ক্রিয়া
ক্রিয়াযোগ বড় গুরুত্বপূর্ণ যোগ। একটি কয়েন রেল লাইনে ফেলে রাখলে তা যেমন চুম্বক হয়ে যায় তেমনি ক্রিয়া করলে মানবদেহ অধ্যাত্মজ্ঞানে আলোকিত হয়ে যায়। এতে চতুর্বর্গ লাভ হয় । এককথায় ক্রিয়ায়োগে সাধন শরীর হয়ে ওঠে ভাগবত শরীর। প্রথম ক্রিয়া মানুষের শরীরের বিভিন্ন gland-কে শক্তপোক্ত করে যা সমাধীলাভে সাহায্য করে । দ্বিতীয় ক্রিয়ায় মনের উপর দখল আসে এবং সাধকের ভিতরে জ্ঞানের আলো জ্বলে ওঠে ।তৃতীয় ক্রিয়া দূর করে দেয় মনের চাঞ্চল্য । চতুর্থ ক্রিয়া liver ও pancreas-কে সুস্থ করে এবং দেহের যৌন শক্তিকে পরিণত করে ভগবত শক্তিকে। অনেকে ভাবে কামকে বা যৌনতাকে নির্মূল করতে হয় । কিন্তু যৌনতাকে নির্মূল করলে সাধনায় অগ্রসর হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় । কারণ যৌন শক্তির মধ্যেই সুপ্তভাবে থাকে আমাদের দেহের আসল শক্তি কুলকুন্ডলিনী শক্তি । যৌনশক্তিকে ক্রিয়ার মাধ্যমে দমন করে তাকে কুলকুন্ডলিনী শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হয় । এরপরও ছয়টি আরো উচ্চ ক্রিয়া আছে। এই যোগের জন্যে চাই নির্দিষ্ট আধার এবং সুস্থ সবল শরীর।আর সেইসাথে গুরুর প্রতি ভক্তি,নিবেদন ও অধ্যবসায়। তাহলেই ক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন - এই ক্রিয়া মূলত কি? এ প্রসঙ্গে দেখা যাক সৃষ্টিপ্রকরণ কি বলছে। ব্রহ্ম চিরনিশ্চল। তার এক শতাংশ চঞ্চল হয়ে ক্রমশঃ বৃদ্ধি পেতে পেতে সৃষ্টি করেছিল এই জগত।ওই এক শতাংশ চাঞ্চল্য পঞ্চতত্বের মধ্য দিয়ে একটি লম্ব তরঙ্গ বিশিষ্ট হয়ে সমস্ত সৃষ্টি রচনা করলো। এভাবেই হলো জীবনের সৃষ্টি। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে -তবে মৃত্যু কি? মৃত্যু হলো - এই চাঞ্চল্যের ক্রমাগত স্থির অবস্থার দিকে ফিরে যাওয়া। প্রাণের তরঙ্গ প্রকৃতির নিয়মে হ্রাস পেতে পেতে যখন এক লক্ষ থেকে ১০ শতাংশ তরঙ্গায়িত হয় তখন জীবের মৃত্যু হয় । সেই সময়ে এই দশ শতাংশ তরঙ্গের সঙ্গে জীবাত্মার ফেলে আসা জন্মের সমস্ত সংস্কার বীজের আকারে থেকে যায় । এই সংস্কার আত্মাকে আবার নতুন জন্মের দিকে আকর্ষণ করে এবং সেই ১০ শতাংশ প্রাণের তরঙ্গ যখন বাড়তে বাড়তে এক লাখে পৌছয় তখন জীবের আবার জন্ম হয় । এই হলো জন্ম মৃত্যুর আসল অবস্থা ।
এই জন্ম মৃত্যুর থেকে মুক্তির জন্যেই ক্রিয়ার দরকার। জীব যদি কোনো প্রকারে সাধনার মধ্য দিয়ে এক লক্ষ থেকে দশ শতাংশ প্রাণের চাঞ্চল্যকে অতিক্রম করে শুন্য শতাংশে পৌছে যায় তাহলেই ঘটে তার ব্রাহ্মীস্থিতি লাভ । সে তখন তার উত্স ব্রহ্মের সাথে মিলে যায় পরমানন্দভরে। তখন আর তাকে ফিরে আসতে হয়না পৃথিবীতে। এই মিলিয়ে দেয়াটা হলো যোগ আর প্রানের চাঞ্চল্যকে কমিয়ে প্রাণকে থামানোর উপায় হলো ক্রিয়া। অর্থাত ক্রিয়া আর যোগের এই পন্থা হলো ক্রিয়াযোগ। এই ক্রিয়াযোগের মাধ্যমেই প্রাণের অনন্ত গতিকে থামিয়ে স্থির ব্রহ্মের সাথে যুক্ত করে দেয়া যায় । সেই লক্ষেই চলে ক্রিয়াযোগীদের সাধনা।