প্রণাম
আমার এক শিষ্যা আজ আমায় বলছিল প্রণামের ব্যাপারে কিছু লিখতে। প্রণাম যে করে এবং প্রণাম যে নেয় তাদের দুজনের মধ্যেই তো এনার্জি ট্রান্সফার হয়।তাহলে প্রণাম কি যুক্তিযুক্ত?
এ প্রসঙ্গে বলি - আমাদের মধ্যে একটা প্রবণতা আছে বড়দের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করার। এটা শিষ্টাচার। কিন্তু প্রণাম করার আগে একটা ব্যাপার মাথায় রাখা দরকার। প্রণাম তাদেরই করা উচিত যারা আমাদের থেকে সাধনশক্তিতে এগিয়ে আছেন। তাই তাদের জোড়হাতে প্রণাম জানানো বা পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করা বিধেয়। এতে বড় ক্ষতি হয়না কারো। কিন্তু ক্ষতি হয় পায়ে মাথা দিয়ে প্রণাম করলে বা অন্যের পায়ের ধুলো নিয়ে নিজের মাথায় দিলে। কারণটা একটু বুঝিয়ে বলি।
প্রতিটি মানুষের শরীরের মধ্যে নিরন্তর চলছে এনার্জির প্রবাহ মূলাধার থেকে সহস্রার এবং সহস্রার থেকে মূলাধার। তাই কেউ যদি অপরের পায়ের সাথে নিজের মাথার সংযোগ করে তাহলে যার আধার উন্নত তার ভালো কিছু এনার্জি চলে যায় অন্যের কাছে এবং যার আধার ভালো নয় সে অন্যের ভালোটা বেশ কিছু পেয়ে যায়। কারণ সহস্রারের মধ্যে একটা এনার্জি টানার চুম্বক আছে। আবার যে ভালো আধারের সে যদি খারাপ আধারের কাউকে একইভাবে প্রণাম করে সেক্ষেত্রে তার ভালো কিছু এনার্জি চলে যায় খারাপ আধারের মানুষের মধ্যে।আর খারাপ আধারের মানুষের খারাপ কিছু ভালো আধারের মানুষের মধ্যে সংক্রামিত হয়ে যায়। তাই সাধু মহাত্মারা কাউকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে দেন না। আমাদের আশ্রমেও একই প্রথা আছে।
একটি উদাহরণ দেই।বছরখানেক আগে মালদহ থেকে গোপালের জন্যে আমসত্ব নিয়ে একজন এসেছিলেন আমার বই পড়ে। আমার সাথে আধ্যাত্মিক আলোচনা করে মুগ্ধ হয়ে আমায় প্রণাম করেন।ভদ্রলোকের চোখের সমস্যা ছিল। ভেলোরে চিকিত্সা চলছিল। এখান থেকে যাওয়ার পর উনি ফোন করেন যে ওনার চোখ এখন অনেকটা ভালো হয়ে গেছে।কিন্তু সমস্যা হলো - তার পর থেকেই আমার চোখে একটা সমস্যা দেখা দেয়। চোখের সামনে একটা আবছা চুল ধাচের একটা স্পট দেখতে থাকি।দিনে দিনে সেটা আরো বাড়ে। এবার তো বই-এর প্রুফ দেখতে বেশ অসুবিধা হয়েছে।পরে এ নিয়ে আমি বাবার সাথে আলোচনা করি।বাবা বললেন যে এই কারণেই ওটা হয়েছে।সেই থেকে আমি প্রায় সবার প্রণাম পায়ে হাত দিয়ে আর পায়ে মাথা দিয়ে নেয়াই বন্ধ করে দিয়েছি। বাবারও এরকম অভিজ্ঞতা আছে। একজন তান্ত্রিক তো তার নিজের দুরারোগ্য ব্যাধি বাবার মধ্যে সঞ্চার করে দিয়েছিলেন পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে।কিন্তু বাবার বীজমন্ত্রের গুরুদেব উঁচু মহারাজ বাবাকে সে যাত্রা বাঁচিয়ে দেন।
তাই প্রণাম সম্বন্ধে ভালো আধারের মানুষরা সচেতন থাকবেন সর্বদা।এক ইষ্ট,গুরু আর প্রত্যক্ষ ভগবান বাবা মা তথা উচ্চকোটির সাধক সাধিকা ছাড়া কাউকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম না করাই বিধেয়।
No comments:
Post a Comment