গুরু যদি বদগুরু হয়,শিষ্যের কি দশা হয়?
- তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
অনেকেই আমার কাছে প্রশ্ন করেন," গুরু যদি সদগুরু না হন তবে শিষ্যের কি দশা হয়?উত্তরে আমি বলি," শিষ্যের দশা যে এতে খুব ভালো হয় এমন নয়। কারণ সিদ্ধ বীজমন্ত্র না পেলে সিদ্ধি হয়না। আর সিদ্ধ বীজমন্ত্র সবাই দিতে পারেন না।"
অনেকে হয়ত বলবেন, "আজকাল তো বীজমন্ত্র ইন্টারনেট খুঁজলেও পাওয়া যায়। তবে গুরুর প্রয়োজন কি?"
উত্তরে বলতে হবে," দীক্ষার সময়ে সিদ্ধ বীজমন্ত্রটিকে গুরু আপন সাধনশক্তি দিয়ে সক্রিয় করে দেন আর তারপরই সেই মন্ত্র শিষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যায় সামনের দিকে।"
অনেকে হয়ত এও বলবেন,"গুরু যে সত্যই বীজমন্ত্রকে সক্রিয় করে দিয়েছেন আপন সাধনশক্তি দিয়ে তার প্রমাণ কি?"
আমি বলব,"প্রমাণ তথা একমাত্র সাক্ষী হচ্ছে শিষ্য। সে যত জপের গভীরে ঢুকবে তত সে নানা দিব্য অনুভুতি লাভ করবে এবং পরিশেষে পাবে ইষ্টের দর্শন।তবে দর্শন তো অনেক পরের কথা। কিন্তু ঠিকভাবে জপ করলে যে আনন্দময় অনুভুতি জাগে মনে সেটিই হলো গুরুর মন্ত্রকে সক্রিয় করে দেয়ার প্রমাণ।"
এবার আবার ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে। গুরু যদি বদগুরু হয় তবে শিষ্যের কি দশা হয়।সেটি যে খুব ভালো হয়না তত বলাই বাহুল্য। তবে খুব ক্ষতিও হয়না। শিষ্যের সিদ্ধিলাভ অবশ্যই এই মন্ত্রে হয়না।তবে প্রারব্ধ ক্ষয় হয় আর সেই প্রারব্ধক্ষয় তাকে এগিয়েই নিয়ে যায়। যথাসময়ে প্রারব্ধ শেষ হলে সে পায় তার জন্যে নির্দিষ্ট সদগুরুর দেখা। কারণ সে যে গুরুর উপর বিশ্বাস করে ইষ্টের মন্ত্র বা নাম জপ করেছে আর বিশ্বাসের মূল্য তো ঠাকুর ঠিকই দেন।
এই প্রসঙ্গে একটা গল্প বলি - একবার এক শিষ্য আর এক গুরু হিমালয়ের এক পর্বত থেকে আরেক পর্বতে যাবে। নীচে দুর্দান্ত বেগে বইছে খরস্রোতা নদী। মাঝে দড়ির সেতু। শিষ্য জয়গুরু বলে এগিয়ে গেল এবং নির্বিঘ্নে পেরিয়ে গেল সেতু। কিন্তু গুরু দড়ির সেতুর সামনে এসে ভাবল - কি জানি যদি পড়ে যাই।অর্থাত কিনা তার বিশ্বাস আসেনি যদিও মন্ত্র দিয়ে শিষ্য করেছে সে। এর ফল হলো - যেই গুরু সেতুতে পা রাখল সেতু ছিড়ে পড়ল নদীতে। সেইসাথে গুরুর ঘটল পঞ্চত্বপ্রাপ্তি। কিন্তু শিষ্য সেই গুরুর উপর বিশ্বাস রেখেই তরিয়ে গেল। এর থেকেই তো বোঝা যায় যে বিশ্বাসই হলো আসল বস্তু। যার বিশ্বাস তারই লাভ। এই বিশ্বাসের মূল্য সবসময়েই মেলে। তাই বদগুরু পেলেও বিমর্ষ হবার কারণ নেই।তার মন্ত্র সিদ্ধি দিতে না পারলেও প্রারব্ধভোগ কাটাতে সাহায্য ঠিকই করে। অর্থাৎ অজান্তে ভুলের জন্যে আধ্যাত্মিক জগত সাজা দেয়না।এই জগত মানুষকে শুধু দু হাত ভরে দেয়। আমাদের শুধু কুড়িয়ে নেয়ার অপেক্ষা।
No comments:
Post a Comment