সাধারণ দৃষ্টিতে মানুষ মোহকেই প্রেম বলে ভেবে নেয়। কিন্তু প্রেম আর মোহ দুইয়ের মাঝে আকাশ পাতাল ফারাক। মোহ মানুষকে ভাঙে আর প্রেম মানুষকে গড়ে। এবার দেখা যাক দুইয়ের মাঝের পার্থক্য কি ধরা দিয়েছে তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়ের চোখে !
প্রেমের প্রথম বৈশিষ্ট্যই হল - প্রেম কখনো আঘাত দেয় না। প্রেম আঘাত দিতেই পারে না কারণ প্রেম নিজেকেই অপরের করে দেয়। আঘাত দেয় মোহ। কারণ মোহ প্রেমাস্পদকে নিজের করে পেতে এবং পেয়ে সুখ লাভ করতে চায়। সেটি না হলেই সে আঘাত হানে। আর এই আঘাত নিরাময় করে প্রেম।
প্রেম আপন পথে আপন ভাবে একলাই চলে। কিন্তু মোহ সঙ্গে আনে অনেক নেতিবাদী সঙ্গী। মোহ আনে মানসিক অশান্তি - আমি ওর জন্যে এই করেছি, ও আমার জন্যে করবে না কেন? পাওনা গন্ডার হিসেব নিয়ে মোহ ব্যস্ত থাকে। প্রেম কখনো নিজের দেয়া নেয়া নিয়ে ভাবে না। সে শুধু দিয়েই খুশী। নিজেকে উজাড় করে দিয়েই তার আনন্দ।
মোহ সঙ্গে আনে মিথ্যা - কারণ মোহাবিষ্ট নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে প্রেমাস্পদের চোখে ভালো দেখাতে চায় এবং নিজের দোষ লুকিয়ে গুণটুকুই শুধু দেখায়। কিন্তু প্রেমের মধ্যে কোন বিকার নেই। প্রেম কিন্তু নিজে যেমনটি, তেমনটিই প্রেমাস্পদের সামনে তুলে ধরে ভালো মন্দ নির্বিশেষে।
মোহ আনে ঈর্ষা - প্রেমাস্পদকে কেউ ভালোবাসলে বা তার কাজে কেউ সাহায্য করলেই মোহের জাগে ঈর্ষা। আর এই সাহায্যকারী মানুষটিকে যেন তেন প্রকারে আটকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে মোহ। কিন্তু প্রেম নিজে ভালোবেসে এবং প্রেমাস্পদকে ভালোবাসা দিয়েই খুশী - অন্যদের নিয়ে সে ভাবে না। ভালোবাসার মানুষটি ভালো থাকলেই সে নিজেও ভালো থাকে।
মোহ আনে একাকীত্ব। কারণ মোহাবিষ্ট মানুষ সবসময় ভাবে - সে যাকে ভালোবাসছে,অপর দিক থেকে যথেষ্ট ভালোবাসা আসছে না। যেহেতু সে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাই অপরের দিকটা বোঝার অবকাশ সে পায় না। ফলে তার মনে হয় - সে অবহেলিত, অত্যাচারিত। তাই সে ধীরে ধীরে একাকীত্বের গ্রাসে পরে যায়। তার চোখে সকলে খারাপ হয়ে যায়, অন্তত যারা তার প্রশংসা নিত্য না করে। কিন্তু যে প্রেমের পথের পথিক তার কোন একাকীত্ব নেই। সে তার প্রেমাস্পদর ভাব ও ভাবনাকে মনের মাঝে সঙ্গী হিসেবে নিয়েই খুশী থাকে।
এখন একবার ভেবে দেখুন তো - এই প্রেম আর মোহের মাঝে কাকে বেছে নেয়া উচিত?
No comments:
Post a Comment