জগতে পূজা কয় প্রকার আর তার প্রকৃতি কি কি
আজ আমার অধিবেশনে আমার বিশিষ্ট ভক্ত মলি জানতে চেয়েছিল - জগতে পূজা কয় প্রকার আর তার প্রকৃতি কি কি? এর উত্তরে আমি বললাম - পূজা তিন প্রকার - সাত্ত্বিক,রাজসিক ও তামসিক।
সাত্ত্বিক পূজায় অন্তরের ভক্তিকে নৈবেদ্য করে পূজা দেয়া হয় নিষ্ঠার সাথে।সেক্ষেত্রে ভোগ দেয়া হয় নিরামিষ।এই পূজায় আমিষের কোন স্থান থাকেনা। এই পূজা হয় দিব্যাচারে।মূলতঃ যারা নিবৃত্তিমার্গে চলার ক্ষমতা রাখেন তারাই এই পথ বেছে নেন।
রাজসিক পূজায় পশুবলি প্রভৃতি হিংসাত্বক কর্ম সম্পাদন করা হয় বীরাচারে পূজার জন্যে। এতে রক্তের প্রয়োজনীয়তা থাকে।
তামসিক পূজায় পশুবলি,মদ প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়।এই পূজা হয় পশ্যাচারে।এই রাজসিক ও তামসিক পূজার প্রচলন করা হয়েছে প্রবৃত্তিমার্গের পথিকদের জন্যে- যাদের পক্ষে নিবৃত্তিমার্গের বিধিনিষেধ পালন করে চলা সম্ভবপর হয়না।কিন্তু আমাদের শাস্ত্রে যে সকলের জন্যেই পূজার বিধান আছে।তাই যারা নিবৃত্তির পথ ধরে এগোতে পারবেনা তাদের জন্যে রয়েছে প্রবৃত্তিমার্গের বিধান। এই রাজসিক ও তামসিক পথের পথিকরা আগে বৈধ ভোগ করে ভোগবাসনার সমাপ্তি ঘটাতে পারলেই তারা সাত্বিকভাবে নিবৃত্তির পথে যাওয়ার যোগ্য হবে। মূলতঃ এই বিভেদের জন্যেই তন্ত্রশাস্ত্রে রয়েছে পাঁচ ম-কারের উল্লেখ।
এই অবধি পড়ে সবাই হয়ত ভাবছ - এহেন তিনরকমের পূজার কারণ কি?কারনটা হলো - পৃথিবীতে মানুষের প্রকৃতি ভিন্ন।কারো পশু স্বভাব,কারো রাজসিক স্বভাব,কারো বা সাত্ত্বিক দিব্যভাব।তাই তাদের প্রকৃতি অনুসারেই এই পূজার ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে বৈষ্ণবরা মূলতঃ সাত্ত্বিক পূজা অনুসরণ করেন।আর তন্ত্রের পথে যারা আছেন তারা প্রথমে পশ্বাচার,তারপর বীরাচার মতে সাধনা করে অবশেষে দিব্যাচারে আসেন। তবে দুইয়ের মধ্যে তন্ত্রসাধনা যেমন কঠিন তেমনি তাতে সাফল্যের হারও খুব কম। কারণ দিব্যাচারে উত্তরণ খুব কম তান্ত্রিকের পক্ষেই সম্ভব হয়। তার চেয়ে বৈষ্ণব সাধনায় রসমাধুরী অনেক বেশী এবং সাফল্যের হারও বেশী। তবে দিনের শেষে সব নির্ভর করে সাধকের উপর। যে যত শরণাগতি অবলম্বন করে এগোতে পারবে সে তত তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাবে সাফল্যের পথে।
No comments:
Post a Comment