Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Sunday 31 January 2016

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে কিছুক্ষণ


               তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের সাথে কিছুক্ষণ



                                 ১

প্রশ্ন - প্রথমেই জানাই আমাদের সময় দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ।

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - ধন্যবাদটা বাদ দিলেই ধন্য হতাম ভাই।

প্রশ্ন - কিন্তু সবার মাঝে অধ্যাত্ম চেতনা ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে আপনার প্রয়াস অবশ্যই সাধুবাদ দাবি করে।

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সাধুবাদের জন্যে ধন্যবাদ। তবে খেয়াল রাখতে হবে -এই ধন্যবাদ নিতে গিয়ে আমার ভিতরের উদাসী সাধুটা যেন আমাকে বাদ দিয়ে চলে না যায়। কারণ ভিতরের সাধু যদি আমাকে বাদ দেয় তাহলে আমাকে গ্রহণ করবে অসাধু অহংবোধ। আর স্থুল অহংকে যদি আমি বাদ দিতে না পারি তবেই আমার ভিতরে জাগবে অহমিকা। ফলে আসবে সবার সাথে বাদানুবাদের ঝোঁক আর সেই বাদানুবাদ করতে করতে জীবনটাই হবে বরবাদ।

                                      ২

প্রশ্ন - আপনি তো ঈশ্বরে বিশ্বাসী। আপনার লেখা পড়লেই বোঝা যায়। কিন্তু কেন? আপনি কি ঈশ্বরকে দেখেছেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - দেখেছি বললে আপনার অভিপ্রেত জবাব হবে না হয়ত। আর দেখিনি বললে মিথ্যা বলা হবে। সকল জীবের মধ্যে তিনিই তো আছেন। তবে সব সাধনকথা তো প্রকাশের নয়। জ্ঞানীরা বলেছেন - আপন সাধনকথা বলিবে না যথা তথা।

প্রশ্ন - যে ইশ্বরকে আমি দেখলামই না তার অস্তিত্ব বিশ্বাস করব কেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - বিশ্বাস করতে কে বলেছে আপনাকে ? আমি কখনই বলব না আমার কথা বিশ্বাস করতে। কারণ সেটা আমার সাখ্যে আপনার বিশ্বাস হবে। আর সে হবে কাঁচা বিশ্বাস। তাই অন্যের কথায় বিশ্বাস করতে নেই। আগে নিজে সাধন করুন। তাতে যে উপলব্ধি পাবেন তা বিশ্বাস করুন।

প্রশ্ন - কোন সাধু আমাকে ইশ্বর দেখাতে পারবেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - আপনি অধিকারী হলে অবশ্যই পারবেন। তবে আপনার প্রস্তাবটা কেমন হলো জানেন? M .A ক্লাসের প্রফেসরকে নার্সারির ছাত্র যদি বলে -আমাকে এখনি

M .A পাস করান তাহলে সেটি যেমন প্রশ্ন হবে এটিও তেমনি। কারো কাঁধে ভর করে ইশ্বর দর্শন হয় না। সেজন্যে গুরু নির্দেশিত পথে সাধনা করতে হয়। ইশ্বর Victoria Memorial নন যে কিছু টাকা দিয়ে টিকিট কাটলেই দেখা যাবে। কৃপা পেতে হলে কর্ম করুন,ফল পাবেন। কৃপা মানেই যে তাই - কৃ মানে কর,পা মানে পাবে।



                                    ৩


প্রশ্ন - ইশ্বর বলতে আপনি কি বোঝেন ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - ব্যাকরণের দিক দিয়ে দেখতে গেলে ঈশ্বর হলেন জাগতিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ অবস্থানে অবস্থানকারী কোন অস্তিত্ব। অর্থাত যিনি সৃষ্টিকর্তা তাঁকেই আমরা ইশ্বর জানি।এক কথায় ঈশ্বর বলতে বোঝানো হয় - পরম সত্বাকে। অর্থাত যিনি সবের নিয়ন্তা। আবার যথাক্রমে শৈবধর্মে এবং ভক্তি আন্দোলনে ঈশ্বর বলতে তাঁদের আরাধ্য ইস্টকে অর্থাত যথাক্রমে শিব ও বিষ্ণুকে যথাক্রমে বোঝানো হয়।

প্রশ্ন - অর্থাত ইশ্বর আর ভগবান একই ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - অবশ্যই এক।

প্রশ্ন - তাহলে দুটি আলাদা শব্দ কেন ইশ্বর আর ভগবান ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - পদ্ম আর কমল তো দুটি ভিন্ন নাম কিন্তু বস্তু তো এক। এখানেও তাই। যিনি ঈশ্বর তিনিই একমাত্র ভগবান হতে পারেন। ভগবান মানে কি?ভগের অধিপতি। ভগ কি? ছয়টি ঐশ্বর্য। যিনি পরম ঐশ্বর্য, বীর্য, যশ, শ্রী, জ্ঞান ও বৈরাগ্য গুনযুক্ত তিনিই ভগবান। এই ছয়টি ভগ একমাত্র ঈশ্বর ছাড়া আর কার থাকতে পারে?

এ প্রসঙ্গে বলি - ভগবানের একটি যৌগিক ব্যাখ্যাও আছে। এক্ষেত্রে ভগ শব্দের অর্থ পরাশক্তি বা পরা প্রকৃতি বা চঞ্চল মন। আর বান শব্দের অর্থ তীর বা শ্বাস। অর্থাত শ্বাসরুপি বান প্রানায়ামের মাধ্যমে চালনা করতে করতে যার চঞ্চল মন স্থিরতা লাভ করে তিনিই ভগবান। অর্থাত স্থির প্রাণ যা আমাদের মধ্যে আছে তাই ভগবান। সেই ভগবান পরমাত্মাকে লাভ করার জন্যে জীবাত্মার শোধনের যে ক্রিয়া তাকেই সাধনা বলে।

প্রশ্ন - কিন্তু আধ্যাত্মিক জগতে অনেক সাধুও তো নিজেকে ভগবান বলে প্রচার করেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - ওনারা বিজ্ঞাপনের ভগবান। ওনাদের কথা বলে আমার সময় নাই বা নষ্ট করলেন। পরনিন্দায় আমার রুচি নেই। আর ওনাদের আলোচনা করে ওনাদের পাপ টানার ইচ্ছা নেই। যারা নিজেদের ভগবান বলে তারা স্বঘোষিত ভগবান থাকুন। যাঁদের মহাজন মহামানবরা শ্রদ্ধা ও ভালবাসা দিয়ে ভগবান পদে বরণ করেন,যেমন শিরদির সাইবাবা,সত্য সাইবাবা,বাবা লোকনাথ - তাঁদের কথা বলুন। আমি তাঁদের সাষ্টাঙ্গে প্রণিপাত জানাই ।


                                            ৫

প্রশ্ন - আপনি তো ভগবানে বিশ্বাস করেন। কিন্তু বলতে পারেন - সত্যিই যদি তিনি থেকে থাকেন - তাহলে তাঁর সৃষ্টিতে এত অবিচার কেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - কোথায় দেখলেন অবিচার?

প্রশ্ন - আজকের যুগে যারা মন্দ তারা ভালো থাকে আর যারা সত্যিই সাধু ব্যক্তি তাঁরা কষ্টে থাকেন। ভগবান সত্যি থাকলে এই অবিচার কি হত?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - খালি চোখে দেখলে অবিচার মনে হওয়া বিচিত্র না। এ প্রসঙ্গে একটি গল্প বলি শুনুন। একবার কৃষ্ণা আর অর্জুন দ্বারকায় এক ধনীর বাড়িতে যান। ধনী তাঁদের বিরাট সমাদর করেন। নিজের ধনদৌলত দিয়ে তাঁদের বিরাট অভ্যর্থনা দেন। কৃষ্ণ খুশি হয়ে বলেন," তোমার ধন আরো বৃদ্ধি পাক।" তারপর তিনি যান এক গরিবের বাড়িতে। সেই ভক্তের একমাত্র সম্বল তার গাভী। সেই গাভীর দুধ দিয়ে তিনি কৃষ্ণের সেবা করেন। কিন্তু কৃষ্ণ তাঁকে আশির্বাদ করে বলেন ,"তোমার গাভীর স্বর্গ প্রাপ্তি হোক। " এতে অর্জুন অবাক হন। কৃষ্ণকে বলেন,"একই তোমার অবিচার সখা?গরিব মানুষটির একমাত্র সম্বল তার গাভী। তুমি সেই গাভীর মৃত্যু চাইলে আর ধনীর এত ধন,তাকে তুমি আরো ধনের আশির্বাদ দিলে?"কৃষ্ণ হাসলেন। বললেন,"সখা যে ধনী,সে তো ধন দিয়েই ভুলে আছে। তাই তাকে আরও ধনের অভিশাপ দিয়ে আরও দুরে সরিয়ে দিলাম আমার থেকে। আর যে গরিব সে তো ১২ আনা মন আমাকে দিয়েই রেখেছে কিন্তু গাভীর দিকে ৪ আনা মন রেখেছে বলে পুরোটা আমাকে দিতে পারছে না। তাই আমি তার গাভীটিকে নিয়ে নিলাম যাতে সে আমাকে পুরো মন দিতে পারে। আর তখনি পূর্ণ হবে তার সরনাগতি। তখন আর তাকে নিজের কথা ভাবতে হবে না। সে ভাববে আমাকে আর আমি ভাবব তার সবকিছু। তবেই দেখছ,আমি স্থুল দুঃখ দিই আমার ভক্তদের ভবদুঃখ ঘোচানোর জন্যে। আর স্থুল সুখ দিই অভক্তদের আমাকে ভুলে থাকার জন্যে।" এই হল ভগবানের বিচার। তিনি আঘাত দেন ,যন্তনায় পুড়িয়ে ছারখার করেন খাঁটি সোনা হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে। কারণ তিনি যে শুধু খাঁটি ভক্তকেই কাছে টানেন।


                                        ৬

প্রশ্ন - আপনার লেখা পড়ে তো মনে হয় আপনি কৃষ্ণের খুবই ভক্ত। তাহলে কি তিনি আপনাকেও পুড়িয়েছেন ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - রবিঠাকুরের একটি গান আছে - আমার এ ধুপ না পোড়ালে গন্ধ কিছুই নাহি ঢালে। আমার লেখার যা সুরভির কথা আপনারা বলে থাকেন তা তো তাঁরই দান। না পোড়ালে সেই সুরভি আসত কোথা থেকে?অশ্রুর জলে সিঞ্চিত না হলে সৃষ্টির বীজ কি বৃক্ষের রূপ নিয়ে ডালপালা মেলতে পারে? তবে?এটুকু বলতে পারি নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যে সাধনপথে এগোতে হলে বারবার অগ্নিপরীক্ষা দিয়ে এগোতে হয়।

প্রশ্ন - অর্থাত যা আমার পছন্দের সব ঠাকুর কেড়ে নেবেন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - কেড়ে নিয়েই যে কড়ি দেন তিনি। ভক্তের পছন্দের কিছু থাকলে যে তাঁকে ভক্ত নিজের সবটুকু দিতে পারবে না। তাই তো ভক্তের ভালো কিছু লাগলে তিনি সযত্নে সেটি সরিয়ে নেন। ফলে তাঁর দিকেই পুরো মনটা রাখা সম্ভব হয়। আর ১৬ আনা তাঁকে দিতে পারলে তবেই তো হয় কৃপার অরুনোদয়। তখনি তিনি হাতে তুলে দেন শেষ পারানির কড়ি।জীবনের মোক্ষম লাভ মোক্ষ তখনি তো মেলে।


                                     ৭

প্রশ্ন - এই মোক্ষ লাভের জন্যে কি করা দরকার ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সাধনা।

প্রশ্ন - সেটি কিভাবে করতে হয় ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সেটি করা খুব সহজ। সাধনা শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তার কার্যকারিতা। অর্থাত - সাধ না করা। মনের খালি বহিরঙ্গের সাধ -এটা চাই,ওটা চাই। মনকে ক্রিয়া,ধ্যান,প্রাণায়াম ,জপ প্রভৃতি দিয়ে এমনভাবে বেঁধে নিতে হয় যাতে সে আর সাধ করার সুযোগ না পায়। অর্থাত মনকে নিয়ন্ত্রণ করাই হল সাধনা। চঞ্চল প্রাণকে স্থির প্রানের স্তরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় এই সাধনার দ্বারা।

প্রশ্ন - তাতে কি হবে?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - বৃন্দাবন দর্শন।

প্রশ্ন - মনে মনেই বৃন্দাবন দর্শন?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - মনেই তো আসল বৃন্দাবন -হৃদি বৃন্দাবন। স্থুল বৃন্দাবনে সাধক তো যান শ্রীরাধাকৃষ্ণের কৃপা পেতে যাতে তাঁদের হৃদি বৃন্দাবনের দ্বার উন্মোচিত হয়। বৃন্দাবনের গোপিনীরা হলেন জীবাত্মার প্রতীক আর শ্রীকৃষ্ণ হলেন পরমপুরুষ। আমাদের জীবাত্মাকে সাধনার মাধ্যমে শুদ্ধ করে নিয়ে যেতে হবে গোপিনীর স্তরে আর তারপর মুলাধারে স্থিত জীবাত্মাকে নিয়ে যেতে হবে কুটস্থে। সেখানে যখন গোপিনী জীবাত্মা ও পরমপুরুষ কৃষ্ণের মিলন হবে তখন সেখানেই জাগবে হৃদি বৃন্দাবন। আর অনাহত চক্র থেকে ভেসে আসবে কৃষ্ণের মোহন বাঁশির সুর।


                                 ৮

প্রশ্ন - এই কৃষ্ণকে পেতে হলে কি করা উচিত আমাদের ?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - কিছু না করাই প্রয়োজন।

প্রশ্ন - কিছু না করলে কৃষ্ণলাভ হয় নাকি?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - হয় না?

প্রশ্ন - কি করে হবে ? তপস্যা না করলে প্রারব্ধ তো কাটবে না। তাই জপ তপ ধ্যান সদন না করলে কিভাবে চলবে?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - আর এসব করার পর মনে কিরকম অবস্থা হবে?

প্রশ্ন - তা তো জানি না। কিরকম অবস্থা হবে?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - মনের চঞ্চলতা দূর হবে। আর চঞ্চলতা দূর হলে প্রাণ স্হির হবে। এই স্থির প্রাণ রূপেই যে আমাদের মধ্যে বিরাজ করছেন কৃষ্ণ। তাই জাগতিক কাজকর্মের থেকে মন তুলে নিয়ে আমাদের নিজ আত্মায় আত্মস্থ হতে হবে। অর্থাত মন যে বাহ্যিক বিষয়ে অহরহ ঘুরে বেড়ায় তার থেকে মনকে নিবৃত্ত করাই হল সাধনা। আর সেজন্যেই জপ ধ্যান সব। এগুলো হয়ে গেলে যে স্তর মনে জাগে সেটি হল - নিবৃত্তি। যতক্ষণ মন চঞ্চল ততক্ষণ তা মূলাধার,স্বাধিষ্ঠান আর মনিপুর চক্রের মধ্যেই ঘোরাফেরা করে আর জাগতিক লাভক্ষতির হিসেব করে। যাদের মন এই স্তরে ঘোরে তাদের ইষ্টলাভের কামনাই জাগেনা - তারা জাগতিক সুখ নিয়ে মেতে থাকে। মন যখন যথার্থ ব্যাকুল হয় ঠাকুরের জন্যে তখন মনিপুরের হোমকুন্ডে আগে সকল বাসনা কামনা অঞ্জলি দিতে হয়। ত্তারপরই আসে চঞ্চলতা থেকে স্থিরতায় যাওয়ার সুযোগ - মন অনাহত চক্রে উঠলে সাধনজগতে পদার্পণ হয়।আর মন যত স্থির হবে তত নিজের ভিতরের জগতকে চেনা যায়,নিজেকে চেনা যায় এবং অবশেষে নিজের মধ্যেই কৃষ্ণ লাভ হয়। তখন আর কিছু করতে হয় না - সাধক হয়ে যান দ্রষ্টা এবং স্রষ্টার মত নিজের মাঝে দেখেন সৃষ্টির খেলা। তাই এই অবস্থায় পৌছনো জন্যে মনকে চঞ্চলতা থেকে নিবৃত্ত করতে হয় - মন নিস্ক্রিয় হলে,অর্থাত কিছু করতে না পেলে সাধক তখনি নিজের মধ্যে ডুব দিতে পারেন আর তখনি তিনি অরুপরতনের সন্ধান পান।


                                        ৯

প্রশ্ন - কিন্তু মনকে নিষ্ক্রিয় করার উপায় কি? তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সক্রিয় না হতে দেয়া। মনের কাজ হল জীবকে বাইরের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া। সে হল মায়ার কর্মচারী। মায়ার প্রভাব মনের মধ্যে দিয়েই কাজ করে। তাই মনের ক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে - মনকে একদম বন্দী করে ফেলতে হবে নিজের ভিতরে।কারণ মন হাজারটা জিনিস নিয়ে আমাদের জ্বালায়। তার কামনার শেষ নেই - যত পাবে তত আরো চাইবে আর সেই চাইতে চাইতে পেতে পেতে জীবনটা হারিয়ে যাবে। তাই জপ,প্রাণায়াম ও ধ্যানের মাধ্যমে মনকে চিন্তাশূন্য করে আত্মার মুলস্বরুপে পৌঁছতে হবে।শ্বাসক্রিয়া মনকে নিবৃত্ত করার একটা বড় উপায়। অশান্ত যখন হয় মন তখন স্বাস চলে দ্রুত।প্রানায়ামের মাধ্যমে সেই শ্বাসের গতিকে ধীর করে নিতে পারলে মনের অশান্তি দেয়ার শক্তিও দুর্বল হয়ে পরে। সেই সময়ে ডুব দিতে হবে নিজের মধ্যে। আমাদের সবার ভিতরেই আত্মস্বরুপে বিরাজ করছেন ঈশ্বর। তার মাঝেই ডোবাতে হবে নিজেকে। আর মন যখনি ভাবনামুক্ত হবে তখনি জাগবে তার ভাব আর সেই ভাবের ঘরেই খুঁজে পাওয়া যায় নিজেকে। সময়ের সাথে সাথে মন্ত্র,গুরু,ইষ্ট সবই মিলেমিশে এক হয়ে যায় আত্মার মধ্যে। তখন সবকিছুর মাঝেই নিজেকে আর নিজের মাঝেই সবকিছুকে খুঁজে পাওয়া যায়। তখনি জাগে "অহম ব্রহ্মাস্মি" ভাব। আর সেই হল নিজেকে জানা। আসল কথা হল - মনকে বিয়োগের খাতা থেকে তুলতে যোগ চাই - সে ভক্তিযোগ,কর্মযোগ,জ্ঞানযোগ,প্রেমযোগ যাই হোক। আপন আত্মার মাঝে পৌছনো হল আসল লক্ষ্য। সেখানে পৌছলেই সব অশান্তির শেষ - শান্তির অরুনোদয়।

প্রশ্ন - কিন্তু সাধারণ মানুষ তো অত কঠিন যোগ করতে পারে না। তারা আপন আত্মায় আত্মস্থ হবে কিভাবে?

তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - সাধারণ মানুষদের জন্যে ভগবান তো গীতা দিয়ে গেছেন। সেই গিটার প্রতিটি অধ্যায় অধ্যায়ন করতে হবে মন দিয়ে।

(ক্রমশ)


Saturday 30 January 2016

অভাব থেকে স্বভাবে

                                           অভাব থেকে স্বভাবে 

                                                      - তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় 
আমাদের প্রতিটি মানুষেরই ভিতরে কত অভাব। কারোর ভিতরে প্রীতির অভাব ,কারো ভিতরে দয়ার অভাব ,কারো ভিতরে ভালবাসার অভাব।  এগুলি হল মুখ্য অভাব। ধনের অভাবটাকে অবশ্য জাগতিক পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অভাব ভাবা হয়। কিন্তু সেই অভাব আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে আদৌ অভাব নয় - বরং দেখা যায় যে যার ধন যত কম তার মন তত বড়। আর যার মন যত বড় তার ঐশ্য়র্য তত বেশি। তাই আমাদের মনকে প্রসারিত করতে হবে - ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে সকল মানুষের দিকে - কিন্তু মন যেন না ভাবে charity করছি। মনকে ভাবতে হবে - এটা আমার কর্তব্য। পৃথিবীতে আমরা চিরদিন থাকার জন্যে আসিনি। এখান থেকে যা পাব এখানেই রেখে যাব। তাহলে কেন আমরা যেটুকু পাচ্ছি তা মানুষের সেবায় ঢেলে দেব না ? এই সেবাটাকেই স্বভাবে পরিণত করা আমাদের শরণাগত সম্প্রদায়ের ব্রত। আগামীকাল হুগলীর একটি অনাথ আশ্রমে আমরা এই সেবার লক্ষ্য নিয়েই যাচ্ছি - ছোট ছোট ফুলের মত শিশুদের মুখের হাসি দেখার জন্যে। তাদের হাতে কিছু প্রয়োজনীয় বস্ত্র প্রভৃতি তুলে দিয়ে তাদের সেবার লক্ষ্য নিয়ে। মানুষ অপরের মনে দুঃখ দিয়ে সুখ খোজে বলেই সে এত দুখী। কিন্তু অপরের সেবায় তাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে যে সুখ তা আমরা কাল আবার উপভোগ করব। 



Friday 15 January 2016

শরণাগত সম্প্রদায়

আজ উদ্বোধন হল আমাদের facebook page https://www.facebook.com/Sharanagoto-Somproday-1547359605587016/
 যারা যারা আমার বই পাওয়ার জন্যে আগ্রহী তারা এখানে যোগাযোগ করতে পারেন। এই সম্প্রদায় হল সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের সম্প্রদায়। সব ধর্মের মাধুইকে সঙ্গে নিয়ে মানবসেবার কাজে নামার জন্যে এই সম্প্রদায়ের সৃষ্টি। এই সম্প্রদায় মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সর্বধর্মের মূল সুত্র শরনাগতির দিকে। তাই তো এর নাম শরণাগত সম্প্রদায়।