যন্ত্র হয়ো না
আমরা মানুষরা কি দিন দিন যন্ত্র হয়ে যাচ্ছি? একটু ভেবে দেখলেই বুঝবে - আমরা আদৌ নিজেদের জন্যে সঠিকভাবে ভাবি না। তাই বলে কি আমরা ভাবনার উর্ধ্বে চলে গেছি?তাও নয়। ভাবনা আমাদের মনেই আছে কিন্তু সেটি আমরা ভাবিনা।
আমাদের হয়ে আমাদের ভাবনা ভাবায় টেলিভিশন। প্রায় প্রতিটি ঘরেই দেখা যায় -টেলিভিশনে যত অবাস্তব,ষড়যন্ত্রমূলক সিরিয়ালের ভিড়।বাড়িরপ্রায় সবাই তার সামনে।আগেকার দিনে বাড়ির মেয়েদের যদি বলা হত - সন্ধ্যায় কি করতে হবে?সবাই একবাক্যে জবাব দিত - ঠাকুরকে সন্ধ্যা দিতে হবে।আর এখন?সন্ধ্যা হলে আজ এই সিরিয়াল দেখতে হবে। কোন সিরিয়ালে কোন ভিলেন আজ কি করতে পারে তাই নিয়ে সারাদিন টেনশন গেছে।অতএব সেটা দেখতে হবে।অর্থাৎ - আমাদের ভাবাচ্ছে সিরিয়াল। এতে লাভ কি হচ্ছে- নানা হিংস্র ঘটনার মাকড়সার জল আমাদের সুস্থ মাথায় বুনে দিচ্ছে টেলিভিশন। শুধু তাই নয় - এই টেলিভিশন থেকে আমাদের নবীন প্রজন্মের অবক্ষয়ের বীজও বোনার কাজ চলছে। বেশি টি আর পি পাওয়ার জন্যে তাতে নায়ক নায়িকারা ফ্যাশনের নাম যেসব কুরুচিকর পোশাক পরছে তাই নিয়েই নবীন প্রজন্ম উচ্ছসিত এবং তারাও একেই অনুসরণ করছে। অর্থাৎ - নিজেকে কিসে রুচিশীল লাগবে না ভেবে সেই টেলিভিশনের দেয়া ভাবনায় ভাবছে মানুষ।
আমাদের ভাবায় রাজনীতি। কোন মন্ত্রী কি করলেন আর কি করতে পারতেন তাই নিয়ে আমরা উদ্ভ্রান্ত । আমরা কোনো পার্টিকে অনুসরণ করি আর তারপর সে ভালো এবং অন্যরা খারাপ এই বিশ্বাস নিয়েই থাকি। কিন্তু কখনো ভাবি না যে দেশের জন্যে আমাদেরও কিছু করার আছে। অর্থাৎ - আমরা সমালোচনা করি কিন্তু নিজে কাজে নামতে সাহস পাই না।
আমরা খেলাধুলো নিয়ে ভাবতে ভালবাসি। কিন্তু সেখানেও চলে এসেছে বিনোদন - কিভাবে বেশী রোজগার করা সম্ভব তাই নিয়ে ফাটকা যাতে দেশের নায়করাও যুক্ত। যে আইপিএল নিয়ে আমরা মেতে আছি কয়েক বছর ধরে তার যে প্রায় সবটা চিত্রনাট্যই ঠান্ডাঘরে লেখা হয় উন্মুক্ত মাঠের চেয়ে তাও আমরা প্রায় সবাই জানি,কিন্তু মেতে থাকি সেসব নিয়েই।
অর্থাৎ - সার ছেড়ে অসার নিয়েই আমরা থাকি।আমাদের ভাবনা আমরা ভাবি না,আমাদের ভাবায় অন্য কেউ। আমরা শুধু অন্ধভাবে অনুকরণ করে যাই - যেটা ভালো সেটায় আলো দেখিনা। কারণ ভালোকে কেউ প্রমোট করেনা। যেতে আমদের সর্বনাশ তথা সমাজের সর্বনাশ তাতেই আমরা আগ্রহী। একবার ভেবে দেখো তো - মানুষ শব্দের অর্থ কি?মান আর হুঁশ মিলে মানুষ। আমাদের মান তো আছে ১৬ আনা কিন্তু হুঁশ আছে কি? যদি থাকে একটু ভেবে দেখো - এভাবে আমরা কোন পতনের দিকে এগিয়ে চলেছি।নিজের ভাবনা নিজে ভাব - বিবেককে সঙ্গী করে ভাব।অন্যের কোথায় মনে ভাবনাকে প্রমোট কোর না। ভেবে দেখো - কোন কাজ করলে একইসাথে তোমার পরিবার,অন্যদের পরিবার এবং তুমি সুখে থাকবে। সেই কাজে হাত দিলেই পাবে শান্তি আর আনন্দ। তাই বলব - রোবট হয় না।নিজের ভাবনা নিজেকে ভাবতে দাও। তবেই তো যথার্থ মানুষের মত জীবনে অগ্রসর হতে পারবে তুমি।
No comments:
Post a Comment