অমৃতধারায় সাক্ষাত্কার
বিষয় - প্রারব্ধবাদ
তানিয়া চক্রবর্তী - প্রারব্ধ খন্ডনে নামজপ ও মন্ত্রজপের কি ভুমিকা?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - জীবন থেকে মহাজীবনে যাওয়ার মূল পথ হলো মন্ত্র বা নাম। এই মন্ত্র বা নাম আমাদের জাগতিক জীবনের স্থুলতা থেকে ত্রান করে এগিয়ে দেয় উত্তরণের পথে। তাই নিজের পূর্ব পূর্ব জীবনের প্রারব্ধ কাটাতে এই নাম বা মন্ত্রই মূল ভরসা।
তানিয়া চক্রবর্তী - অনুতাপ কি প্রারব্ধ খন্ডন করে ?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - খারাপ কাজ করার পর যদি মন থেকে অনুতাপ করা যায় এবং তার প্রাযশ্চিত্তের চেষ্টা করা হয় তবে প্রারব্ধ অনেকটাই কাটে।
তানিয়া চক্রবর্তী - অনিচ্ছাকৃত ভুলের দ্বারাও কি প্রারব্ধ হয় ?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - অবশ্যই হয়। তবে এই ভুলটাও আসে প্রারব্ধবশে। মনে করে দেখ - রাজা হরিশ্চন্দ্রের কথা। তাঁর প্রারব্ধ জন্মেছিল কেন ? নিজের ছেলেকে সুস্থ করতে অন্য একটি বালককে ভুগিয়েচিলেন তিনি। আর তাই তাঁর অনিচ্ছাকৃত ভুলকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বামিত্র তাঁর বিরাট পরীক্ষা নিলেন। অর্থাত অনিচ্ছাকৃত ভুলটা নিমিত্ত হয়ে যায় মূল প্রারব্ধ ভোগের জন্যে।
তানিয়া চক্রবর্তী - আমার সমস্ত কাজের ফল যদি ঈশ্বরে সমর্পণ করি তা হলে কি প্রারব্ধ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে ?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় - অবশ্যই। গীতায় ভগবান শ্রী কৃষ্ণ তো বলেছেন - যে আমার শরণাগত হয় আমি তার যোগ ও ক্ষেম বহন করি। অর্থাত ভগবান শরণাগত ভক্তের সব প্রারব্ধের বোঝা নিজে তুলে নেন যথার্থ শরনাগতি আনতে পারলে। তাইত বলা হয় - সব কর্মের ফল ঈশ্বরে সমর্পণ করে নিশ্চিন্তে কর্ম করে যেতে। তবে কাজটা অবশ্যই সত্কাজ হওয়া চাই। কেউ যদি ভাবে - ভগবানের শরণাগত হয়ে অন্যের মাথায় কাঁঠাল ভাঙ্গলে আমার পাপ হবে না সেটা কিন্তু ভুল। শরনাগতি মানে কি ? নিজের ভালো মন্দ সবকিছু ঠাকুরকে সঁপে দিতে হবে। তখন নিজের বলে কিছু ভাবা যাবে না। এমনকি নিজেকেও নিজের বলে ভাবা যাবেনা। তখন সবই ঠাকুরের ,এমনকি নিজেও ঠাকুরের। এই বোধ নিজের মধ্যে জাগালে তবেই শরনাগতি আসে। সেই অবস্থায় নিজের কর্মফল ঠাকুরকে সমর্পণ করে নিস্পৃহভাবে কাজ করলে আর প্রারব্ধ সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকেনা।
( চলবে)
( চলবে)
No comments:
Post a Comment