অজপা জপ
অজপা জপ হল বহু প্রাচীন শাস্ত্রীয় জপের প্রণালী।বাল্মিকি নারদের কাছ থেকে যে উল্টো নাম পেয়েছিলেন সেও তো ছিল অজপা। আজ সাধনজগতে অজাপার মূল্য অপরিসীম।
অজপার সবচেয়ে বড় উপহার হলো সমাধির অভিজ্ঞতা লাভ। সাধারণত যোগে সমাধিলাভ হয় কুম্ভকের মাধ্যমে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ করে। দেহে যখন আপনা থেকেই নিরন্তর কুম্ভক হয়ে যায় তখনি আসে সমাধি। কিন্তু অজপাতে কুম্ভাকে না গিয়েই সমাধি লাভ করা যায়।অজপা হলো শ্বাসে প্রশ্বাসে জপ।যে মন্ত্র তুমি নিলে তা শ্বাস নেয়ার সময় জপ করবে আর ছাড়ার সময়ে জপ করবে।সেটাই হলো অজপা।এতে মন্ত্রের হিসাব রাখার দরকার নেই।শুধু মনেপ্রাণে মন্ত্রের সাথে একাত্ম্য হয়ে জপ করে যাওয়া। কথিত আছে - আমাদের জীবাত্মা অনাহত চক্রে উপবিষ্ট হয়ে নিরন্তর নাম করে চলেছে অজপায়।সে নাম আমাদের ভিতরে চলছে নিরন্তর।সাধনার মাধ্যমে বহিরঙ্গের নামকে সেই নামের সাথে একাত্ম্য করে তলার জন্যে অজাপার সৃষ্টি।একে একইসাথে হংস জপ ও সোহং জপ বলা হয়। শ্বাস নেয়ার সময়ের জপ হলো হংস জপ আর শ্বাসত্যাগের সময়ের জপ হল সোহং। নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে সেই জপকেই বলা হয় বা অজপা।
এই অজপার একটি সহজ প্রণালী আছে - যারা জপ করতে চাও তারা প্রথমে কিছুক্ষণ কোনো বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাক একদৃষ্টে - সেটি ইষ্টদেবের মুর্তী হলে সবচেয়ে ভালো। যখন খালি চোখে সেই বস্তুর উপর মনোসংযোগ হয়ে যাবে তখন চোখ বন্ধ করে তাকে ধ্যান কর আর অজপা জপ শুরু কর।এতে ফল পাবে দ্রুত।
এই প্রসঙ্গে যোগের আরেকটি কথা বলি - আমাদের দিনে ইড়া নাড়ি আর বয়ে পিঙ্গলা নাড়ি। পিঙ্গলা নাড়ি নির্দেশ করে আমাদের দেহের শারীরিক শক্তি ও ইড়া নারী নির্দেশ করে মানসিক শক্তি।এই দুই নাড়িতে আলাদাভাবে যতক্ষণ শ্বাস প্রবাহিত হয় ততক্ষণ সমাধি হয়না। যখন প্রানায়ামের মাধ্যমে দুই নাকের শ্বাস হয়ে যাবে সমান তখনি জাগ্রত হবে সুষুম্না নাড়ি আর তখনি ধ্যান হয় যথার্থ। অজপা জপ সেই সুষুম্না নাড়ির জাগরণকে তরান্বিত করে। অজপা জপে প্রতিটি শ্বাস প্রশ্বাসের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়।একটি গভীর শ্বাস,একটু relax ,তারপর আবার শ্বাস ছাড়া আর সেইসাথে মন্ত্রজপ। এভাবে মিনিটে আমরা ১৫ বার শ্বাস নেই,দিনে ২১,৬০০ বার।অজপা ঠিকমত করা গেলে বিনা চেষ্টায় দিনে ২১,৬০০ বার জপ হয় যায়। সোহং জপ করলে মন্ত্রের অর্থ আর কল্পনা করতে হয়না।তবে অনেকে নিজের বীজমন্ত্র এই জায়গায় জপ করতে পারো ।মনকে ভ্রুমধ্যে নিয়ে বা হৃদয়ের অনাহত চক্রতে নিয়ে জপ করতে
No comments:
Post a Comment