Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Tuesday 30 April 2013

​ একুশ ​- আজ আছি কাল নেই

                      আজ আছি কাল নেই

আমাদের জীবনের মূল সত্য - আজ আছি কাল নেই। তবু কাল-কের কথা ভেবেই আমরা ছুটি,আজ-কে ভুলে যাই। এর ফলেই আসে যত অশান্তি।​ ফলে জীবনের আনন্দ আমরা উপভোগ করতে পারিনা।আমরা যে আগামীকালকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি।তাই যে কাল আসবে কি আসবেনা তার ঠিক নেই তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আজকের মুহুর্তগুলো বেরিয়ে যায় আমাদের হাত থেকে। কিন্তু জীবনের আসল  তো এই আজকের মুহুর্তটুকু।এর মধ্যে আমরা জীবনের কেমন রূপ দেখতে পারলাম,তাকে কেমনভাবে ভালো কাজে লাগাতে পারলাম - তার মধ্যে। জীবনকে বাঁচতে হয় প্রতিটি মুহুর্তে - প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগানোর মধ্যেই জীবনের সার্থকতা। প্রতিটি মুহুর্তে যত নাম বা যত জপ আমরা করতে পারব সেটিই হলো জীবন থেকে আমাদের আসল সঞ্চয়।তাই কালকের কথা না ভেবে জীবনকে প্রতিটি মুহুর্তে ভাবুন আর তার মাঝেই  বাঁচার মত বাঁচার চেষ্টা করুন।তাতেই জীবনের পাবে সার্থকতার দিশা।

Monday 29 April 2013

কুড়ি - গুরু যদি বদগুরু হয়,শিষ্যের কি দশা হয়?

   গুরু যদি বদগুরু  হয়,শিষ্যের কি দশা হয়?

                 - তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় 
   অনেকেই আমার কাছে প্রশ্ন করেন," গুরু যদি সদগুরু না হন তবে শিষ্যের কি দশা হয়?
    উত্তরে আমি বলি," শিষ্যের দশা যে এতে খুব ভালো হয় এমন নয়। কারণ সিদ্ধ বীজমন্ত্র না পেলে সিদ্ধি হয়না। আর সিদ্ধ বীজমন্ত্র সবাই দিতে পারেন না।"
    অনেকে হয়ত বলবেন, "আজকাল তো বীজমন্ত্র ইন্টারনেট খুঁজলেও পাওয়া যায়। তবে গুরুর প্রয়োজন কি?"
    উত্তরে বলতে হবে," দীক্ষার সময়ে সিদ্ধ বীজমন্ত্রটিকে গুরু আপন সাধনশক্তি দিয়ে সক্রিয় করে দেন আর তারপরই সেই মন্ত্র শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যায় সামনের দিকে।"
    অনেকে হয়ত এও বলবেন,"গুরু যে সত্যই বীজমন্ত্রকে সক্রিয় করে দিয়েছেন আপন সাধনশক্তি দিয়ে তার প্রমাণ কি?"
    আমি বলব,"প্রমাণ তথা একমাত্র সাক্ষী হচ্ছে শিষ্য। সে যত জপের গভীরে ঢুকবে তত সে নানা দিব্য অনুভুতি লাভ করবে এবং পরিশেষে পাবে ইষ্টের দর্শন।তবে দর্শন তো অনেক পরের কথা। কিন্তু ঠিকভাবে জপ করলে যে আনন্দময় অনুভুতি জাগে মনে সেটিই হলো গুরুর মন্ত্রকে সক্রিয় করে দেয়ার প্রমাণ।"
   এবার আবার ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে। গুরু যদি বদগুরু হয় তবে শিষ্যের কি দশা হয়।সেটি যে খুব ভালো হয়না তত বলাই বাহুল্য। তবে খুব ক্ষতিও হয়না। শিষ্যের সিদ্ধিলাভ অবশ্যই এই মন্ত্রে হয়না।তবে প্রারব্ধ ক্ষয় হয় আর সেই প্রারব্ধক্ষয় তাকে এগিয়েই নিয়ে যায়। যথাসময়ে প্রারব্ধ শেষ হলে সে পায় তার জন্যে নির্দিষ্ট সদগুরুর দেখা। কারণ সে যে গুরুর উপর বিশ্বাস করে ইষ্টের মন্ত্র বা নাম জপ করেছে আর বিশ্বাসের মূল্য তো ঠাকুর ঠিকই দেন।
   এই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি - একবার এক শিষ্য আর এক গুরু হিমালয়ের এক পর্বত থেকে আরেক পর্বতে যাবে। নীচে দুর্দান্ত বেগে বইছে খরস্রোতা নদী। মাঝে দড়ির সেতু। শিষ্য জয়গুরু বলে এগিয়ে গেল এবং নির্বিঘ্নে পেরিয়ে গেল সেতু। কিন্তু গুরু দড়ির সেতুর সামনে এসে ভাবল - কি জানি যদি পড়ে যাই।অর্থাত কিনা তার বিশ্বাস আসেনি যদিও মন্ত্র দিয়ে শিষ্য করেছে সে। এর ফল হলো - যেই গুরু সেতুতে পা রাখল সেতু ছিড়ে পড়ল নদীতে। সেইসাথে গুরুর ঘটল পঞ্চত্বপ্রাপ্তি। কিন্তু শিষ্য সেই গুরুর উপর বিশ্বাস রেখেই তরিয়ে গেল। এর থেকেই তো বোঝা যায় যে বিশ্বাসই হলো আসল বস্তু। যার বিশ্বাস তারই লাভ। এই বিশ্বাসের মূল্য সবসময়েই মেলে। তাই বদগুরু পেলেও বিমর্ষ হবার কারণ নেই।তার মন্ত্র সিদ্ধি দিতে না পারলেও প্রারব্ধভোগ কাটাতে সাহায্য ঠিকই করে। অর্থাৎ  অজান্তে ভুলের জন্যে আধ্যাত্মিক জগত সাজা দেয়না।এই জগত মানুষকে শুধু দু হাত ভরে দেয়। আমাদের শুধু কুড়িয়ে নেয়ার অপেক্ষা।

Sunday 28 April 2013

উনিশ - প্রাণায়াম

                            প্রাণায়াম                 

    পাশ্চাত্যে বলা হয় - মন আর দেহ প্রত্যক্ষভাবে একে অপরের সাথে যুক্ত। মন খারাপ হলে তার প্রভাব পড়ে দেহে আর দেহ খারাপ হলে তার প্রভাব পড়ে মনে। পাশ্চাত্যে এই মন বলতে বোঝানো হয় নিম্নস্তরের মন বা LOWER MIND,অর্থাৎ যা চিন্তা,আবেগ এবং কল্পনার স্তরে পড়ে।

    কিন্তু ভারতবর্ষে বলা হয় - দেহ মনের সাথে পরোক্ষভাবে যুক্ত। প্রাণের সেতু বেঁধে রাখে মন আর দেহকে। দেহকে যদি শান্ত ধীরস্থিরভাবে বসানো যায় তবে প্রাণও তার সাথে সামঞ্জস্য রাখতে পারবে। আর প্রাণ সেই জায়গায় এলে মনকেও ধীরে ধীরে সেই শান্ত অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব। আর তাই যৌগিক উপায়ে প্রাণায়ামের উদ্ভব।

    এই প্রাণ কিন্তু শ্বাস নয়। শ্বাস হলো দেহের ক্রিয়াকর্মকে সচল রাখার মুখ্য শক্তি। এই শক্তির মাধ্যমেই গতিশীল হয় মন।তাই এই শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই মনকেও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।তাই প্রথমে প্রাণকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় আর এই প্রাণ শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় প্রাণায়ামের মাধ্যমে। তাহলে আপনা থেকেই মনের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।

    আমাদের উদ্দেশ্য থাকে শরীরের ভিতর থেকে তমগুণ আর রজগুণকে বের করে দিয়ে তার মধ্যে সত্বগুণের প্রকাশ ঘটানো।প্রাণায়াম আমাদের সেদিকেই এগিয়ে নিয়ে যায়। ফলে দেহের ভিতরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন অনাবিল হয়ে ওঠে তেমনি মন হয়ে ওঠে বিশুদ্ধ। আমাদের মন জাগতিক জগতের প্রভাবে আচ্ছন্ন থাকার ফলে যে সত্বগুণকে ভিতরে প্রবেশ করতে দেনা এবং নিজেকে উত্তরোত্তর অসুস্থ করে তোলে তার থেকে আমাদের একমাত্র বাঁচাতে পারে প্রাণায়াম। এই প্রাণায়ামের মাধ্যমে প্রাণ প্রথমে মনকে স্থির করে দেয়,তারপর মনকে বিশুদ্ধ করে তোলে শ্বাসপ্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। ধীরে ধীরে মনের মধ্যে যে তমগুণ ও রজগুণ আগে সত্বগুণকে ভিতরে প্রবেশ করতে দিত না তার শক্তি নাশ হয়ে যায় এবং মন হয়ে ওঠে সাত্ত্বিক। একমাত্র এই অবস্থাতেই সাধনপথে এগোনো সম্ভব হয়।

    অতীতে আমাদের আশ্রমের আধ্যাত্মিক অধিবেশনে আমি এই প্রাণায়াম অনেক করিয়েছি।তাও ভক্ত মানুষদের জন্যে,যারা সেই অধিবেশনে যোগ দিতে পারেননি,তাদের জন্যে সেই প্রাণায়ামের ভিডিও আবার দিলাম।এই প্রাণায়াম নিয়মিত করে জপতপে বসলে অবশ্যই সফল হবেন।

Saturday 27 April 2013

আঠেরো - সম্পর্কের আসা-যাওয়া

                  সম্পর্কের আসা-যাওয়া 

                   তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় 

 আমরা কিছুই নিয়ে আসিনি উপর থেকে,কিছুই নিয়ে যাবনা।যা এখান থেকে নিয়েছি তা সব এখানেই রেখে যাব।আমাদের সঙ্গী শুধু থাকবে আমাদের কর্ম। তবু আমরা জড়িয়ে যাই নানা সম্পর্কের জালে। আর কোনো সম্পর্ক কেটে গেলেই উদ্ভ্রান্ত হয়ে পড়ি। বিশেষতঃ তা যদি প্রেমের সম্পর্ক হয় তবে তো কথাই নেই। কেউ কেউ তো আবার আত্মহত্যাও করে কোনো ছেলেকে বা মেয়েকে জীবনে না পেলে। আমাদের সমাজে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন।
   কিন্তু আমি সেইসব ছেলেমেয়েদের বলব - একজনকে পেলেনা বলে কেন জীবন শেষ করে দেয়ার কথা ভাববে?জীবন তো তোমার অনেক বিশাল।তার যথোপযুক্ত ব্যবহার কর।জীবন শেষ করে দেয়া মানে তো জীবন থেকে পালিয়ে যাওয়া । সেটা করে কেন বহুমূল্যে পাওয়া এই জীবন নষ্ট করবে?যাকে চেয়েছ তাকেই যে পেতে হবে এমন তো কোনো মানে নেই।তোমার উপরে নীল আকাশের আসনে যিনি বসে আছেন তিনি তোমার সব খবর রাখছেন আর তোমার জন্যে যেটা সবচেয়ে ভালো হবে তার ব্যবস্থাও তিনি করবেন।তাঁর উপর ভরসা রাখো আর জীবনপথে এগিয়ে যাও।
  জানবে - প্রতিটি সম্পর্ক চলে আগের জন্মের ঋণানুবন্ধ অনুযায়ী।যার থেকে যতটুকু তোমার পাওয়ার ততটুকুই পাবে। তারপর সে হারিয়ে যাবে তোমার জীবন থেকে। কাউকে নিজের ইচ্ছায় তুমি কখনোই ধরে রাখতে পারবেনা।ঋণ ফুরোলেই সব ভোকাট্টা।তাই আজকে যাকে ছাড়া তোমার চলবেনা ভাবছ কালকে দেখবে সে তোমার চিন্তাতেও স্থান পাবেনা।এই মায়ার জগতের এটাই নিয়ম।কিন্তু  কালকের জন্যে অপেক্ষা তো করতে হবে তোমায়।নাহলে সেই দিনটা দেখবে কিভাবে?
   কিন্তু তাই বলে নিজে থেকে কোনো সম্পর্ক নষ্ট করবেনা কারণ ভালবাসার সম্পর্ক মেলে বহু ভাগ্যের ফলে।অতএব সকল সম্পর্কের জন্যেই তোমার কর্তব্য করবে কিন্তু কোনো সম্পর্কের মায়াতেই জড়াবেনা। তাহলে দেখবে এই সম্পর্কের ঢেউ-এর আসা যাওয়া তোমাকে ভাবাতেও পারবেনা। তাই সব ছেড়ে দাও ঠাকুরের উপর।যাকে তিনি আনবেন তাকে বরণ করে নাও আর যাকে তিনি ছিনিয়ে নেবেন তোমার কাছ থেকে তাকে সানন্দে বিদায় দাও। জোর করে সম্পর্ক টিঁকিয়ে রাখা যায়না আর সেটা না টিঁকলেই যে সব গেল এমন ভাবনাকেও মনে স্থান দিওনা।অবিদ্যা মায়ার এটাই খেলা।আজ আসবে,কাল যাবে।কিন্তু তা নিয়ে কখনো ভাববেনা।ইশ্বর যাই দেবেন তা বরণ করে নেবে হাসিমুখে - তবেই দেখবে দুঃখ পর্যন্ত সুখ হয়ে উঠবে আনন্দসাগর উঠলে।

Friday 26 April 2013

সতেরো - নিয়তি

                       নিয়তি 

আজকে নিয়তির একটি অদ্ভুত খেলা দেখলাম।প্রতিদিনই আমার সকালের পূজা সারতে দেরী হয়ে যায় এবং কোনমতে t - twenty স্টাইলে নাকে মুখে গুঁজে বেরিয়ে পড়ি। নেতাজী সুইটসের সামনে থেকেই ধরি ট্যাক্সি আর তারপর সেটি আমাদের আশ্রম ফ্ল্যাটের সামনে দিয়ে নিয়ে যাই যেহেতু বাবা আমার ট্যাক্সি বাড়ির সামনে দিয়ে না যাওয়া অবধি দাঁড়িয়েই থাকেন ব্যালকনিতে। ওখান দিয়ে ট্যাক্সিতে করে আমি হাত নাড়তে নাড়তে যাই এবং বাবাও ব্যালকনি থেকে হাত নেড়ে তবেই ঘরে ঢোকেন।আজকেও বেরিয়ে ট্যাক্সি ধরলাম। আমাদের বাড়ির রাস্তাটা যেখানে  ডানদিকে গিয়ে মিশেছে কোয়ার্টারগুলোর  মধ্যকার গলিতে সেখান থেকেই পেলাম ট্যাক্সি। আমি যথারীতি ট্যাক্সিওয়ালাকে বললাম আমাদের বাড়ির রাস্তা দিয়ে ঘুরিয়ে নিতে কিন্তু সে একরকম জোর করেই সাউথ সিটির দিকের বড় রাস্তাটায় ঘুরিয়ে নিল।ওতে তার ট্যাক্সির ভাড়া বাড়বে সেই লক্ষ্যে।অতএব ট্যাক্সি থেকেই আমি বাড়িতে ফোন করে দিলাম যাতে বাবা ঘরে চলে যান। এদিকে ট্যাক্সিওয়ালা যেই সাউথ সিটির দিকে টার্ন নিল অমনি ধরল পুলিশ।ট্যাক্সিওয়ালা তখন আমায় অনুরোধ করলো ওর হয়ে বলতে যে ও সিগন্যাল ভাঙ্গেনি।আমিও বেচারাকে সাহায্য করতে সেটাই বললাম।শুনে পুলিশ বলল,"ও signal ভেঙ্গেছে।সিগনাল যখন সবুজ হয়েছে ও গাড়ি ছাড়েনি কিন্তু যেই লাল দেয়া হলো তখন গাড়ি ছাড়ল।" তারপর নিজে থেকেই বলল,"আপনার তো দেরী হয়ে যাচ্ছে।তাই সামনের ট্যাক্সি ধরে আপনি চলে যান।"বলে পুলিশ নিজেই আমায় সামনের ট্যাক্সি ধরে দিল আর তারপর আগের ট্যাক্সিওয়ালাকে নিয়ে পড়ল।
   পুরো ঘটনাটা প্রত্যক্ষ করলাম আমি।দেখলাম নিয়তির খেলা। ট্যাক্সিওয়ালাকে আমি বলেছিলাম বারবার আমার বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে নিতে। সেখানে সিগনালের সমস্যা ছিলনা।তাই কিছুই হতনা ওর।কিন্তু ওর যে আজ প্রারব্ধ ভোগ ছিল। তাই ঠিক "পিপীলিকার পাখা ওঠে মরিবার তরে" স্টাইল-এ  ও গিয়ে পড়ল ওর বাঘের সামনে।একেই বলে নিয়তি। নিয়তি যে কোথায় কাকে কখনো কাটবে বলা খুব মুশকিল।

Thursday 25 April 2013

ষোলো - গুরু

                                     গুরু  গুরু শব্দের অর্থ কি? গুরু শব্দ ভাগ করলে দেখা যাবে - 'গু' আর 'রু'। এর
এর মধ্যে 'গু' শব্দের অর্থ - অজ্ঞানের অন্ধকার যার মধ্যে জীবজগত নিমজ্জমান। আর 'রু 'শব্দের অর্থ হলো জ্ঞানের আলো যা আমাদের অজ্ঞানের জগত থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় জ্ঞানের আলোর জগতে। অর্থাৎ - গুরু হলেন সেই ব্যক্তিত্ব  যিনি আমাদের ভিতরকার অজ্ঞানের অন্ধকার নাশ করে মন্ত্রের সাহায্যে আমাদের মধ্যে শক্তিসঞ্চার  করে এগিয়ে দেন মহাজীবনের পথে। জীবনমৃত্যুর বন্ধন থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে গুরু বিনা গতি নেই।
   জীবনের যেকোনো দিকে এগোতে হলেই প্রয়োজন হয় একজন পথপ্রদর্শক বা গাইড যিনি সেই পথ সম্বন্ধে বিশদভাবে জানেন। যেমন শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষক তেমনই আধ্যাত্মিক শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরু। যেমন অন্ধের রাজ্যে যে দেখতে পায় সেই হয় রাজা তেমনই আধ্যাত্মিক পথেও যে ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে  নিজের অভিজ্ঞতা,সাধনশক্তি,মন্ত্রশক্তি ও নিজের ভালবাসা দিয়ে সবাইকে পথের দিশা দেখাতে পারে সেই হলো যথার্থ গুরু।
   আজকালকার দিনে বেশিরভাগই দেখা যায় গুরুতে গুরুতে রেষারেষি - সেই অনুযায়ী শিষ্যরাও 'আমার গুরুই শ্রেষ্ঠ' এমন একটা ভাব নিয়ে ঝগড়া চালিয়ে যায়।কিন্তু ঘটনা হলো - গুরু কিন্তু আদতে কোনো ব্যক্তি নয় ; গুরু হলেন মহাদেবের শক্তি। সেই শিবশক্তি প্রতিটি মানুষের মধ্যে থেকে তাকে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু মুশকিল হলো - ভিতরের সেই গুরু থাকেন সুপ্ত অবস্থায়। তাঁকে জাগাতে  হয়। আর সেজন্যেই প্রয়োজন হয় মানব দেহধারী একজন গুরুকে।সেই গুরু হলেন অনেকটা চাঁদের মত যিনি সাধনার মাধ্যমে  নিজে পৌঁছতে পেরেছেন সেই আলোকিত স্তরে যেখানে ইষ্টকৃপা তাঁর মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে শিষ্যকে আলোকিত  করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে আলোর পথে। তাই শিষ্যের উত্তরণ গুরুর মাধ্যমে হলেও সেটি কিন্তু তিনি ঘটান না ; তাঁর শিষ্যের প্রতি ভালবাসা,স্নেহ ও কৃপা  এবং শিষ্যের অধ্যবসায় ও গুরুভক্তি দেখে ইষ্ট কৃপা করেন। এমনকি অনেকসময়ে গুরুর রূপ ধরেই ইষ্ট শিষ্যের কল্যাণ করেন - এমন অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে। তাই সকল গুরুর শক্তিই সেই এক - মহাদেবের শক্তি। মহাদেবই আসল গুরু - বাকিরা সবাই তাঁর প্রতিনিধি। তবে ইষ্টের প্রতিনিধি বলেই শিষ্যের কাছে ইষ্টের সমতুল্য হলেন গুরু।
   এখন প্রশ্ন উঠতে পারে - গুরু হবার qualification কি?যে কেউ কি গুরু হতে পারেন? না। গুরু তাঁরাই হতে পারেন যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সাধনা করেছেন,ইষ্টের কৃপা পেয়েছেন এবং যাঁদের  মধ্যে আমিত্ব নাশ হয়েছে। গুরুর কোনো ধর্ম বা সংকীর্ণতায় নিজেকে আবদ্ধ রাখা ঠিক নয়। যার মধ্যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান রয়েছে তাকেই কৃপা করা উচিত। শিষ্য ভক্তদের প্রতি তাঁর প্রেম ও ভালবাসা হওয়া উচিত নিস্বার্থ। তাঁর হওয়া  উচিত অনন্ত প্রেম,অনন্ত জ্ঞান আর অনন্ত আনন্দের সঙ্গম।
   আজকের দুনিয়ায় গুরু আছেন দুরকম - সদগুরু (যাঁরা সংখ্যায় কম) এবং বদ্গুরু(যাঁরা সংখ্যায় বেশী); এর মধ্যে সদ্গুরুদের কথা তো বললাম। এবার আসি বদ্গুরুদের কথায় - কিভাবে তাদের চিনবে -
১) বদ্গুরুরা সবসময়ে দেখান যে শিষ্যরা inferior এবং একমাত্র তাঁর মহত্বের কৃপাতেই শিষ্যদের উন্নতি সম্ভব। অর্থাৎ এদের মধ্যে আমিত্বের ভাব প্রবল থাকে।
২) এদের মধ্যে সম্পদ ও নারীদের প্রতি দৈহিক আকর্ষণ থাকে বেশী।
৩) এরা যশখ্যাতির কাঙ্গাল হয় এবং সবকিছুতেই নিজের ক্রেডিট নিতে চায়।
৪)এরা কখনো নিজেকে উজাড় করে শিষ্যকে শেখায় না।এদের ভয় থাকে -সব শিখিয়ে দিলে তার গুরুত্ব কমে যেতে পারে।
  তাই গুরু না হওয়া পর্যন্ত 'গুরু-গুরু' করে ছটফট করা ঠিক নয়।এতে বদ্গুরুদের  কাছে গিয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সময় হলে গুরু আপনিই আসেন জীবনে বা শিষ্য গিয়ে পরে তাঁর কাছে।আর তখন শিষ্যর মনে যেমন ধরা দেয় ভাব যে ইনিই আমার গুরু তেমনি গুরুর শিষ্যকে দেখেই চিনতে পারেন। তখনই হয় যথার্থ দীক্ষা।সেই সময় না আসা পর্যন্ত প্রতিটি মানুষের ধৈর্য ধরে নিজের পছন্দমত দেবদেবীর নাম জপ করে যেতে হয় যাতে তার ভিতরে দীক্ষালাভের গুণগুলো জেগে ওঠে। একমাত্র তবেই তো জীবনে আসেন গুরু এবং তারপর তাঁর কথা মেনে চললে সার্থক হয় জীবন।
   

Wednesday 24 April 2013

পনেরো - কে আমি ?

                                কে আমি ? যদি তোমাদের প্রশ্ন করা হয় - কে তুমি ? কি হবে তার উত্তর ?
        আমরা সাধারণতঃ এক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক পরিচয়টাই বলি - যেটা সমাজ দ্বারা স্বীকৃত। এককথায়,এখানে আমি বলতে বোঝানো হচ্ছে আমাদের সামাজিক পরিচয়। আর সেটা দিয়েই সমাজে বসবাসের যাবতীয় কাজ আমাদের করতে হয়। অর্থাৎ জন্মের পর বাবা মা যে নাম দিয়েছেন আমায়, সেটা সমাজ কর্তৃক রেজিস্টার্ড হবার পর সেটাই হলো আমার পরিচয়। ব্যাঙ্ক-এ যখন টাকা রাখলাম তখন আমার সই হলো আমার পরিচয়।সেটা মিললে আমি টাকা তুলতে পারব বা অন্যকে দিতে পারব,নাহলে নয়। অর্থাৎ সমাজ আমাদের যে পরিচয়ের উপর শীলমোহর মেরে দিয়েছে সেটাই আমি। কিন্তু ভেবে দেখো তো - এই পরিচয় কতদূর পর্যন্ত সত্যি? এখানে আমার ইচ্ছায় কি কিছু চলে?চলে না। সমাজের ইচ্ছায় আমি চলি। আমি স্বেচ্ছায় ততটুকুই করতে পারি যেটা সমাজ আমাকে অনুমতি দেবে। এত গেল সমাজের কথা। আমার নিজের দেহের উপরই কি আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে?আমার যদি শরীর খারাপ হয় আর আমি যদি বলি - এই শরীর ঠিক হয়ে যা।তা কি হয়?হয়না।সেটা ঠিক করতে হলে চাই ডাক্তারের সাহায্য। আমার আয়ু যদি শেষ হয়ে যায় এবং আমি যদি আরো বাঁচতে চাই,সেটা কি হবে?হবে না।কারণ দেহের সময় ফুরালেই দেহ যাবে স্মশানে। তবে আমি কি?বাবা মায়ের দেয়া দেহ আর সমাজের দেয়া পরিচয় নিয়ে এত গর্ব করি,এই দেহের সুখের জন্যে এত খাটাখাটনি করি,অর্থ রোজগার ও সঞ্চয়ের জন্যে এত আমাদের ভাবনা। তার নীটফল কি?একটি বিরাট শুন্য। তাহলে কি সমাজের দেয়া এই পরিচয়টাই আমি যার অস্তিত্ব দুদিনের? এই সামাজিক "আমি" কি তবে প্রকৃত আমি? না। এই পরিচয়টা শুধু সমাজের জন্যেই প্রয়োজন। এখানে বাস করার জন্যে।এটিকেই বলে ইগো।আর প্রায় সব মানুষ এই ইগোকেই "আমি" ভেবে নিয়ে জীবনভর ভুল কাজ করে যায়। কিন্তু আসল কথা হলো - এই সামাজিক আমি শুধু একটা বহিরঙ্গের জামা ছাড়া কিছু নয়। আমরা নিজের বদলে এই জামাটিকে নিয়েই মেতে থাকি আর তারই ফলে আমাদের আসল কাজ বারবার বাকি থেকে যায়।ফলে ফিরেও আসতে হয় বারবার।
        তাহলে আমার পরিচয় কি? সাধু মহাত্মাদের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলেন "আমি আনন্দস্বরূপ" বা "আমি আলোর পথের পথিক।" একই কথা আমাদের ক্ষেত্রেও খাটে। সেই আলোর পথে অগ্রসর হবার জন্যেই আমাদের পৃথিবীতে আসা। কিন্তু সেই পথে চলার জন্যে তো একটা জামা পরে নিতে হয় - রক্তমাংসের জামা,সেটিই হলো এই শরীর। আর সেটাকে মাধ্যম করেই আমাদের সাধনায় অগ্রসর হতে হয়।আমাদের সামাজিক পরিচয় দুদিনের।আজ লোকে মাথায় করে রাখছে বা পায়ে ঠেলে দিচ্ছে  কিন্তু কাল তাদের আমার কথা মনেও পড়বে না। এই পরিচয় যে দেহটিকে কেন্দ্র করে সেটিও চিরদিন থাকবেনা।তবে কেন শুধু এটি নিয়েই মেতে থাকব?কেন যে কাজের জন্যে এসেছি সেটায় সময় দেবনা? আমাদের মূল কাজ তো ইশ্বরত্ব অর্জন নিজের কর্মের মধ্য দিয়ে ইশ্বরের লীলা উপভোগ করতে করতে। সেই কাজটিকে একপাশে সরিয়ে রেখে কেন এই ইগোকে ভালোবেসেই কাটিয়ে দেব জীবন?আমাদের যে সময় বড় কম। বেলা যে বয়ে যায়। তবে কেন নিজের আসল পরিচয় ভুলে নিজের আসল কাজকে অবহেলা করে সামাজিক পরিচয়্তুকুকে সার করেই দিনগুলি কাটিয়ে দেব? 
        


Tuesday 23 April 2013

চোদ্দ - পরনিন্দা পরচর্চা

                           পরনিন্দা পরচর্চা

মানুষকে সম্মান দেয়ার চেয়ে বড় গুণ হয়না।ছেলেবেলায় আমি নামাবতার শ্রী শ্রী সীতারামদাস ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের দর্শন করেছিলাম। তিনি এতই মাটির মানুষ ছিলেন যে যে ব্যক্তিই তাঁর সামনে আসত  তাকেই তিনি প্রণাম করতেন। আসলে তিনি সকল জীবের ভিতরে বসে থাকা ইশ্বরকে সম্মান দিতেন। (কোনো কোনো মানুষ অবশ্য সে সময়ে সেই অবস্থার ছবি তুলে নিজের publicityতে কাজে লাগিয়েছেন বলে শোনা যায়) 
         অথচ আজকাল আধ্যাত্মিক জগতের মধ্যেই রয়েছে একের অপরকে ছোট প্রমাণ করার একটা প্রচেষ্টা। মানুষ যে জগতের কাছে ছুটে আসছে শান্তির জন্যে সেই জগতের মানুষরাই অন্য গুরু বা সাধকের নামে কাদা ছেটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে ফল হয় অন্য - তাদের প্রতি জনমানসে যে শ্রদ্ধার জায়গা তৈরী হয়েছে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। 
         আমার কাছেও অনেক মানুষ এসে অন্য গুরুর বা অন্য আধ্যাত্মিক লেখকের নামে অনেক কিছু বলার চেষ্টা করেছেন কিন্তু আমি বলতে দেইনি।কথা শুরু করতে না করতেই থামিয়ে দিয়েছি। কারণ পরনিন্দা পরচর্চা আধ্যাত্মিক জগতের মানুষদের শোভা পায়না।
       সেদিন শুনছিলাম একজন আধ্যাত্মিক লেখক আমার বই সম্বন্ধে নানা বাজে কথা বলেছেন তাঁর এক ভক্তের কাছে শুনে ভাবলাম - যাক নির্ঘাৎ আগের জন্মে আমি ওনার কোনো উপকার করেছিলাম তাই এ জন্মে উনি আমার ধোপার কাজ করছেন মিথ্যে সমালোচনার মাধ্যমে আমার প্রারব্ধ টেনে নিয়ে। তাই ওনাকে দূর থেকেই নমষ্কার জানিয়ে প্রার্থনা করেছি -উনি যেন আরো অনেকদিন বেঁচে থাকেন এবং আরো অনেকদিন ধরে আমার ভুলভাল সমালোচনা করেন যাতে আমার প্রারব্ধক্ষয় আরো দ্রুত হয়। তবে আমি ওনার পাপ নিতে রাজি নই। তাই ভুলেও ওনার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করবনা। 
     আমি জীবনের উষাবেলায় ওঙ্কারনাথ ঠাকুরের কাছে যা শিখেছি সেটাই অনুসরণ করব জীবনভর। সম্মান সবাইকেই দেব - সে যে আমায় যতই কলসীর কানা মারুক। কারণ ঠাকুর সব দেখছেন - দিনের শেষে বিচার তো তিনিই করবেন।

Monday 22 April 2013

তেরো ​​- নিবৃত্তির পথেই শান্তি


              নিবৃত্তির পথেই শান্তি 

   মানুষ প্রবৃত্তির দাস।প্রবৃত্তি তাকে যেভাবে চালিত করে,সে সেভাবেই এগোয়। কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ দেখিয়েছেন প্রবৃত্তির মধ্যে থেকেও নিবৃত্তিতে পৌঁছনো যায়।অর্থাৎ সংসারে থেকেও অনাসক্তিকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে হৃদয়ে। আমরা ভাবি আসক্তি হলো শক্তি আর অনাসক্তি হলো দুর্বলতা। কিন্তু ভাবনাটা ভুল।আমাদের দুর্বলতা হলো আসক্তি আর তার জন্যেই আমাদের যত কষ্ট। আমার কাছে যে ভক্তরা আসেন অধিকাংশই জাগতিক জীবনে আঘাত পেয়ে আসেন। অর্থাৎ সেই আসক্তির দ্বারা আহত।একে জয় করার একমাত্র উপায় নিবৃত্তি। তার মানে কি সংসার থেকে পালিয়ে গিয়ে হিমালয়ের গুহায় বসে থাকা?তা নয়।সংসারে থেকেও নিবৃত্তিসাধন সম্ভব।শ্রীকৃষ্ণ তো ঘোরতর সংসারী ছিলেন বহিরঙ্গের দিক থেকে কিন্তু অন্তরঙ্গে তিনি ছিলেন মহাযোগী - ১৬,০০০ স্ত্রী নিয়েও তিনি ছিলেন নিস্পৃহ। সংসারে থেকেও সংসারের উর্ধ্বে ছিলেন তিনি। অনাসক্তি ছিল তার শক্তি।একই কথা শ্যামাচরণ লাহিড়ির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অর্থাৎ -আমরা এই জাগতিক জীবনের মাঝেই থাকব।ঠাকুর আমাদের যে কাজ দিয়েছেন তাই করব কিন্তু কোন আসক্তিতে জড়াবো না।সব কর্তব্য করব কিন্তু নিস্পৃহভাবে ফলের আশা না করে। তবেই তো আসবে যথার্থ শান্তি। তাই সংসারে প্রবৃত্তি আমাদের বাঁধতে চাইলেও তার মধ্য দিয়েই আমদের যেতে হবে নিবৃত্তিতে।তবেই আসবে শান্তি। তখনি মানুষ পৌঁছবে ইশ্বরের স্তরে।
    অনেকে হয়ত বলবেন -আজকাল তো দিকে দিকে সাধুরা ভগবান হয়ে বসছেন।এরা কি সবাই পৌঁছতে পেরেছেন ইশ্বরের জায়গায়?আমি বলব -না,সবাই পারেননি ঠিকই।তবে সবাই পারেননি বলে সবাইই যে ব্যর্থ এমনও ভেবে নেয়ার কারণ নেই। শুধু যিনি যথার্থ তাকে চিনে নিতে হবে।
   তাঁকে চেনার চিহ্নও আছে - যিনি ইশ্বরের জায়গায় বা উচ্চকোটিতে পৌঁছতে পেরেছেন তার মধ্যে থাকবে তিনটি চিহ্ন - অনন্ত জ্ঞান,অনন্ত প্রেমরস আর অনন্ত আনন্দ। অর্থাৎ - ১)আধ্যাত্মিক বিষয়ে থাকবে তার বিরাট জ্ঞান যা মানুষকে সাহায্য করবে তার প্রশ্নের উত্তর পেতে।২) তার মধ্যে থাকবে মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে ভালবাসার শক্তি যা তাদের সকল দুঃখ আর না পাওয়ার যন্ত্রণা ভুলিয়ে ইশ্বরমুখী করে তুলবে। ৩)আর সবচেয়ে বড় কথা,তিনি হবেন পরম আনন্দময় - তাঁর সাথে কথা বললে বা তাঁর কথা শুনলে মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হবে আনন্দ।
   যে মানুষের কাছে গেলে এই তিনটির আস্বাদ মিলবে বুঝতে হবে তিনিই ইশ্বরের কাছে যেতে পেরেছেন বা ইশ্বরকোটিতে উঠতে পেরেছেন। তখন তাঁকেই ধরে থাকতে হয়।এঁরাই হন ঠাকুরের ভাষায় সেই গাদাবোট যারা বাকি সব বোটদের টেনে নিয়ে যান উত্তরণের পথে।

Sunday 21 April 2013

বারো - জপ

                                     জপ 

আমাদের জীবনে জপের কোনো বিকল্প নেই। সাধনপথে এগোতে হলে জপের প্রয়োজন অনঃস্বীকার্য। এই জপ হয় তিন প্রকারের - উচ্চস্বরে জপ,উপাংশু জপ ও মানস জপ। 
এর মধ্যে প্রথমটি হলো জপের মধ্যে সবচেয়ে নীচের স্তর। বীজমন্ত্র জপের ক্ষেত্রে এটা চলে না।শুধু নামজপে চলতে পারে। একদম প্রাথমিক স্তরের নামজপের ক্ষেত্রে এই উচ্চৈস্বরে জপ করতে দেয়া হয়। অর্থাৎ এটি হল একদম শুরুর স্তর।
দ্বিতীয় জপ অর্থাৎ উপাংশু জপ হল যেখানে জিভ ও ঠোঁট নড়বে মন্ত্র উচ্চারণের সাথে সাথে কিন্তু আওয়াজ হবেনা,অর্থাত নীরবে জপ চলবে মনে মনে। যারা প্রথম বীজমন্ত্র পেয়েছে তাদের এই উপাংশু জপের কথা বলা হয়।এতে বীজমন্ত্র শব্দের সাথে উচ্চারণ হয়না কিন্তু মনে মনে এবং জিভের মাধ্যমে চলতে থাকে। আসলে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জপ করতে হয় একটা সংখ্যা মেনে যেমন ১০৮,১০০৮ বা ১০,০০৮। সেইসেইএইএকটা নির্দিষ্ট সংখ্যা ধরে জপ করার প্রয়োজন হয় শুরুর দিকে।তাই সে সময়ে উপাংশু জপ আদর্শ।এতে মন স্থির হয়ে যায় একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জপ করার জন্যে।
তবে শ্রেষ্ঠ জপ হলো মানস জপ যাকে বলে অজপা।শ্বাস প্রশ্বাসে এই জপ করতে হয়।শ্বাসের সাথে একবার,প্রশ্বাসের সাথে একবার। তাতেই হয়।যতক্ষণ ইচ্ছা কর না গুণে,মালা না জপে মনে মনে এই জপ করে যাব যায়।উপাংশু জপে যখন জপের সময়টা সম্বন্ধে মস্তিস্ক অভ্যস্ত হয়ে যায়,তখনই এই জপে আসা ভালো।এই জপে কোনো কর গোণার বা মালা জপার বা সংখ্যা গোণার প্রয়োজন থাকেনা।শুধু মনপ্রাণ দিয়ে জপ করে গেলেই হল।সব সাধাক্রাই বলেন - এটিই হলো উত্তম জপ।
নিত্য এই জপের মধ্যে থাকলে মানবের উত্তরণ হবেই।তবে জপের সময়ে "আমায় ওই কাজটা করতে হবে","ও আমাকে এরকম কেন বলল বা আমাকেও এর বদলা নিতে ওই বলতে হবে " এসব চিন্তা কোনো মনে রাখা চলবেনা।এসব চিন্তা মনে শুরুর দিকে আসবে ঠিকই। তবে সেইসময়ে ধ্যান করে এটা কমাতে হবে। মনটা তখন শুধু রাখতে হবে শ্বাস নেয়া ও শ্বাস ছাড়ার দিকে।তাতেই ধীরে ধীরে মনের চিন্তার উপর নিয়ন্ত্রণ আসবে আর তখনি শুরু করতে হবে জপ।মনকে আজ্ঞাচক্রে স্থির করে জপ করে যেতে হয়।এতেই পাওয়া যায় জপের যথাযথ ফল। তোমাদের সবার জপ এভাবে সার্থক হোক এই কামনাই করি।

Saturday 20 April 2013

এগারো - আজকের যুগের শিক্ষা কি আদৌ শিক্ষা ?

               আজকের যুগের শিক্ষা কি আদৌ শিক্ষা ?

সময় যাচ্ছে।যুগ পাল্টাচ্ছে আর তার সাথে তাল রেখে মানুষের মধ্যে বাড়ছে অশিক্ষা ও কুশিক্ষার প্রকোপ। মানুষ এখন আধুনিক হতে চায়। তাই স্বদেশের সংস্কৃতি ভুলে বিদেশের অন্ধ অনুকরণ করে। স্বদেশের ঠাকুর ভুলে বিদেশের কুকুর পূজা করে। বাঙালীর ছেলেমেয়েরা আজকাল বাবাকে daddy ডাকে,মাকে mummy,ইংলিশ ভাষায় গড়গড়িয়ে কথা বলে কিন্তু বাংলা বলতে বললে কাঁধ ঝাকিয়ে বলে "You know ,I dont understand Bengali " আর সেটাতেই তাদের সামাজিক prestige। এরা দেশী পোশাককে ঘৃণা করে,কারণ এসব সাধারণ old fashioned পোষাক বিদেশী পপস্টার দ্বারা অনুমোদিত নয়।এদের পড়াশোনা,কথাবার্তা,চালচলন সব তথাকথিত hi -fi,চাকরি করে বড় বড়,বাবা মা-রাও খুশী- ছেলেমেয়ে জীবনে দাঁড়িয়ে গেছে। তবে এই খুশি অবশ্য বেশীদিন থাকেনা কারণ তারপর সেই বাবা মায়ের যখন বয়স হয়,তখন এই দাঁড়িয়ে যাওয়া ছেলেমেয়েরাই ঠিক পুরনো জামা ফেলে দেয়ার মত বাবা মাকে ছেড়ে দিয়ে আসে বৃদ্ধাশ্রমে। বর্তমান যুগের শিক্ষিত সম্প্রদায় বলতে এদেরই আমরা বুঝি।

কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো - এরা কি আদৌ শিক্ষিত? যাদের মনে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নেই,বাবা মায়ের প্রতি ভক্তি নেই,মনুষ্যত্বের প্রতি সম্মান নেই,অর্থবান ছাড়া কারোর উপরে ভালবাসা নেই,দেশীয় পোশাকের প্রতি অবজ্ঞা ছাড়া কিছু নেই-এই তথাকথিত সম্প্রদায় কি আদৌ শিক্ষিত?
আমার তো মনে হয় - এদের থেকে সেই সহজ সরল কুলী মজুররাও বেশী শিক্ষিত - যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রোজগার করে,যারা অর্থের অভাবে পড়াশোনা করে উঠতে পারেনি কিন্তু মনুষ্যত্বের শিক্ষায় শিক্ষিত,যারা বাবা মাকে দেবতার মত মানে - নাইবা থাকলো তাদের ডিগ্রী,কিন্তু আমার মতে তারা অনেক উঁচুদরের মানুষ।
যে শিক্ষা মানুষের মনকে উন্নত না করতে পারে,সেই শিক্ষা আদৌ শিক্ষা নয় -কুশিক্ষার নামান্তর। শিক্ষা তখনি শিক্ষা হয় যদি তা মানুষের মনের উত্তরণ ঘটায়। নাহলে শিক্ষার সুত্রে পাওয়া ডিগ্রীগুলো সব নিছক কাগজ ছাড়া কিছু নয়।

Friday 19 April 2013

দশ - প্রেমের আদর্শ পাত্র বা পাত্রী

       প্রেমের আদর্শ পাত্র বা পাত্রী

গতকাল প্রেম সম্বন্ধে লেখার পর আমার কাছে অনেক বার্তা এসেছে  - প্রেমের আদর্শ পাত্র বা পাত্রী কে হতে পারে তা নিয়ে লেখার জন্যে।আমি বলব - প্রেমের সত্যিকারের পাত্র বা পাত্রী করা উচিত আপন ইষ্টকে যদি তাঁকে মধুরভাবে সাধনা করতে চান। যেমন মীরাবাঈ তাঁর গিরীধর নাগরকে প্রেমিকরূপে ভজনা করেছিলেন।সেই তো যথার্থ প্রেম - জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার প্রেম।
তবে সবার পক্ষে সেই ভাব নিয়ে ভালবাসা সম্ভব নয়। কারণ দেহভাবের উর্দ্ধে উঠতে না পারলে এভাবে ইষ্টকে প্রেমিক রূপে ভজনা করা যায়না। তাহলে সাধারণ মানুষদের জন্যে প্রেমের পক্ষে আদর্শ কারা হতে পারেন?আমার মনে হয় - যারা সৎ ,যারা ইশ্বরকে ভালবাসেন কিছু না চেয়ে শুধু ভালবাসারই জন্যে,যাদের অপরের কাছে কোনো দাবী নেই এবং যারা প্রেমিক/প্রেমিকার রূপ বা আর্থিক সঙ্গতির কথা মাথায় না রেখে নিস্বার্থভাবে ভালবাসেন তারাই প্রেমের পদবাচ্য। 
তবে ভাববেন না যে মানুষকে ভালবাসা মানে যথার্থ ভালবাসা হলো না। মানুষের মধ্যেই তো ইশ্বরের বাস। তাই মানুষকে যথার্থ ভালবাসতে পারলেও প্রকারান্তরে ইশ্বরকেই ভালবাসা হয়।শুধু ভালবাসার বদলে কিছু চাইবেননা।তাহলে ভালবাসায় হয়ে যাবে পূজা আর পূজা কখনো ব্যর্থ হয়না জীবনে।

Thursday 18 April 2013

নয় - প্রেম


                                              প্রেম 
কবি বলেছেন - "প্রেমের ফাঁদ পাতা ভুবনে।" আমাদের চারপাশে সাধারণতঃ তিন প্রকারের প্রেম দেখা যায় - অধম প্রেম,মধ্যম প্রেম এবং উত্তম প্রেম।
অধম প্রেমটিকে ঠিক প্রেম বলা যায়না - এটিকে আমার মতে shame বলা উচিত। এটি  হলো একরকমের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি। তবে এটিই  অধিকাংশ মানুষের মধ্যে দেখা যায় এবং এটিকে প্রেম বলেই অভিহিত করা হয় বলে একে অধম প্রেম বললাম। এখানে মানুষ দিতে নয়,চায় শুধু পেতে। মানে অধম প্রেমিক/প্রেমিকা সবসময়ে দেহী-দেহী করে।ভালবাসার বদলে শুধু অন্যের থেকে কিছু হাতিয়ে নিতে চায় আর যদি সেই সম্পর্ক কেটে যায় তবে বেরিয়ে যাবার আগে প্রেমিক/প্রেমিকার থেকে যতটা পারে শুষে নিয়ে যায়।
মধ্যম প্রেম হলো - দুজনের মধ্যে একটা চুক্তির মত - শান্তিচুক্তি; তুমিও ভালো থাক,আমিও ভালো থাকি - এমন একটা ভাব।সেইসাথে আমি তোমায় এটা দিচ্ছি ,তুমি আমায় ওটা দাও এরকম একটা মানসিকতা থাকে। অর্থাৎ কেউ কারোর ক্ষতি না করে একে অপরের সাথে তাল মিলিয়ে adjust করে চলা।আধুনিক সমাজে এই প্রেমেরও চল আছে ভালই। অধিকাংশ ভদ্র স্বামী স্ত্রীর মধ্যে এমন প্রেমটাই দেখা যায়। এখানে দুজনে দুজনকে দিয়ে এবং দুজনের থেকে নিয়ে খুশী থাকে। এটিকে সাধারণভাবে ভদ্র প্রেম বলা যায়।
কিন্তু উত্তম প্রেম মেলে কোটিতে গোটিক। অর্থাৎ নিজেকে উজাড় করে অপরকে ভালবাসা। সেখানে প্রেমিক/প্রেমিকা কিছু চায়না। এমনকি প্রেমিক/প্রেমিকাকে না পেলেও তারা দুঃখিত হয়না কারণ প্রেমিক/প্রেমিকার সুখেই তারা সুখী হয়। শুধু ভালোবেসেই তারা সুখী; প্রেমিক/প্রেমিকার সুখেই তাদের সুখ।একে  পাশ্চাত্যে twin soul-ও বলে থাকে। এখানে প্রেমিক/প্রেমিকার নিজের বলে কিছু থাকেনা।সে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে সমর্পণ করে দেয় প্রেমিক/প্রেমিকার কাছে। যেমন ভক্ত নিজেকে সঁপে দেয় ইষ্টের কাছে। এরকম প্রেমের উদাহরণ হিসেবে শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধার কথা বলা যায়।ভালোবেসেই তাঁরা সার্থক। অপরের কাছ থেকে কি পাওয়া গেল কি গেলনা তা নিয়ে তাঁরা ভাবেননি কখনো। তাইতো তাঁদের প্রেম চিরন্তন।
 তাই প্রেম যদি করতেই হয় তবে উত্তম প্রেমকেই বেছে নেয়া ভালো।সেই প্রেমেই আছে যথার্থ সুখ। সেখানে "বিরহ মধুর হয় আনন্দসাগর উথলে।" যেখানে পাওয়ার আশা নেই,নেই প্রত্যাশা সেখানেই তো সার্থক প্রেম। সেই প্রেম হলো "নিকষিত হেম।"তা জন্ম জন্মান্তর ধরে বারবার প্রেমিক ও প্রেমিকাকে নানা রূপে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে শুধু প্রেমের সুরভি উপভোগের জন্যে। তোমরা বলবে - শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীরাধা তো দ্বাপরে এসেছিলেন,তাঁরা আর ফিরে এলেন কোথায়?আমি বলব -তাঁরা ফিরে ফিরে আসেন পৃথিবীতে আজো,আজো তাঁরা নিত্যলীলা করেন এই পৃথিবীতে আর যেখানে দেখেন এই উত্তম প্রেমের পাত্র পাত্রীদের তাদেরও তাঁরা কৃপা করেন কারণ উত্তম প্রেম যে মানুষকে নিয়ে যায় দেবত্বের পথে। আর উত্তম প্রেমের মাঝেই যে আছে শ্রীরাধা-শ্রীকৃষ্ণের নিবাস।সেই তো ভাবজগতের গোলোক।

Wednesday 17 April 2013

আট - সমালোচক

                        সমালোচক

         দিলীপকুমার রায় বলতেন - মানুষ যখন দেখে যে অপরের পিঠ চাপড়াতে না পারলে নিজের কপাল চাপড়াতে হবে তখনই তারা সমালোচক হয়। নগন্যরা সবসময়েই চেষ্টা করে বরেণ্যদের ছোট করে দেখাতে। নিজে সে যা পারেনা তা অন্য কেউ পারছে এটা  তার সহ্য হয়না। যে দেশে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শুনতে হয়েছে "ঠাকুরবাড়ির রবি,সেও নাকি রে কবি" সে দেশে যুগে যুগে সাধু মনিষীদের যে হীন প্রমাণিত করার চেষ্টা হবে,সেটাই তো স্বাভাবিক।
      এ দেশটা হলো কাঁকড়ার মত ।একজন উপরে উঠতে চাইলে বাকিরা তাকে টেনে নামাতে চায়। আজো সেই প্রচেষ্টা চলছে।  বর্তমানে দেখছি সমালোচনার নতুন চ্যানেল বেরিয়েছে। ইদানিং আক্রমনের লক্ষ্য হয়েছেন সাধু মনিষীরা। তাঁদের অপরাধ - তাঁদের জীবনে অলৌকিক ঘটে কিন্তু  যুক্তিবাদী সমালোচকের জীবনে ঘটে না কেন? এক্ষেত্রেও আমি সবিনয়ে সমালোচকদের  বলব - ক্লাস ওয়ান-এ পড়া শিশু যদি চায় এম.এ পাশের আনন্দ এখনি অনুভব করব তা কি হয়?আগে সাধনা করুন,জপ করুন,নিজেকে সেই সাধু মনিষীদের জায়গায় নিয়ে আসুন যেখানে এলে কৃপা অনুভব করা যায় তারপর এসব রায় দেবেন। সমালোচনা করা সহজ,কঠিন সাধনা করা।সেটি না করে এমন বিশেষ অজ্ঞ হওয়াসত্বেও  বিশেষজ্ঞ সাজবেন না।

Tuesday 16 April 2013

সাত - একা তবে একাও নয়

                 একা তবে একাও নয়
এই পৃথিবীতে প্রতিটি মানুষই ভীষনভাবে একা এবং একইসাথে আবার একাও নয়। মানুষ  জন্মসুত্রে একা,এসেছে একা,যাবে একা,থাকার সময়টুকু শুধু অন্যের সাথে সুখী হবার চেষ্টা। এই পৃথিবীতে শুধু গুরু আর বাবা মা ছাড়া কেউ তার আপন নয়। বন্ধু বান্ধবী,সঙ্গী,সঙ্গিনী,স্বামী স্ত্রী সব ঋণ-অনুবন্ধের সম্পর্ক। যতই ভালোবাসো, ঋণ মিটলেই ভোকাট্টা।তাই পৃথিবীর কারো কাছ থেকে একাকিত্ব দূর হবার নয়।একাকিত্ব শুধু  যাবে মনের মানুষের সন্ধান পেলে - যিনি অন্তরতম তাকে নিজের মধ্যে জাগিয়ে তুললেই যথার্থ অর্থে একাকিত্বের হাত থেকে মুক্তি মিলবে আর সেজন্যে জপ ধ্যান সাধনা একান্ত প্রয়োজন।নামজপ হোক বা মন্ত্রজপ তার মধ্যে ডুবে যাওয়া দরকার গুরু নির্দেশিত পথে। এ জীবন শুধু  দুদিনের খেলাঘর।চিরন্তনের আপনঘরে ফেরার জন্যে শেষ পারানির কড়ি সংগ্রহের ভবের হাট। তাই যেটুকু অবসর মিলছে তার মধ্যেই করে নিতে হবে সাধনার কাজ ,নাহলে দিনের শেষে গাইতে হবে"আমার সাধ না মিটিল,আশা না পূরিল ,সকলই ফুরায়ে যায় মা"..   

ছয় - ভক্তি রাখুন ভালো কথা কিন্তু অন্য ভক্তদের অসুবিধা করে নয়

 ভক্তি রাখুন ভালো কথা কিন্তু অন্য ভক্তদের অসুবিধা করে নয়

ভক্তিমার্গে থাকা ভালো কিন্তু "পূজাটা আমার হলেই হল। বাকিদের যা হবে তারা বুঝবে" - এই mentality -টা মানতে পারলাম না।

আজকের অভিজ্ঞতার কথা বলি - আজকে যথারীতি কালীমন্দিরে পূজা দিয়ে নবগ্রহ মন্দিরে পূজা দিয়েছি।এরপর বাকি মহাবীর হনুমানজীর সামনে হনুমান চালীসা পাঠ ও নকুলেশ্বরকে পূজা দেয়া ও জপ।(নকুলেশ্বর মহাদেবকে পূজা না দিলে কালিঘাটের মা কালীকে পূজা দেয়ার পূর্ণফল মেলেনা) নবগ্রহ মন্দিরের পাশেই একটু উঁচুতে বটগাছের গোড়ায় হনুমানজীর মন্দির।সেখানে উঠে প্রণাম করতে যাব এমন সময়ে হাতে ছ্যাঁকা - দেখলাম কোনো ভক্ত কিছুক্ষণ আগে এক গুচ্ছ ধুপ জ্বালিয়ে হনুমানজীর সামনের একটি গর্তে রেখে গেছেন আর আমার হাতের কনুই পরেছে সজোরে সেই জ্বলন্ত ধুপের মধ্যে এবং দুটো ধুপের মাথা ভেঙ্গে আগুনটা আবার কনুইতে আটকে গেছে। সেই অবস্থায় হাত থেকে ওটা ঝেড়ে ফেলে হনুমান চালীসা পাঠ করলাম ও তারপর নকুলেশ্বরকে পূজা দিয়ে সেখানে বসেও জপ করলাম।তারপর যখন ওষুধ কিনে লাগালাম ততক্ষণে একটু নাদুসনুদুস ফোস্কা কনুইতে পরে গেছে।তবে আশ্চর্য - কোনো জ্বলন কিন্তু হয়নি। পুড়ে গেলে বা ফোস্কা পড়লে যেমন জ্বলে তেমনটি হয়নি।উপলব্ধি করলাম - মা কৃপা করলে পুড়লেও জ্বলনের অনুভুতি হয়না।অতীতে শিবানন্দ গিরি মহারাজকে দেখেছিলাম হাত পুড়ে যাওয়াসত্তেও ঘন্টার পর ঘন্টা খোল করতাল বাজিয়ে যেতে। তিনিই তখন বলেছিলেন যে মায়ের নামের মধ্যে থাকলে কোনো যন্ত্রণাই কষ্ট দেয়না। আজ সেই মহাসাধকের কথাটা উপলব্ধি করলাম। তবু বলব - যারা মন্দিরে পূজা দিতে যাবেন যেখানে সেখানে জ্বলন্ত ধুপ রেখে আসবেননা। সেটা যদি অন্য মানুষের কষ্টের কারণ হয় তাহলে কিন্তু আপনার কর্মফলে একটি কালো দাগই বাড়ল। ভক্তি রাখুন ভালো কথা কিন্তু অন্য ভক্তদের অসুবিধা করে নয়।

Monday 15 April 2013

পাঁচ - নববর্ষের শুভেচ্ছা

                       নববর্ষের শুভেচ্ছা 


     আজ বাংলা নববর্ষ । শুরু হল আরেকটি নতুন বছর । নতুন বছরের প্রথম দিন আমি বরাবর যাই কালীমন্দিরে। আজও গেছিলাম। মায়ের পূজা দেয়ার সময়েই আমার শিষ্য ভক্ত তথা সকল জীবের মঙ্গলকামনা করলাম। (এমনিতে নতুন বছরে যতক্ষণ না মন্দির দর্শন হচ্ছে আমার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকে।মাকে দর্শন করে পূজা দিয়ে তবে সবার সাথে শুরু করি কথা। আজও তার অন্যথা হয়নি। আসলে মানুষকে শুভেচ্ছা জানানোর শক্তি আমার কোথায়?মায়ের কৃপাতেই তো হয় সব। তাই তাঁর কাছে প্রার্থনা করেই বরাবর শুভেচ্ছা জানাই সকলকে।) মায়ের আশীর্বাদ নিয়েই আজকেও আপনাদের (যাঁরা আমার চেয়ে বয়সে বড়) ও তোমাদের (যারা সমবয়সী বা আমার চেয়ে বয়সে ছোট) সকলকে জানাই শুভেচ্ছা - নতুন বছর সবার ভালো কাটুক। নতুন বছর সবার কাছে বয়ে আনুক আলোর বার্তা।আমাদের জীবনে প্রতিটি বছরই উল্লেখযোগ্য - যে কাজের জন্যে আমাদের ধরাধামে আসা তা পূর্ণ করার একটি সুযোগরূপেই বছরটিকে দেখি আমি। ঠাকুরের চরণে শরণ নিয়ে এগিয়ে গেলে নিশ্চয়ই এই বছর আমাদের অনেকটা এগিয়ে দেবে আলোর ঠিকানার পথে। শুধু positive চিন্তা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলব,সবার প্রতি বাড়িয়ে দেব ভালবাসার হাত এবং সবাইকে নিয়েই চলব। আমরা সবাই অমৃতের সন্তান। তাই অমৃতের সুত্রে আমরা সবাই একে অপরের আত্মীয়। সেই আত্মীয়তা যেন নতুন বছরে সবার চলার পাথেয় হয়ে থাকে এই কামনায় করি। সবাই যেন মনে রাখি - এ বছরে আমাদের মুখ থেকে যেন একটি কটু কথাও না বেরোয়,আমাদের কথা বা কাজ যেন কারোর মনে আঘাত না দেয়, আমাদের দ্বারা কারোর যেন ক্ষতি না হয়। আমাদের মন্ত্র যেন হয় ভালবাসা,অপরকে ভালোভাবে বাঁশ দেয়ার আশা যেন দূর হয়ে যায় আমাদের সবার মন থেকে। এইভাবে জীবনপথে অগ্রসর হলে আলোর ঠিকানায় পৌঁছতে দেরী যে হবেনা এটা নিশ্চিত। সেই শুভেচ্ছাই রইলো আজকে সবার জন্যে। এভাবেই সার্থক হয়ে উঠুক বাংলা নববর্ষ ১৪২০। শুভ ভব

Sunday 14 April 2013

​চার ​- কালীঘাটে অঘটন

                                        কালীঘাটে অঘটন      

     আজকে ৫ই এপ্রিলে একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হলো। কিছুটা ফাঁক পাওয়াতে কালীঘাট মন্দিরে গেছিলাম। খুব বেশী লোকজন ছিলনা। নাটমন্দিরে পিছনে হেলান দিয়ে বীজমন্ত্র জপ করছিলাম। হঠাত শুনি ,"কি খোকাবাবু,জপ করছ ?" আমি ভাবলাম বোধ হয় কোনো বাচ্চাকে কেউ বলছেন। পাত্তা না দিয়ে জপ করে যাচ্ছি । এইসময়ে আবার শুনি ,"এই যে বই লেখা খোকাবাবু,তোমাকেই বলছি। জপ একটু থামাও । কিছু কথা আছে।" আমি চমকে উঠে জপের ৮-এর জায়গাটা পূর্ণ করে চোখ খুললাম । বই লেখা খোকাবাবু বলতে যে আমায় বলা হতে পারে এমন একটা মনেও হচ্ছিল । চোখ খুলে দেখি একজন জটাধারী সাধক। দেখি তিনি আমাকেই বলছেন। একটু অবাক হলাম।আমিই যে বই লেখা খোকাবাবু তা উনি বুঝলেন কিভাবে?তারপর ভাবলাম এখানে তো অনেকেই আমাকে চেনে।কারো থেকে শুনে থাকবেন হয়ত। তবে খোকাবাবু শুনে যে বিশেষ ভালো লাগেনি তা বলা যাবেনা। ৪১ বছরে খোকাবাবু হওয়ার আনন্দ তো হওয়ারই কথা।। তবে আনন্দ দিয়ে শুরু হওয়ার পর এলো বিরক্তি। প্রথমেই তিনি আমায় বললেন কিছু খাওয়াতে।আমি পয়সা দিয়ে দিচ্ছিলাম। কিন্তু তাতে তিনি রাজি হলেননা। বললেন নিজে হাতে কিনে খাওয়াতে। এবার জপে বিঘ্ন হওয়াতে এবং খাবারের প্রসঙ্গ তোলায় একটু বিরক্ত হয়েই বললাম, "কেন,আপনি কিনে নিতে পারবেননা?" তিনি বললেন,"পারবনা কেন?কিন্তু তাতে তোমার কাজ হবেনা।তোমায় যোগের ব্যাপারে কিছু বলার আছে।" এটা শুনে বাস্তবিকই অবাক হলাম। অতএব মন্দিরের থেকে বেরিয়ে নকুলেশ্বর মন্দিরের দিকে যাবার দোকান থেকে কচুরি জিলিপি কিনে খাওয়ালাম।তারপর তিনি যোগের ব্যাপারে আমাকে কিছু বললেন যা ঠিক ক্রিয়াযোগের অঙ্গ নয় তবে যোগের কিছু উন্নত পদ্ধতি। সেগুলো বলে বললেন,"এই পদ্ধতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে পৃথিবী থেকে।এগুলো ধরে রেখো।আমি আবার পরে আসব।"



আমি বললাম,"আপনি কোথা থেকে আসছেন?"তিনি বললেন,"অত খোঁজে তোমার কি কাজ?যা বলছি করো।বেশি জানতে চেওনা।সময় হলে আমি আবার আসব আর বলার থাকলে তা বলবও।তবে বেশী কৌতুহল ভালো না।"আমি বললাম,"তা এগুলো আমায় দেখালেন কেন?"সাধু হাসলেন,"এগুলো নিজে অনুশীলন করার জন্যে আর মানুষের মাঝে আধার বুঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্যে।শুধু শুধু দেইনি তোমায়।"সাধুর কথাগুলো আমায় বেশ অবাক করে দিল।বুঝতে পারলামনা কে ইনি।কেনই বা এভাবে এলেন?আর কেনই বা আমায় যোগের এই রহস্যময় পদ্ধতি গুলো দেখিয়ে দিয়ে চলে গেলেন ?অথচ ভালোভাবে কিছু বললেন না নিজের সম্বন্ধে যে তা নিয়ে কিছু লিখব। সম্পূর্ণ ঘটনাটাই কেমন অদ্ভুত লাগলো।

​তিন ​- দিন আসে,দিন যায়

          দিন  আসে, দিন  যায়

             তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় 
দিন আসে,দিন যায় । ভালো দিন থাকেনা চিরকাল । দুঃখের দিনও থাকেনা । দেখতে দেখতে বয়স বাড়ে,আয়ু কমে এবং ফুরিয়ে যায় দিন । এসবই তো চলেছে,চলছে,চলবেই । কিন্তু আমাদের আসল কাজ যে এখনো বাকি ।জীবনে কি করতে এসেছি ? আর কি করে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি ? শেষ খেয়ার ডাক যখন আসবে তখন হাতে থাকবে তো শেষ পারানির কড়ি ? বেলা যে বয়ে যায়।পথিক,খেয়াল আছে কি?

দুই - ১৪১৯ বিদায়

               ১৪১৯ বিদায় 


     বাংলা বছর ১৪১৯ আজকের দিনেই সমাপ্ত হচ্ছে। আগামীকাল থেকে শুরু হবে ১৪২০।
বিগত বছরটিতে আমরা হারিয়েছি অনেক,পেয়েছিও অনেক । কিন্তু একবার ভেবে দেখুন তো - যা পেয়েছি তার মধ্যে কি যাবে আমাদের সঙ্গে শেষের সেদিনে ?টাকাপয়সা,ঘরবাড়ি, প্রশংসা নিন্দা - কি যাবে ? কিচ্ছু না। যাবে শুধু আমাদের কর্ম। কি ভালো কাজ আমরা করতে পারলাম এই বছরে সেটিই লিখে রাখবেন চিত্রগুপ্ত । আর তার উপরই নির্ভর করবে আমাদের চিরন্তনের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স।এখানে আমাদের প্রাপ্তির তালিকায় যোগ হবে - মানুষকে বা অন্য জীবদের কত ভালবাসতে পেরেছি,অপরের মুখে কত হাসি ফোটাতে পেরেছি,কত দরিদ্রের কাজে আসতে পেরেছি আর কত মানুষকে সত্পথে এগোতে সাহায্য করতে পেরেছি । সেইসাথে নিজের জপ বা সাধনা কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছি । এটাই হলো আমাদের CREDIT । আর DEBIT কি হবে জানেন ? কত মানুষের ক্ষতি করেছি,কতজনকে কটু কথা শুনিয়েছি ,কত মানুষের চোখের জল ফেলেছি,কত মানুষকে ঠকিয়েছি,কত মিথ্যা বলেছি,কত অহংকার করেছি । এই দুটিকে মিলিয়ে চিত্রগুপ্ত করবেন আমাদের এই বছরের AUDIT আর তার ফল হিসেবে আমাদের চিরন্তনের BANK BALANCE ঠিক হবে । এখন আপনারাই ভেবে দেখুন - আপনাদের এই বছরের BALANCE SHEET কিরকম হবে? যদি দেখেন লাভের ঘরে রয়েছেন তবে তো খুব ভালো কথা । কিন্তু যদি দেখেন লোকসানের ঘরে রয়েছেন তবে কিন্তু নিজেকে নিয়ে ভাবনার সময় এসেছে । আমি বলি কি -সেক্ষেত্রে আগামী বছরের জন্যে নতুন পরিকল্পনা নিন । যা গেছে তা তো ফেরাতে পারবেননা কিন্তু যেটা পারবেন সেটা করুন - একটি ডায়েরি নিন এবং তাতে রোজ কি ভালো কাজ করলেন আর রোজ কি খারাপ কাজ করলেন তা লিখে রাখুন এবং চেষ্টা করুন - রোজ যেন খারাপ কাজের উপরে থাকে ভালো কাজ । এভাবে চেষ্টা করতে থাকুন - খারাপ কাজ যেন দ্রুত কমিয়ে ফেলা যায় এবং ভালো কাজ বাড়িয়ে নেয়া যায়। যেদিন আপনার ডায়েরির পাতা শুধু ভালো কাজেই ভরে যাবে এবং খারাপ কাজ একটিও পরবেনা সেদিনই আপনি পাবেন যথার্থ আনন্দ - যে আনন্দের লক্ষ্যে আমাদের জীবন পথে নামা ।

Saturday 13 April 2013

এক - ভয়জয়

                          ভয়জয়              


    আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো ভয় যা আমাদের ভিতর থেকে কুরে কুরে খায় । এই ভয়টা কিন্তু পৃথিবী আমাদের দেয়নি । এটা আমাদেরই মনের নেগেটিভ এনার্জি থেকে সৃষ্ট হয়েছে। একে দূর করার একটিই উপায় - নিজেকে একটু সময় দেয়া ও বোঝানো যে এটা সুধুই দৃষ্টিভঙ্গীর ভুল । এই পৃথিবীতে ভয়াবহ কেউ নয় । আমাদের মনই এই ভয়াবহকে প্রজেক্ট করে । তাই মনকে বোঝান ভয় কাউকেই পাওয়ার মত নেই এই জীবনে । একটু প্রাণায়াম করুন - একটু শ্বাস-প্রশ্বাস । আসতে আসতে কমিয়ে আনুন শ্বাসের গতি । শ্বাসের গতি যত কমবে মন তত সমাহিত হবে আর ততই মন থেকে দূর হয়ে যাবে নেগেটিভ এনার্জির প্রকোপ ।