বারবার এসেছি ফিরে তোমাদেরই টানে
কত হাসিকান্না,সুখ দুঃখের পথ পেরিয়ে এলাম বিগত লক্ষ কোটি বছরে। বিগত জন্মগুলিতে কত যোনীতে কতজনকে ভালোবাসলাম - কত আঘাত পেলাম,পেলাম কত সুখ। কতজন ভাঙলো এই হৃদয় , কতজনের হৃদয় ভাঙলো আমার জন্যে - তারপর আবার আমরা হারিয়ে গেলাম একে অপরের থেকে। কিন্তু হারিয়েও কি হারালাম? ফিরে এলাম সবাই নতুন রূপে - পুরনো হিসেবটাকে মিটিয়ে দিতে। কারণ সেই ঋণানুবন্ধ - কারো সাথে যে হিসেব মাঝপথে রেখে পালিয়ে যাবার জো নেই। ফলে যতবারই আসি ফিরে ততবারই পূর্ব জীবনের সেই ঋণের অনুবন্ধও মেটাতে হয়।
আজো নিত্য কত মানুষের সংস্পর্শে আসি। কত পাঠিকাদের স্নেহ ভালবাসায় নিত্য অভিষিক্ত হই। কত সতীর্থ লেখক তথা অবিশ্বাসী নাস্তিক মানুষের বিরক্তির কারণও হই। তাদের কাউকে দেখে যেন মনে হয় - এতো অচেনা নয় - যেন চিনি কতদিন ধরে। গোপালের সামনে প্রশ্ন নিয়ে যাই। তার মিটিমিটি হাসিতে পেয়েও যাই উত্তর।
বাবার কাছে শুনেছি - যাদের শেষ জন্ম হয় তাদের সাথে শেষ দেখার জন্যে বিগত জন্মগুলির অনেক প্রিয়জনই ফিরে ফিরে আসেন। ভালবাসার সম্পর্ক তো কম জনের সাথে হয়নি বিগত কোটি কোটি জন্মে। তাদের মধ্যে যাদের মুক্তি এখন হয়নি তাদের অনেকের সাথেই দেখা হচ্ছে এই জন্মে। কেউ ছিলেন আমার মা,কেউ বাবা,কেউ ভাই,কেউ বোন্ ,কেউ প্রেমিকা,কেউ স্ত্রী,কেউ দাদা,কেউ দিদি,কেউ বা সন্তান,কেউ বা নাতি। তাদের সবার সাথেই এভাবেই বইয়ের মাধ্যমে হচ্ছে ফিরে দেখা। আধ্যাত্মিক পথে আমার কাজ তো একজনকে নিয়ে নয়,অনেকজনকে নিয়ে - তাই হয়ত তাদের সবার সাথেই হচ্ছে এই ফিরে দেখা - নানা রূপে নানা দেহে আসছেন তারা - তাদের সাথে কথা হলে বা মেসেজ আদানপ্রদান হলেও হয়ত তাই মনটা ভরে যায় আনন্দে। Farewell জন্মে তাই বোধহয় সবাইকেই পাচ্ছি নানা রূপে।
বাবার কাছে এও শুনেছি - শেষ জন্মে পূর্বজন্মের শত্রুরাও আসে ফিরে। তাদের যেটুকু আঘাত দেয়ার বাকি ছিল সেটুকু দিয়ে ঋণমুক্ত করে যায়। তাই এই জন্মে তাদের দেখাও কম মেলে না। তাই আঘাত পেলেও আজ আর কাঁদিনা। কারণ জানি - এই আঘাতে কাটছে আমার প্রারব্ধ -মিটে যাচ্ছে ঋণ।
দেহ তো বারবার শেষ হয়ে যায় একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর। কিন্তু আত্মার তো বিনাশ নেই। তাইত তাকে ফিরে ফিরে আসতে হয় পৃথিবীর বুকে - কে জানে এই ভালবাসার মানুষগুলোর টানই বোধহয় বারবার তাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আমিও কতবার এসেছি এভাবে। তোমরা যারা আমার লেখা পড়ছ এখন তারাও হয়ত পূর্ব পূর্ব জীবনেও আমার সঙ্গে ছিলে ওতপ্রোতভাবে। হয়ত তাই বই-এর সুত্রে জন্মান্তরের সম্পর্ক আবার দেখা দিচ্ছে নতুনভাবে। মনে পড়ে যাচ্ছে সুমনবাবুর সেই গানটি -
অমরত্বের প্রত্যাশা নেই,নেই কোনো দাবি দাওয়া,
এই নশ্বর জীবনের মানে শুধু তোমাকে চাওয়া।
তোমাদের সবার ভালবাসার নানা রূপ তো ঈশ্বরের দান। তাই তোমাদের কাছে তাঁর অমৃতের বার্তা পৌঁছে দেয়ার মাঝেই সার্থক আমার আসা। জানিনা কে সেটা অমৃত ভেবে নিল আর কে তা নকল ভেবে সরিয়ে দিল,তবে আমার কাজ ছড়িয়ে দেয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ। বাকিটা তো তাঁর কাজ। তিনিই দেখবেন ও দেখছেন।