প্রশ্ন : শাস্ত্রে আছে প্রতিটি জীবকে ৮৪ লক্ষ যোনি ভ্রমণ করতে হয়। শাস্ত্রে কি এর কোন এভিডেন্স মেলে?
তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় : অবশ্যই মেলে। প্রতিটি জীবকেই এই ৮৪ লক্ষ যোনি ভ্রমণ করতে হয়। বিষ্ণু পুরাণ এই বিষয়ে লিখছে -
স্থাবর ত্রিংশলক্ষশ্চ জলযোনবলক্ষকঃ।। কৃমিয়োদশলক্ষশ্চ রুদ্রলক্ষশ্চ পক্ষিনৌ।
পাশবো বিংশলক্ষশ্চ চতুর্লক্ষশ্চ মানবাঃ।।
এতেসু ভ্রমনং কৃত্বা ভ্রদ্ধিজত্বমৃপজায়তে।
মনুষ্য দুর্লভং জন্ম যদিস্যাৎ কৃষ্ণসাধকঃ ।। (বিষ্ণু পুরাণ)
এই তথ্য একটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যাক। প্রথমে তিরিশ লক্ষ বার গাছ রূপে জন্ম নিতে হয়। এই বৃক্ষ জন্ম শেষ হয় একমাত্র তুলসী গাছ হয়ে জন্মানোর পর। তারপর বৃক্ষ যোনি থেকে মুক্তি ঘটে। (সম্ভবত বিষ্ণুপুরান অনুসারে এই শ্লোক আমরা পেলাম বলে এখানে আমরা তুলসীর নাম দেখতে পাচ্ছি। একই বিষয়ের উপর লেখা শ্লোক শিবপুরানে যদি আমরা পেতাম সেখানে হয়তো বেলপাতার নামও থাকতে পারত।)
এরপর নয় লক্ষ বার জলজ প্রাণী রূপে জীবের জন্ম হয়। এই জন্ম থেকে মুক্তি মেলে শঙ্খ রূপে জন্মর পর। এই রূপে ভগবানের পূজা অর্চনায় ব্যবহারের পর জলজ জীব জন্ম থেকে মুক্তি ঘটে।
এরপর দশ লক্ষ বার কৃমি ও কীট রূপে জন্ম হয়। এই জন্ম থেকে মুক্তি মেলে
মৌমাছি রূপে জন্ম হবার পর। মৌমাছির তৈরি মৌচাকের মধু ভগবানের পূজা অর্চনায় ব্যবহৃত হবার পর কীটপতঙ্গ যোনি থেকে মুক্তিলাভ ঘটে।
এরপর এগারো লক্ষ বার পক্ষী কুলে জন্ম নিতে হয়। এই যোনি থেকে মুক্তি মেলে ময়ূর রূপে জন্মলাভের পর। কথিত আছে ময়ূরের পালক ভগবানের মাথার চূড়ায় বা তাঁর পূজা অর্চনায় ব্যবহৃত হলে এই যোনি থেকে উদ্ধার হয়।
এরপর কুড়ি লক্ষ বার পশু যোনিতে জন্ম নিতে হয়। বাঘ, সিংহ, কুকুর, বিড়াল, হায়না, শিয়াল প্রভৃতি জন্ম পার হয়ে যখন গাভী রূপে জন্ম লাভ হয় এবং তার থেকে প্রাপ্ত দুধ, মাখন, ঘি যখন ভগবানের সেবায়, ভোগে বা পূজা অর্চনায় ব্যবহৃত হয় তারপর পশু যোনি বা গর্ভ থেকে মুক্তি ঘটে। অর্থাৎ গো-যোনিতে জন্ম লাভ পশুযোনির শ্রেষ্ঠ জন্ম। এই গো জন্মের পর আর পশু যোনিতে জন্ম হয় না।
পশু যোনি অতিক্রমের পর অবশেষে চার লক্ষ বার মানব যোনিতে জন্ম হয়।
এতে প্রথমে বন্য মানুষ রূপে জন্ম নিতে হয়। এরা বনের মধ্যে থেকে জীবনধারন করে এবং পশুদের মতই জীবন যাপন করে। এদের কোন আপন-পর জ্ঞান নেই।
তারপর পাহাড়িয়া জাতির মধ্যে জন্ম হয়। যেমন নাগা, কুকি, সাঁওতাল ইত্যাদি।
তারপর জন্ম হয় অধম নাস্তিক কুলে। তারা দেবধর্ম মানে না। নানারকম অপ কর্মের মধ্যে এদের জীবন কাটে।
তারপর শূদ্রকুলে জন্ম হয়। এরা যেমন কর্ম করে তেমন নিজেই ভোগ করে। একমাত্র ভালো কর্ম এবং সম্মানিতদের সেবার মাধ্যমে তাঁদের উত্তরণ হয়।
তারপর জন্ম হয় বৈশ্য জাতির মধ্যে। এখানেও কর্ম অনুযায়ী ফল ভোগ করে উত্তরণ হয়।
তারপর জন্ম হয় ক্ষত্রিয় কুলে। এখানেও ঠিকমত কর্ম করলে তবেই উত্তরণ হয়।
সবশেষে জীব ব্রাহ্মণকুলে জন্মায়। এই ব্রাহ্মণ জন্ম হল শ্রেষ্ঠ। এই জন্মে ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন আবশ্যক। শুধু ব্রাহ্মণ কুলে জন্মালেই কিন্তু উদ্ধার হয় না। একমাত্র ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন হলেই যথাযথ ব্রাহ্মণ হওয়া যায়। তবেই উদ্ধারের প্রশ্ন। আর যদি জীব এই জ্ঞান লাভ করতে না পারে, তবে আবার তাকে ৮৪ লক্ষ যোনি পথে ভ্রমণ করতে হয়। আর সেই সঙ্গে বারবার জন্ম নিয়ে কষ্ট ভোগ করতে হয়। এর থেকে উদ্ধার পাবার একমাত্র পথ হল ভগবানের শরণাগত হওয়া।
তবেই দেখছ কিভাবে সব মিলিয়ে চুরাশি লক্ষ (৩০+০৯+১০+১১+২০+৪) জন্ম হয়।
এক সম্পূর্ণ নতুন তথ্য জানলাম। 84 লক্ষ যোনির পার হয়ে মনুষ্য জন্ম হয় জানতাম,কিন্তু এত details জানতাম না।খুব ইচ্ছা ছিল এই বিষয়টি জানার। আশাপূর্ণ হলো।
ReplyDeleteKhub valo laglo.Aita niye akta book hole khub valo hoy, jekhane sob kichu details a thakbe.
ReplyDeleteএক অনন্য জ্ঞান লাভ করলাম দাদাভাই 🙏 খুব ভালো লাগলো।
ReplyDeleteসত্যি আমরা পরম সৌভাগ্যবান যে ৮৪ লক্ষ যোনি পার করার পর মনুষ্য জন্মের মতো শ্রেষ্ঠ যোনি তে এসে পৌঁছেছি। এই মনুষ্য জন্ম যাতে বৃথা না যায় তার জন্য সব সময় শরণাগত। আর দাদার আশীর্বাদ নিয়ে যাতে দাদার চলার পথে চলতে পারি মা তারার কাছে সব সময় প্রার্থনা করি। জয় মা তারা🙏🙏🙏
ReplyDeleteশরণাগতি হি কেবলম্ ☘️🙏🌹🪔
ReplyDeleteAto sundor vabe agay kakhono jante parini
ReplyDeleteDada ..sudro, baisya ba khyatriyo kule jonmo grohon kre ki brohmo Gyan arjon somvob noy.....
ReplyDeleteভীষণ ভালো লাগলো, প্রণাম নেবেন।
ReplyDeleteদাদা খুবই ভালো বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে বলে অনেক কিছু জানতে পারলাম। এই প্রয়াসটা একটা যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আরো অনেক অনেক জানতে পাবার আশায় রইলাম।প্রনাম নিও দাদা।জয় গোপাল সোনার জয় 🙏
ReplyDeletePranam neben Dada
ReplyDeleteAnek kichhu jante parlam
El bishoy niye ekta sampurna book hole khub upokrito habo