে হবে নিজেকে। আর মন যখনি ভাবনামুক্ত হবে তখনি জাগবে তার ভাব আর সেই ভাবের ঘরেই খুঁজে পাওয়া যায় নিজেকে। সময়ের সাথে সাথে মন্ত্র,গুরু,ইষ্ট সবই মিলেমিশে এক হয়ে যায় আত্মার মধ্যে। তখন সবকিছুর মাঝেই নিজেকে আর নিজের মাঝেই সবকিছুকে খুঁজে পাওয়া যায়। তখনি জাগে "অহম ব্রহ্মাস্মি" ভাব। আর সেই হল নিজেকে জানা। আসল কথা হল - মনকে বিয়োগের খাতা থেকে তুলতে যোগ চাই - সে ভক্তিযোগ,কর্মযোগ,জ্ঞানযোগ,প্রেমযোগ যাই হোক। আপন আত্মার মাঝে পৌছনো হল আসল লক্ষ্য। সেখানে পৌছলেই সব অশান্তির শেষ - শান্তির অরুনোদয়।

প্রশ্ন - কিন্তু সাধারণ মানুষ তো অত কঠিন যোগ করতে পারে না। তারা আপন আত্মায় আত্মস্থ হবে কিভাবে?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সাধারণ মানুষদের জন্যে ভগবান তো গীতা দিয়ে গেছেন। সেই গিটার প্রতিটি অধ্যায় অধ্যায়ন করতে হবে মন দিয়ে।

(ক্রমশ)


Saturday 30 January 2016

অভাব থেকে স্বভাবে

                                           অভাব থেকে স্বভাবে 

                                                      - তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় 
আমাদের প্রতিটি মানুষেরই ভিতরে কত অভাব। কারোর ভিতরে প্রীতির অভাব ,কারো ভিতরে দয়ার অভাব ,কারো ভিতরে ভালবাসার অভাব।  এগুলি হল মুখ্য অভাব। ধনের অভাবটাকে অবশ্য জাগতিক পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অভাব ভাবা হয়। কিন্তু সেই অভাব আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে আদৌ অভাব নয় - বরং দেখা যায় যে যার ধন যত কম তার মন তত বড়। আর যার মন যত বড় তার ঐশ্য়র্য তত বেশি। তাই আমাদের মনকে প্রসারিত করতে হবে - ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে সকল মানুষের দিকে - কিন্তু মন যেন না ভাবে charity করছি। মনকে ভাবতে হবে - এটা আমার কর্তব্য। পৃথিবীতে আমরা চিরদিন থাকার জন্যে আসিনি। এখান থেকে যা পাব এখানেই রেখে যাব। তাহলে কেন আমরা যেটুকু পাচ্ছি তা মানুষের সেবায় ঢেলে দেব না ? এই সেবাটাকেই স্বভাবে পরিণত করা আমাদের শরণাগত সম্প্রদায়ের ব্রত। আগামীকাল হুগলীর একটি অনাথ আশ্রমে আমরা এই সেবার লক্ষ্য নিয়েই যাচ্ছি - ছোট ছোট ফুলের মত শিশুদের মুখের হাসি দেখার জন্যে। তাদের হাতে কিছু প্রয়োজনীয় বস্ত্র প্রভৃতি তুলে দিয়ে তাদের সেবার লক্ষ্য নিয়ে। মানুষ অপরের মনে দুঃখ দিয়ে সুখ খোজে বলেই সে এত দুখী। কিন্তু অপরের সেবায় তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যে সুখ তা আমরা কাল আবার উপভোগ করব। 



Friday 15 January 2016

শরণাগত সম্প্রদায়

আজ উদ্বোধন হল আমাদের facebook page https://www.facebook.com/Sharanagoto-Somproday-1547359605587016/
 যারা যারা আমার বই পাওয়ার জন্যে আগ্রহী তারা এখানে যোগাযোগ করতে পারেন। এই সম্প্রদায় হল সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের সম্প্রদায়। সব ধর্মের মাধুইকে সঙ্গে নিয়ে মানবসেবার কাজে নামার জন্যে এই সম্প্রদায়ের সৃষ্টি। এই সম্প্রদায় মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সর্বধর্মের মূল সুত্র শরনাগতির দিকে। তাই তো এর নাম শরণাগত সম্প্রদায়।