Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Friday 28 June 2013

ক্রিয়া

                                                          ক্রিয়া 
ক্রিয়াযোগ বড়  গুরুত্বপূর্ণ যোগ।  একটি কয়েন রেল লাইনে ফেলে রাখলে তা যেমন চুম্বক হয়ে যায় তেমনি ক্রিয়া করলে মানবদেহ অধ্যাত্মজ্ঞানে আলোকিত হয়ে  যায়। এতে চতুর্বর্গ লাভ হয় । এককথায় ক্রিয়ায়োগে সাধন শরীর হয়ে ওঠে ভাগবত শরীর। প্রথম ক্রিয়া মানুষের শরীরের বিভিন্ন gland-কে শক্তপোক্ত করে যা সমাধীলাভে সাহায্য করে । দ্বিতীয় ক্রিয়ায় মনের উপর দখল আসে এবং সাধকের ভিতরে জ্ঞানের আলো  জ্বলে ওঠে ।তৃতীয় ক্রিয়া দূর করে দেয় মনের চাঞ্চল্য । চতুর্থ ক্রিয়া liver ও pancreas-কে সুস্থ করে এবং দেহের যৌন শক্তিকে পরিণত করে ভগবত শক্তিকে। অনেকে ভাবে কামকে বা যৌনতাকে নির্মূল করতে হয় । কিন্তু যৌনতাকে নির্মূল করলে সাধনায় অগ্রসর হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায় । কারণ যৌন শক্তির মধ্যেই সুপ্তভাবে থাকে আমাদের দেহের আসল শক্তি কুলকুন্ডলিনী শক্তি । যৌনশক্তিকে ক্রিয়ার মাধ্যমে দমন করে তাকে কুলকুন্ডলিনী শক্তিতে রূপান্তরিত করতে হয় । এরপরও ছয়টি আরো উচ্চ ক্রিয়া আছে। এই যোগের জন্যে চাই নির্দিষ্ট আধার এবং সুস্থ সবল শরীর।আর সেইসাথে গুরুর প্রতি ভক্তি,নিবেদন ও অধ্যবসায়। তাহলেই ক্রিয়ায় এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।     
  অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন - এই ক্রিয়া মূলত কি?  এ প্রসঙ্গে দেখা যাক সৃষ্টিপ্রকরণ কি বলছে। ব্রহ্ম চিরনিশ্চল। তার এক শতাংশ  চঞ্চল হয়ে ক্রমশঃ  বৃদ্ধি পেতে পেতে সৃষ্টি করেছিল এই জগত।ওই এক শতাংশ চাঞ্চল্য পঞ্চতত্বের মধ্য দিয়ে একটি লম্ব তরঙ্গ বিশিষ্ট হয়ে সমস্ত সৃষ্টি রচনা করলো। এভাবেই হলো জীবনের সৃষ্টি। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে -তবে মৃত্যু কি? মৃত্যু হলো - এই চাঞ্চল্যের ক্রমাগত স্থির অবস্থার দিকে ফিরে যাওয়া। প্রাণের তরঙ্গ প্রকৃতির নিয়মে হ্রাস পেতে পেতে যখন এক লক্ষ থেকে ১০ শতাংশ  তরঙ্গায়িত হয় তখন জীবের মৃত্যু হয় । সেই সময়ে এই দশ শতাংশ  তরঙ্গের সঙ্গে জীবাত্মার ফেলে আসা জন্মের সমস্ত সংস্কার বীজের আকারে থেকে যায় । এই সংস্কার আত্মাকে  আবার নতুন জন্মের দিকে আকর্ষণ করে এবং সেই ১০ শতাংশ প্রাণের তরঙ্গ যখন বাড়তে বাড়তে এক লাখে পৌছয় তখন জীবের আবার জন্ম হয় । এই হলো জন্ম মৃত্যুর আসল অবস্থা ।
  এই জন্ম মৃত্যুর থেকে মুক্তির জন্যেই ক্রিয়ার দরকার। জীব যদি কোনো প্রকারে সাধনার মধ্য দিয়ে এক লক্ষ থেকে দশ শতাংশ  প্রাণের চাঞ্চল্যকে  অতিক্রম করে শুন্য শতাংশে পৌছে যায় তাহলেই ঘটে তার ব্রাহ্মীস্থিতি লাভ । সে তখন তার উত্স ব্রহ্মের সাথে মিলে যায় পরমানন্দভরে। তখন আর তাকে ফিরে আসতে হয়না পৃথিবীতে। এই মিলিয়ে দেয়াটা হলো যোগ আর প্রানের চাঞ্চল্যকে কমিয়ে প্রাণকে থামানোর উপায়  হলো ক্রিয়া। অর্থাত ক্রিয়া আর যোগের এই পন্থা হলো ক্রিয়াযোগ। এই ক্রিয়াযোগের মাধ্যমেই প্রাণের অনন্ত গতিকে থামিয়ে স্থির ব্রহ্মের সাথে যুক্ত করে দেয়া যায় । সেই লক্ষেই চলে ক্রিয়াযোগীদের সাধনা।
     

Thursday 13 June 2013

দুই - অজপা জপ

                               অজপা জপ 

    অজপা জপ হল  বহু প্রাচীন শাস্ত্রীয় জপের প্রণালী।বাল্মিকি  নারদের কাছ থেকে যে উল্টো নাম পেয়েছিলেন সেও তো ছিল অজপা। আজ সাধনজগতে অজাপার মূল্য অপরিসীম।

     অজপার সবচেয়ে বড় উপহার হলো সমাধির অভিজ্ঞতা লাভ। সাধারণত যোগে সমাধিলাভ হয় কুম্ভকের মাধ্যমে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে। দেহে যখন আপনা থেকেই নিরন্তর কুম্ভক হয়ে  যায় তখনি আসে  সমাধি। কিন্তু অজপাতে কুম্ভাকে না গিয়েই সমাধি লাভ করা যায়।অজপা হলো শ্বাসে প্রশ্বাসে জপ।যে মন্ত্র তুমি নিলে তা শ্বাস নেয়ার সময় জপ করবে আর ছাড়ার সময়ে জপ করবে।সেটাই হলো অজপা।এতে মন্ত্রের হিসাব রাখার দরকার নেই।শুধু মনেপ্রাণে মন্ত্রের সাথে একাত্ম্য হয়ে জপ করে যাওয়া। কথিত আছে - আমাদের জীবাত্মা অনাহত চক্রে উপবিষ্ট হয়ে নিরন্তর নাম করে চলেছে  অজপায়।সে নাম আমাদের ভিতরে চলছে নিরন্তর।সাধনার মাধ্যমে বহিরঙ্গের নামকে সেই নামের সাথে একাত্ম্য করে তলার জন্যে অজাপার সৃষ্টি।একে একইসাথে হংস জপ ও  সোহং  জপ বলা হয়। শ্বাস নেয়ার সময়ের জপ হলো হংস   জপ আর শ্বাসত্যাগের সময়ের জপ হল সোহং। নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে সেই জপকেই  বলা হয়  বা অজপা।
     এই অজপার একটি সহজ প্রণালী আছে - যারা জপ করতে চাও তারা প্রথমে কিছুক্ষণ কোনো বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাক একদৃষ্টে - সেটি ইষ্টদেবের মুর্তী হলে সবচেয়ে ভালো। যখন খালি চোখে সেই বস্তুর উপর মনোসংযোগ হয়ে যাবে তখন চোখ বন্ধ করে তাকে ধ্যান কর আর অজপা জপ শুরু কর।এতে ফল পাবে দ্রুত।
     এই প্রসঙ্গে যোগের আরেকটি কথা বলি - আমাদের দিনে ইড়া নাড়ি আর বয়ে পিঙ্গলা নাড়ি। পিঙ্গলা নাড়ি নির্দেশ করে আমাদের দেহের শারীরিক শক্তি ও ইড়া নারী নির্দেশ করে মানসিক শক্তি।এই দুই নাড়িতে আলাদাভাবে যতক্ষণ শ্বাস প্রবাহিত হয় ততক্ষণ সমাধি হয়না। যখন প্রানায়ামের মাধ্যমে দুই নাকের শ্বাস হয়ে  যাবে সমান তখনি জাগ্রত হবে সুষুম্না নাড়ি আর তখনি ধ্যান হয় যথার্থ। অজপা জপ সেই সুষুম্না নাড়ির জাগরণকে তরান্বিত করে। অজপা জপে প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়।একটি গভীর শ্বাস,একটু relax ,তারপর আবার শ্বাস ছাড়া আর সেইসাথে মন্ত্রজপ। এভাবে মিনিটে আমরা ১৫ বার শ্বাস নেই,দিনে ২১,৬০০ বার।অজপা ঠিকমত করা গেলে বিনা চেষ্টায় দিনে ২১,৬০০ বার জপ হয় যায়। সোহং  জপ করলে মন্ত্রের অর্থ আর কল্পনা করতে হয়না।তবে অনেকে নিজের বীজমন্ত্র এই জায়গায় জপ করতে পারো ।মনকে ভ্রুমধ্যে নিয়ে বা হৃদয়ের অনাহত চক্রতে নিয়ে জপ করতে

Thursday 6 June 2013

বই সম্পর্কে - এক .. "মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা"

         বই সম্পর্কে ...."মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা"

                                         ।। এক।। 

     অবশেষে আগামীকাল প্রকাশলাভ  করছে  আমার ১৭তম বই - "মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা"। আগামীকাল বিকেল নাগাদ বইটি binder এর থেকে নিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই পৌছে দেয়া হবে মহেশ লাইব্রেরীতে। তারপর সেখান থেকে অন্যান্য দোকানে যাবে বই।
      "মহাপ্রভুর নীলাচলে আজো চলে লীলা" আমার কাছে একটি স্বপ্নের মত।সহসাই আমি আমার বন্ধু সুজয়ের থেকে পাই পুরী পরিক্রমার আমন্ত্রণ ২০১২ সালে আর তারপর বেরিয়ে পড়ি পথে। পুরী যাওয়ার আগেভুবনেশ্বর,কোনারক,উদয়গিরি,খন্ডগিরি,ধবলগিরি যেমন দর্শন করেছি তেমনি পরিক্রমা শেষে দর্শন করেছি নীলমাধব যেখান থেকে জগন্নাথের লীলার উত্পত্তি। সেইসাথে পায়ে হেঁটে তিনদিন ধরে পরিক্রমা করেছি সম্পূর্ণ পুরিধাম ও সেখানকার সকল মুখ্য মন্দির। সব মন্দিরে দাঁড়িয়ে সেখানকার মাহাত্ম্য কীর্তনের সৌভাগ্য হয়েছে আমার।এই সফরে আমার আরেকটি খোঁজ ছিল শ্রী চৈতন্যদেবের অন্তর্ধান সম্পর্কে।তার সম্বন্ধেও পেয়েছি যথাযথ ব্যাখ্যা। এই সফরে আমি সাথে পেয়েছিলাম মিশ্রজীর মত এক প্রবীন ভক্তকে। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার আলোয় জানিয়েছেন যে জগন্নাথদেব  আজো  যেমন পুরিধামে নিত্যলীলা করেন,তেমনি মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেবও নিত্য লীলা ও কীর্তন করেন আজ সুক্ষ্ম দেহে তাঁর পার্ষদদের নিয়ে। সেই লীলা কোনো কোনো ভাগ্যবান শুধু দেখতে পান। মিশ্রজী তাঁদেরই অন্যতম।
এহেন লীলার খোঁজ পেয়ে আমি তো মন্ত্রমুগ্ধ।শুধু তাই নয়,জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিটি মন্দিরের মাহাত্ম্য,লীলাকথা সব তুলে ধরেছি এই বইটিতে যাতে পাঠক পাঠিকারা বইটি হাতে নিয়ে সম্পূর্ণ পুরীকে জানতে পারেন - ইতিহাস,ভূগোল,পুরাণ এবং দৈবী মহিমার দিক দিয়ে। আজ পর্যন্ত প্রায় সবাই তো পুরীতে গেছি কিন্তু পুরীর যতটুকু 
আমরা জানি তার চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশী আমাদের অজানাই রয়ে গেছে।সেই অজানাকে আমার সব পাঠক পাঠিকাদের কাছে তুলে ধরার জন্যেই আমার এই প্রয়াস। সেইসাথে রয়েছে শ্রী চৈতন্যদেবের অন্তর্ধান সম্পর্কে সকল গবেষকদের মোট সাজিয়ে বিশ্লেষণ যদিও মিশ্রজীর মুখে যে অন্তর্ধান সম্বন্ধে শুনেছি সেটিই আমার মতে মনে হয়েছে সর্বশেষ হিসেবে।
      বহুদিন ধরেই পুরী নিয়ে লেখার ইচ্ছে ছিল আমার।আমার বিশেষ বন্ধুরা অনেকেই সে বিষয়ে আগেই বলেছিলেন।কিন্তু সময় সুযোগ হচ্ছিলনা বলে বিলম্ব হলো।তবে ঠাকুর যা লেখানোর লিখিয়ে নিয়েছেন। আমার করণীয় শেষ। এবার পাঠক পাঠিকাদের ভালো লাগলেই সার্থক হবে আমার প্রয়াস। আগামীকাল আসছে সেই বহু প্রতিক্ষিত দিন।

Wednesday 5 June 2013

তিন - হাসি তবু হাসি নয় - জন্মদিন

                     জন্মদিন 
       আজকে আমার ৪১ পূর্ণ হলো।পা রাখলাম ৪২এ। সকাল থেকেই ফোনে ,ই - মেলে,ফেসবুকে অনেক বন্ধুরা,ভক্তরা,শিষ্য শিষ্যারা আমাকে জানাচ্ছেন জন্মদিনের শুভেচ্ছা। ছোটবেলায় জন্মদিন এলেই মনটা খুশীতে ভরে যেত। মূলতঃ সেইসময়ে বন্ধুদের আগমন আর বড়দের উপহারের জন্যেই ভালো লাগত জন্মদিন। ধীরে ধীরে বন্ধুবান্ধবরা জীবনের দিকে দিকে ছড়িয়ে যেতে লাগলো আর আমিও বন্ধ  করে দিলাম জন্মদিনের উত্সব। এই দিনটা আমি মূলতঃ বিগত কয়েক  বছর ধরে একলাই কাটাই। তবে যারা আমাকে ভালবাসেন ঠিক শুভেচ্ছা জানান ফোনে বা এসে। কিন্তু ফেসবুক হওয়ার পর থেকে আবার বন্ধুদের ফিরে পাওয়া গেল।সেইসাথে আত্মার আত্মীয় ভক্ত মানুষরাও আসতে শুরু করলেন।তাই আমি জন্মদিন না করলেও শুরু হয়ে গেল জন্মদিন।এদিন সবার শুভেচ্ছা পেয়ে আমিও অভিভূত।সবার এই ভালোবাসাই যে আমার জীবনের অন্যতম সেরা প্রাপ্তি।
     তবে ইদানিং জন্মদিনটা আমার কাছে পেয়েছে অন্য মাত্রা।এদিনটা এলেই আমার   মাথায় আসে একটি equation  - অনেকটা ক্রিকেটের মত -
    OVERS OF LIFE GONE -41
    OVERS OF LIFE REMAINING - UNKNOWN
    REQUIRED RUN - TO REALISE THE SELF AND TO BE ONE WITH    PARMATMA.
  প্রতি জন্মদিন এলেই মনে হয়ে - বেলা তো বয়ে যাচ্ছে। এ জীবনে পেলাম অনেক,দিলামও অনেক। কিন্তু পথের তো শেষ নেই - সিদ্ধি,মহাসিধ্ধি,অতিসিদ্ধি। তাই চলতে হবে আরো অনেক,পেতে হবে আরো অনেক,বিলোতেও হবে আরো অনেক। এভাবেই যে চলতে হয় জীবন থেকে মহাজীবনের পথে। এ পথে যেটুকু পাওয়ার জন্যে চেষ্টা করব তা যেন হয় ভগবত প্রাপ্তির প্রচেষ্টা। পার্থিব কিছু পাওয়ার জন্যে যেন চেয়ে সময় নষ্ট না করি।যা আজ আছে, কাল থাকবেনা। তাই চেয়ে কেন সময় নষ্ট করব? হাতে সময় তো বেশী নেই।যা আছে তা ব্যবহার করতে হবে ভগবৎ প্রাপ্তির জন্যেই। প্রতিটি জন্মদিন যেন আমাকে সেই বার্তাই দিয়ে যায় - পথিক,এগিয়ে চল।বেলা যে গেল। শেষ খেয়ায় ওঠার সময় এগিয়ে আসছে।তাই এবার সেরে নাও কাজের পালা।

    
  

Tuesday 4 June 2013

।। হাসি তবু হাসি নয় ।। দুই - বন্ধু-র পথ বড় বন্ধুর

                              হাসি তবু হাসি নয়। 

                    দুই - বন্ধু-র পথ বড় বন্ধুর 

  জীবন হলো একটি কর্মক্ষেত্র। এটিকে তুমি যেমন বানাবে এটি তেমনিভাবেই ধরা দেবে তোমার কাছে। জীবনকে ভালোভাবে গড়তে  পারলে  তার কৃতিত্ব তোমার। সেটির বারোটা বাজালে তার দায়ও তোমার। আর এই কাজে তোমার পাশে বড় ভুমিকা নেবে তোমার বন্ধুরা। 
      জীবন তোমায় অনেক বন্ধু দেবে।অনেক বন্ধু ছিনিয়েও নেবে। আসবে অনেকে,থাকবে কিন্তু সামান্য কয়জন। এই বন্ধুরা আত্মীয়দের মধ্যে থেকে আসতে পারে,আসতে পারে স্কুল,কলেজের সুত্র ধরে কিংবা কর্মক্ষেত্রের সহকর্মী হয়ে। কিন্তু তারা সত্যিকারের বন্ধু কিনা তা বোঝার অবসর ঠাকুরই দেবেন তোমায়।যখন দুঃখ আসবে তখনি চিনবে কে সঠিক বন্ধু। সুখের সময়ে বন্ধু সবাই।সেইসময়ে বোঝা যাবে তুমি কেমন বন্ধুবত্সল। আর দুঃখের সময় এলে বোঝা যাবে তোমার বন্ধুরা কতটা বন্ধুবত্সল। যারা হারাবার তারা তখনি হারাবে।আর যারা সেইসময়েও থাকবে তোমার পাশে বুঝবে তারাই যথার্থ বন্ধু। সেইসময়ের বন্ধুদের খুব ভালোভাবে ধরে রাখতে হয়।কারণ সেই হলো যথার্থ জন্ম- জন্মান্তরের সম্পর্ক। তারা একবার হারিয়ে যাওয়া মানে বিরাট ক্ষতি।তাই দুঃখের সময়ের বন্ধুদের আঁকড়ে থাকবে আর যারা শুধু সুখের পায়রা তাদের সাথে দুরত্ব বজায় রেখে থাকাই  ভালো। 
      ব্যক্তিগতভাবে আমি বলতে পারি - আমার বন্ধুর সংখ্যা খুব কম। কারণ সমভাবাপন্ন ছাড়া আমি মিশতে পারিনা। আর যাদের সাথে একবার মিশে যাই তাদের ছাড়তে পারিনা। স্কুলে আমি খুবই একঘরে জাতীয় ছিলাম সবার সাথে মিশতে পারতাম না বলে। আস্তে আস্তে অবশ্য মিশুকে হয়ে উঠি তবে তেলে  জলে ধাচের ছিলাম। মিশতাম উপর উপর। এইসময়ে বন্ধুও পেয়েছি কিছু ,আবার হারিয়েওছি। তবে আধ্যাত্মিক জীবনে আসার পরই পেলাম কিছু এমন বন্ধু যাদের সাথে নিজের আমিকে ভাগ করে নেয়া যায়। এই সাধনপথে যাদের সাহচর্য আমাকে খুব সাহায্য করে। এদের মধ্যে আমার আধ্যাত্মিক অধিবেসন গ্রুপের বন্ধুদের কথা বলতেই হয় যাদের প্রেরণা আমাকে বিরাট সাহায্য করে এগিয়ে যেতে। আসলে আমি বরাবরই মন দেখে বন্ধু বেছেছি।তাই বন্ধুসুত্রে কখনো ঝামেলায় পড়তে হয়নি আমায়।

Sunday 2 June 2013

হাসি তবু হাসি নয় - এক

                    হাসি তবু হাসি নয় 

                     ।।এক।।
 একটি মেয়ের আমার সাথে সম্বন্ধ এসেছিল ২০০৩-২০০৪ নাগাদ। নামটি ইচ্ছে করেই বলছিনা।কারণ মেয়েটি খুব ভালো। তার সাথে ছকে যে আমার মেলেনি এমন নয়। কিন্তু সেই মেয়েটির বাবার সাথে যার সুত্রে আমাদের আলাপ হয় সেই প্রতুলদার জন্যেই আমি রাজি হতে পারিনি। আমার " জীবন থেকে মহাজীবনের পথে" যাঁরা পড়ছেন তাঁরা অচিরেই জানতে পারবেন যে আশালতা সাধুখা নামের একজনের সাথে তিনি যুক্ত ছিলেন এবং আমাদের প্রতি অজস্র তান্ত্রিকক্রিয়া তিনি করেছিলেন। এমনকি ২০০৪ সালে প্রতুলদা নতুন করে আসতে শুরু করার পর একদিন আমাদের বুকশেলফে একটি দাঁত পোয়া যায়। সেটি দেখেই বাবা বলেন এটা তান্ত্রিক ক্রিয়ার ব্যাপার।তারপর আমি ওটা আগুনে ফেলে দিয়ে একটু পুড়িয়ে বাইরে ফেলে দি।সেদিনই প্রতুলদার ছেলের মোবাইল চুরি যায় এবং কিসব আরো ঝামেলা ঘটে।যেহেতু প্রতুলদার source  থেকে মেয়েটি এসেছিল তাই আমি মেয়েটি ভালো জেনেও বিয়ে করতে রাজি হইনি কারণ হয়ত পরে ওর  অজান্তেই ওকে দিয়ে তেমন কিছু তিনি করাতে পারতেন। 
     মনে আছে - যখন আমার সম্বন্ধ আসে তখন  একদিন মেয়েটির আরেক পরিচিত মল্লিকদা বলছিলেন সে নাকি আমার দেবলোকের অমৃতসন্ধানে পড়ে আমার উপর খুব সন্দেহপ্রবণ হয়ে পড়েছিল।মল্লিকদার কাছে বলেছিল অনেক ভেবে - ওর সাথে বিয়ে হওয়ার পর ঝিলিক আর মৈত্রেয়ী আমাকে যদি না ছাড়ে তবে ওর কি হবে? ওর  বাড়ি থেকেও খুব ইচ্ছে ছিল আমার সাথে বিয়ে দেয়ার। কিন্তু প্রতুলদার জন্যে যেহেতু তাতে আমি রাজি হইনি তাই মেয়েটি এরপর আমার উপর খুব রেগে যায়। ওর রাগটাও স্বাভাবিক। কারণ প্রতুলদার কারণ ওকে বলা যায়নি। তবে যেটা অস্বাভাবিক সেটা হলো - ওই না করাটা সে এখনো ভুলতে পারেনি।তারপর থেকে যখনই ওর  ভালো কিছু হয়েছে তখনি ওর বরকে নিয়ে,ওর  ছেলেদের নিয়ে কোনো অনুষ্ঠানে একবার করে এসেছে  আমাদের আশ্রমে এবং বারবার আমাকে দেখিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে যে ও বেশ ভালো আছে। ওর মনস্তত্ব বুঝি আমি। তাই কখনো কোনো কিছু বলিনা। 
      কালকের অধিবেশনেও পরে বাবার কাছে শুনলাম ও এসেছিল।এমনিতে আমি কাল  বক্তৃতা দেয়ার সময়ে অবশ্য খেয়াল করিনি কিন্তু যে বিষয়ে বক্তৃতা দিছিলাম তাতে যম,নিয়ম প্রসঙ্গে বলছিলাম। সেখানেই কথাপ্রসঙ্গে বলেছিলাম - আমরা যে যা পেয়েছি তা নিয়েই খুশি থাকা ভালো।কে কি পেল,কে কি পেলনা এ নিয়ে মনকে ভাবানো  ভুল। কারণ এসেছি সামান্য কিছুদিনের জন্যে,চলেও যাব কিছুদিন পরে।তাই রাগ বা ঈর্ষা বা প্রতিহিংসা মনে রেখে কেন নিজেদের মনকে কষ্ট দেব। এটা কিন্তু কথাপ্রসঙ্গেই বলেছিলাম।
      রাতে ঘরে আসার পর বাবা যখন বলছিলেন যে ও এসেছিল তখন মা বললেন যে ও নাকি মাকে বলেছে যে আজকের অনুষ্ঠানে সবার বক্তৃতা আর গান নাকি খুব ভালো হয়েছে। শুনে ওর মন নাকি ভরে গেছে। যদিও আমি ওকে দেখিনি তবু আমার বক্তব্য  বুঝে ও যাতে শান্তি পায় সেটাই কামনা করি। কারণ আমরা কেউ যখনি কারোর উপর রেগে থাকি তখন অন্য প্রকারে আমরা নিজেদেরই আঘাত দিয়ে থাকি। আর ও সত্যি খুব ভালো মেয়ে।তাই ৯ বছর পর অন্তত ওর এই trauma থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত। সেই কামনাই করি।
    (অনেকদিন ব্লগ লেখা হচ্ছিল না বলে আজকে আমার ছোট বোন  তানিয়া একটু আগেই অনুরোধ করলো নতুন ব্লগের জন্যে। বোনের অনুরোধ তো ফেলা যায়না।অতএব লিখে ফেললাম একটি অশ্রু রাঙানো মজার অভিজ্ঞতা )