অশান্তি থেকে উদ্ধারের পথ
মানুষের জীবনে অশান্তির কারণ সংসার .. সংসারের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপিত হলেই মন অশান্ত হয়ে পড়ে .. মনকে শান্ত করার জন্যে ঠাকুর শ্রীকৃষ্ণ তিনটি পথ বলেছেন - কর্মযোগ , জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ..
প্রথমে আসি কর্মযোগের কথায় .. কর্মযোগ হল ফলের আশা না করা ও কর্তৃত্বের অভিমান ত্যাগ করে নির্লিপ্তভাবে কর্ম করা..এতে সংসার থেকে আসক্তি চলে যায়..ফলে মনে শান্তি ও আনন্দ আসে..যাদের যোগবুদ্ধি আছে তারা কর্মফল পরিত্যাগ করে জন্মবন্ধন থেকে মুক্তি লাভ করেন..
দ্বিতীয়তঃ আসছে জ্ঞানযোগ..জ্ঞানযোগ দিয়ে আত্মস্বরুপে স্থিত হওয়া যায়..এবং তাতে লাভ হয় অনন্ত আনন্দ .. যে মানুষ অন্তরাত্মাতেই সুখযুক্ত এবং আত্মাতেই জ্ঞানযুক্ত সেই জ্ঞানযোগী নির্বাণ ব্রহ্ম লাভ করেন ..
তৃতীয়তঃ আসছে ভক্তিযোগ .. এতে ভগবানের সঙ্গে অভিন্ন সম্পর্ক স্থাপন হয় .. তাতে লাভ হয় প্রেম বা অনন্ত আনন্দ..
জ্ঞানমার্গের পথিকরা ভগবানের দর্শন চান না .. তাঁরা আত্মস্বরুপ জেনে এবং তাতে প্রবিষ্ট হয়ে খুশী থাকেন .. তাই তাঁদের আর ভগবান দর্শন হয় না .. কিন্তু ভক্তিমার্গের পথিকদের আত্মস্বরূপ জ্ঞান হয় এবং তাঁরা আত্মস্বরুপে অধিষ্ঠিতও হতে পারেন আর সেইসাথে তাঁদের ইষ্টদর্শন হয় .. লাভ হয় অনন্ত প্রেম .. তখন ভক্ত আর ভগবান প্রেমিক আর প্রেমাস্পদের মত এক হয়ে যান .. এ প্রসঙ্গে শ্রী রাধার কথা বলা যায় .. তিনি বলেছিলেন - শ্রীকৃষ্ণ দর্শনের আগেই তাঁর শ্রী কৃষ্ণে প্রীতি হয়েছিল এবং দৃষ্টি বিনিময় হওয়ার পর সেই অঙ্কুরিত অনুরাগ বৃদ্ধি পেতে থাকে দিনের পর দিন ধরে .. দেখতে দেখতে সেই প্রেম যেন দুজনের মনকে পেষণ করে অভিন্ন করে তুলেছে .. ফলে শ্রীরাধা তখন আর রমনী স্বরূপে আবদ্ধ ছিলেন না .. শ্রী কৃষ্ণও আবদ্ধ ছিলেন না রমণ স্বরূপে .. দুজনে একে অপরের সাথে মিশে এক হয়ে গেছিলেন ভক্ত ও ভগবান রূপে .. এই তো প্রেমের শ্রেষ্ঠ উপহার .. ভক্তিয়োগের পরম নিদর্শন ..
তাইতো বলি - প্রথমে কর্ময়োগের মাধ্যমে নিজেকে সংসারের প্রতি নির্লিপ্ত কর আর তারপরে ঝাঁপ দাও ভক্তির সাগরে .. জ্ঞানের সাগরেও ঝাঁপ দিতে পারো ..তবে ভক্তিতে পাবে তাঁর লীলার আস্বাদ যা জ্ঞানে নেই .. জ্ঞানী তো ব্রহ্ম সত্য জগত মিথ্যা জেনে আত্মস্বরুপে স্থির হয়ে থাকেন পরম আনন্দে ..ভক্ত সেইসাথে তাঁর পরম প্রেমিকের লীলার রসও আস্বাদ করেন ..
তাইতো ভক্তি যোগের চেয়ে বড় পথ হয় না ..
No comments:
Post a Comment