Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Monday 7 July 2014

গুরু শিষ্য

                                                গুরু শিষ্য

   গুরু আর শিষ্যর সম্পর্কে থাকে এক অদৃশ্য বন্ধন - যাকে এক কথায় বলা যায় মুক্তির বন্ধন। প্রতিটি শিষ্যের জন্যে একজন গুরু নির্দিষ্ট থাকেন আর সেই শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় গুরুকেই। শিষ্যকে যে গুরু দীক্ষা দেন তার নেপথ্যে গুরুর নিজস্ব কোন স্বার্থ থাকেনা। থাকে একটাই লক্ষ্য - শিষ্যকে তার ঠিকানায় পৌছে দেয়া। আর সেখানে শিষ্য পৌছতে পারাই হচ্ছে গুরুর একমাত্র গুরুদক্ষিনা।
   গুরু যখন শিষ্যকে দীক্ষা দেন তখন আপন সাধনশক্তি দিয়ে সৃষ্ট উর্জাশক্তিকে তিনি মন্ত্রের সাথে শিষ্যের ভিতরে প্রতিষ্ঠা করে দেন। এজন্যে কম শক্তি ব্যয় হয় না। এর ফলে দীক্ষার পর শিষ্যের একটা প্রারব্ধের অংশ গুরুকে টেনে নিতে হয়। জগতের অন্য কোন সম্পর্ক কিন্তু কারোর প্রারব্ধ নেয়  না কোন কারণেই। একমাত্র গুরুই এই প্রারব্ধ টানেন। শুধু তাই নয়। এরপর শিষ্য অনেকসময়েই নানা ভুল করে,অন্যায় করে আর তার শাস্তির একটা বড় অংশ গিয়ে পরে গুরুর উপরে।দোষ করে শিষ্য আর প্রারব্ধ ভোগেন গুরু।  তাই দীক্ষার পর প্রতিটি শিষ্যের উচিত - কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে গুরুর থেকে মত নেয়া। গুরুর প্রতি কখনোই অসম্মান প্রদর্শন করতে নেই। তাতে ইষ্ট রুষ্ট হয়ে যান। আর গুরু যদি কখনো শিষ্যের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার মন্ত্র তুলে নিতে বাধ্য হন তখন শিষ্যের প্রতি যে ঘর বিপত্তি নেমে আসে তা সামাল দেয়ার শক্তি কিন্তু জগতে কারোরই থাকেনা। এমনকি ইষ্ট নিজেও সেই শিষ্যকে বাচাতে যান না।
   সাধারনত শিষ্য যখন অসুস্থ হয়ে পরে তখন গুরু তাঁর জপ বাড়িয়ে দেন যাতে শিষ্য তার জপের শক্তিতে তাড়়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে। একইভাবে শিধ্যের কর্তব্য - গুরু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের জপের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া যাতে গুরু সুস্থ হয়ে ওঠেন।কারণ গুরুর অধিকাংস ভোগ আসে শিষ্যের দুর্ভোগ থেকে। তাই শিষ্যের কর্তব্য - সেটি যথাসম্ভব কম গুরুর উপর চাপানো। উত্তম শিষ্যরা এটাই করে থাকেন। যেমন কুলদানন্দ ব্রহ্মচারী করে দেখিয়েছিলেন বিজয়্কৃশ্ন গোস্বামীর জন্যে।
  আসলে শিষ্য এবং গুরুর মধ্যে একটা জ্যোতির সংযোগ  সৃষ্টি হয়ে যায় যা গুরুর সাথে শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে চলে আলোর দিকে। তাই এই যাত্রায় দুজনের সাধনশক্তিরই প্রয়োজন পড়ে। যেখানে একইসাথে দ্রোনের মত গুরু আর অর্জুনের মত শিষ্য  থাকে সেখানে অগ্রগতি হয় দ্রুত দুজনের মিলিত শক্তিতে কিন্তু যেখানে "গুরু আছেন,তিনি দেখবেন,আমি যা করার করি"ভাবনা নিয়ে শিষ্য চলে সেখানে বুঝতে হবে গুরু দিকপাল হলেও শিষ্যের জন্যে তার ফাটা কপাল। অর্থাত সেখানে দুজনেই পিছিয়ে পড়বে। তাই শিষ্যের সবসময়ে উচিত -গুরুর প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে অত্র দেখানো প্রণালীতে ঠিকমত জপ ধ্যান এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। তবেই সার্থক হয় গুরু শিষ্যের অমৃতের পথে যাত্রা।  

No comments:

Post a Comment