Ami Tarashis Bolchi

Ami Tarashis Bolchi
The blog of Tarashis Gangopadhyay (click the photo to reach our website)

Monday 24 August 2015

ঈশ্বর লাভের পথ (২)

                                   ঈশ্বর লাভের পথ (২)                                                                                               -- তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়                                        ( পূর্ব প্রকাশিতের পর)

      এবার দেখা যাক কেন ভক্তিযোগ সর্বোত্তম। 
      জ্ঞানীরা সিদ্ধ হলে ঈশ্বরকে তত্বত জানেন এবং তাঁর ভিতরে প্রবিষ্ট হয়ে তাঁর মাঝে লীন হয়ে যান। কিন্তু তাঁদের ভগবান দর্শনের আকাঙ্খাও থাকেনা এবং তাঁরা সেই দর্শনও পান না। 
      যোগীরা সিদ্ধ হলে ঈশ্বরত্ব প্রাপ্ত হন এবং তাঁর সৃষ্টি স্থিতি লয়ের কর্মযজ্ঞে সামিল হন। এঁরাও সাধনের মাধ্যমে ঈশ্বরকোটি স্তর প্রাপ্ত হন। তখন ঈশ্বরদর্শনও তাঁরা যেমন লাভ করেন তেমনি তাঁর নির্দেশে জগতকল্যানের যজ্ঞেও  এঁরা ব্রতী হন। ক্রিয়ায়োগের পথিকৃত শ্যামাচরণ লাহিড়ি মহাশয় যেমন যোগসিদ্ধ হয়ে কৃষ্ণের দর্শন পেয়েছিলেন আবার তাঁর মাঝেই পেয়েছিলেন ১০ মহাবিদ্যার দর্শন। তবে তাঁরা ইষ্টের দর্শন আর তাঁর ঐশ্বর্য লাভ করলেও ভক্তি ছাড়া একটি বস্তুর আস্বাদ পান না -  তা হল লীলারস আস্বাদ। 
     আর ভক্তিমার্গের সাধকরা সিদ্ধ হলে ইশ্বরকে তত্বত যেমন জানতে পারেন তেমনি ভগবত দর্শন লাভ করেন আর তার চেয়েও বড় কথা তাঁরা লীলারস আস্বাদ করতে পারেন। 
      এই লীলারস আস্বাদ হয় ভগবতপ্রেমে। তাতে দুইরকম অবস্থার উল্লেখ মেলে। ভক্ত যখন ইষ্টের প্রেমে আপনার মাঝে ভাবের আবেশে ডুবে যান তখন ভক্তের অন্তরে প্রেমিক ভক্ত আর প্রেমাস্পদ ভগবান মিলেমিশে এক হয়ে যান। আবার যখন ভক্ত আপনার জাগতিক অবস্থায়  ফিরে আসেন তখন প্রেমিক ও প্রেমাস্পদ এক হয়েও লীলার প্রয়োজনে ধারণ করেন ভিন্ন রূপ। 
    শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতের মধ্যলীলায় ' মহাপ্রভু - রায় রামানন্দ সংবাদ'-এ এই সাধ্য সাধন তত্বের ব্যাখ্যা আমরা পাই। সেখানে সাধ্য তত্ব নিয়ে আলোচনার শেষে রায় রামানন্দ বলছেন -
     'ইহার মধ্যে রাধার প্রেম সাধ্য শিরোমনি। 
      যাঁহার মহিমা সর্বশাস্ত্রেতে  ব্যাখ্যানি। '
   এই প্রসঙ্গে যখন রায় রামানন্দ অদ্বৈত তত্বের উপর একটি গীত গাইতে গেলেন তখন মহাপ্রভু তাঁর মুখ চেপে ধরেন। কারণ সেই যে আসল মহাভাব। দিব্য অমৃত। সেই মহাভাবের বিবরণ আমরা পাচ্ছি কবির ভাষায় -
   'পহিলহি রাগ নয়নভঙ্গ ভেল। 
   অনুদিন বাড়ল  অবধি না গেল 
   ন সো  রমণ, ন হম রমণী।
   দুঁহু মন মনোভব পেসল জানি '
অর্থাত শ্রীরাধা বলছেন - দর্শনের পূর্বেই শ্রীকৃষ্ণে তাঁর প্রীতি জন্মেছিল। দৃষ্টি বিনিময়ের পর থেকে সেই প্রীতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর ধীরে ধীরে এই অঙ্কুরিত পূর্বরাগ বেড়ে চলে সীমা থেকে অসীমের পথে। দেখতে দেখতে শ্রীকৃষ্ণের রমণ- স্বরূপ আর শ্রীরাধার রমণীস্বরূপের ভেদ মিলেমিশে এক হয়ে যায় । আর সেই প্রেম দুজনের মনকে পেষণ করে অভিন্নে পরিনত করে। এই হল ভক্তির শ্রেষ্ঠ স্তর। পরবর্তীকালে এই মহাভাব আমরা দেখি স্বয়ং মহাপ্রভুর মাঝে। 
                                                (ক্রমশঃ)
     

No comments:

Post a Comment