Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Friday 17 May 2013

আটত্রিশ - কিভাবে থাকা ভালো এই জগতে

          কিভাবে থাকা ভালো এই জগতে

    এই পৃথিবীতে সবই দুদিনের খেলা।যা নিয়ে আমরা ভাবছি,যা আঁকড়ে ধরে আমরা বাঁচতে চাইছি,যা ছাড়া আমাদের চলতে চায়না - সবই দুদিনের অলস মায়া।
এই পৃথিবী মায়ার খেলাঘর।এখানে সবাই খেলাঘর গড়ছে,সাজাচ্ছে,সেটিকে কেন্দ্র করে বাঁচছে আর তারপর সেটিকে ফেলে রেখে নিজেই হারিয়ে যাচ্ছে কোনো অজানার জগতে।
     আসলে এই জগতে টেঁকে না কিছুই সুধু মানবকল্যাণের কর্ম ছাড়া ।আমি জানি - আমার সৃষ্টি বেঁচে থাকবে শতাব্দীর পর শতাব্দী কিন্তু যে স্রষ্টা সেই আমার এই স্থুলদেহ,অর্থাৎ স্থুল আমি টিঁকব না। টিঁকবে না কেউই। আজকে অনেকের আমাকে ছাড়া চলেনা কিন্তু আমি জানি এটা অভ্যেস - যেদিন আমি সব ছেড়ে চলে যাব সেদিন তো কারো সামনে থাকবেনা বিকল্প। তাই তখন আমাকে বাদ দিয়েই সবাইকে ভাবতে হবে। আর বিধাতার এই জগতে কেউ অপরিহার্য নয়। সবারই জায়গায় কেউ না কেউ ঠিক এসে যায়।তাই নিজেকে বাদ দিয়েই আমাদের জগতকে দেখা ভালো নিরপেক্ষ দৃষ্টি নিয়ে।তাহলে আর মায়া আমাদের বন্ধনে বাঁধতে পারবেনা।
   ব্যক্তিগতভাবে আমি তো তাই করি - নিজের জগতকে দেখি নিজেকে বাদ দিয়ে - কর্তব্য করি কিন্তু বন্ধনে ধরা না দিয়ে। তাতে দেখি আমাকে বাদ দিয়েই সবকিছু সুন্দরভাবে হয়ে যাচ্ছে। অতএব এখানে আমি থাকাও যা,না থাকাও তাই। সবার জন্যেই আছি আমি আবার কারোর হয়েই নেই।কর্ম আমাকে করতে হবে তাই করছি। সত্যিকারের ভক্তদের আলোর পথে নিয়ে যেতে আমি দায়বদ্ধ।তাই তাদের জন্যে তাদের পাশে আমি নিশ্চয়ই আছি। কিন্তু আমি থেকেও নেই।আবার না থেকেও আছি। এটাই হলো -এই জগতে থেকেও জগতের না হয়ে কিন্তু জগতের জন্যেই কাজ করে যাওয়ার ব্রতে আমার মূল মন্ত্র। 

Thursday 16 May 2013

যোগ ১ - মুলাধার চক্র


             যোগ ১ - মুলাধার চক্র 

     (পাঠক পাঠিকারা অনেকেই আমাকে যোগ নিয়ে লিখতে বলছেন।অতএব তাঁদের জন্যে এই যোগের কলামটা শুরু করলাম।যোগের মূল হলো মূলাধার।তাই মূলাধার দিয়েই শুরু হলো আমার লেখা।)

        মুলাধারের  অবস্থান  আমাদের  spinal এর শুরুতে। এটি হল হলুদরঙা  চতুষ্কোণ বা   square আকারের পদ্ম যার পাঁপড়ি  আছে ৪টি। পাঁপড়ির রং লাল।মুলাধারের অধিষ্ঠানকর্তা হলেন ইন্দ্র।তিনিও পীতবর্ণসম্পন্ন। হাতে বজ্র।অনেক জায়গায় অবশ্য গানেশ্জিকেও ধরা হয় এখানকার অধিষ্ঠানকর্তা হিসেবে।তাঁর বর্ণ গেরুয়া।লেবুরঙের ধুর্তি তাঁর পরণে। 
  এখানকার বীজমন্ত্র হলো "লং".এই বিজর ঠিক নীচে একটি ত্রিকোণ আছে -সেখানেই সুপ্তভাবে কুন্ডলিনি বিরাজ করেন।একটি ধুসর লিঙ্গকে সাড়ে তিন পাকে জড়িয়ে তিনি সুপ্তভাবে থাকেন নিদ্রিতরূপে। এই শক্তি যতক্ষণ নিদ্রিত থাকে ততক্ষণ মানুষও পশুর মত থাকে।তার উত্তরণের শুরু হয় এই শক্তি জাগ্রত হলে।এখান থেকেই সুষুম্না নাড়ির উদ্ভব ঘটে।এর বাঁ দিক থেকে ওঠে ইড়া নাড়ি এবং ডানদিক থেকে পিঙ্গলা নাড়ি ইড়া নাড়ি চন্দ্র্স্বরূপা, পিঙ্গলা নাড়ি সূর্যস্বরূপা এবং সুষুম্না নাড়ি চন্দ্র,সূর্য ও অগ্নি স্বরূপা। 
       এই চক্রের চারটি পাঁপড়িনির্দেশ করে ধর্ম,অর্থ,কম,মোক্ষ।এখান থেকেই সবার সাধনার শুরু।এর তত্ত্ব হলো পৃথিবী এবং এর ইন্দ্রিয় ঘ্রানেন্দ্রিয়।
   মুলাধারের শক্তি বৃদ্ধির জন্যে গরুড়াসন,সিধ্ধাসন খুব উপকারী। সেইসাথে অনুলোম-বিলোম,নাসিকাগ্র দৃষ্টি প্রাণায়াম ও মুলবন্ধ অভ্যাস করা প্রয়োজন।সেইসাথে চাই বীর্যধারণ ও ব্রহ্মচর্যের অভ্যাস। এই মূলাধার থেকেই আমাদের সাধনার শুরু।মুলাধারকে ঠিকমত নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সাধনপথে চলা শুরু হয়।  

Wednesday 15 May 2013

সাঁইত্রিশ - শিবপূজা

                শিবপূজা

অনেকেই আমায় প্রশ্ন করেন - শিব মানে কি ?এক্ষেত্রে সন্ধি বিচ্ছেদ করলে দেখবেন -  শি যুক্ত বন ইতি শিব।
      শিবপুজা মূলত হলো আত্মপূজা। অর্থাৎ আমাদের সহস্রারে সুপ্তভাবে যে শিব গুপ্ত হয়ে আছেন তাঁকে জাগানোর জন্যেই তো আমাদের সাধনা। শিবপূজা আমাদের ভিতরের সেই পরমপুরুষকে জাগানোর পূজা। তোমরা যত শিবপুজা করবে তত তাঁর কৃপা লাভ করবে নিজের মাঝে।আর যত তাঁর কৃপা লাভ করবে অন্তরে তত আধ্যাত্মিক জগতে তোমাদের  উত্তরণের পথ সুগম হয়ে উঠবে। এই শিবপূজার সাথে যখন পড়ে সিদ্ধ বীজমন্ত্র  তখন নিয়মিত জপ ও সাধনা করে গেলে কুলকুন্ডলিনীর জাগরণ ঘটবে আর তারপর যখন সেই মহাশক্তি সহস্রারে গিয়ে শিবের সাথে যুক্ত হবে তখনই লাভ করবে সিদ্ধি  আর সেই হবে জীবন থেকে পরম প্রাপ্তী। শিবপূজার মাধ্যমে এভাবেই আমদের উত্তরণ ঘটে আলোর দিগন্তে।

Tuesday 14 May 2013

ছত্রিশ - জগতে পূজা কয় প্রকার আর তার প্রকৃতি কি কি

 জগতে পূজা কয় প্রকার আর তার প্রকৃতি কি কি

 আজ আমার অধিবেশনে আমার বিশিষ্ট ভক্ত মলি  জানতে চেয়েছিল  - জগতে পূজা কয় প্রকার আর তার প্রকৃতি কি কি? এর উত্তরে আমি বললাম  - পূজা তিন প্রকার - সাত্ত্বিক,রাজসিক ও তামসিক। 
    সাত্ত্বিক পূজায় অন্তরের ভক্তিকে নৈবেদ্য করে পূজা দেয়া হয় নিষ্ঠার সাথে।সেক্ষেত্রে ভোগ দেয়া হয় নিরামিষ।এই পূজায় আমিষের কোন স্থান থাকেনা। এই পূজা হয় দিব্যাচারে।মূলতঃ যারা নিবৃত্তিমার্গে চলার ক্ষমতা রাখেন তারাই এই পথ বেছে নেন। 
    রাজসিক পূজায় পশুবলি প্রভৃতি হিংসাত্বক কর্ম সম্পাদন করা হয় বীরাচারে পূজার জন্যে। এতে রক্তের প্রয়োজনীয়তা থাকে।
    তামসিক পূজায় পশুবলি,মদ প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।এই পূজা হয় পশ্যাচারে।এই রাজসিক ও তামসিক পূজার প্রচলন করা হয়েছে প্রবৃত্তিমার্গের পথিকদের জন্যে- যাদের পক্ষে নিবৃত্তিমার্গের বিধিনিষেধ পালন করে চলা সম্ভবপর হয়না।কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে যে সকলের জন্যেই পূজার বিধান আছে।তাই যারা নিবৃত্তির পথ ধরে  এগোতে পারবেনা তাদের জন্যে রয়েছে প্রবৃত্তিমার্গের বিধান। এই রাজসিক ও তামসিক পথের পথিকরা আগে বৈধ ভোগ করে ভোগবাসনার সমাপ্তি ঘটাতে পারলেই তারা সাত্বিকভাবে  নিবৃত্তির পথে যাওয়ার যোগ্য হবে। মূলতঃ এই বিভেদের জন্যেই তন্ত্রশাস্ত্রে রয়েছে পাঁচ ম-কারের উল্লেখ।
   এই অবধি পড়ে সবাই  হয়ত ভাবছ - এহেন তিনরকমের পূজার কারণ কি?কারনটা হলো -   পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃতি ভিন্ন।কারো পশু স্বভাব,কারো রাজসিক স্বভাব,কারো বা সাত্ত্বিক দিব্যভাব।তাই তাদের প্রকৃতি অনুসারেই এই পূজার ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈষ্ণবরা মূলতঃ সাত্ত্বিক পূজা অনুসরণ করেন।আর তন্ত্রের পথে যারা আছেন তারা প্রথমে পশ্বাচার,তারপর বীরাচার মতে সাধনা করে অবশেষে দিব্যাচারে আসেন। তবে দুইয়ের মধ্যে তন্ত্রসাধনা যেমন কঠিন তেমনি তাতে সাফল্যের হারও খুব কম। কারণ দিব্যাচারে উত্তরণ খুব কম তান্ত্রিকের পক্ষেই সম্ভব হয়। তার চেয়ে বৈষ্ণব সাধনায় রসমাধুরী অনেক বেশী এবং সাফল্যের হারও বেশী। তবে দিনের শেষে সব নির্ভর করে সাধকের উপর। যে যত শরণাগতি অবলম্বন করে এগোতে পারবে সে তত তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাবে সাফল্যের পথে।  

Monday 13 May 2013

পঁয়ত্রিশ - দেবলোকের স্মৃতি

                দেবলোকের স্মৃতি 

    আজকে আমার "দেবলোকের অমৃতসন্ধানে" গ্রন্থের "বাসুকিতাল-কালিন্দী খাল -পঞ্চবদ্রী পর্ব" পুনর্মুদ্রিত হয়ে আশ্রমে এলো। এই পর্বটির  তৃতীয় সংস্করণ এটি।
কোথায় যেন পড়েছিলাম শিবরাম চক্রবর্তীর লেখায় - বই মুদ্রিত হওয়া  মানে সন্তান হওয়া  আর পুনর্মুদ্রিত হওয়া মানে নাতি হওয়া। সেই অনুসারে আমার তো নাতিতেই ঘর ভর্তি এখন।
     আজ মনে পড়ছে - হিমালয়ে কাটিয়ে আসা সেই দিনগুলোর কথা যার উপর ভিত্তি করে লিখেছি আমার এই ৪ খন্ডে সমাপ্ত ভ্রমনকাহিনী। কি ভয়ঙ্কর সুন্দর ছিল সেই পথ।নির্জন,নিরিবিলি,আকাশে বাতাসে শান্তির অনুরণন। মাঝে মাঝে সাধুসন্তদের সাক্ষাত। আর তার মাঝে পথ চলা। পথে বিপদ আছে।চলায় শ্রান্তি আছে - কিন্তু একটু বিশ্রাম নিলেই হিমালয়ের কৃপায় সব কষ্ট মিলিয়ে যায়।
     মনে আছে - হিমালয়ে আমরা যখন গেছিলাম তখন আমাদের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স শুন্য। যা টাকা ছিল ব্যাঙ্কে বাবা সবই তুলে নিয়েছিলেন। ফেরার পর কি খাওয়া দাওয়া হবে তার ঠিক ছিলনা। আয়ের উপায় বলতে একমাত্র বাবার বই বিক্রি।আমার তো তখন সবেধন নীলমণি একটাই বই - মহাসিন্ধুর ওপার থেকে।( দে বুক স্টোরের ম্যানেজার স্বপনদা রসিকতা করে বলতেন -ঐতো তোমাদের বাবা ছেলের পাবলিকেশন। বাবার একটা বই "মহাপীঠ তারাপীঠ", ছেলের একটাই বই "মহাসিন্ধুর ওপার থেকে"; ওই দুটো বই সম্বল। বর্তমানে অবশ্য এত বই বেরিয়ে গেছে যে স্বপনদা এখন বদলেছেন মত -দেখা হলে বলেন"আর কি নতুন বই আসছে আপনাদের?"সময়ের সাথে সাথে তুমিটা আপনি হয়েছে।)
     তবে ব্যাঙ্কের ভাঁড়ার শেষ করে হিমালয় ভ্রমণে গেলেও প্রানভরে ভ্রমণ করেছিলাম আমরা।আর সেইসময়েই ঠিক করেছিলাম - হিমালয়ের উপর একটি ভ্রমণ কাহিনী লিখব। ইতিপূর্বে তো অনেক লেখক হিমালয় নিয়ে লিখেছেন।আমিও লিখব আমার নিজস্ব স্টাইল-এ। আমার পরিকল্পনা ছিল - ভ্রমণ কাহিনীটা হবে ভিডিও ফিল্মের মত আর সেই ভিডিও ফিল্ম আমি শব্দ দিয়ে গড়ব। সেইমত ছোট একটি ডায়েরি নিয়ে পথে নামতাম।যেখানে যা দৃশ্য দেখতাম তার বিবরণ খাতায় তুলে নিতাম। সেসময়ে আমার নিজের ক্যামেরাও  ছিলনা। রথিনদা তথা মন্টুদার ক্যামেরা ধার নিয়ে ৫ রীল ফিল্ম ছবি তুলেছিলাম। তাই যেখানে মন্টুদা ছিলেন সেখানে আমার ছবি উঠেছে।যেখানে তিনি নেই সেখানে আমার ছবিও নেই।
      তারপর শুরু হলো হিমালয়ের লীলা।কত মহাত্মাদের সেবার দর্শন করেছি।নাগাজীর মত মহাত্মা তো কোটিতে গোটিক  মেলে। তাঁর স্নেহছায়ায় পথ চলার সৌভাগ্যও লাভ করেছি। হিমালয়ের বিজন অঙ্গনে কত উচ্চকোটির সাধক আমায় কৃপা করেছেন।তাঁদের জন্যেই আমার হিমালয় ভ্রমণ স্মরণীয় হয়ে রয়েছে। আজ তাঁদের কৃপায় লেখা "দেবলোকের অমৃতসন্ধানে" গ্রন্থের সুনাম দিকে দিকে। তবে সেইসময়ে হিমালয়কে আমি যেভাবে দেখেছিলাম আর তার সেই রূপসুধা পান করার উপায় এখন নেই।যন্ত্রসভ্যতার বীজ এখন সেখানেও জেগে উঠেছে।তাই হিমালয়ের সেই প্রশান্তি এখন দিনেরাতে তেমনভাবে উপভোগ করা যায়না। আমার সৌভাগ্য - প্রমোদ কুমার চট্টোপাধ্যায় ,প্রবোধ সান্যাল,জলধর সেন,উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়,শঙ্কু মহারাজ  হিমালয়ের যে রূপসুধা পান করতে পেরেছিলেন আমি ছিলাম সেই মহান হিমালয় প্রেমিকদের শেষ উত্তরসুরী - Last of the Mohicans যার হিমালয় ভ্রমণ পর্যন্ত হিমালয়ের সেই নিরবছিন্ন শান্তির অমৃত পান করা যেত। বর্তমানে যন্ত্রসভ্যতার আক্রমনে হিমালয় জর্জরিত। তবু আজো  হিমালয়কে ভালোবেসে তার কাছে গেলে হিমালয় কৃপা করেন। শুধুমাত্র ব্রাহ্মমুহুর্তে এখন হিমালয়কে নিজের রূপে পাওয়া যায় যা অন্যসময়ে যায়না।
    আমার "দেবলোকের অমৃতসন্ধানে" গ্রন্থের আমার সেই হারিয়ে যাওয়া দিনগুলির স্মৃতি বড় ভিড় করে আসছে মনে। সেদিন আমি কিছুই ছিলামনা। আজ যেটুকু হতে পেরেছি সবই হিমালয়ের দয়া,গোপালের দয়া আর মা তারার দয়া। তাই ফেলে আসা দিনগুলি বরাবরই আমার প্রেরণা রূপে দেখা দেয়। শুন্য থেকে শুরু করে আজকের দিনে আসার এই পথটুকু যে ইষ্টকৃপার জন্যেই সম্ভব হয়েছে।  
   

চৌত্রিশ - অক্ষয়তৃতীয়া

                      অক্ষয়তৃতীয়া 

অক্ষয় তৃতীয়া আমাদের দেশে একটি পুণ্যতিথি রূপেই বিবেচিত। এটি বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষের তৃতীয়াতে পড়ে।
    অক্ষয়তৃতীয়ার  গুরূত্ব বিশাল। এদিন অনেকগুলি তাত্পর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল।
১) এদিনই রাজা ভগীরথ গঙ্গা দেবীকে মর্ত্যে নিয়ে এসেছিলেন।
২) এদিনই গণপতি গনেশ বেদব্যাসের মুখনিঃসৃত বাণী শুনে মহাভারত রচনা শুরু করেন।
৩) এদিনই দেবী অন্নপূর্ণার আবির্ভাব ঘটে।
৪) এদিনই সত্যযুগের সূচনা হয়।
৫) এদিনই কুবেরের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহাদেব তাঁকে অতুল ঐশ্বর্য প্রদান করেন। এদিনই কুবেরের লক্ষ্মী লাভ হয়েছিল বলে এদিন বৈভব-লক্ষ্মীর পূজা করা হয়।
 ৬) এদিনই বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার পরশুরাম জন্ম নেন পৃথিবীতে।
৭)এদিনই ভক্তরাজ সুদামা শ্রী কৃষ্ণের সাথে দ্বারকায় গিয়ে দেখা করেন এবং তাঁর থেকে সামান্য চালভাজা নিয়ে শ্রী কৃষ্ণ তাঁর সকল দুখ্হ মোচন করেন।
৮)এদিনই দুঃশাসন দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণ করতে যান এবং সখী কৃষ্ণাকে রক্ষা করেন শ্রীকৃষ্ণ। শরনাগতের পরিত্রাতা রূপে এদিন শ্রী কৃষ্ণা দ্রৌপদীকে রক্ষা করেন।
৯) এদিন থেকেই পুরীধামে জগন্নাথদেবের রথযাত্রা উপলক্ষ্যে রথ নির্মাণ শুরু হয়।
১০) কেদার বদরী গঙ্গোত্রী যমুনত্রীর যে মন্দির ছয়মাস বন্ধ থাকে এইদিনেই তার দ্বার উদঘাটন হয়। দ্বার খুললেই দেখা যায় সেই অক্ষয়দীপ যা ছয়মাস আগে জ্বালিয়ে আসা হয়েছিল।
     এহেন অক্ষয়তৃতীয়াতে যেকোন শুভকাজ শুরু করা ভালো। এদিনের তিথির বিশেষত্ব হচ্ছে - এদিন যে কাজ করা হোক না কেন তার ফল হয়ে দাঁড়ায় অক্ষয়।
 শরণাগত সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আমি তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বলছি - এদিন যদি ভালো কাজ করা হয় তার জন্যে আমাদের লাভ হয় অক্ষয় পূণ্য আর যদি খারাপ কাজ করা হয় তবে লাভ হয় অক্ষয় পাপ। তাই এদিন খুব সাবধানে প্রতিটি কাজ করা উচিত।খেয়াল রাখতে হয় ভুলেও যেন কোনো খারাপ কাজ না হয়ে যায়।কখনো যেন কটু কথা না বেরোয় মুখ থেকে।কোনো কারণে যেন কারো ক্ষতি না করে ফেলি বা কারো মনে আঘাত দিয়ে না ফেলি। তাই এদিন যথাসম্ভব মৌন থাকা জরুরী। আর এদিন পূজা,জপ,ধ্যান,দান,অপরের মনে আনন্দ দেয়ার মত কাজ করা উচিত। যেহেতু এই তৃতীয়ার সব কাজ অক্ষয় থাকে তাই প্রতিটি পদক্ষেপ ফেলতে হয় সতর্কভাবে।এদিনটা ভালোভাবে কাটানোর অর্থ সাধনজগতের অনেকটা পথ একদিনে চলে ফেলা। এবারের অক্ষয়তৃতীয়া সবার ভালো কাটুক - এই কামনায় করি।    


Sunday 12 May 2013

তেত্রিশ - আধ্যাত্মিক জীবনে কিভাবে এগোতে হবে

  আধ্যাত্মিক জীবনে কিভাবে এগোতে হবে 


       আমার প্রিয় সুহৃদ অরুণাভ বাগচী একটি সুন্দর প্রশ্ন করেছিলেন - একটি মানুষের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আধ্যাত্মিক জগতের যাত্রা কিভাবে হওয়া উচিত।

      আমি উত্তরে বলেছিলাম -   যদি শুরু থেকে বলতে বল তবে একদম শৈশব থেকেই বলি। একটি শিশু যখন একটু একটু করে বড় হচ্ছে তখন থেকেই তাকে আধ্যাত্মিক জগতে নিয়ে আসা উচিত।অবশ্য এজন্যে বাবা মায়েদেরও sacrifice প্রয়োজন। তাদের নিজেদেরও আগে আধ্যাত্মিক জগতের সাথে যুক্ত হওয়া দরকার।তবেই তো তারা পারবেন শিশুদের শেখাতে।
       শিশুকে ছোটবেলায় প্রথমে আধ্যাত্মিক জগতের সম্বন্ধে আকৃষ্ট করতে হয় নানা গল্প বলে - পুরাণ,উপনিষদ ও পান্চাতন্ত্রের যে শিক্ষামূলক গল্পগুলো আছে সেগুলি  তাদের বলা প্রয়োজন,বলা প্রয়োজন বিভিন্ন সাধক সাধিকাদের লীলাকথা। এতে হয়কি,তারা আধ্যাত্মিক জগতের উপর আকৃষ্ট হয়। সেইসাথে তাদের মধ্যে যাতে নীতিবোধ জেগে ওঠে সেটাও দেখতে হয়। এজন্যে বাবা মাকেও আদর্শের পথে এগোতে হয়। তাদের দেখেই তো সন্তান শিখবে।
       এরপর একটু পড়তে শিখলে রামায়ণ,মহাভারত হাতে ধরিয়ে দেয়া উচিত যাতে শ্রীরাম ও স্রীকৃষ্ণ সম্বন্ধে ভক্তি জাগে। আস্তে আস্তে ঠাকুরের সামনে বসিয়ে দেয়া উচিত যাতে তারা ঠাকুরের পূজা করে আগ্রহী হয়।আরেকটু বড় হলে হাতে ধরিয়ে দাও গীতা আর বল - দুএক পাতা সংস্কৃত ও তার অনুবাদ ঠাকুরের সামনে পড়ে  যেতে। এতে হবে কি,গীতার শব্দব্রহ্ম শিশুর মধ্যে কাজ করতে শুরু করবে। প্রথমে সে কিছুই বুঝবেনা।বোঝার দরকার নেই।কিন্তু শব্দব্রহ্মের অনুরণন তার মধ্যে ঠিক কাজ করে তার ভিত গড়ে দেবে।এভাবেই ঠাকুরের সামনে তাকে বড় করতে থাক।এভাবে এগোলে ছেলেমেয়ে কখনো বিপথে যাবেনা।

    তারপর একটু বড় হলে তাকে নামজপ শেখাও।বাবা মায়ের চেয়ে বড় গুরু তো কেউ হয়না।তাই সন্তানের পছন্দমত নাম ধরে তাদের জপ দেখিয়ে দাও। এই নাম জপ তার অনেক প্রারব্ধ কাটিয়ে প্রস্তুত করে দেবে মন্ত্রদিক্ষার জন্যে। আর তারপর সময় হলেই গুরু আসবেন তার জীবনে। তারপর তার আধার অনুযায়ী তাকে ভক্তি,জ্ঞান বা যোগের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। এভাবেই আধ্যাত্মিক পথে এগোতে হয়। এটাই তোমার ভাষায় প্রথম শ্রেণী থেকে মাস্টার ডিগ্রী নেয়ার পথ। 

    আর এই যে পথের কথা বললাম - এটা একদম পরীক্ষিত পথ। এটা আমার  ব্যক্তিগত জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষা।  

Saturday 11 May 2013

বত্রিশ - সম্পর্ক যেন গাছের গুঁড়ি

                              সম্পর্ক যেন গাছের গুঁড়ি 

  মানুষের জীবনে সব সম্পর্কই  গাছের গুঁড়ির মত। সম্পর্ক যত গভীর হয় গুঁড়িও  তত মোটা হয়। কিন্তু গভীর সম্পর্ক তৈরী হলেই যে কেউ তা নিয়ে যা খুশী করতে পারবে সেই ধারণা ভুল। হয়ত একটু সরু গুঁড়ির গাছকে দুএক আঘাতেই কেটে দেয়া যায় কিন্তু মত গুঁড়ির গাছকে অত অল্পে কাটা যায়না। কিন্তু তাই বলে যে মত গুঁড়ির গাছকে কাটা যায়না এমনও তো নয়। হয়ত অল্প কয়েক আঘাতে সেই মত গুঁড়ির কিছু হয়না।সামান্য রক্তপাতেই হয়ত তা থেমে যায়। (গাছ কাটলে যে কষ বেরয় তাকেই বলা হয় গাছের রক্ত )কিন্তু সেখানে বারবার আঘাত পড়লে মত গুঁড়িও একদিন ভেঙ্গে পড়ে। একই কথা যেকোনো গভীর সম্পর্কের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য- সে যতই গভীর হোক - বারবার আঘাত তাকেও কেটে দেয় একদিন।
       তাই ভালো সম্পর্ক পেলে - সে বন্ধু হোক,ভাইবোন হোক,প্রেমিক-প্রেমিকা হোক,স্বামী স্ত্রী হোক,গুরু শিষ্য হোক - তাকে ভগবানের দান মনে করেই যত্ন করা উচিত। একটি গাছকে বড় করে তুলতেই সময় লাগে। সেটিকে কাটতে বিশেষ কিছু সময় লাগেনা। তাই জীবন যদি তোমাদের হাতে কোন ভালো সম্পর্ক তুলে দেয় তাকে রক্ষনাবেক্ষণ কোর ইশ্বরের আশীর্বাদের রূপে - তার উপর আঘাত পড়তে দিওনা। সেখানে আঘাত করা মানে কিন্তু সেই প্রথম জীবনের কালীদাসের মত অবস্থা হবে - সেই যে ডালে বসে আছো সেই ডালটিকেই কাটতে চাইছ। কখনো ভেবনা - এ সম্পর্ক অনেক  গভীর। শত আঘাতেও কিছু হবেনা। প্রতিটি আঘাতই তোমাকে সেই সম্পর্ক থেকে একটু একটু করে দূর করে দেবে।তারপর একদিন দেখবে - তুমিও আছ ,সেও আছে কিন্তু সম্পর্কটা আর নেই। তখন হাজার চেষ্টা করেও আর ফিরে পাবেনা সেই হারিয়ে যাওয়া দিন। এই নশ্বর পৃথিবী থেকে যা যায় তা চিরতরেই যায়। তাই সময় থাকতেই সাবধান হওয়া  ভালো।

Friday 10 May 2013

একত্রিশ - গুরুকরণের সাধারণ কারণ


                   গুরুকরণের সাধারণ কারণ 

অধিকাংশ মানুষ কেন গুরুকরণ করে জানো ?যাতে সাংসারিক সমস্যার থেকে মুক্তি পায়। তাদের কাছে সিদ্ধিলাভের কোনো প্রয়োজন নেই। শুধু দরকার স্বামীর চাকরিতে উন্নতি,স্ত্রীর শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকা,সন্তান ছোট হলে তার পড়াশোনা ভালো হওয়া,সন্তান বড় হলে তার বিয়ে বা চাকরির সমাধান করা ইত্যাদি কাজগুলো পূরণ করে দেয়ার জন্যে একটি যন্ত্র।সাধারণ মানুষের কাছে গুরু হল এই যন্ত্র। সেজন্যে তারা তাদের পার্থিব ঝামেলা নিয়ে গুরুকে বিব্রত করে। তাদের যা অসুবিধা হবে সেটাই গুরুকে মেটাতে হবে - এমনটাই তাদের চাহিদা।
    তাই গুরু যারা হয় তাদের আগে শিষ্যকে চিনে নেয়া প্রয়োজন।যারা জাগতিক জগতের সাথে ওতপ্রোত হয়ে আছে এবং জাগতিক ছাড়া চাহিদা নেই তাদের দীক্ষা দেয়াই উচিত নয়। বলা উচিত - আগের স্তরের কাজগুলো সেরে এস,তারপর দীক্ষার কথা ভেব। কারণ দেখ- এসব শিষ্যরা ভাবে - আমি যা করি করি গুরু আছে সামলে নেবে।কিন্তু গুরু তো নিজে সাধনা করে সাধনশক্তি অর্জন করেছেন।শিষ্যের প্রারব্ধের প্রতিকার করার জন্যে কেন তিনি নিজের সাধনশক্তি দেবেন? তাই তাঁর উচিত শিষ্যকে আগে দীক্ষার স্তরের উপযুক্ত করে নিয়ে তারপর দীক্ষা দেয়া। কারণ আধ্যাত্মিক জগতের উপর আকর্ষণ না জাগলে,নিজেকে জানার বা বোঝার ইচ্ছা না জাগলে দীক্ষা নেয়ার যোগ্যই হয়না মানুষ। তাই এদের দীক্ষা দেয়া মানে গুরুর নিজের আটকে যাওয়া।কারণ প্রতিটি শিষ্য মুক্তি না পাওয়া পর্যন্ত গুরুর যে মুক্তি নেই।  
   

Thursday 9 May 2013

তিরিশ - ধর্ম,অধ্যাত্মবাদ ও আধ্যাত্মিকতা


          ধর্ম,অধ্যাত্মবাদ ও আধ্যাত্মিকতা

আজকে ডাক্তার শুভাশীষ গাঙ্গুলী আমায় প্রশ্ন করেছিলেন ধর্ম,অধ্যাত্মবাদ ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে পার্থক্য কি।তার উত্তরে বললাম - ধর্ম,অধ্যাত্মবাদ ও আধ্যাত্মিকতা যদি একটা পিরামিড ভাবা হয় তবে ধর্ম হল নিম্নতম স্থান,অধ্যাত্মবাদের স্থান এর উপরে এবং পিরামিডের চূড়ায়  থাকছে আধ্যাত্মিক চেতনা।
   প্রথম ধাপে আছে ধর্ম - যেমন হিন্দু ধর্ম,মুসলমান ধর্ম,খ্রীষ্টান ধর্ম প্রমুখ। অর্থাৎ, যেটা মানুষের তৈরী ইশ্বরের কাছে যাবার জন্যে আপন দেশ কাল গন্ডীর সীমায় আবদ্ধ থেকে।তাই বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মে একেক রকম ভাবনা - কেউ ভগবানকে ডাকেন,তো কেউ আল্লাকে।এটা মানুষদের তৈরী।​তবে কোনো ধর্মই মিথ্যা নয়। ইশ্বরের কাছে যাওয়ার জন্যে পথের শুরু বলা যায়।
   ধর্মের গভীরে যদি যাওয়া যায় তবে দেখা যাবে তার যে আসল ভাব সেটি হল অধ্যাত্মবাদ। অর্থাৎ, ইশ্বরকে ভালোবেসে তার কাছে পৌছনোর জন্যে যে বিভিন্ন জ্ঞান,যোগ বা ভক্তির পথ তা এখান থেকে শুরু। এখানে অধ্যাত্মবাদে কোনো ধর্মের সংকীর্ণতার মধ্যে মানুষ আবদ্ধ হয়না। যারা ধর্মের দেশ কাল পাত্রের গন্ডীর উপরে উঠতে পেরেছেন তারাই এই অধ্যাত্মবাদ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করেন আর কিভাবে সেই অধ্যাত্মবাদকে আয়ত্ত করা যায় সেজন্যে চেষ্টা শুরু করেন।
     আর সেই অধ্যাত্মবাদ নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে করতে যারা সেই পথে এগোতে শুরু করেন গুরু নির্দিষ্ট উপায়ে তাদের মধ্যেই জাগে আধ্যাত্মিক চেতনা।তারাই হলেন যথার্থ আধ্যাত্মিক পথের পথিক। সব মিলিয়ে বলতে গেলে,  আধ্যাত্মিক হওয়াই আসল।কারণ সকল ধর্মের আসল cream হলো আধ্যাত্মিক চেতনা। তাইতো আধ্যাত্মিক পথের গভীরে গিয়ে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন "যত মত তত পথ।" এই উপলব্ধিই আসে আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত হলে।

Wednesday 8 May 2013

ঊনত্রিশ - শীতলীকুম্ভক

                             শীতলীকুম্ভক  

    অনেকেই আমাকে অনেকদিন ধরে বলছেন যোগ নিয়ে কিছু লেখার জন্যে। যোগের সম্বন্ধে লেখার তো কত কিছুই আছে। আর গরমকালে ঠান্ডার প্রতিই তো মানুষের আকর্ষণ হয়। তাই ভাবলাম শীতলী কুম্ভক দিয়ে শুরু করা যাক।
     অনেকে হয়ত বলবেন -এতে কি ফল হয়?উত্তরে বলি - এতে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীরে জ্যোতির প্রকাশ ঘটে। যোগের পথে যারা আছেন তারা এটি নিয়মিত অনুসরণ করেন। গোরখ সংহিতায় এ সম্পর্কে খুব ভালোভাবে বলা আছে।
      এতে জিভ সরু করে ঠোঁট দিয়ে বাতাস টানতে হয়।তারপর সেই বায়ু অনেকটা ঢোঁক গেলার মত গিলে পেতে চালনা করতে হয়। তারপর কিছুক্ষণ সেই বাতাসকে কুম্ভক করে ধরে রেখে দুই নাক দিয়ে রেচন করতে হয়। এরকম করে বারবার বাতাস টেনে শীতলীকুম্ভক করলে কিছুদিনের মধ্যেই রক্ত পরিষ্কার হয়,অজীর্ণ এবং পিত্তকফের হাত থেকেও মুক্তি মেলে। সেইসাথে শরীরও অনেকটা ঠান্ডা থাকে। দিনেরাতে অন্তত তিন চারবার এই যৌগিক ক্রিয়া যদি পাঁচ মিনিট করেও করা যায় তবে বিশেষ উপকার হয়। 

Tuesday 7 May 2013

আঠাশ - চেনা তবু অচেনা

                           চেনা তবু অচেনা 

      আমাদের জীবনে কত মানুষ আসে। সবাই প্রথমে থাকে  অপরিচিত,ধীরে ধীরে হয় পরিচিত,আবার পরিচিত হয়েও কিভাবে যেন থেকে যায় অপরিচিত। তাদের আমরা চিনি তবু যেন চিনিনা। অথচ এদের নিয়েই চলে আমাদের জীবন। আমাদের খুব কাছের জনদের সাথে অনেকদিন থাকার পরও আমরা প্রায়ই আফশোষ করি যে তাকে ঠিক চিনে উঠতে পারলাম না। 
    কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা হলো - আমাদের নিজেদেরই কি আমরা চিনতে পারি? আমাদের ভিতরে যে অতল সাগর লুকিয়ে আছে তার ভিতরে যে কত মণিমুক্তা আর কত বিষাক্ত সাপ লুকিয়ে আছে তা কি আমরা নিজেরাই জানি? মানুষ তো বাইরের রূপ আর ব্যবহার দেখেই বিচার করে। তাই তাদের ভুলও হয়।কিন্তু আমরা তো নিজেদের ভিতরটাও দেখি।তাহলে আমরাই নিজেদের চিনতে পারিনা কেন? কেন বুঝিনা যে আমরা চাইছি এক ভিতরে আর বাইরে অন্য কিছু পাওয়ার চেষ্টায় আছি? কেন বুঝিনা যে আমাদের মন চায় এক আর মস্তিস্ক চায় আরেক এবং এই দুয়ের দ্বন্দে আমরা হই জেরবার? 

     ভেবে দেখতে গেলে প্রতিটি মানুষের মধ্যেই ভালো মন্দ দুইই আছে। এখন সে যেটি হওয়ার চেষ্টা করবে সেটিই হবে।  একজন আধ্যাত্মিক পথের পথিকরূপে আমি তো বলতে পারি - আমার নিজের মনের অথৈ সাগরে ডুব দিয়ে দুইরকমের বস্তুই দেখেছি - যেমন সেখানে আছে অমৃত তেমনি আছে হলাহল। যেমন আছে আধ্যাত্মিক চেতনা তেমনি আছে নানা প্রলোভন। তাই আমি বিশ্বাস করি - যে মানুষ হিসেবে আমি করতে পারিনা এমন কোনো খারাপ এবং ভালো কাজ নেই। প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রেই এ কথা প্রযোজ্য। তবে যে যেটাকে বেছে নেবে তার জীবন সেটা ঘিরেই চলবে। তার সুকর্মফল সেইমতই বাড়বে কমবে। 
     আমি জানি - যদি হলাহল বেছে নেই সেক্ষেত্রে আমি নিজেই ডুবব। জন্মজন্মান্তর ধরে সাধনা করে যে জায়গাটা পেয়েছি এজন্মে সেই জায়গাটা হারাব।শ্রী শ্রী  লোকনাথ বাবার গুরুদেব ভগবান গাঙ্গুলির বংশে জন্মগ্রহণ করেছি। তাই ঠিকমত সাধন করলে আমারই হবে উত্তরণ।অতএব নিজের স্বার্থেই ভালো পথটিকে বেছে নিয়েছি। নিজের চির চেনা ও অচেনা মনকে বুঝিয়েছি - আলোর পথে এগোলে আমারই লাভ।তাহলে কেন প্রলোভনে সাড়়া  দেব? অতএব লাভের লক্ষেই DIVINE LOVEএর পথে নেমেছি। আমাদের যে একজন্ম দেখে বিচার করলে চলবেনা। অনন্তের যাত্রায় যে আমাদের প্রতিটি জন্মের লাভক্ষতির সম্ভাবনার কথাই মাথায় রাখতে হবে। তাহলেই তো আমরা ঠিকমত এগোতে পারব চিরন্তনের লক্ষ্যে।  

Monday 6 May 2013

সাতাশ - গোপী মহিমা

                              গোপী মহিমা 


     বৃন্দাবনে যেসব গোপীবৃন্দ শ্রীকৃষ্ণের লীলা পরিকর হয়ে এসেছিলেন তাদের মহিমা বড় কম নয়।এঁদের  মধ্যে দুটি ভাগ আছে।
     প্রথম ভাগে বিরাজ করেন ব্রহ্মকোটির মহাত্মারা যাঁরা  নিত্যদেহে গোলকধামে  শ্রী কৃষ্ণের লীলারস আস্বাদ করেন।শ্রীকৃষ্ণ যখন নরদেহ ধারণ করে পৃথিবীতে নেমে আসেন তখন এনারাও আসেন নরদেহ নিয়ে।তাঁরাও নিত্য শুদ্ধ,নিত্য মুক্ত,ইশ্বরের অংশ। এঁরাই হন ভগবানের পারিষদ। যেমন শ্রীদাম,সুদামা,নন্দ,যশোদা,বৃষভানু প্রমুখ। এঁরা নিত্যকাল ভগবানের সাথে যুক্ত থাকেন -ভগবান যেখানে এঁরাও সেখানে।
   গোপীদের দ্বিতীয় ভাগে আছেন সেইসব সাধকরা যাঁরা আপন সাধনবলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কান্তরূপে লাভ করে তাঁর লীলা উপভোগ করেছিলেন। এই ভাগের গোপীরা হলেন জীবকোটিভুক্ত। এঁরা সাধনবলে গোপীদেহ লাভ করে লীলা উপভোগ করেছিলেন প্রকটলীলায়। এঁরা মূলতঃ সবাই ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্রের রূপলাবন্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে পেতে চেয়েছিলেন সম্ভোগের জন্যে।তাঁদের কামনাপুরণের জন্যেই শ্রী কৃষ্ণ  তাঁদের ব্রজলীলায় সঙ্গী ও সঙ্গিনী করেছিলেন। এঁরা কিন্তু সবাই ছিলেন সিদ্ধ ঋষি  - প্রেমের সাধনায় সিদ্ধির ফল তাঁরা পেয়েছিলেন এইভাবে। তাই তাঁদের সবার শ্রী চরণে জানায় শতকোটি প্রণাম। 

Sunday 5 May 2013

ছাব্বিশ - শয্যায় মন্ত্রজপ

                          শয্যায় মন্ত্রজপ 


     আমাকে অনেকেই প্রশ্ন করেন যে রাতে ঘুমানোর আগে বা ঘুম থেকে উঠে জপ করাতে কোন দোষ  নেই তো? এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি আজকে এখানে।
     জপ করার মূল জায়গা হল আসন - ছেলেদের কম্বলের আসনে বসে এবং মেয়েদের সুতির আসনে বসে জপ করাই বিধেয়। তবে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এবং ঘুম থেকে ওঠার পরে শয্যা ত্যাগের আগেও তো জপ করতে হয়। সেজন্যে শয্যার উপর একটা শুদ্ধিকরণ মন্ত্র পথ করতে হয়। 
     শয্যায় বসে প্রথমে "ওং আঃ  সুরেখে বজ্ররেখে হুং ফট স্বাহা " উচ্চারণ করে শয্যার উপর ত্রিকোণ কাটতে হয়। যারা কৃষ্ণ বা শিবের পূজা করে তাদের উপরদিকে কোণ রাখতে হয় এবং যারা কালী,তারা প্রভৃতি মাতৃকার পূজা করেন তাদের কোণ রাখতে হয় নীচের দিকে।
  তারপর "হ্রীং আধারশক্তয়েঃ  কমলাসনায়ঃ নমঃ" মন্ত্রে দেবতার মানসপূজা করে "হ্রীং মৃতকায়ঃ নমঃ ফট" বলে শয্যার উপর তিনবার আঘাত করে দশদিক বন্ধন করতে হয়। তারপর করজোড়ে পথ করতে হয় - 
       "ওং শয্যেত্বং মৃতরুপাসি  সাধনিয়াসী সাধকৈঃ।
         অতহত্র জপ্যতে মন্ত্র হ্যস্মাকং  সিদ্ধিদা ভব।।"
 এই প্রথা অবলম্বন করার পর বিছানাশুদ্ধি  হয়ে যায়।তখন বিছানায় বসেই মন্ত্র জপ করতে পারবেন। 

Saturday 4 May 2013

পঁচিশ - মন ও মুখ

                                মন ও মুখ 

     আমাদের সমাজে মন আর মুখের সংঘাত বেশিরভাগের মধ্যেই দেখা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখি - যে বলে - অত্যাচার করা খারাপ সেই করে বেশী অত্যাচার। যে বলে - মানুষের ভালো করা উচিত সেই মানুষের ক্ষতি করে বেশী।
আমার শিষ্যা অঞ্জনা এই ব্যাপারেই আজ লিখতে বলছিল।
    আমার মনে হয় - যে মানুষের মধ্যে যথার্থ জ্ঞান আছে যে কি করা উচিত এবং যে একইসাথে জ্ঞানকে নিজের স্বার্থে কাজে লাগায়  তার থেকেই এমন ব্যবহার  পাওয়া যায়। এই স্ববিরোধী চরিত্রদের মূল বৈশিষ্ট হলো - এরা ভীষণ  মিথ্যা কথা বলে। জ্ঞান থাকার জন্যে যেকোনো মানুষকে এরা বোকা বানাতে পারে ও ঠকাতে পারে।তবে এদের চেনার একটা উপায় আছে - এদের মধ্যে নিজেকে উত্তম রূপে দেখানোর একটা প্রবণতা থাকে আর সেজন্যে যারা বরেন্য তাদের নিন্দা করতে এরা পিছপা হয়না। আধ্যাত্মিক জগতে এমন ব্যক্তি বড় কম নেই। তবে এদের থেকে সাবধান থাকা ভালো।কারণ যারা সৎ নয় তাদের মধ্যে শয়তান বিরাজ করে আর শয়তানকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
      মন ও মুখ যাদের এক তারাই পৃথিবীতে কোনো ভালো কাজ করে যেতে পারেন। কারণ মনের সাথে মুখের সেতুবন্ধ করে বিবেক। আর যেখানে মন আর মুখের সেতুবন্ধ করে বিবেক সেখানে মিথ্যের কোনো স্থান থাকেনা আর যেখানে মিথ্যার প্রবেশ নিষেধ সেখানেই পাওয়া যায় সত্যিকারের মানুষকে। কিন্তু যেখানে মন আর মুখের মাঝে বিবেকের সেতুবন্ধ নেই,যে এক বলে আর অন্য কাজ করে সেই ব্যক্তিকে এড়িয়ে চলা সর্বতোভাবে প্রয়োজন। তবে সেক্ষেত্রেও পাপকে ঘৃণা করবেন,পাপীকে নয়।তাকে শোধরানোর উপায় থাকলে শোধরাবেন। নাহলে শুধু এড়িয়ে যাবেন। 

Friday 3 May 2013

চব্বিশ - প্রণাম

                                     প্রণাম 


      আমার এক শিষ্যা  আজ আমায় বলছিল প্রণামের  ব্যাপারে কিছু লিখতে। প্রণাম যে করে এবং প্রণাম যে নেয় তাদের দুজনের মধ্যেই তো এনার্জি ট্রান্সফার হয়।তাহলে প্রণাম কি যুক্তিযুক্ত?
      এ প্রসঙ্গে বলি - আমাদের মধ্যে একটা প্রবণতা আছে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার। এটা শিষ্টাচার। কিন্তু প্রণাম করার আগে একটা ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার। প্রণাম তাদেরই করা উচিত যারা আমাদের থেকে সাধনশক্তিতে এগিয়ে আছেন। তাই তাদের জোড়হাতে প্রণাম জানানো বা পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা বিধেয়। এতে বড় ক্ষতি হয়না কারো। কিন্তু ক্ষতি হয় পায়ে মাথা দিয়ে প্রণাম করলে বা অন্যের পায়ের ধুলো নিয়ে নিজের মাথায় দিলে। কারণটা একটু বুঝিয়ে বলি।
     প্রতিটি মানুষের শরীরের মধ্যে নিরন্তর চলছে এনার্জির প্রবাহ মূলাধার থেকে সহস্রার এবং সহস্রার থেকে মূলাধার। তাই কেউ যদি অপরের পায়ের সাথে নিজের মাথার সংযোগ করে তাহলে যার আধার উন্নত তার ভালো কিছু এনার্জি  চলে যায় অন্যের কাছে  এবং যার আধার ভালো নয় সে অন্যের ভালোটা বেশ কিছু পেয়ে যায়। কারণ সহস্রারের মধ্যে একটা এনার্জি টানার চুম্বক আছে। আবার যে ভালো আধারের সে যদি খারাপ আধারের কাউকে একইভাবে প্রণাম করে সেক্ষেত্রে তার ভালো কিছু এনার্জি চলে যায় খারাপ আধারের মানুষের মধ্যে।আর খারাপ আধারের মানুষের খারাপ কিছু ভালো আধারের মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়ে যায়। তাই সাধু মহাত্মারা কাউকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেন না। আমাদের আশ্রমেও একই প্রথা আছে। 
     একটি উদাহরণ দেই।বছরখানেক আগে মালদহ থেকে গোপালের জন্যে আমসত্ব নিয়ে একজন  এসেছিলেন আমার বই পড়ে। আমার সাথে আধ্যাত্মিক আলোচনা করে মুগ্ধ হয়ে আমায় প্রণাম করেন।ভদ্রলোকের চোখের সমস্যা ছিল। ভেলোরে চিকিত্সা চলছিল। এখান থেকে যাওয়ার পর উনি ফোন করেন যে ওনার চোখ এখন অনেকটা ভালো হয়ে গেছে।কিন্তু সমস্যা হলো - তার পর থেকেই আমার চোখে একটা সমস্যা দেখা দেয়। চোখের সামনে একটা আবছা চুল ধাচের একটা স্পট দেখতে থাকি।দিনে দিনে সেটা আরো বাড়ে। এবার তো বই-এর প্রুফ দেখতে বেশ অসুবিধা হয়েছে।পরে এ নিয়ে আমি বাবার সাথে আলোচনা করি।বাবা বললেন যে এই কারণেই ওটা হয়েছে।সেই থেকে আমি প্রায় সবার প্রণাম পায়ে হাত দিয়ে আর পায়ে মাথা দিয়ে নেয়াই  বন্ধ করে দিয়েছি। বাবারও এরকম অভিজ্ঞতা আছে। একজন তান্ত্রিক তো তার নিজের দুরারোগ্য ব্যাধি বাবার মধ্যে সঞ্চার করে দিয়েছিলেন পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে।কিন্তু বাবার  বীজমন্ত্রের গুরুদেব উঁচু মহারাজ বাবাকে সে যাত্রা বাঁচিয়ে দেন। 
     তাই প্রণাম সম্বন্ধে ভালো আধারের মানুষরা সচেতন থাকবেন সর্বদা।এক ইষ্ট,গুরু আর প্রত্যক্ষ ভগবান বাবা মা তথা উচ্চকোটির সাধক সাধিকা  ছাড়া কাউকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম না করাই বিধেয়।


Thursday 2 May 2013

তেইশ - যন্ত্র হয়ো না

                            যন্ত্র হয়ো না 

       আমরা মানুষরা কি দিন দিন যন্ত্র হয়ে যাচ্ছি? একটু ভেবে দেখলেই  বুঝবে  - আমরা  আদৌ নিজেদের জন্যে সঠিকভাবে ভাবি না। তাই বলে কি আমরা ভাবনার উর্ধ্বে চলে গেছি?তাও নয়। ভাবনা আমাদের মনেই আছে কিন্তু সেটি আমরা ভাবিনা।  
        আমাদের হয়ে আমাদের ভাবনা ভাবায় টেলিভিশন। প্রায় প্রতিটি ঘরেই দেখা যায় -টেলিভিশনে যত অবাস্তব,ষড়যন্ত্রমূলক সিরিয়ালের ভিড়।বাড়িরপ্রায় সবাই তার সামনে।আগেকার দিনে বাড়ির মেয়েদের যদি বলা হত - সন্ধ্যায় কি করতে হবে?সবাই একবাক্যে জবাব দিত - ঠাকুরকে সন্ধ্যা দিতে হবে।আর এখন?সন্ধ্যা হলে আজ এই সিরিয়াল দেখতে হবে। কোন সিরিয়ালে কোন ভিলেন আজ কি করতে পারে তাই নিয়ে সারাদিন টেনশন গেছে।অতএব সেটা দেখতে হবে।অর্থাৎ - আমাদের ভাবাচ্ছে সিরিয়াল। এতে লাভ কি হচ্ছে- নানা হিংস্র ঘটনার মাকড়সার জল আমাদের সুস্থ মাথায় বুনে দিচ্ছে টেলিভিশন। শুধু তাই নয় - এই টেলিভিশন থেকে আমাদের নবীন প্রজন্মের অবক্ষয়ের বীজও বোনার কাজ চলছে। বেশি টি  আর পি পাওয়ার জন্যে তাতে নায়ক নায়িকারা ফ্যাশনের নাম যেসব কুরুচিকর পোশাক পরছে তাই নিয়েই নবীন প্রজন্ম উচ্ছসিত এবং তারাও একেই অনুসরণ করছে। অর্থাৎ - নিজেকে কিসে রুচিশীল লাগবে না ভেবে সেই টেলিভিশনের দেয়া ভাবনায় ভাবছে মানুষ।
        আমাদের ভাবায়  রাজনীতি। কোন মন্ত্রী কি করলেন আর কি করতে পারতেন তাই নিয়ে আমরা উদ্ভ্রান্ত । আমরা কোনো পার্টিকে অনুসরণ করি আর তারপর সে ভালো এবং অন্যরা খারাপ এই বিশ্বাস নিয়েই থাকি। কিন্তু কখনো ভাবি না যে দেশের জন্যে আমাদেরও কিছু করার আছে। অর্থাৎ - আমরা সমালোচনা করি কিন্তু নিজে কাজে নামতে সাহস পাই না।
      আমরা খেলাধুলো নিয়ে ভাবতে ভালবাসি। কিন্তু সেখানেও চলে এসেছে বিনোদন - কিভাবে বেশী রোজগার করা সম্ভব তাই নিয়ে ফাটকা যাতে দেশের নায়করাও যুক্ত। যে আইপিএল নিয়ে আমরা মেতে আছি কয়েক বছর ধরে তার যে প্রায় সবটা চিত্রনাট্যই  ঠান্ডাঘরে লেখা হয় উন্মুক্ত মাঠের চেয়ে তাও আমরা প্রায় সবাই জানি,কিন্তু মেতে থাকি সেসব নিয়েই।  
        অর্থাৎ - সার ছেড়ে অসার নিয়েই আমরা থাকি।আমাদের ভাবনা আমরা ভাবি না,আমাদের ভাবায় অন্য কেউ। আমরা শুধু অন্ধভাবে অনুকরণ করে যাই - যেটা ভালো সেটায়  আলো দেখিনা। কারণ ভালোকে কেউ প্রমোট করেনা। যেতে আমদের সর্বনাশ তথা সমাজের সর্বনাশ তাতেই আমরা আগ্রহী। একবার ভেবে দেখো তো - মানুষ শব্দের অর্থ কি?মান আর হুঁশ মিলে মানুষ। আমাদের মান তো আছে ১৬ আনা কিন্তু হুঁশ আছে কি? যদি থাকে একটু ভেবে দেখো - এভাবে আমরা কোন পতনের দিকে এগিয়ে চলেছি।নিজের ভাবনা নিজে ভাব - বিবেককে সঙ্গী করে ভাব।অন্যের কোথায় মনে ভাবনাকে প্রমোট কোর না। ভেবে দেখো - কোন কাজ করলে একইসাথে তোমার পরিবার,অন্যদের পরিবার এবং তুমি সুখে থাকবে। সেই কাজে হাত দিলেই পাবে শান্তি আর আনন্দ। তাই বলব - রোবট হয় না।নিজের ভাবনা নিজেকে ভাবতে দাও। তবেই তো যথার্থ মানুষের মত জীবনে অগ্রসর হতে পারবে তুমি।
  

Wednesday 1 May 2013

বাইশ - প্যাঁচা হয়ে বাঁচা দায়

                       প্যাঁচা হয়ে বাঁচা দায়

আমাদের সমাজে হুতোমের বড় সংখ্যাধিক্য। অনেকেই মনে করেন - সব জায়গায় গুরুগম্ভীর থাকতে পারার মাঝেই সম্মান। কিন্তু সবিনয়ে বলি - ধারণাটা ভুল। জীবন দুদিনের। প্যাঁচা হয়ে এখানে বাঁচা দায়। আর কেনই বা প্যাঁচা হতে যাবেন?এই জীবনে ভালোভাবে বাঁচার শ্রেষ্ঠ উপায় রসেবশে বাঁচা।ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ কি তাই বলেননি?অতএব মনের মধ্য থেকে যত মেঘ দূর করে দিন। মুখের উপর থেকে গাম্ভীর্যের মুখোশটা খুলে ফেলুন। মনের সুপ্ত অনুভুতিকে অনুভব করার চেষ্টা করুন।প্রকৃতির মাঝে নিজেকে মেলে ধরুন।ঘাসে ভরা মাঠে শুয়ে একবার নীল আকাশটাকে দেখুন। দেখতে পাবেন - প্রকৃতি হাসিতে খুশিতে ঝিলমিল করছে। আর এই সকল রূপের মধ্য দিয়ে ইশ্বর রয়েছেন আনন্দে।এই আনন্দই তো আমাদের স্বরূপ। তবে কেন বহিরঙ্গের কাজের চাপে নিজেকে লুকিয়ে রাখা খোলের ভিতরে?নিজে হাসুন। সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলুন।খুশীতে ভরিয়ে দিন সবাইকে। দেখবেন সবার খুশীতে ভরা মুখগুলিই আপনাকেও ভরিয়ে দেবে আনন্দে।তখনি তো বুঝবেন - বাঁচা কাকে বলে? আধ্যাত্মিক পথেও আনন্দে থাকার প্রয়োজন। যদি একবার মাথায় ঢোকে যে "আমি জ্ঞানী" ব্যাস তবেই গেল।আবার কেঁচে গন্ডুষ করতে হবে। তার চেয়ে রসেবশে থাকবেন ছোট্ট শিশুর মত। সবাইকে ভালবাসবেন আর সবাইকে আনন্দে ভরিয়ে রাখবেন। এভাবে থেকেই মানুষের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন।তখন দেখবেন - যে আনন্দের অনুভুতি আপনার মধ্যে জাগছে তা আর আপনাকে হুতোম হতে দেবেনা। সেই যে প্রকৃত আনন্দ।