Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Monday 14 July 2014

পীড়া

পীড়া প্রসঙ্গে তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
পীড়া মানুষের জীবনের একটি বড় বন্ধু। সে পীড়া জাগতিক হোক বা মানসিক,শারীরিক হোক বা আভিচারিক তা আমাদের প্রারব্ধের খন্ডন করে। যত আমরা ভুগি জাগতিক কারণে তা সবই আশির্বাদ। কারণ আমরা জানি না যে আমাদের পিছনে তাড়া করে আসছে কত জন্মের প্রারব্ধ। সেই প্রারব্ধ না কাটলে আমরা তো পৌছতে পারবনা আমাদের লক্ষ্যে। তাইত ঠাকুর পীড়া দেন আমাদের,যন্ত্রণা দেন যন্ত্রণা মুক্তির জন্যে। আমাদের পথের প্রতিটি কাঁটা,প্রতিটি বাধা তাই আমাদের একটু একটু করে এগিয়ে দেয় সার্থকতার পথে। তাই যখন বাধা আসবে জীবনে,আমরা যেন ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা না করি বাধা কাটানোর জন্যে ,বরং যেন প্রার্থনা করতে পারি যাতে তিনি আমাদের বাধার সম্মুখীন হয়ে তাকে জয় করার শক্তি দেন। বাধাকে অতিকর্ম করে জয় করার মধ্যেই যে কাটে প্রারব্ধ ভোগ। মসৃন হয় পরবর্তী চলার পথ।
ভালো থাকবেন .. শুভেচ্ছাসহ
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়

Sunday 13 July 2014

প্রেম ও আসক্তি

                  প্রেম ও আসক্তি 
প্রেম হল মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় শক্তি। কিন্তু আমরা একে আসক্তির সাথে মিশিয়ে ফেলি। কিন্তু প্রেম আর আসক্তি দুই ভিন্ন। আসক্তি হল মোহ। মোহ  চেষ্টা করে প্রেমাস্পদকে নিজের বন্ধনে বেঁধে রাখতে  আর প্রেম নিজেকে বেঁধে নেই প্রেমাস্পদের সাথে। তাই মোহ আমাদের ভোগে বন্ধনের অসুখ। আর প্রেম আমাদের যোগায় মুক্তির আনন্দ সকল বন্ধনের মাঝে থেকেও। মোহ আমাদের কর্তৃত্বের বন্ধনে ফেলে কষ্ট দেয় কিন্তু প্রেম আমাদের কর্তৃত্বের সংকীর্ণতা থেকে মুক্তি দেয়। মোহ চায় আমাদের দিয়ে নিজের ইচ্ছা পূরণ করাতে আর প্রেম নিজের ইচ্ছাকে প্রেমাস্পদের সাথে মিলিয়ে দিয়ে তার ইচ্হায় সুখী হয়। তাইত প্রেম হল ধরার বুকে অধরা অমৃত। প্রতিটি মানুষ এমনকি সাধক পর্যন্ত তাই প্রেমের জয়গান গেয়ে থাকেন। বস্তুত প্রেম আর মোহের মধ্যে পার্থক্য একটাই - মোহ ভালবাসা আদায় করতে চায় স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে আর প্রেম নিজেকে নিস্বার্থ্ করে অমৃতের সাথে মিলিয়ে নেয় নিজেকে। তাই আমাদের উচিত অশুদ্ধ  মোহকে অগ্নিশুধ্ধি প্রেমে পরিনত করা -স্বার্থভাব ত্যাগ করে অপরকে ভালবাসা। তাতেই জীবন হয়ে ওঠে স্বর্গের সমতুল্য।  

Monday 7 July 2014

গুরু শিষ্য

                                                গুরু শিষ্য

   গুরু আর শিষ্যর সম্পর্কে থাকে এক অদৃশ্য বন্ধন - যাকে এক কথায় বলা যায় মুক্তির বন্ধন। প্রতিটি শিষ্যের জন্যে একজন গুরু নির্দিষ্ট থাকেন আর সেই শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় গুরুকেই। শিষ্যকে যে গুরু দীক্ষা দেন তার নেপথ্যে গুরুর নিজস্ব কোন স্বার্থ থাকেনা। থাকে একটাই লক্ষ্য - শিষ্যকে তার ঠিকানায় পৌছে দেয়া। আর সেখানে শিষ্য পৌছতে পারাই হচ্ছে গুরুর একমাত্র গুরুদক্ষিনা।
   গুরু যখন শিষ্যকে দীক্ষা দেন তখন আপন সাধনশক্তি দিয়ে সৃষ্ট উর্জাশক্তিকে তিনি মন্ত্রের সাথে শিষ্যের ভিতরে প্রতিষ্ঠা করে দেন। এজন্যে কম শক্তি ব্যয় হয় না। এর ফলে দীক্ষার পর শিষ্যের একটা প্রারব্ধের অংশ গুরুকে টেনে নিতে হয়। জগতের অন্য কোন সম্পর্ক কিন্তু কারোর প্রারব্ধ নেয়  না কোন কারণেই। একমাত্র গুরুই এই প্রারব্ধ টানেন। শুধু তাই নয়। এরপর শিষ্য অনেকসময়েই নানা ভুল করে,অন্যায় করে আর তার শাস্তির একটা বড় অংশ গিয়ে পরে গুরুর উপরে।দোষ করে শিষ্য আর প্রারব্ধ ভোগেন গুরু।  তাই দীক্ষার পর প্রতিটি শিষ্যের উচিত - কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে গুরুর থেকে মত নেয়া। গুরুর প্রতি কখনোই অসম্মান প্রদর্শন করতে নেই। তাতে ইষ্ট রুষ্ট হয়ে যান। আর গুরু যদি কখনো শিষ্যের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার মন্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হন তখন শিষ্যের প্রতি যে ঘর বিপত্তি নেমে আসে তা সামাল দেয়ার শক্তি কিন্তু জগতে কারোরই থাকেনা। এমনকি ইষ্ট নিজেও সেই শিষ্যকে বাচাতে যান না।
   সাধারনত শিষ্য যখন অসুস্থ হয়ে পরে তখন গুরু তাঁর জপ বাড়িয়ে দেন যাতে শিষ্য তার জপের শক্তিতে তাড়়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে। একইভাবে শিধ্যের কর্তব্য - গুরু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের জপের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া যাতে গুরু সুস্থ হয়ে ওঠেন।কারণ গুরুর অধিকাংস ভোগ আসে শিষ্যের দুর্ভোগ থেকে। তাই শিষ্যের কর্তব্য - সেটি যথাসম্ভব কম গুরুর উপর চাপানো। উত্তম শিষ্যরা এটাই করে থাকেন। যেমন কুলদানন্দ ব্রহ্মচারী করে দেখিয়েছিলেন বিজয়্কৃশ্ন গোস্বামীর জন্যে।
  আসলে শিষ্য এবং গুরুর মধ্যে একটা জ্যোতির সংযোগ  সৃষ্টি হয়ে যায় যা গুরুর সাথে শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলে আলোর দিকে। তাই এই যাত্রায় দুজনের সাধনশক্তিরই প্রয়োজন পড়ে। যেখানে একইসাথে দ্রোনের মত গুরু আর অর্জুনের মত শিষ্য  থাকে সেখানে অগ্রগতি হয় দ্রুত দুজনের মিলিত শক্তিতে কিন্তু যেখানে "গুরু আছেন,তিনি দেখবেন,আমি যা করার করি"ভাবনা নিয়ে শিষ্য চলে সেখানে বুঝতে হবে গুরু দিকপাল হলেও শিষ্যের জন্যে তার ফাটা কপাল। অর্থাত সেখানে দুজনেই পিছিয়ে পড়বে। তাই শিষ্যের সবসময়ে উচিত -গুরুর প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে অত্র দেখানো প্রণালীতে ঠিকমত জপ ধ্যান এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবেই সার্থক হয় গুরু শিষ্যের অমৃতের পথে যাত্রা।