প্রশ্ন :- আচ্ছা, প্রায়ই শুনতে পাই যে অনেকেই বলেন ভক্তি বড়। তাহলে জ্ঞান কি কোন কাজের কিছু নয়?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় : জ্ঞান ও ভক্তি দুই-ই হল ঈশ্বরের কাছে পৌঁছনোর দুটি মূল পথ। আর দুটিই সার্থক হয় যখন তা কর্মের সাথে যুক্ত হয়। আর সে কর্ম শুধু মৌখিক কর্ম হলে চলবে না। তাকে থিওরির ক্ষেত্র ছেড়ে practical এর সঙ্গে মিশতে হবে। জ্ঞান বল বা ভক্তি বল তা তখনই যথাযথ হবে।
এমনিতে এটা সত্যি যে জ্ঞানের পথের লোক বলেন - ভক্তি বস্তুটা আদৌ কোন কাজের কিছু নয়। আবার ভক্তির পথের মানুষরাও অনেকেই মনে করেন যে জ্ঞান ক্ষতিকারক ভক্তির পক্ষে। তাঁরা কারণ হিসেবে বলেন যে মহাপ্রভু বলে গেছেন জ্ঞান নয় ভক্তি শ্রেষ্ঠ।কিন্তু আজকের যুগে দাঁড়িয়ে আমাদের বুঝতে হবে - নিজে জ্ঞানের চূড়ায় পৌঁছেও কেন বলেছেন তিনি এ কথা?
এর উত্তর একটাই - তিনি আলোর দিশা উন্মুক্ত করে দিয়েছেন সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্যে। কলিযুগে সাধারণ মানুষের জ্ঞানের পথে যাওয়ার মত ব্যক্তিত্ব,সহ্যশক্তি ,ধৈর্য কিছুই নেই। তাই তিনি বুঝেছিলেন যে এদের জ্ঞানের পথে পাঠালে কিছুই পারবে না। বরং ভক্তির পথে গিয়ে যদি শুধু ঠাকুরের শ্রীচরণ স্মরণ করে তাঁর শরণ নিয়ে থাকে তবে ঠাকুর নিজেই এসে উৎরে দেবেন। ভক্তি হল নির্ভরতার সাধনা আর জ্ঞান হল পুরুষকারের সাধনা।আমাদের আজকের যুগে পুরুষকার আছে কি? যা আছে শুধুই অপরের উপর নির্ভরতা। তাই মহাপ্রভূ দেখলেন - সামাজিক জীব যদি এই পরনির্ভরতার ভাবটা মানুষের পরিবর্তে ঈশ্বরের উপরে রাখতে পারে তবে তো ঠাকুর নিজে নেমে এসে কোলে তুলে নেবেন। তাই তিনি জ্ঞানের পরিবর্তে সাধারণের জন্যে ভক্তির পথ দেখালেন। কিন্তু তাই বলে জ্ঞান ফেলনা নয়। এই পথে চলার জণ্যে অনেক কষ্ট করতে হয়। শঙ্করাচার্য, মধ্যাচার্য, রমণ মহর্ষি বা স্বামী বিবেকানন্দ কিন্তু এমনি এমনি হওয়া যায় না। অনেক সাধনার প্রয়োজন হয়। তাই কথায় কথায় জ্ঞানকে ছোট করা মুর্খতার সামিল।
আর মজার কথা কি জানো - যে জ্ঞান ও ভক্তির মধ্যে একটি পথের শেষ ঠিকানায় পৌঁছতে পারে তার মধ্যে অপরটিও ঠাকুরের কৃপায় আপনা থেকেই জেগে যায়। সত্যিকারের জ্ঞানী তখন হয়ে ওঠেন বড় ভক্ত। আর সত্যিকারের ভক্ত হয়ে ওঠেন ত্রিকালজ্ঞ জ্ঞানী। কারণ দুটি পথ ভিন্ন মতের হলেও অন্তিমে যে সবই মিলেমিশে হয় জয় একাকার।
ভালো থেকো। জয় গোপাল।
Purushkar shobder ortho ki Atma?
ReplyDelete