কে আমি ? যদি তোমাদের প্রশ্ন করা হয় - কে তুমি ? কি হবে তার উত্তর ?
আমরা সাধারণতঃ এক্ষেত্রে আমাদের সামাজিক পরিচয়টাই বলি - যেটা সমাজ দ্বারা স্বীকৃত। এককথায়,এখানে আমি বলতে বোঝানো হচ্ছে আমাদের সামাজিক পরিচয়। আর সেটা দিয়েই সমাজে বসবাসের যাবতীয় কাজ আমাদের করতে হয়। অর্থাৎ জন্মের পর বাবা মা যে নাম দিয়েছেন আমায়, সেটা সমাজ কর্তৃক রেজিস্টার্ড হবার পর সেটাই হলো আমার পরিচয়। ব্যাঙ্ক-এ যখন টাকা রাখলাম তখন আমার সই হলো আমার পরিচয়।সেটা মিললে আমি টাকা তুলতে পারব বা অন্যকে দিতে পারব,নাহলে নয়। অর্থাৎ সমাজ আমাদের যে পরিচয়ের উপর শীলমোহর মেরে দিয়েছে সেটাই আমি। কিন্তু ভেবে দেখো তো - এই পরিচয় কতদূর পর্যন্ত সত্যি? এখানে আমার ইচ্ছায় কি কিছু চলে?চলে না। সমাজের ইচ্ছায় আমি চলি। আমি স্বেচ্ছায় ততটুকুই করতে পারি যেটা সমাজ আমাকে অনুমতি দেবে। এত গেল সমাজের কথা। আমার নিজের দেহের উপরই কি আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ আছে?আমার যদি শরীর খারাপ হয় আর আমি যদি বলি - এই শরীর ঠিক হয়ে যা।তা কি হয়?হয়না।সেটা ঠিক করতে হলে চাই ডাক্তারের সাহায্য। আমার আয়ু যদি শেষ হয়ে যায় এবং আমি যদি আরো বাঁচতে চাই,সেটা কি হবে?হবে না।কারণ দেহের সময় ফুরালেই দেহ যাবে স্মশানে। তবে আমি কি?বাবা মায়ের দেয়া দেহ আর সমাজের দেয়া পরিচয় নিয়ে এত গর্ব করি,এই দেহের সুখের জন্যে এত খাটাখাটনি করি,অর্থ রোজগার ও সঞ্চয়ের জন্যে এত আমাদের ভাবনা। তার নীটফল কি?একটি বিরাট শুন্য। তাহলে কি সমাজের দেয়া এই পরিচয়টাই আমি যার অস্তিত্ব দুদিনের? এই সামাজিক "আমি" কি তবে প্রকৃত আমি? না। এই পরিচয়টা শুধু সমাজের জন্যেই প্রয়োজন। এখানে বাস করার জন্যে।এটিকেই বলে ইগো।আর প্রায় সব মানুষ এই ইগোকেই "আমি" ভেবে নিয়ে জীবনভর ভুল কাজ করে যায়। কিন্তু আসল কথা হলো - এই সামাজিক আমি শুধু একটা বহিরঙ্গের জামা ছাড়া কিছু নয়। আমরা নিজের বদলে এই জামাটিকে নিয়েই মেতে থাকি আর তারই ফলে আমাদের আসল কাজ বারবার বাকি থেকে যায়।ফলে ফিরেও আসতে হয় বারবার।
তাহলে আমার পরিচয় কি? সাধু মহাত্মাদের কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা বলেন "আমি আনন্দস্বরূপ" বা "আমি আলোর পথের পথিক।" একই কথা আমাদের ক্ষেত্রেও খাটে। সেই আলোর পথে অগ্রসর হবার জন্যেই আমাদের পৃথিবীতে আসা। কিন্তু সেই পথে চলার জন্যে তো একটা জামা পরে নিতে হয় - রক্তমাংসের জামা,সেটিই হলো এই শরীর। আর সেটাকে মাধ্যম করেই আমাদের সাধনায় অগ্রসর হতে হয়।আমাদের সামাজিক পরিচয় দুদিনের।আজ লোকে মাথায় করে রাখছে বা পায়ে ঠেলে দিচ্ছে কিন্তু কাল তাদের আমার কথা মনেও পড়বে না। এই পরিচয় যে দেহটিকে কেন্দ্র করে সেটিও চিরদিন থাকবেনা।তবে কেন শুধু এটি নিয়েই মেতে থাকব?কেন যে কাজের জন্যে এসেছি সেটায় সময় দেবনা? আমাদের মূল কাজ তো ইশ্বরত্ব অর্জন নিজের কর্মের মধ্য দিয়ে ইশ্বরের লীলা উপভোগ করতে করতে। সেই কাজটিকে একপাশে সরিয়ে রেখে কেন এই ইগোকে ভালোবেসেই কাটিয়ে দেব জীবন?আমাদের যে সময় বড় কম। বেলা যে বয়ে যায়। তবে কেন নিজের আসল পরিচয় ভুলে নিজের আসল কাজকে অবহেলা করে সামাজিক পরিচয়্তুকুকে সার করেই দিনগুলি কাটিয়ে দেব?
No comments:
Post a Comment